সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম
একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কাজ হচ্ছে সন্তান জন্ম দেওয়া। একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান গর্ভে থাকার সময় যেমন যত্ন নিতে হয় ঠিক তেমনি সন্তান জন্মদানের পরেও অনেক যত্ন নেওয়া এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের চেয়ে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়া অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ সিজারের পর নারীদের শরীরের ওজন এবং পেটের মেদ অতিরিক্ত বেড়ে যায়। আর পেটের এই মেদ ঝরিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়।
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায় অনেক কঠিন। সিজারিয়ান অপারেশনের পর মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন এবং পেটে মেদ জমা হয়। শরীরের এই মেদ কমিয়ে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। তাই অনেক মেয়েরাই এই মেদ কমাতে ব্যর্থ হয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সারা জীবন কষ্ট করে কাটিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন: শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায়
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর কিছু সহজ উপায় রয়েছে। আপনারা যদি এই উপায়গুলো মেনে চলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে তাহলে আপনিও পেটের মেদ কমিয়ে শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। আসুন জেনে নিই সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে।
সিজারের পর মেদ কমানোর ১০টি উপায়
- বাচ্চাকে বেস্ট ফিডিং করানো
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
- হালকা ব্যায়াম করা দ্ধ
- খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
- পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো
- নিয়মিত ইয়োগা করা
- পেটে বেল্ট পড়ে থাকা
- ভারী ব্যায়াম না করা
- হতাশ না হওয়া
- খাওয়া দাওয়া মেপে করা
বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভবতীর যেমন যত্ন করতে হবে ঠিক তেমনি সন্তান জন্মদানের পর বাচ্চার মায়েদের শরীরের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হবে। না হলে শরীরে যুক্ত হবে অতিরিক্ত ওজন এবং পেটে মেদ। যা খুব সহজে কমানো যাবে না। তাই শুরু থেকেই যত্নশীল হতে হবে।
বাচ্চাকে বেস্ট ফিডিং করানো
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো। বাচ্চা জন্ম লাভের পর থেকে ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে মায়ের পেটের অতিরিক্ত মেদ কমে যাবে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
পানি এমন একটি খাদ্য যা আমাদের শরীরের ফ্লুইড ব্যালেন্স রক্ষা করতে পারে। পানি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করলে আমাদের খিদে কম পাবে, পেট ভরা থাকবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
হালকা ব্যায়াম করা
স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের অন্তত দেড় মাস পর এবং সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের প্রায় তিন মাস পর থেকে হালকা কিছু ব্যায়াম শুরু করতে হবে। এখানে পেটের কোন ব্যায়াম করা যাবে না। টানা তিন মাস হালকা হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমতে শুরু করবে।
খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
ভাত, মিষ্টি সহ শর্করা জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, তেল চর্বি জাতীয় খাবার এসব অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এসব খাবারের পরিবর্তে ভালো প্রোটিন, ফল ও সবজি খেতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলে শরীরের ক্লান্তি বোধ হয় যার ফলে ঘুম কাটাতে অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায় তাই ওজন বেড়ে যায়। সন্তান জন্মদানের পর বাচ্চার কারণে এবং মায়েদের শারীরিক জটিলতার কারণে অনেক সময় মায়েরা ঘুমানোর সময় পান না। তাই কিছুটা সময় বের করে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর প্রয়োজন।
নিয়মিত ইয়োগা করা
ইয়োগা পেটের মেদ কমানোর জন্য যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। যেমন প্রাণায়াম। নিয়মিত ইয়োগা করলে পেটের মাংসপেশি দৃঢ় হয় মস্তিষ্ক শিথিল হয়। যার ফলে আমাদের শরীরে বাড়তি ওজন কমে যায়।
পেটে বেল্ট পরে থাকা
সিজারের পর পেটে বেল্ট করে থাকা অনেক বিরক্তিকর একটি কাজ। এটি বিরক্তিকর হলেও খাওয়া, ঘুমানো এবং গোসলের সময় ছাড়া প্রায় সব সময় বেল্ট করে থাকা উচিত। পেটে বেল্ট পড়ে থাকলে পেটের সাইজ ঠিক থাকে। ঝুলে যায় না।
ভারী ব্যায়াম না করা
সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্মদানের পর প্রথম ছয় মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় মায়েদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এই সময় ভারী কোন ব্যায়াম করলে মায়েদের শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। তাই ভারী ব্যায়াম না করে হালকা হালকা ব্যায়াম করা এবং দিনে ৪৫ মিনিট করে হাঁটাহাঁটি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে।
হতাশ না হওয়া
সিজারিয়ান অপারেশনের পর মায়ের শরীরের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে মনের মধ্যে হতাশা কাজ করে। তারা ভাবে আর আগের চেহারা ফিরে পাবে না। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বরং হতাশ না হয়ে কিছু নিয়ম মেনে চললেই ফিরে পাবেন আবার আপনার সেই মেদহীন আকর্ষণীয় দেহ।
খাওয়া দাওয়া মেপে করা
সিজারের পর অতিরিক্ত হারে খাওয়া যাবে না। খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার অল্প অল্প করে ঘন ঘন খেতে হবে। ভারি খাবার একসাথে বেশি পরিমাণ খেয়ে নিলে ওজন বেড়ে যাবে। তাই খাওয়া দাওয়া অবশ্যই মেপে করতে হবে।
সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারের নিয়ম
- সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করার সময় মনে রাখতে হবে সঠিক মাপের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
- বেল্ট পেটে বাধার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে তা অতিরিক্ত শক্ত বা অতিরিক্ত ঢিলাঢালা যেন না হয়। অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ের পেটে বেল্ট বাঁধতে হবে।
- খাবার খাওয়ার পরপরই পেটে বেল্ট বাধবেন না। খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর বেল্ট পড়বেন।
- বিছানায় শুয়ে গেলে এবং গোসলের সময় বেল্ট পড়বেন না। এই সময় বেল্ট খুলে রাখবেন।
- বেল্ট ব্যবহারের সময় মনে রাখতে হবে বেলটি যেন ইলাস্টিক ফাইবারের হয়।
- সিজারের কত মাস পর থেকে ব্যায়াম করা যায়
- সিজারের কত মাস পর থেকে ব্যায়াম করা যায় এটি সম্পর্কে চিকিৎসকরা কি বলে সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলেরে অংশে চলুন জেনে নিই। সাধারণত আপনি সিজারের প্রায় ছয় থেকে আট সপ্তাহ পরেই ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই সময় পেটের কোন ব্যায়াম করা যাবে না।
- এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা কিছু ব্যায়াম আপনি করতে পারেন। এই ব্যায়ামগুলো আপনার শরীর ঠিক রাখতে এবং পেটে চর্বি হওয়া থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে অবশ্যই আপনার শারীরিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে তারপর শুরু করবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তাহলে ক্ষতি হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
সিজারের কত মাস পর থেকে ব্যায়াম করা যায়
সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর ঘরোয়া উপায়
সাধারণত মাতৃকালীন সময় মেয়েদের জীবনে একটি বিশেষ যাত্রা। এই সময় মেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনের পরিবর্তন হয়। সাধারণত বাচ্চা পেটে থাকা সময় মায়েদের পেটে ফাটার দাগ হয়ে যায়। আবার সিজার হওয়ার পর সিজারের দাগ রয়ে যায়। ডেলিভারির পর সেই দাগ কমানোর জন্য মায়েদের মনে সব সময় একটা দুশ্চিন্তা কাজ করে।
যার ফলে তারা বাজার থেকে অনেক ধরনের প্রসাধনী বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে। যা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কেমিক্যাল এর ব্যবহার না করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের এই দাগ কমাতে পারি। চলুন জেনে নিই সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায়।
এলোভেরা জেল: শরীরের যেকোনো দাগ মিশানোর জন্য এলোভেরা জেল সবচেয়ে ভালো একটি উপকরণ। এলোভেরা জেলে থাকা এন্টি ইনফ্লামেন্টারি প্রপারটি এবং প্রাকৃতিক নিরাময় এজেন্ট যা আমাদের শরীরের মাতৃত্বকালীন বা অপারেশনের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এর জন্য একটি এলোভেরার পাতা থেকে দুই চামচ জেল নিয়ে দাগের জায়গায় মেসাজ করতে থাকুন। ২০ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরকমভাবে কয়েক সপ্তাহ করলেই দেখবেন দাগ কমে গেছে।
আরো পড়ুন: প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত
মধু: মধুতে থাকা প্রবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গবেষকরা মনে করেন মধু নতুন টিস্যু গঠনে এবং যেকোনো ক্ষতর দাগ নিরাময়ে এক কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ মধু নিয়ে দাগের জায়গায় ম্যাসাজ করুন। দেখবেন কিছুদিন পর দাগ মিশে গেছে।
চিনি: ডেলিভারির পর যে কোন দাগ দূর করার জন্য চিনি খুব উপকারী। এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে এক চামচ চিনি আধা চা চামচ অলিভ অয়েল এবং এক চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে দাগের জায়গায় কিছুক্ষণ মেসেজ করুন। চিনিতে থাকা প্রাকৃতিক স্ক্রাব যা ত্বকের এক্সথলিয়েট করে, লেবুতে আছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং প্রোপার্টিস এবং অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরি প্রোপাটিস শরীরের যেকোনো জায়গার দাগ নিরাময়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
কোয়াটার বাটার: ডেলিভারির পর সিজারের দাগ দূর করতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কোয়াটার বাটার। কোয়াটার বাটারে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিজারের দাগ হালকা করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দাগ নিরাময়ের পাশাপাশি কোয়ার্টার বাটার, সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে, ত্বকের দাগ নিরাময় করে ত্বককে করে অনেক মসৃণ, আদ্র এবং নমনীয়।
সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
একটা সময় স্বাভাবিক প্রসাবে সন্তান জন্ম লাভ করলেও বর্তমানে এটি অনেক কমে গেছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে বা অনেকেই কষ্ট কম হবে মনে করে সিজারিয়ান পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দান করেন। কিন্তু সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিলে মেয়েদের জীবনে নেমে আছে অনেক দুর্ভোগ।
সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর দেখা দেই নানা শারীরিক জটিলতা এবং শরীরের ওজন ও পেটের মেদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। পেটের এই মেদ কমিয়ে আগের অবস্থায় ফেরত যাওয়ার অনেক কঠিন ব্যাপার। পেটের এই মেদ কমাতে অনেক সময় লেগে যায়। অনেকেই সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করেন।
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের পর বেল্ট ব্যবহার করলে কি সুবিধা পাওয়া যায় নাকি অসুবিধা হয় এই ব্যাপার নিয়ে। সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটির এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আসুন জেনে নিই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের পর বেল্ট ব্যবহারের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে।
বেল্ট ব্যবহারের সুবিধা
- সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্মদানের সময় পেটের কয়েক স্তরের মাংস পেশী কেটে যায়। সিজারের ফলে বেল্ট ব্যবহারের কারণে পেটে এক ধরনের প্রেসার সৃষ্টি হয়। বেল্ট ব্যবহারের ফলে যে প্রেসারের সৃষ্টি হয় সেটি কেটে যাওয়া মাংসপেশিগুলো জোড়া লাগার পদ্ধতি কে ত্বরান্বিত করে।
- আমরা অনেকেই সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করে থাকি। সিজারের পর হাঁটাচলা করলে কাটা জায়গায় অনেক ব্যথা হয়। কিন্তু পেটে বেল্ট ব্যবহার করলে পেটের কাঁটা অংশটি স্টেবল রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে হাঁটাচলা বা নড়াচড়া করলেও সহজে ব্যথা হয় না।
- সিজারিয়ান অপারেশনের পর এনেস্থিসিয়ার প্রভাব কেটে যাওয়ার পর বেল্ট ব্যবহার করতে হবে। বেল্ট ব্যবহারের মাধ্যমে পেটের মেদ কমাতে অনেকটা সাহায্য করে। তাই নিজের সঠিক সাইজ অনুযায়ী বেল্ট পড়া উচিত। বেশি টাইট বা ঢিলা বেল্ট পড়লে উপকারের বদলে ক্ষতি বেশি হয়।
- অনেকেই মনে করেন সিজারিয়ান অপারেশনের পর বেল্ট পড়লে কাটা জায়গার উপর চাপ বেশি পরে। এটি আসলে ভুল ধারণা। কারণ কোমরের সাইজ মেপে সঠিক সাইজের বেল্ট পড়লে কাটা জায়গার কষ্ট কম হয়। হাঁটা চলাফেরার সময় অপারেশনের জায়গায় ব্যথা হয় না।
- সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারের ফলে কোমরের ব্যথা উপশম হয়।
- সন্তান জন্মদানের পর মেয়েদের জরায়ু কিছুটা ঢিলা হয়ে যায়। সিজারের পর নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার করলে চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে জরায়ু পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে।
- সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করলে নবজাতককে কোলে নিতে, দুধ খাওয়াতে, বা হাঁটাচলা করার সময় ব্যথা কম হয়।
বেল্ট ব্যবহারের অসুবিধা
- আমরা অনেক সময় সিজারিয়ান অপারেশনের পর শুয়ে থাকা অবস্থাতেও বেল্ট করে শুয়ে যায়। যার ফলে পেটে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হয়।
- সিজারিয়ান অপারেশনের পর পেটের কাটা অংশের নড়াচড়া থামাতে বেল্ট ব্যবহার করা হয়। তাই অপর স্থানের এক বা দুই সপ্তাহ বেল্ট ব্যবহার করলেই চলে। অনেকেই মনে করেন বেল্ট পড়ে থাকলে এটি পেটের মেদ কমাবে তাই দীর্ঘ সময় বেল্ট ব্যবহার করেন। যার ফলে উপকারের বদলে অপকার বেশি হয়।
- আপনারা অনেকেই বেল্ট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে সিজারের পর সব সময় বেল্ট করে থাকেন। এর ফলে কাটা জায়গায় আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এবং ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সব সময়ই বেল্ট ব্যবহার না করে শুধু হাঁটাচলা করার সময় বেল্ট ব্যবহার করবেন।
- বেল্ট কেনার সময় মনে রাখবেন কমদামি বেল্ট কিনবেন না। এমন বেল্ট কিনুন যে বেল্টের ব্যাক সাপোর্ট রয়েছে। কম দামি বেল্ট কিনলে আমাদের শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
- গরমের সময় বেশিক্ষণ বেল্ট ব্যবহার করলে কাটা জায়গায় ঘাম হয়ে ইনফেকশন বা চুলকানি হতে পারে।
- সিজারের পর অতিরিক্ত টাইট বেল্ট ব্যবহার করলে হার্নিয়া হতে পারে।
সিজারের পর পেট ফুলে যায় কেন
সিজারের পর পেট ফুলে যায় কেন এটি নিয়ে প্রায় প্রতিটা মেয়ে অনেক চিন্তিত থাকে। কারণ বেশিরভাগ মেয়েদের সিজারের পর পেট অনেকটা ফুলে যায়। বিশেষ বিশেষ কিছু কারণের জন্য সিজারের পর সাধারণত মেয়েদের পেট ফুলে যায়। সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সিজারের পর পেট ফুলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
- অন্ত্রের গ্যাস
- ফ্লুইড রিটেনশন
- অন্ত্রের কার্যক্রমে বিঘ্ন
- অন্ত্রের প্রদাহ
- বদহজম
- পেটের মাংসপেশী দুর্বল হওয়া
অন্ত্রের গ্যাস: অনেক সময় অস্ত্র পাচারের পর আমাদের মঞ্চের গতি ছিল তা অনেক বেশি দিয়েই রয়ে যায় যার ফলে পেটে গ্যাস জমে পেট ফুলে যেতে হবে। সাধারণত এটি অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের কয়েক দিন পর থেকে শুরু হতে দেখা যায়। আর এটি কমতে কিছুটা সময় নেই।
ফ্লুইড রিটেনশন: অনেক সময় সিজারের পর মেয়েদের শরীরে অনেক বেশি পানি জমা হতে দেখা যায়। যার ফলে পেট অনেক ফুলে যায়। সিজারের পর ফ্লুইড রিটেনশন একটি বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যার ফলে পেট কিছুটা ফুলে যায়।
অন্ত্রের কার্যক্রমে বিঘ্ন: সিজারের সময় সাধারণত পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলোতে সরাসরি স্পর্শ করা হয়ে যায়। যার ফলে এটি মন্ত্রের কার্যক্রমে অনেকটা বাধা সৃষ্টি করে। তাই পেট অনেক সময় ফুলে যায।
অন্ত্রের প্রদাহ: পেটে অস্ত্র পাচারের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য একটু অন্ত্রে প্রদাহ অনুভূত হয় যার ফলে অনেক সময় পেট ফুলে যায়।
বদহজম: কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিজারের পর অনেক সময় গর্ভবতী মেয়েরা খাবার হজম করতে পারে না। কারণ তাদের হজম ক্ষমতা কমে যায়, পেট ফুলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
পেটের মাংসপেশী দুর্বল হওয়া: সিজারের পর স্বাভাবিকভাবে পেটের মাংস পেশি অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে পেট ফুলে যায় এবং ব্যথা অনুভব হয়।
সিজারের পর পেট কমানোর ওষুধ
সিজারের পর পেট কমানোর ওষুধ সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে করুন। কারণ অনেকেই সিজারের পর পেট কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করতে আগ্রহী হন। পেটে একটি ভুল পদ্ধতি। কারণ সিজারের পর পেটের চর্বি কমানোর জন্য কখনোই ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
পেটের চর্বি ওষুধ দিয়ে নয় বরং নিজের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করে, নিয়মিত ব্যায়াম করে এবং জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করে পেট কমানো সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। সিজারের মত একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ পার করার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন তাই এক্ষেত্রে কোনো ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চলুন জেনে নিই সিজারের পর ওষুধ খেলে আমরা কি কি ঝুঁকি সম্মুখীন হতে পারি সেটি সম্পর্কে।
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- দুধ উৎপাদনে বাধা
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: সাধারণত সিজারের পর মেয়েদের শরীর অনেক বেশি দুর্বল থাকে। তাই এই সময় তারা যদি পেট কমানোর জন্য কোন ওষুধ খায় তাহলে মেয়েদের শরীরে সেই সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব অনেক বেশি ফেলতে পারে। যার ফলে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দুধ উৎপাদনে বাধা: সিজারের পর আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে ব্রেস্টফিডিং করিয়ে থাকেন তাহলে ওষুধের পাশ্চাত্য প্রতিক্রিয়া আপনার দুধের মাধ্যমে শিশুর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে আপনার পাশাপাশি আপনার বাচ্চাটিও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না: সিজারের পর ওজন কমানোর জন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কারন এই সময় কোন ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রচন্ড সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
সিজারের পর শোয়ার নিয়ম
সিজারের পর শোয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার যদি জানা থাকে তাহলে অন্য ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ শোয়ার নিয়ম না জানার কারণে অনেক সময় সিজারের পর পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং কাটা জায়গা ফুলে যায়। যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সিজারের পর শোয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
সাধারণত সিজারের পর মেয়েদের সুস্থ হতে প্রায় তিন মাস মত সময় লেগে যায়। আর এই তিন মাস অনেক সাবধানে থাকতে হয়। উঠা বসা হাটা এমনকি শোয়ার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সিজারের পর শুয়ার পূর্বে অবশ্যই পায়ের দিকে একটি বালিশ দিয়ে শুতে হবে। আর মাথার দিকে আরও একটি বালিশ দিয়ে উঁচু করে মাথা রাখতে হবে। অর্থাৎ সিজারের পর মাথার নিচে একটি বালিশ এবং পায়ের দিকে একটি বালিশ দিয়ে ঘুমালে অনেক আরাম বোধ হয়। তাই সিজারের পর এভাবে শোয়া উচিত।
সিজারের পর সেলাই ব্যথা হলে করণীয়
সিজারের পর সেলাই ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের জানাবো আজ। সিজারের পর ব্যথা কমাতে নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খাদিজা বেগম কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন সিজারের পর উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করলে ব্যথা অনেকটা উপশম হয়।
আরো পড়ুন: কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়
এছাড়াও তিনি আরো বলেন কিছু সাধারণ ব্যায়াম আছে যেগুলো করলে ব্যথা অনেক কমে যায়। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর ব্যায়াম করতে হবে না হলে সেলাইয়ের জায়গা ফেটে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ সকল নিয়ম গুলো মেনে চললেই সিজারের পর আর ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
শেষ কিছু কথা
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সিজারের পর বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন করে মেদ কমানোর উপায়, সিজারের পর পেটে বেল্ট পড়ার নিয়ম, পেটের দাগ উঠানোর উপায়, সিজারের পর শোয়ার নিয়ম, ব্যথা কমানোর উপায় সহ আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আপনি যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এটি পড়ে আপনি অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন। যা আপনি অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url