কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
ঔষধ এ কথা আমরা প্রায় সকলেই জানি। কালোজিরা খুব সাধারণ একটি জিনিস হতে পারে কিন্তু এতে রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। কালোজিরা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা নানা ধরনের রোগ থেকে আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে রক্ষা করে।
কালোজিরা এমন একটি ভেষজ যা হাজার হাজার বছর ধরে স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। কালোজিরা চিবিয়ে খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি মেলে। আজ আমরা জানবো কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা বিশেষ গুনে গুণান্বিত হওয়ায় সেই প্রাচীনকাল থেকে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা জানি কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ। আপনি যদি কালোজিরা উপকার সম্পর্কে না জেনে থাকেন এবং জানতে আগ্রহী হন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন। আসুন জেনে নিই কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
- পাইলসের সমস্যা দূর করে
- গ্যাস্টিকের সমস্যা কমায়
- কিডনি সমস্যা দূর করে
- হার্টের সমস্যা দূর করে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- এলার্জি দূর করে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
- রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা দূর করে
- শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিরাময় করে
- পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়
- রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে
- শিশুর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে
- মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
- নানা রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
কালোজিরা এমন একটি ভেষজ খাদ্য যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এই ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফাইবার পানির শোষণ করে পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। কালোজিরা এমন একটি খাদ্য যা হজমের এনজাইম নিঃসরণ উদ্দীপিত করতে পারে। এই এনজাইম খাবার সঠিকভাবে ভাঙতে এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে সাহায্য করে। এমনকি কালোজিরা চর্বি হজমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরোও পড়ুন: জিরা কিভাবে খেলে দ্রুত ওজন কমে। তলপেটের চর্বি কমানোর উপায়
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য
আমাদের শরীরে নানা ধরনের খারাপ কোলেস্টর থাকে যার ফলে আমাদের নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নিয়মিত কালোজিরা খেলে কালোজিরা উপস্থিত থাকা টাইমোকুইনোন নামক যৌগ আমাদের শরীরের LDL বা খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে এবং শরীরের HDL বা ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কবে সোনাই দেখা গেছে যারা নিয়মিত কালোজিরা খান তাদের এল ডি এল কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কমে গেছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
কালোজিরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই নিয়মিত কালোজিরা খেলে কালোজিরা উপস্থিত থাকা এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান গুলো রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরে ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা রক্তে সঠিকভাবে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে পারে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
কালোজিরায় থাকা উপাদান মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন কোন রোগে ভোগা বা অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং উদ্বেগ এর ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এমনকি মস্তিষ্কে প্রদাহ জনিত কোন কারণ থাকলেও স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। কালোজিরায় উপস্থিত থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন এক চা চামচ কালোজিরা এক কাপ গরম পানির সাথে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তা তৈরি করে পান করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
পাইলসের সমস্যা দূর করে
কালোজিরা পাইলসের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আপনাদের যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে উপকার পেয়ে যাবেন। পাইলসের সমস্যা থাকলে তিলের তেলের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে দ্রুত কাজ করে।
গ্যাস্টিকের সমস্যা কমায়
কালোজিরা হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি করে পেটের ফোলা ভাব, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া, ইত্যাদি সমস্যা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিকের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে পেটের মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি করা। আমরা জানি কালোজিরায় উপস্থিত প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আমাদের পেটে ব্যথা কমাতে এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে। কালোজিরায় উপস্থিত থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের কষ্ট দূর হয়।
কিডনি সমস্যা দূর করে
কালোজিরা কিডনির সমস্যা দূরীকরণে ব্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত প্রতিদিন কালোজিরার গুড়া অথবা ভাজা কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কিডনির পাথর হওয়া সম্ভব না কম হয়। নিয়মিত কালোজিরার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে অকালে কিডনির ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হার্টের সমস্যা দূর করে
হাটের মতো জটিল সমস্যা থেকেও রক্ষা মিলবে নিয়মিত কালোজিরা খেলে। এক কাপ দুধের সাথে এক থেকে দুই চামচ কালোজিরা গুড়া মিশিয়ে খেলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। হার্ট সুস্থ রেখে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালোজিরার জুরি মেলা ভার।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
সুস্থ দেহ এবং সুন্দর ত্বকের জন্য কালোজিরার ভূমিকা অনেক। কালোজিরাতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি থাকায় এটি মুক্ত রেডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সাধারণত মুক্ত রেডিকেল ত্বকের বার্ধক্য বৃদ্ধি করে তোকে ভাঁজ পড়া এবং বলি রেখা তৈরি করে।
নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে সেই সাথে ত্বকের লাল ভাব এবং চুলকানি কমাতেও কালোজিরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বককে ব্রণের হাত থেকে বাঁচায়। তাই নিয়মিত কালোজিরা খেলে ত্বকের কোষ পুনরায় তৈরি হয়, ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে তোলে।
এলার্জি দূর করে
আপনারা যারা এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কালোজিরা একটি কার্যকারী উপাদান। কালোজিরা সাথে পেয়ারা পাতার গুড়া মিশিয়ে খেলে এলার্জির সমস্যা দূর হয়। যেহেতু কালোজিরা মতই পেয়ারা পাতাতেও রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান তাই এই দুটি একসাথে মিছে উপকারিতা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
কালোজিরা সাথে পুদিনা পাতা বা রসুন মিশিয়ে খেলে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। যার ফলের প্রতিটা অঙ্গই ঠিকমতো কাজ করতে পারবে এবং সতেজ থাকবে। রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকলে শরীর নানা জটিলতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের শরীরে থাকা টেস্টোস্টেরন যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে। আর এই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি হয় নিয়মিত কালোজিরা খেলে। এছাড়াও কালোজিরা আমাদের শরীরে শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি কমায় এবং সুস্বাস্থ্য গঠনে সহযোগিতা। গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরা উভয় লিঙ্গের মানুষের লিবিড ও বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা মানসিক চাপ কমিয়ে, কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেইসাথে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কালোজিরায় থাকে প্রচুর পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
জন্ডিস এবং লিভারের সমস্যা দূর করে
কালোজিরায় উপস্থিত প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং জন্ডিসের সমস্যা দূর করতে পারে। কালোজিরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় লিভারের কোচগুলো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে যার জন্ডিসের সমস্যা সমাধানের কারন হতে পারে। এটি আমাদের লিভারে এক ধরনের পিত্ত তৈরি করে এবং সেই পিত্ত বৃদ্ধি করে যা চর্বি হজম করতে সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিরাময় করে
হাঁপানি সমস্যার একটি বিশেষ কারণ হলো সাত নালির প্রদাহ হওয়া। কালোজিরায় থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য শরীরের শ্বাসনালির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন উপসর্গগুলো উন্নতি করে শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করে। হাঁপানি হলে শ্বাসনালির গুলো সংকুচিত হয়ে যায় যার ফলে হাঁপানি রোগীদের শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।
আরোও পড়ুন: সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়।
তাই নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে শ্বাসনালির পেশিগুলো শিথিল হয় এবং শাসক প্রক্রিয়া উন্নত হয়। এমনকি এলার্জিজনিত যেকোনো শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি সমস্যা হলে কালোজিরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়
অনেক মেয়ে পিরিয়ডের সমস্যায় ভুগে থাকে। কালোজিরা অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পিরিয়ডের সময় নিয়মিত পর্যাপ্ত রক্ত পরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কালোজিরা রক্ত পরিবহনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়তা করে। তাই নিয়মিত কালোজিরা খেলে পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে
বর্তমানে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথায় অনেক মানুষ ভুগছে। এই রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথার জন্য কালোজিরা একটি বিশেষ খাবার হতে পারে। কালোজিরা জয়েন্টের ব্যথা, পেশীর ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাল্লুজীরা খেলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে
প্রতিটা বাবা মায়ের উচিত শিশু দৈহিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা। কালোজিরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং লোহার মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে দুই বছরের আগে শিশুকে কালোজিরা দেওয়া যাবে না এতে শিশুর পেট ফোলা ভাব থেকে আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। দুই বছরের পর থেকে খুবই অল্প পরিমাণের কালোজিরা বাচ্চাকে দেওয়া যেতে পারে।
মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
সেই প্রাচীন কাল থেকে মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কালোজিরার বেশ সুনাম রয়েছে। কালোজিরায় উপস্থিত থাকা উপাদান গুলো দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে যার ফলে মায়ের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রথমবার মা হয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী এই কালোজিরা। মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা চিবিয়ে খেতে পারেন এছাড়াও ভর্তা করে ভাতের সাথে মাখিয়েও খেতে পারেন।
নানা রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে
নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং শরীর থাকে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পেটে ব্যথা, গলাও দাঁতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, কাশি, হাঁপানি, টিউমার, ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়া, জন্ডিস, দাদ, একজিমা, উচ্চ রক্তচাপসহ আরো অনেক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কালোজিরার পুষ্টিগুণ
কালোজিরায় রয়েছে ১৫ টি অ্যামাইনো এসিড, ২১ শতাংশ প্রোটিন, ৩৮ শতাংশ শর্করা, এবং ৩৫ শতাংশ স্নেহ জাতীয় পদার্থ। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের খাদ্য হজমে সহযোগিতা করে।
প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
কালোজিরায় উপকারিতা বেশি বলেই যে তা প্রচুর পরিমাণ খাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। কালোজিরা খাওয়ারও পরিমাপ আছে। কালোজিরা খাওয়ার পরিমান শরীরের হজম শক্তির ওপর নির্ভর করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে কালোজিরা প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ পরিমাণ খেতে পারবেন। হবে মনে রাখবেন হজমশক্তি কম থাকলে দৈনিক এক চামচের বেশি কোনভাবেই কালোজিরা খাওয়া যাবে না।
বেশি খেলে শুরু হতে পারে শারীরিক অনেক জটিলতা। প্রথমে কালোজিরা খাওয়া শুরু করার সময় অল্প পরিমাণের শুরু করতে হবে, তারপর ধীরে ধীরে একটু করে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। মাত্রা অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে।
কালোজিরা খেলে কি ওজন কমে
কালোজিরা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এটি শরীরের অনেক রোগের উপশম এবং ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে। তবে কালোজিরা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। শরীরের খারাপ চর্বি গলিয়ে ওজন কমাতে কালোজিরার জুরি মেলা ভার। এছাড়াও শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এই কালোজিরা।
কালোজিরা খেলে কি পেটে গ্যাস হয় ?
না কালোজিরা খেলে গ্যাস হয় না বরং গ্যাস্টিকের সমস্যা ভালো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে খালি পেটে কালোজিরা খেলে হজমে সহযোগিতা করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে এটি আমাদের দেহের হজমকারী এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় যার ফলে যে কোন খাবার খুব সহজে তাড়াতাড়ি হজম হয়। এতে পেটের ফোলা ভাব এবং গ্যাস্টিকের কোন সমস্যা থাকলে তা ভালো হয়ে যায়।
কালোজিরা ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
- কালোজিরা ও মধু প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
- বাতের ব্যথা উপশম করে
- সর্দি কাশি হতে মুক্তি পাওয়া যায়
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
- রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে
- হৃদরোগ জনিত সমস্যার আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে
- যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
টানা সাত দিন নিয়মিত কালিজিরা খেলে শারীরিক অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন ধরুন অ্যাজমা, এলার্জি, শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিকস থেকে মুক্তি দেয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, পেটের সমস্যা দূর করে, শরীরের শক্তি যোগায়, শরীরকে আরো বেশি কর্মঠ ও শক্তিশালী করে তোলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
যেহেতু কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সর্ব রোগের ওষুধ সেহেতু নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কালোজিরা অনেক উপায়ে খাওয়া যায় যেমন ধরুন
- চিবিয়ে: কালোজিরা সরাসরি খালি মুখে চিবিয়ে খাওয়া যায় ।
- চা বানিয়ে: কালোজিরা গরম পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যায়
- ভর্তা করে: কালোজিরার ভর্তা অনেক মুখরোচক এবং সুস্বাদু একটি খাবার। তাই অনেকেই কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে মিশিয়ে খায়।
- ভাজা কালোজিরা: কালোজিরা এবং তিল একসাথে ভেজে খাওয়া যায়। এতে মুখের রুচি বাড়ে।
- গুড়া করে: অনেক সময় কালোজিরা গুড়া করে অনেক খাবারের সাথে মিশিয়ে অনেকেই খেয়ে থাকেন।
কালোজিরার ক্ষতিকর দিক
কালোজিরায় যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণের কালোজিরা খেলে আমাদের ত্বকে চর্মরোগ সৃষ্টি হয়, শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধার সৃষ্টি করে, পাকস্থলী সংকুচিত করে, বমি বমি ভাব হয়, অকাল গর্ভপাত হয়ে যায়, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায় ফলে কোন জায়গা কেটে গেলে রক্তপাত বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং বুক জ্বালাপোড়া ভাব হয়।
তাই কখনোই কালোজিরা বেশি খাওয়া ঠিক নয় এটি পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। শরীরে অন্য কোন জটিল অসুখ থাকলে অবশ্যই মনে রাখবেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর কালোজিরা খাবেন।
চুলের যত্নে কালোজিরা তেল
আসলে চুল ছাড়া আমাদের সৌন্দর্য পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় না। যাদের চুল নেই বা মাথায় চুল কম তারাই জানে চুল না থাকার কষ্টটা কি। আপনার মাথায় যদি চুল কম হয়ে থাকে তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু আপনার জন্য। এই অংশটুকু পড়ে আপনি জানতে পারবেন মাথায় নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে। তাই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
কালোজিরা কে বলা হয় মহাঔষধ। এটি সকল রোগের সমাধান। এমনকি আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতেও সহযোগিতা করবে এই কালোজিরা তেল। চুলের ফলিক গুলো শক্তিশালী করে এবং প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এই কালোজিরার তেল। এছাড়াও মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমায় যার ফলে দ্রুত চুলপাড় কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটি মাথার খুশকি দূর করে চুলকে করে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্তর।
আরোও পড়ুন: ইসুবগুলের ভুষির ৮ টি উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা তেল ব্যবহার করার জন্য প্রথমে আপনার হাতের তালুতে অল্প একটু তেল নিয়ে মাথার তালুতে বুঝত থাকুন। যে অংশগুলোই চুল কম বা টাক পড়ে গেছে সেই অংশগুলোতে ১৫ মিনিট রেখে ম্যাসাজ করুন। এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে কালোজিরা তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কিছু কথা
আজ আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। আশা করছি এটি আপনাদের উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url