সকালে ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটার ১৫টি উপকারিতা

 সুস্থ দেহ সুন্দর মন আমাদের সকলেরই কাম্য। শরীর সুস্থ ও মন সতেজ রাখার একটি খুব ভালো উপায় হচ্ছে প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে সবুজ ঘাসের ওপর ৩০ মিনিট হাঁটা। এটা শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকারী তা জানতে যদি আপনি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে জানাবো। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।


পেজের সূচিপত্র: 

সকালে খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটবেন কেন?

সকালে খালি পায়ে হাঁটার ১৫ টি উপকারিতা ও এর বিশ্লেষণ

যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন 


সকালে খালিপায়ে মাটিতে বা ঘাসের ওপর হাটবেন কেন? 

প্রাকৃতিক কাছাকাছি থাকলে সবুজ প্রকৃতি আমাদের মন ও শরীর সতেজ রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন। কারণ সকালের মাটি ঠান্ডা থাকে। গবেষণায় বলেছে, শরীর সুস্থ থাকার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে এই প্রক্রিয়ার। ইট সিমেন্ট কনক্রিট এসবের ওপর হাঁটার চাইতে মাটি ও ঘাসের উপর হাঁটলে আমাদের শরীর ও মন কে প্রশান্তি করতে পারে। বহু শারীরিক জটিলতা দূরে পালাবে। আসুন জেনে নিন ঘাসের উপরে হাটার সুফলগুলো। 

খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাটার ১৫ টি উপকারিতা ও এর বিশ্লেষণ নিচে তুলে ধরা হলো 

  • মস্তিষ্ক শিথিল হয় 
  • এনডরফিন হরমোন বাড়ে 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট টেনে নেওয়া সুবিধা 
  • পায়ের তলার প্রেসার পয়েন্ট অ্যাক্টিভ হয় 
  • মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
  • মানসিক অস্থিরতা দূর করে 
  • হাঁটু ও কোমরের জয়েন্ট ঠিকমতো কাজ করে 
  • পায়ের পেশি শক্ত করে 
  • ফুট পজিশনিং ঠিকঠাক রাখে 
  • ঘুম ভালো হয় 
  • ব্যথা থেকে মুক্তি পায় 
  • চোখ ভালো থাকে 
  • হার্ট সুস্থ রাখে 
  • ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে 

১. মস্তিষ্ক শিথিল হয় 

মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্ক শিথিল, শান্ত ও নিরাপদ বোধ করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া চিকিৎসায় উচ্চ রক্তচাপ কমাতে চাইলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট খালি পায়ে ঘাসের উপর হাটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। 

২. এনডরফিন হরমোন বাড়ে

মন মেজাজ সতেজ রাখতে চাইলে এনডরফিন আবশ্যক। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে এনডরফিন হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এই হরমোনটি 'হ্যাপি' হরমোন নামে পরিচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ এই হরমোন থাকলে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়। 

৩. এন্টিঅক্সিডেন্ট টেনে নেওয়া সুবিধা 

পৃথিবীপৃষ্ঠ নেগেটিভ চার্জ ইলেকট্রন সমৃদ্ধ, যাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বলা হয়। খালি পায়ে ঘাসের উপর বা মাটি স্পর্শ করে হাঁটলে শরীর মাটি থেকে সরাসরি নেগেটিভ ইলেকট্রন চার্জ শোষণ করতে পারে। এতে শরীরের হাইড্রোক্সিল চার্জের মত ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে বলে এর কারণে ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায় শরীরের প্রতিটি কোষ। তাই খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটা আবশ্যক।

৪. পায়ের তলার প্রেসার পয়েন্ট এক্টিভ হয় 

আমাদের পায়ের তলায় প্রেশার পয়েন্ট থাকে। খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটলে আমাদের পায়ের তলার কিছু প্রেসার পয়েন্ট এক্টিভ হয়ে যায় যার ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীর আরো বেশি করে অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠে। কাজ করা শক্তি পায়।

৫. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে 

আমাদের শরীরের মূল অংশ হচ্ছে মস্তিষ্ক। তাই এই মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়া খুব জরুরী। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করা উচিত বলে জানিয়েছেন রোগ বিশেষজ্ঞরা। এতে বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। 

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় বহু গুনে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, রক্ত প্রবাহের বৃদ্ধি করে আরো বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে পুরো শরীরে। আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরাতে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

৭. মানসিক অস্থিরতা দূর করে 

সরাসরি মাটির উপর হাঁটলে মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। মন প্রফুল্ল থাকে। এছাড়াও মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার ফলে দূর হয় মানসিক অস্থিরতা এবং অনিদ্রার মত সমস্যা 

৮. হাঁটু ও কোমরের জয়েন্ট ঠিকমতো কাজ করে 

বর্তমানে হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দেখা গেছে বেশিরভাগ সময়ই এই দুই জয়েন্টের কাজকর্মের ব্যাঘাত হওয়ায় বাতের ব্যথা হয়। তবে এই ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমরা যদি খালি পায়ে হাঁটা শুরু করি তাহলে এই দুই জয়েন্ট ঠিকমত কাজ করতে পারবে। ফলে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

৯. পায়ের পেশি শক্ত করে 

খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে পায়ের পাতার নিচ থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ত্বকের পৃষ্ঠে স্বাস্থ্যকর অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যা শরীরের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের গোড়ালি, লিগামেন্ট এবং পায়ের পেশিকে প্রসারিত শক্তিশালী করে। পায়ের ও কোমরের পেশির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে এই অংশের পেশির জোর বাড়ে এবং শক্তিশালী হয়। যা জুতা বা স্যান্ডেল পড়ে হাঁটলে হয় না। 

১০. ফুট পজিশনিং ঠিকঠাক রাখে 

ছোটবেলায় আমরা সবাই হাটতে শিখেছি। তবে হাঁটা শেখা হয়ে গেছে মানে যে একদম ঠিক ভঙ্গিতে পা মাটিতে পড়ছে এমন নয়। দেখা গেছে বড় বয়সেও অনেকের হাঁটার সময় ফুটপজিশনিং ঠিক থাকে না। তাই এই সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এতে পায়ের পেশি ও জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ে। ফলে পায়ে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

১১. ঘুম ভালো হয় 

মানসিক দুশ্চিন্তা, বয়স বাড়ার কারণে বা অসুখের কারণে অনেকের ঘুম কমে যায়। তাই মুঠো মুঠো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে নিয়মিত সকালে ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে ঘুমের মান ভালো হয়। খালি পায়ে হাঁটলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে। ফলে ঘুমের সমস্যা থাকলে ঘাসের বুকে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারেন।

১২. ব্যথা থেকে মুক্তি পাই 

বর্তমানে বয়স বাড়ার সাথে সাথেই ব্যথা যেন আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে শরীরের ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে। মাটির নেগেটিভ শরীরের পজিটিভ চার্জ নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। তাই ব্যথার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে রোজ সকালে খালি পায়ে সবুজ ঘাসের উপর হাঁটা প্রয়োজন। 

১৩. চোখ ভালো থাকে 

চোখ অতি মূল্যবান সম্পদ। তাই এটি ভালো রাখা জরুরী। সময় যত বাড়ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে চোখের সমস্যা। চোখের স্নায়ুতন্ত্র পায়ের নিচে নির্দিষ্ট স্থানের সঙ্গে যুক্ত থাকে। খালি পায়ে হাঁটার সময় পায়ের পাতায় যে চাপ পড়ে তার ফলে চোখের স্নায়ু ভালো থাকে এবং চোখ সুস্থ থাকে।

১৪. হার্ট সুস্থ রাখে

বিশেষজ্ঞরা বলেন প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে হাঁটলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস। হৃদয় স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে যায়। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে 

১৫. ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে 

প্রায় সব মেয়েরাই ঋতুস্রাব জনিত সমস্যায় ভোগে। হরমোনের তারতম্য দেখা দিলে শরীর ও মন কোনটাই ভালো থাকে না। ঋতু সাবের ঠিক আগে মেয়েদের মুড সুইং, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ব্রণ এছাড়াও আরো অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে  প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম থেকে সহজেই মুক্তি মেলে।

যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন

 খালি পায়ে হাঁটার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।যেমন ধরুন: 

  • কোন উঁচু নিচু এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এতে বেঁধে পড়ে যেয়ে আঘাত পাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
  • কংক্রিট বা পিচের রাস্তায় খালি পায়ে হাটা যাবেনা 
  • পায়ে কোন ইনফেকশন থাকলে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। না হলে ধুলোবালি লেগে আক্রান্ত স্থান পেকে যাবে 
  • ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই সবদিক বিবেচনা করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই হাঁটতে হবে। না হলে হাঁট থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • খুব ভোরে খালি পায়ে হাঁটা উপকারী। কারণ এ সময় মাটি ঠান্ডা থাকে উপকার বেশি হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url