কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা
আপেল এবং পেয়ারা এই দুটি ফলই আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। আপেল বিদেশি ফল হওয়ায়
এটি আমাদের সারা বছর এই ফল কিনে খেতে হয় আর অপরদিকে পেয়ারা দেশি ফল হওয়ায় এটি
আমরা ছাদে, বারান্দায় বা বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় লাগাতে পারি।
প্রবাদ আছে, প্রতিদিন একটি আপেল খেলে চিকিৎসক থেকে মুক্তি মিলে। পুষ্টিগুণে ভরপুর
অনেক সুস্বাদু একটি ফল আপেল। তবে পেয়ারাও কিছু কম যায় না, অতি সাধারণ হলেও এই
ফলটিতে রয়েছে আপেলের থেকেও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ। কিন্তু মানুষ পেয়ারা কে
পাত্তা দেয় না।
আপেলের পুষ্টি উপকারিতা
প্রায় প্রতিটা মানুষের আপেল অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। এটি একটি বিদেশি ফল হলেও
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই এই ফল পাওয়া যায়। এই ফল খেতে যেমন সুস্বাদু
দেখতেও তেমন সুন্দর। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ। কথায় আছে,
প্রতিদিন একটি আপেল খেলে, ডাক্তার থেকে মুক্তি মেলে।
অর্থাৎ আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে আপেল খান তাহলে আপনার শরীরের অনেক রোগ বালাই
দূর হবে। ফলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। এটি একটি সহজলভ্য ফল। এটি
বিদেশি ফল হওয়ায় এই ফল আমাদের কিনে খেতে হয়। তবে প্রায়ই সব ঋতু তেই এই ফল
পাওয়া যায়।
কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল নাকি পেয়ারা এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আপনাদের
সঠিক উত্তরটি জানাবো। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। আর্টিকেলের এই অংশে
আপেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাবো। চলুন জেনে নিই আপেলের কিছু
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
আপেলের ১০ টি পুষ্টি উপকারিতা
- ভিটামিন সি এর উৎস
- পানির পরিমাণ বেশি
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট কম
- হার্ট ও হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
- অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য
- দাঁত সাদা করে
- হাঁপানির তীব্রতা কমাতে
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ভিটামিন সি এর উৎস: আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স।
পানির পরিমাণ বেশি: আপেলে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। ১০০ শতাংশের মধ্যে এই
ফলে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই পানি থাকে। শুধু পানি নয় আপেলে ফাইবার ও থাকে অনেক
বেশি পরিমাণের।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: সবুজ আপেলে প্রচুর পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য
করে। যদি আপনি প্রতিদিন একটি করে আপেল খান তাহলে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের জটিল
রোগ এবং বয়স জনিত রোগ ব্যাধি বাদে মোটামুটি সব ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে আপনার
শরীরকে রক্ষা করবে।
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট কম: আপনি জেনে খুশি হবেন যে অন্যান্য ফলে তুলনায়
আপেলে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট অনেক কম থাকে। মোট কথা বলা যায় এগুলো না থাকার
মতই।
হার্ট ও হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত আপেল খেলে হার্টের
রোগ হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ আপেলে থাকা ফাইবার
আমাদের শরীর থেকে খারাপ ফ্যাট বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই হার্টের রোগ এবং হাই
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: আপেল একটি মিষ্টি ফল হলেও এতে চিনির পরিমাণ
অনেক কম থাকে। চিনির পরিমাণ অন্যান্য মিষ্টি ফলে তুলনায় কম থাকার কারণে
ডায়াবেটিস রোগীরা স্বাচ্ছন্দে এই ফল খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন নিয়মিত
প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে
যায়।
অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য: কথায় আছে, পেট ঠান্ডা মানে সব কিছুই ঠান্ডা।
মানুষের মন-মানসিকতা কেমন থাকবে তা নির্ভর করে অনেকটা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর।
সাধারণত হুটহাট পেট ব্যথা, পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি অন্ত্রের সমস্যা জনিত
কারণেই হয়। আর এই অন্তরকে ভালো রাখতে প্রবায়োটিক এবং পেকটিন উপাদান প্রয়োজন।
আর এই দুইটি উপাদান পাওয়া যায় আপেল থেকে। তাই বলা যায় নিয়মিত আপেল খেলে
অন্ত্র ভালো থাকে।
দাঁত সাদা করে: আপেল যে শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা নয় এটি
আমাদের দাঁতের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত আপেল খেলে দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়।
এছাড়াও আপেল চিবিয়ে খাওয়ার সময় দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্য কণা পরিষ্কার
করে। মূলত আপেলের অম্লীয় গুণ এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন।
হাঁপানির তীব্রতা কমাতে: নিয়মিত আপেল খেলে হাঁপানি সমস্যা দূর হয়।
"এডভান্সেস ইন নিউট্রিশন" জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা
প্রায় ৬৮ হাজার নারীকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ানোর পর গবেষণা করে দেখেছেন
যারা নিয়মিত আপেল খেয়েছেন তাদের হাঁপানির তীব্রতা কমেছে সব থেকে বেশি এবং যারা
দিনে ১৫ শতাংশ আপেল খেয়েছেন তাদের রোগের তীব্রতা কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: নিয়মিত প্রতিদিন আপেল খেলে এটি হতে পারে আপনার
শরীরকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখা চাবিকাঠি। বিশেষ করে যারা ধূমপান করে তাদের
ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়। আপেলে ফাইটো
কেমিক্যাল ও আঁশ থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর সুবিধা পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের
কোষগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয় থেকে সুরক্ষা দেয়।
পেয়ারার পুষ্টি উপকারিতা
কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা পেয়ারার পুষ্টি
উপকারিতা সম্পর্কে জানব। সত্যি কথা বলতে কি পেয়ারার পুষ্টি উপকারিতা কথা বলে শেষ
করা যাবে না। এটি আমাদের দেশি ফল। দেশি ফল বলে মানুষ এটিকে অবহেলা করলেও আসলে এই
ফলের পুষ্টি উপকারিতা অনেক বেশি।
পেয়ারা আমাদের দেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এটি দামে কম এবং সহজলভ্য।
আমাদের ধর শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতায় পেয়ারার গুরুত্ব অনেক। চলুন জেনে নিই
পেয়ারার কিছু পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে।
পেয়ারার ১৫ টি পুষ্টি উপকারিতা
- ভিটামিন সি এর উৎস
- শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
- প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
- গর্ভবতীদের জন্য উপকারী
- রক্তস্বল্পতা দূর করে
- ইনফেকশনের জীবাণু ধ্বংস করে
- মাংসপেশি এবং নার্ভকে রিলাক্স করে
- ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সাথে লড়াই করে
- মাসিকের ব্যথা উপশমে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- মুখের ঘা দূর করে
- ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে
ভিটামিন সি এর উৎস: পেয়ারা কে ভিটামিন সি এর উৎস বলা হয়। এতে আছে
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য
করে, শরীরকে সুস্থ রাখে এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে: পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং কম
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যার ফলে এটি খেলে আমাদের শরীরের রক্তের শর্করার পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীর সুস্থ রাখে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
লাইকোপেন, কোয়ারকেটিন, ভিটামিন সি এবং অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা
আমাদের শরীরের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এগুলো আমাদের
শরীরের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি মেয়েদের বেস্ট
ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমাতেও পেয়ারা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত পেয়ারা খেলে শরীরে সোডিয়াম এবং
পটাশিয়ামের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে যার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে
থাকে। হার্টের অসুখ থেকে মুক্তি মেলে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা: পেয়ারার আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পায়খানা ঠিকমতো হতে সাহায্য করে।
দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে: পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
ভিটামিন এ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়মিত পেয়ারা
খেলে চোখের ছানি হওয়া সম্ভব না অনেক কমে যায়।
গর্ভবতীদের জন্য উপকারী: গর্ভবতী মায়েদের আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য
ফলিক এসিড ট্যাবলেট দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা কে চিকিৎসকরা ফলিক এসিড
ট্যাবলেট এর পরিবর্তে পেয়ারা খেতে পরামর্শ দেন। কারণ পেয়ারায় আছে প্রচুর
পরিমাণ ফলিক এসিড যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি
উপাদান।
রক্তস্বল্পতা দূর করে: পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। যা আমাদের
শরীরে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়।
এমনকি কারো বুকে যদি কফ জমে যায় তাহলে পেয়ারা হতে পারে এর ভাল একটি সমাধান।
ইনফেকশনের জীবাণু ধ্বংস করে: পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি
ইনফ্লামেটরি এবং অনেক শক্তিশালী এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা যা আমাদের শরীরের
ইনফেকশনের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
মাংসপেশি এবং নার্ভকে রিলাক্স করে: পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ
ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের মাংসপেশী এবং নার্ভকে রিলাক্স রাখতে সাহায্য করে।
তাই আপনি যদি একসাথে অনেক কাজ করে অনেক স্ট্রেস অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই একটি
পেয়ারা খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের এনার্জির মাত্রা বেড়ে যাবে।
আরোও পড়ুন: মরিঙ্গা পাউডার এর ২০ টি উপকারিতা
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এর সাথে লড়াই করে: পেয়ারা আমাদের শরীরে
থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে লড়াই করে আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মাসিকের ব্যথা উপশমে: আমাদের দেশে অনেক মেয়েরাই মাসিকের সময় পেট
ব্যথায় ভুগে। অনেকেই আবার পেট ব্যথা থামতে না পেরে অনেক ধরনের ব্যথার ওষুধ খায়।
কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে এর রস খেলে মাসিকের ব্যথা
দ্রুত উপশম হয় এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আপনি যদি মাসিকের সময় পেট
ব্যথায় কষ্ট পান তাহলে অবশ্যই পেয়ারা পাতার রস খেতে পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: পেয়ারায় গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক কম। আর
গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকায় এটি আমাদের শরীরের ওজন কমাতে বেশ ভালো কাজ করে।
মুখের ঘা দূর করে: অনেকের মুখের ভেতরে সাদা সাদা ছোট ছোট ঘা দেখতে পাওয়া
যায়। এটি মূলত ভিটামিন সি এর অভাবজনিত কারণে হয়ে থাকে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে
মুখের ঘা এর মতো আলসার ভালো হয়।
ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে: পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি৩
এবং ভিটামিন বি৬ যা আমাদের ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
আপেলের পুষ্টি উপাদান ও পেয়ারার পুষ্টি উপাদান
কি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা এই আর্টিকেলে আপেলের চেয়ে পেয়ারের পুষ্টিগুণ
অনেক বেশি। নিচের একটি ছকের মাধ্যমে এটি বুঝিয়ে দিচ্ছি। মনোযোগ সহকারে ছকটি
দেখলে আপনিও বুঝতে পারবেন আপেলের চেয়ে পেয়ারের পুষ্টিগুণ অনেক গুণ বেশি।
পুষ্টি উপাদান | আপেল (প্রতি ১০০ গ্রাম) | পেয়ারা (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৫২ক্যালোরি | ৬৮ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ১৪গ্রাম | ১৪গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩গ্রাম | ২.৫গ্রাম |
ফাইবার | ২.৪ গ্রাম | ৫.৪ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৪.৬ মিলিগ্রাম | ২২৮.৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.১৮ মিলিগ্রাম | ০.৭৩ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১০৭ মিলিগ্রাম | ৪১৭ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৬ মিলিগ্রাম | 18 মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৫ মিলিগ্রাম | ২২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১১ মিলিগ্রাম | ৪০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১ মিলিগ্রাম | ২ মিলিগ্রাম |
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স | ৩৯ | ১৬ |
আপেল না পেয়ারা কোনটা বেশি উপকারী
এই আর্টিকেলের উপরের অংশে আপেল না পেয়ারা কোনটি বেশি উপকারী এবং পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন আপেলের চেয়ে
পেয়ারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক বেশি এমনকি ভিটামিন সি এর পরিমাণও
আপেলের চেয়ে প্রায় কয়েক গুণ বেশি। ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেই দিক থেকে বিবেচনা করে পুষ্টিবিদরা জানান যে আপেলের চেয়ে পেয়ারার পুষ্টিগুণ
অনেক বেশি। অন্যদিকে আপেল বিদেশি ফল হওয়ায় এর দাম বেশি আর পেয়ারা বেশি ফল এবং
আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ এর চাষাবাদ হয় বলে এর দাম অনেক কম। আপেল সকল শ্রেণীর
মানুষ কিনে খেতে না পারলেও পেয়ারা প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষ কিনে খেতে পারবে।
সেক্ষেত্রে আপেলের চেয়ে পেয়ারায় বেশি সহজলভ্য। তাই বুঝা যায় আপেলের চেয়ে
পেয়ারা একটু হলেও বেশি উপকারী।
নাস্তায় একটি যথেষ্ট
আমরা অনেকেই একটি ভুল করি যে আপেল এবং পেয়ারা দুটোতেই তো পুষ্টি উপাদান অনেক
বেশি তাই একদিনে দুইটাই খেয়ে ফেলি। কিন্তু এটা ঠিক না। প্রতিদিনের নাস্তায় একটি
পেয়ারা কিংবা আপেলই যথেষ্ট। কারণ আপেল এবং পেয়ারা দুটোতেই প্রচুর পরিমাণ
ক্যালরি থাকে যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় এবং প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি
থাকে।
তাই প্রতিদিন আপেল কিংবা পেয়ারা যেকোনো একটি খেলেই আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ
পুষ্টিগুণ পেয়ে যাবে। আপেল বিদেশি ফল হওয়ায় এর দাম বেশি আর ওপর দিকে পেয়ারা
আমাদের বেশি ফল তাই এর দাম কম। আপনি যদি মনে করেন আপেলের বদলে পেয়ারা খাবেন
তাহলেও কোন ক্ষতি নেই। আবার একদিনে দুটো ফল না খেয়ে আপনার খাদ্য তালিকায় একদিন
পেয়ারা এবং একদিন আপেল রাখতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে দুটি ফলের পুষ্টি
উপাদানই পেয়ে যাবে।
সংরক্ষণের প্রক্রিয়া
আপেল কিংবা পেয়ারা পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি কেটে বাতাসে
কিছুক্ষণ রেখে দিলে এগুলোর উপর কালচে বর্ণ ধারণ করে। তাই এটি কেটে বাতাসে রেখে না
দিয়ে একটি মুখ বন্ধ কাঁচের বাটি বা বক্সের মধ্যে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
এভাবে রাখলে কাঁটা আপেল বা পেয়ারা উভয়েরই পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকবে।
সতর্কতা
কিডনি রোগীদের জন্য আপেল এবং পেয়ারা দুটোই খুব উপকারী ফল। কারণ উভয় ফলেই
পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক কম থাকে। আর কিডনি রোগীদের জন্য কম পটাশিয়াম যুক্ত
খাবার খাওয়া ভালো। বাজারে কয়েক জাতের আপেল দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনে
রাখতে হবে কিডনি রোগীদের জন্য সবুজ আপেল বেশি উপকারী। তাই তাদের সবুজ আপেল
দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিডনি রোগীদের জন্য পেয়ারা খুব উপকারী ফল হলেও এর বিচির অংশটা বাদ দিয়ে খেতে
হবে। কাঁচা পেয়ারার চেয়ে পাকা পেয়ারায় ক্যালরির পরিমাণ বেশি, তাই শক্তিটাও
অনেক বেশি। তবে মনে রাখবেন যাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি তাদের জন্য পাকা
পেয়ারা না দেওয়াই ভালো। তাদেরকে কাঁচা পেয়ারা দিতে হবে।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কোনটি বেশি পুষ্টিগুণ আপেল না পেয়ারা এটা সঠিক তথ্য
দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে
বুঝতে পারবেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো পোস্ট পেতে
www.digitalabida.com ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url