কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ। কোন ডিমে পুষ্টি বেশি
আমাদের সকলের মনের একটি প্রশ্ন হচ্ছে কোন ডিমে বেশি পুষ্টিকর। হাঁসের ডিম, মুরগির ডিম, নাকি কোয়েল পাখির ডিম? এই পোস্টটি পড়লে আপনাদের মনের সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। আপনারা জানতে পারবেন কোন ডিম খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়তে থাকুন।
পেজের সূচিপত্র:
ভূমিকা
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি উপাদান
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোন ডিম বেশি পুষ্টিকর, কোয়েলের ডিম নাকি মুরগির ডিম
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখি ডিমের কিছু ক্ষতিকর দিক
ভূমিকা
আমাদের দেশে বর্তমানে দেশি ও ফার্মের মুরগির ডিমের পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার প্রচলন খুব বেড়েছে। তাই এই চাহিদা মেটাতে কোয়েল পাখির ডিম এখন খামারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। যার কারণে কোয়েল পাখির ডিম এখন বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। যেকোনো এলাকার ছোট বড় সব দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে এই ডিম। আর এই ডিমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি হওয়ায় দিন দিন কোয়েল পাখির ডিমের প্রতি আকর্ষণ মানুষের বেড়েই চলেছে।
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি উপাদান
কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন ও খনিজের প্রাচুর্য। এতে রয়েছে আয়রন, প্রোটিন, কোলেস্টেরল, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই ও ভিটামিন এ
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
এলার্জি জনিত রোগ প্রতিরোধ করে
হাঁপানি শিথিল করে
ত্বক কোমল রাখে
রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ও চোখ ভালো রাখে
বার্ধক্য প্রতিরোধ করে
ডায়াবেটিস মোকাবেলা করে
রক্তস্বল্পতা দূর করে
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
হার্ট ভালো রাখে
প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
১.এলার্জিজনিত রোগ প্রতিরোধ করে
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ওভোমিউকয়েড নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন। যা প্রাকৃতিক এন্টি এলার্জিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রদাহ ও এলার্জির প্রাদুর্ভাবকে কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোয়েলের ডিম এলার্জি জনিত সর্দি কাশির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় কোয়েলের কাঁচা ডিম এলার্জির লক্ষণ ও মাত্রা উভয় কমিয়ে দিতে পারে।
২.হাঁপানি শিথিল করে
কোয়েলের ডিমের এলার্জি প্রতিরোধকারী উপাদান হাঁপানের বিরুদ্ধেও কাজ করে। ধুলোবালির জীবাণুতে আক্রান্ত ১৮০ জন হাঁপানি আক্রান্ত শিশু নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখা যায়, যারা কোয়েল পাখির ডিম খেয়েছে তাদের হাঁপানি তীব্রতা ও অস্থিরতা উল্লেখযোগ্য হারে কম।
৩. ত্বক কোমল রাখে
ত্বক ভালো রাখতে আমরা কত কিছুই না করি। এই কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে এর সমাধান। কোয়েলের ডিমের সাদা অংশে লাইসিন-৮ নামে এক ধরনের অ্যামিনো এসিড থাকে। ত্বকের কোলাজেন হল একটি প্রোটিনের নাম যা ত্বক কোমল রাখে ও ত্বকের প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের শরীর এ ধরনের অ্যামিনো এসিড তৈরি করে না। এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে, কোয়েল পাখির ডিম।
৪.রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ও চোখ ভালো রাখে
কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন এ এর ভালো উৎস। আর এই ভিটামিন এ আমাদের চোখ ভালো রাখে। ভিটামিন 'এ' অল্প আলোয় চোখে দেখতে সাহায্য করে ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ভিটামিন 'এ' চোখের কর্নিয়া ও অন্য অংশে পুষ্টি দেয়। যার ফলে বাচ্চাদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ও চোখকে ভালো রাখে।
৫. বার্ধক্য প্রতিরোধ করে
কোয়েলের ডিমে কলিন নামে এক ধরনের পুষ্টি থাকে যা মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখে, বিশেষত বয়স বাড়ার ব্যাপারে। এতে থাকা ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম ও জিংক ত্বককে ভালো রাখে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
৬. ডায়াবেটিস মোকাবেলা করে
বর্তমানে ডায়াবেটিসের এমন বিপজ্জনক অবস্থা যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোয়েল পাখির ডিমে এটা অনেকটাই মোকাবেলা করতে সক্ষম। ঐতিহ্যবাহী চিনা ওষুধে খাবারের তালিকায় কোয়েলের ডিমের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়।
৭. রক্তস্বল্পতা দূর করে
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আয়রন যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা বা অ্যামিলিয়া আছে তারা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে এই রক্তস্বল্পতা দূর হবে।
৮. উচ্চ রক্তচাপ কমায়
কোয়েল পাখির ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণের পটাশিয়াম থাকাই রক্তনালির চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৯. হার্ট ভালো রাখে
কোয়েলের ডিমে ফ্যাট (উপকারী কোলেস্টেরল) রয়েছে ৬০ শতাংশ। যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও তার প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা প্রদান না করার জন্য কাজ করে। যার ফলে হার্ট ভালো থাকে। তবে কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত।
১০. প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর খনিজ উপাদান। এই খনিজ উপাদান গুলো প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যকৃত ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
কোন ডিম বেশি পুষ্টিকর, কোয়েলের ডিম নাকি মুরগির ডিম
কোয়েল পাখির ডিমে প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ১৩.০৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৫৮ ক্যালরি। কোয়েলের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন বিদ্যমান। মুরগির ডিমের থেকে কোয়েল পাখির ডিমের ভিটামিন বি১ ৬গুণ বেশি এবং ভিটামিন বি২ ১৫ গুণ বেশি। মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েলের ডিমের পুষ্টিমান প্রায় তিন থেকে চার গুণ। কোয়েলের ডিম মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখির ডিম সব বয়সী মানুষের জন্য উপকারী। বড়দের প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ টি ডিম আর বাচ্চাদেরকে প্রথমে ৮ মাস বয়সে একটি কোয়েল পাখির ডিম দিয়ে শুরু করতে হবে তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিমের পরিমাণও বাড়ানো যাবে। কোয়েল পাখির ডিম বাচ্চাদের মানসিক শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখির ডিমের কিছু ক্ষতিকর দিক
কোয়েল পাখির ডিম অনেক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। কিন্তু এটি উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল সম্পন্ন। ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে ৮৪৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। যা মুরগির ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আপনি যদি দৈনিক প্রয়োজনীয় ২০০ গ্রামের বেশি করে খেয়ে ফেলেন তাহলে শারীরিক কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা বজায় রাখবেন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url