পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক
আমাদের দেশের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়। তাই এদেশের মানুষের ভাত একটি প্রধান খাবার। এখান থেকেই মূলত আমাদের দেশে পানিতে ভাত ভিজিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। আর এই ভিজিয়ে রাখা ভাতকেই বলা হয় পান্তা ভাত।
আমাদের দেশ গ্রীষ্ম প্রধান দেশ হওয়ায় আবহাওয়া অত্যন্ত গরম থাকে। এই গরমে ভাত সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ভাত নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পানিতে ভিজিয়ে এটি সংরক্ষণ করা হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাবো।
পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা
পান্তা ভাতের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পান্তা ভাত বাঙালিদের একটি জনপ্রিয় খাবার। রাতের খাবারের পর বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে তৈরি করা খাবার হচ্ছে পান্তা ভাত। প্রতিবছর বাঙ্গালীদের নববর্ষ উৎসবে পান্তা ইলিশ খেয়ে উদযাপন করা হয়।
আরোও পড়ুন: চুইঝালের যত পুষ্টি উপকারিতা খাওয়া এবং সংরক্ষণের নিয়ম
পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা এর উপর একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করেছেন। গবেষণা করে তারা পান্তা ভাতের অনেক অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা এবং পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে
পান্তা ভাতের ১৫ টি উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়
- শরীরের হাড় শক্ত করে
- শরীরের প্রদাহ দূর করে
- কোলেস্টেরল মাত্রা কমায়
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে
- শরীর ঠান্ডা রাখে
- ভিটামিন বি১২ বাড়ে
- এসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- মাতৃ দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
- হজমে সাহায্য করে
- ত্বক ঝকঝকে করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কয়েক দল বিজ্ঞানী পান্তা ভাত নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে।
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়: পান্তাভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন । আর এই আয়রন শরীরে রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
শরীরের হাড় শক্ত করে: পান্তা ভাতে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের নিঃসৃত এনজাইম কে সক্রিয় করতে সাহায্য করে।
শরীরের প্রদাহ দূর করে: গবেষণা করে দেখা যায় পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটা সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মত মেয়েটাবলাইটস যা আমাদের শরীরে প্রদাহ এবং যন্ত্রণাকে দূর করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: আমাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে পান্তা ভাত।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: পান্তা ভাতে থাকা আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মত মেটাবলাইট যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে: গবেষণায় দেখা গেছে পান্তাভাতে রয়েছে ল্যাকটিন অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটিকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।
শরীর ঠান্ডা রাখে: পান্তা ভাত মূলত গরমের সময় সকালের নাস্তা হিসেবে খাওয়া হয়। নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি১২ বাড়ে: পান্তা ভাত গাজন প্রক্রিয়ার ফলে এতে ভিটামিন বি১২ অনেক গুণ বেড়ে যায়। যার ফলে আমাদের শরীরে ক্লান্তি দূর হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা দূর করতেও পান্তা ভাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়: এসিডিটির উপশমে পান্তা ভাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীদের মতে পান্তা ভাত আমাদের শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে । যার ফলে আলসার রোগীদের অনেক উপকার হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: পান্তা ভাত আমাদের শরীরে ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল সমস্যা দূর হয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পান্তা ভাত অনেক উপকারী একটি খাবার। কারণ সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। অপরদিকে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। তাই এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মাতৃ দুধ বাড়াতে সাহায্য করে: মাতৃদুদ্ধ উৎপাদন বাড়াতে ল্যাকটিক এসিডের প্রয়োজন হয়। পান্তা ভাত গাজন প্রক্রিয়ার ফলে এতে প্রচুর পরিমাণ ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয় যা স্তন্যপান করানো মায়েদের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
হজমে সাহায্য করে: পান্তা ভাতের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোবায়োটিকস যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি পান্তা ভাত সারাদিন কাজ করার শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
ত্বক ঝকঝকে করে: পান্তা ভাতকে 'বিউটি সিক্রেট অফ এশিয়া' বলা হয়। কারণ এটি আমাদের শরীরে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। হলে আমাদের ত্বক মসৃণ, টানটান এবং ভেতর থেকে উজ্জ্বল দেখায়।
পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক
পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক এ আর্টিকেলের উপরের অংশে আপনাদের পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।
পান্তা ভাতের উপর অনেক গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা জানান পান্তা ভাতে তেমন কোন ক্ষতিকর বা খারাপ দিক পাওয়া যায়নি। তবে অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চলুন জেনে নেই পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
- ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভাত পানিতে রাখলে সেভ হতে ফারমেন্টেশন এর ফলে অ্যালকোহল উৎপাদন হয়। আর সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাচ ম্যাজ করে এবং ঘুম পায়। তাই পানি দিয়ে ভাত ১২ঘন্টার বেশি ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়।
- পান্তা ভাত তৈরি করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে পাত্রে পান্তা তৈরি করবেন সে পাত্রটি যেন পরিষ্কার হয় এবং অবশ্যই ভাতে যে পানি ব্যবহার করবেন সেই পানিটিও যেন পরিষ্কার হয়। না হলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে এবং মানুষ সেই ভাত খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
- গবেষকরা পান্তা ভাতের উপর এখনো গবেষণা চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত পান্তা ভাত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর কিনা সেটা বের করার কাজ চলছে।
- পান্তা ভাত দীর্ঘ সময় ধরে ফার্মেন্টেড থাকলে সেই ভাত খাওয়ার ফলে পেটের পিড়া বা ডায়রিয়া হতে পারে। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ভাত বেশি সময় যেন পানিতে ভিজে না থাকে।
পান্তা ভাত কিভাবে তৈরি করা হয়
পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক এই আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের পান্তা ভাত কিভাবে তৈরি করা হয় সেই সম্পর্কে জানাবো। সাধারণত রাতের বেঁচে যাওয়া ভাত সংরক্ষণ করার জন্য বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে পান্তা তৈরি করা হয়। পান্তা তৈরি করার জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে ভাত ঢেলে তার সাথে পরিষ্কার পানি মিশিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
আরোও পড়ুন: সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়। সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম
এভাবে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর পানি এবং ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি হবে। এ সময় পানির নিচে থাকা ভাত বাতাসে অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে পারে না।
গবেষকরা বলেছেন পানির কারণে ভাতের এই ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং এ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পাত্রের ভিতরে এনারোবিক ফরমেনটেশনের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞানী মধুমিতা বাড়ুয়া বলেছেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন, "এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়।"
এছাড়া তিনি আরও বলেন এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে সব আন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট থাকে সেগুলো ক্ষয় হয় এবং ভাতটাও হাইড্রেট হয়ে থাকে।
মূলত এভাবেই তৈরি হয় পান্তা ভাত। যা আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অতীব জনপ্রিয় একটি খাবার।
পান্তা ভাতে কিভাবে পুষ্টি বাড়ানো যায়
পান্তা ভাত এমন একটি খাবার যার নিজেরই রয়েছে অবিশ্বাস্য উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ। অনেক সময় পান্তা ভাত অন্যান্য খাবারের সাথেও খাওয়া হয়। যেমন ধরুন ভাজা শাকসবজি, বাদাম, ডাল অনেক সময় মুরগির মাংস বা মাছের সাথেও খাওয়া হয়। সবগুলো উপাদান একসাথে আরো বেশি পুষ্টিকর হয়ে যায়। পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ এবং পান্তা ভাতের সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে খেলে তার পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়।
পান্তা ভাত খাওয়ার নিয়ম
আমাদের দেশের গ্রামবাংলায় রাতের বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে ভাতকে সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণ করা এই ভাতকেই পান্তা ভাত বলা হয়। রাতের পানি দেওয়া ভাত সকালে খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। গ্রামবাংলায় এটি একটি জনপ্রিয় খাবার।
পান্তা ভাতের সাথে কাঁচামরিচ লবণ এবং পেঁয়াজ দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া হয়। অনেকেই আবার আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষার তেল এবং শুকনা মরিচ পুড়িয়ে এর সাথে খায়। বাংলাদেশে নববর্ষের দিনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি বাংলাদেশ একটি উৎসব।
পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়
পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক এ আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের জানাবো পান্তা ভাত খেলে মানুষ মোটা হয় না। বরং এটি আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ধ্বংস করে। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়লে আপনি সম্পূর্ণ বুঝতে পারবেন।
বাংলা সংস্কৃতিতে পান্তা ভাত একটি জনপ্রিয় খাবার। গ্রীষ্মকালীন গরম আবহাওয়ায় রাতের ভাত প্রাকৃতিকভাবে ভালো রাখার জন্য ভাতে পানি মিশিয়ে রাখা হয়। রাতে খাবারের পর যে ভাত টুকু বেঁচে যায় সেই ভাত সকালে খাওয়া হয়। পান্তা ভাত শুধু বাঙ্গালীদেরই জনপ্রিয় খাবার তা কিন্তু নয় এটি বর্তমানে উড়িষ্যা তামিলনাড়ু ভিয়েতনাম চীন সহ আরো অনেকগুলো দেশে এর উপকারিতা বিবেচনা করে খাবারটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা রয়েছে।
অনেকেই মনে করেন পান্তা ভাত খেলে ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি যেন অবাক হবেন যে, পুষ্টিবিদরা বলেছেন, নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে মোটেও ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে। এছাড়াও পান্তাভাতে রয়েছে অনেক উপকারিতা। যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনারা যারা ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে পান্তা ভাত এড়িয়ে চলেন তারা নিশ্চিন্তে নিয়মিত এই উপকারী খাবারটি খেতে পারেন।
পান্তা ভাত খেলে কি গ্যাস হয়
পান্তা ভাত অনেক উপকারী একটি খাবার। কিন্তু অনেকেই মনে করেন এটি খেলে আমাদের গ্যাস হয়। আজকের আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের এই দুশ্চিন্তা দূর করব। আপনি যদি দিনে একবেলা পান্তা ভাত খান তাহলে আপনার শরীরে অনেক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে।
এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে প্রোবায়োটিক যা অন্ত্রের শাস্ত্রের খেয়াল রাখতে সাহায্য করে। এমনকি পান্তা ভাত আমাদের শরীরের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে গ্যাস এসিডিটি অম্বল এমনকি আলসারের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দূরে থাকবে।
সকালে খালি পেটে পান্তা ভাত খেলে কি হয়
পান্তা ভাত সাধারণত গ্রাম বাংলার মানুষ সকালের নাস্তা হিসেবে খায়। রাতের বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে সেটি রেখে দেই এবং সকালে এই ভাত খেয়ে মানুষ নিজেদের কাজ শুরু করে। সকালে পান্তা ভাত খেলে এই এক বেলার খাবার মানুষের শরীরে সমস্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
পান্তা ভাতে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে ২১ গুণ হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন মাত্র ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে রয়েছে তিন ট্রিলিয়ন ভালো ব্যাকটেরিয়া যা প্রোবায়োটিক নামে পরিচিত। আর এই প্রোবায়োটিকস এর কাজ হল আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করা।
আমাদের শরীরে শক্তি বজায় রাখতে পান্তা ভাত সকালে খাওয়ার জুড়ি মেলা ভার। তাহলে এই আর্টিকেল পড়ে বুঝতেই পারছেন সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা অনেক। শরীর সুস্থ রাখতে সকালের নাস্তায়। পান্তা ভাত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনিও আপনার খাদ্য তালিকায় সকালে নিয়মিত পান্তা ভাত রাখতে পারেন।
পান্তা ভাত খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে
পান্তা ভাত অতি সাধারণ একটি খাবার কিন্তু এতে রয়েছে অবিশ্বাস্য উপকারিতা যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। পান্তা ভাত খেলে কোলেস্ট্রল বাড়ে না বরং নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো রোগে ভুগছেন তারাও তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পান্তা ভাত রাখতে পারেন।
কারণ মনে রাখবেন পান্তা ভাত খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নায়। বরং পান্তা ভাতে থাকা প্রবায়োটিক আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পান্তা ভাত খেলে ঘুম আসে কেন
ভাত ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে এতে কিছু ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়। এই ব্যাকটেরিয়া গুলো বিক্রিয়া করে ভাতকে পচাতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াকে সন্ধান প্রক্রিয়া বা ফারমেন্টেশন বলে। এই পচন প্রক্রিয়ায় ফলে ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয় যা পান্তা ভাতের জলীয় অংশে (যাকে চলতি ভাষায় আমানি বলা হয়) মিশে যায়। পান্তা ভাত খাওয়ার সময় পান্তা ভাতের সঙ্গে এই ইথাইল অ্যালকোহল মিশ্রিত আমানি খেলে ঘুম পায়।
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন ২০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা পান্তা ভাতে তিন থেকে চার শতাংশ অ্যালকোহল পাওয়া যায়। তাই পান্তা ভাতের আমানি ফেলে দিয়ে সেই পান্তা ভাতে সাথে নতুনভাবে পানি দিলে আর কোন অ্যালকোহল থাকে না। পান্তা ভাতে থাকা ইথাইল এলকোহল ধুয়ে ফেলে দিয়ে নতুনভাবে পানি মিশিয়ে খেলে আর ঘুম পাবে না।
কি আছে পান্তা ভাতে
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন পান্তা ভাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর অনেক খনিজ পদার্থ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি
আরেকটি গবেষণায় মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন, সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিকর পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক গুণ বেশি।
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম, কিন্তু ১২ ঘন্টা ভাত ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম হয়।
শুধু আয়রনের পরিমাণ বাড়ে তা কিন্তু নয় একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও বেড়ে যায় অনেক গুণ। যেমন ধরুন প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম কিন্তু পান্তা ভাতে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।
গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংকের উপস্থিতিও সাধারণ ভাতের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মত এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক আছে যেটা আয়রন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এবং জিংক এর মত পুষ্টি উপাদানকে বেঁধে রাখে।
আরোও পড়ুন: পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ভিসা চেক করার নিয়ম মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া ভিসা চেকিং
সুতরাং এ আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি এরপর থেকে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পান্তা ভাত রাখবেন।
শেষ কিছু কথা
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিবেচনা করে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় পান্তা ভাত রাখতে পারেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www digitalabida.com ওয়েবসাইট এর সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url