কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা
প্রতিটা মানুষের পছন্দের একটি বিষয় হচ্ছে তার পোশাক। নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার প্রথম মাধ্যম হচ্ছে সুন্দর পোশাক পরিধান করা। প্রায় সময় এই পোশাকে আমাদের প্রত্যেককেই কম-বেশি দাগ লাগার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় দাগ তুলতে না পেরে পোশাকটি ফেলেও দিতে হয়। যা অত্যন্ত কষ্টকর।
সামান্য কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই পোশাকের দাগ খুব সহজেই আপনি তুলতে পারবেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা সম্পর্কে জানাবো। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়
সময়ের অভাব এবং অসাবধানতার বসত আমাদের প্রিয় কাপড়ে রং লেগে যাওয়ার বিষয়টি মোটেও অস্বাভাবিক নয়। প্রায় সময় এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কমবেশি আমাদের সকলকেই হতে হয়। অনেক সময় এই দাগ তুলতে না পেরে আমাদের পছন্দের পোশাকটি বাদ দিতে হয় যা অত্যন্ত কষ্টকর।
আরোও পড়ুন: চুইঝালের যত পুষ্টি উপকারিতা খাওয়া এবং সংরক্ষণের নিয়ম
আজকের কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা খুব সহজে কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন জেনে নিই কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি বিশেষ কার্যকরী উপায় সম্পর্কে।
- চা বা কফির দাগ
- রক্তের দাগ
- তেলের দাগ
- মসলার দাগ
- মেকআপ বা লিপস্টিক এর দাগ
- কালির দাগ
- মেহেদির রংয়ের দাগ
- হলুদের দাগ
- চকলেটের দাগ
- বেভারেজের দাগ
- ঘামের দাগ
- পানের পিকের দাগ
- ক্যাচাপের দাগ
- কাদামাটির দাগ
- লোহা থেকে লাগা মরিচার দাগ
- কাপড় থেকে লাগা রঙের দাগ
- ফলের রস বা জুসের দাগ
- গ্রিজের দাগ
- সুপ বা সসের দাগ
- টেবিল ম্যাট বা তোয়ালের দাগ
চা বা কফির দাগ: চা বা কফির দাগ তোলার জন্য লিকুইড লন্ড্রি ডিটারজেন্ট দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে দাগ চলে যাবে। যদি দাগ পুরানো হয় সেক্ষেত্রে দাগ যুক্ত স্থানে অক্সিজেন ব্লিচ বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট লাগিয়ে ধুয়ে ফেললেই চা বা কফির দাগ চলে যাবে।
রক্তের দাগ: রক্তের দাগ যদি নতুন হয় তাহলে ভালোভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে দাগ চলে যাবে। আর রক্তের দাগ যদি একটু পুরাতন হয় তাহলে কাপড়টি পানিতে ভিজিয়ে তার উপর লবণ ছিটিয়ে ভালোভাবে ঘষে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলে দাগ চলে যাবে। রক্তের দাগ এর চেয়েও পুরাতন হলে দাগের জায়গায় থ্রি পার্সেন্ট হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর ডিটারজেন্ট দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে ঘষে নিলেই ওতি পুরাতন রক্তের দাগ চলে যাবে।
তেলের দাগ: অনেক সময় রিকশার চাকায় লেগে বা রান্না করার সময় তেলের দাগ লেগে যেতে পারে। কাপড় থেকে এই তেলের দাগ তোলার জন্য হালকা কুসুম গরম পানিতে ফ্রি ওয়াশ স্টেইন রিমুভার দিয়ে দশ থেকে পনের মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে। দাগ অনেক পুরনো হলে অক্সিজেন ব্লিচ ব্যবহার করতে হবে তাহলে দাগ চলে যাবে।
মসলার দাগ: রান্না করার সময় জামাকাপড়ের মসলার দাগ লেগে গেলে দাগের উপর লেবুর রস ঘোষের রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে। এছাড়াও গ্লিসারিন ব্যবহার করেও মসলার দাগ উঠানো যায়। মসলার দাগের উপর গ্লিসারিন দিয়ে এক ঘন্টা লাগিয়ে রাখার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই মসলার দাগ চলে যাবে।
মেকআপ বা লিপস্টিক এর দাগ: কাপড়ে মেকআপ কিংবা লিপস্টিকের দাগ লেগে গেলে দাগ যুক্ত স্থানে সাভিং লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে। এছাড়াও লিপস্টিকের দাগ দূর করতে হেয়ার স্প্রে খুব ভালো কাজ করে। লিপস্টিকের দাগ যুক্ত জায়গায় স্প্রে ব্যবহার করে খুব সহজে আপনি দাগ তুলতে পারেন।
কালির দাগ: জামা কাপড়ের কালির দাগ লেগে গেলে কাপড়টি একটি যার বা কাচের পাত্র নিয়ে টানটান করে বিছিয়ে দিতে হবে। তারপর রাবিং অ্যালকোহল ড্রপারের সাহায্যে কালির দাগের উপর দিয়ে দিলেই কালিগুলো শুষে নিচে পড়ে যাবে। এরপর ভালোভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলেই কালির দাগ চলে যাবে।
মেহেদির রংয়ের দাগ: কমবেশি আমরা সবাই মেহেদি হাতে দিয়ে থাকি। আর এই সময় অসবধানতার বসত মেহেদির রং আমাদের জামাকাপড়ে লেগে যায়। এই মেহেদির রং তোলার খুব সহজ উপায় হচ্ছে পানির সঙ্গে ব্রেকিং সোডা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে এবং সেই পেস্টটি কাপড়ের যে জায়গায় মেহেদির রং লেগেছে সেই জায়গায় লাগিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। সেই পেস্টটি শুকিয়ে গেলে পরবর্তীতে ঘষে ঘষে তুলে নিলেই মেহেদির রং চলে যাবে।
হলুদের দাগ: জামা কাপড়ে হলুদের দাগ লেগে গেলে আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। দুশ্চিন্তা না করে হলুদের দাগ উঠানোর জন্য দাগের উপর গ্লিসারিন লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন। গ্লিসারিন শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিলেই হলুদের দাগ চলে যাবে।
চকলেটের দাগ: চকলেট খাওয়ার সময় জামাকাপড়ের চকলেটের দাগ লেগে গেলে সেই দাগ দূর করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। দাগের উপর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেই চকলেটের দাগ চলে যাবে।
বেভারেজের দাগ: বেভারেজের দাগ দ্রুত উঠানোর চেষ্টা না করলে পরবর্তীতে এই দাগ উঠতে চায় না। তাই কাপড়ে বেভারেজের দাগ লেগে গেলে সাথে সাথেই এটিকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর দাগ যুক্ত স্থানটি স্টেইন রিমুভার দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ডিটারজেন দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এতেও দাগ না গেলে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্লিচ ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যবহার করার সময় কাপড়ের দিকে খেয়াল রাখবেন।
ঘামের দাগ: কাপড় পরার সময় কাপড়ের ঘামের দাগ আমাদের নিত্য সঙ্গী। এই ঘামের দাগ দূর করার জন্য পানিতে ব্রেকিং সোডার একটি পেস্ট বানিয়ে সেটি ঘামযুক্ত স্থানে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক কাপড়টি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে জায়গাটি ধুয়ে নিলেই ঘামের দাগ চলে যাবে।
পানের পিকের দাগ: পান খাওয়ার সময় জামাকাপড়ের পানের দাগ লেগে গেলে দাগ যুক্ত স্থানে এক টুকরো পুরাতন কাপড় দিয়ে সেই জায়গাটি আলু দিয়ে ভালোভাবে ঘষে নিলেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই পানের পিকের দাগ চলে যাবে।
ক্যাচাপের দাগ: কাপড়ের উপর ক্যাচাপের দাগ লেগে গেলে সাথে সাথেই সেটি ঘষাঘষি করা যাবে না। এতে দাগ আরো ছড়িয়ে যাবে এবং স্থায়ী হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটি ছুরি বা চামচ দিয়ে ক্যাচাপ পরিস্কার করে নিতে হবে। এরপর সরাসরি পানির নিচে কাপড়টি রেখে দিতে হবে। তাহলেই দাগ কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। পুরোপুরি দাগ দূর করার জন্য ভিনেগার দিয়ে হালকা ভাবে ঘষে পরিষ্কার করে নিলেই ক্যাচাপের দাগ চলে যাবে।
কাদামাটির দাগ: কাপড়ে কাদামাটির দাগ লেগে গেলে যথা সম্ভব সাথে সাথেই শুকানোর আগেই পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এতে অনেক দাগ চলে যায়। এরপর দাগ যুক্ত স্থানে ডিটারজেন্টের পেস্ট লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে। দাগ বেশি স্থায়ী হয়ে গেলে কাদামাটি দাগের উপর অক্সিজেন ব্লিচ ব্যবহার করলে দাগ পুরোপুরি চলে যাবে।
লোহা থেকে লাগা মরিচার দাগ: কাপড়ের লোহা থেকে লাগা মরিচার দাগ উঠানোর জন্য বাজারে রাস্ট লিফটার নামে এক ধরনের তরল সলিউশন পাওয়া যায়। এটি একটি রাসায়নিক পদার্থ হওয়ায় খুব সহজে মরিচার সাথে বিক্রিয়া করে এবং দাগ তুলতে সাহায্য করে।
কাপড় থেকে লাগা রঙের দাগ: কাপড় কাঁচার সময় এক কাপড়ের দাগ অন্য কাপড়ের লেগে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দাগ তোলার জন্য বোরাক্স একটি প্রাকৃতিক খনিজ বা লন্ড্রি বুস্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাপড়ের রং লেগে গেলে দাগ যুক্ত স্থান হালকা কুসুম গরম পানিতে বোরাক্স মিশিয়ে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে দাগ চলে যাবে।
ফলের রস বা জুসের দাগ: কাপড়ের ফলের রস বা জুসের রং ভরে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি হালকা কুসুম পানি দিয়ে কাপড়টি ভিজিয়ে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিলেই দাগ চলে যাবে। দাগ বেশি স্থায়ী হলে দাগযুক্ত স্থানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করতে হবে। তবে মনে রাখবেন ফলের রস যদি জাম কিংবা ডালিমের হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। সে ক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম পানি সাথে গ্লিসালিন লাগিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে।
গ্রিজের দাগ: কোন কাপড় থেকে গ্রিজের দাগ তুলতে কাপড়ের উপর কর্নফ্লাওয়ার ও ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর আলতোভাবে ঘুষে কর্নফ্লাওয়ার ও ট্যালকম পাউডার ঝেড়ে ফেলে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলেই গ্রিজের দাগ চলে যাবে।
সুপ বা সসের দাগ: সুপ বা সস খাওয়ার সময় অনেক সময় কাপড়ে লেগে যেতে পারে। এই দাগ উঠানোর জন্য ক্লাব সোডা বা সোডা পানীয় দিয়ে প্রথমে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে সেই দাগের উপর হালকাভাবে ঘষে নিলেই উঠে যাবে।
টেবিল ম্যাট বা তোয়ালের দাগ: আমরা খাওয়ার সময় টেবিলের ম্যাট এবং তোয়ালে ব্যবহার করার সময় বিভিন্ন ধরনের দাগ লেগে যায়। এই দাগ তুলতে টুথপেস্ট হতে পারে খুব সুন্দর একটি সমাধান। দাগের উপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট টুথপেস্ট লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন দেখবেন দাগ চলে গেছে।
কাপড়ের রঙ ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা
প্রতিটা মানুষের কাপড় অনেক পছন্দের একটি জিনিস। তাই এই কাপড় ঠিক রাখার জন্য মানুষ কত পদ্ধতি না অবলম্বন করে। নিজেকে সুন্দর ভাবে পরিপাটি উপায়ে উপস্থাপন করার প্রথম মাধ্যম হচ্ছে সুন্দর পোশাক। তাই আমরা পোশাকের রং নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকি। কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি বিশেষ কার্যকরী উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা সম্পর্কে বলবো। আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়লে আপনারা কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন জেনে নিই কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা সম্পর্কে।
- কাপড়ের রং ঠিক রাখার জন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি কোন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করছেন। ভালো মানের ডিটারজেন্ট ছাড়া যে কোন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে কাপড়ের রং নষ্ট হয়।
- কাপড় কাঁচার জন্য ডিটারজেন্ট নির্বাচন করার পূর্বে আপনাকে পণ্যের লেভেলের নির্দেশনা অনুসরণ করে কিনতে হবে। এটি ফেব্রিক্সের বা কাপড়ের কোন ক্ষতি করবে কিনা সেই ব্যাপারে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে।
- কাপড় ঘন ঘন পরিষ্কার করা থেকে বিরত রাখুন। অতিরিক্ত মাত্রায় কাপড় ধুলে ফেব্রিকস এর মান এবং কাপড়ের মান অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।
- কাপড় ধোয়ার সময় চেষ্টা করবেন সাবান এবং ডিটারজেন্ট পরিমাণে কম ব্যবহার করার। অতিরিক্ত সাবান এবং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে কাপড়ের মান নষ্ট হয়।
- দীর্ঘ সময় ধরে ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে রাখবেন না। দীর্ঘক্ষণ কাপড় ভিজিয়ে রাখলে কাপড়ের রং নষ্ট হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত কড়া রোদে কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না। এতে কাপড়ের রং জ্বলে যেতে পারে। তাই একটু ছায়া যুক্ত স্থানে কাপড় শুকাতে দিতে হবে।
- কাপড় শুকাতে দেওয়ার সময় উল্টো করে শুকাতে দিন। উল্টো করে কাপড় শুকাতে দিলে কাপড়ের রং ঝলসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
- অতিরিক্ত ঘষে ঘষে বা আছাড় দিয়ে মেরে মেরে কাপড় পরিষ্কার করা যাবে না। কাপড় পরিষ্কার করার সময় আলতো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- অনেক সময় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে কাপড়ের রং উঠে যেতে পারে তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সাদা কাপড়ের লালচে দাগ তোলার উপায়
সাদা রঙটি প্রত্যেকের অনেক পছন্দের একটি রং। এ রঙের সাথে বিশুদ্ধতা পরিছন্নতা এবং এবং পবিত্রতার ছোঁয়া আছে। পোশাকের রং এর কথা উঠে আসলেই সাদা রংটির কথা সবার প্রথমে মানুষের মাথায় আসে। কারণ বরাবরই ধবধবে সাদা রঙের পোশাকের উপর মানুষের আকর্ষণ খুব বেশি। রঙিন কালারের পোশাক ফ্যাশন আর সাদা পোশাক স্টাইলের জন্য বেস্ট। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সাদা রং সব সময় সুপারহিট।
আরোও পড়ুন: কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা
কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে সাদা রংয়ের উপর ময়লা বেশি পড়ে। এটি খুব দ্রুত ময়লা হয় এবং উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। আর সাদা রঙের পোশাক ময়লা হলে সব সময় ওটায় মানুষের চোখে আগে পরে। সাদা পোশাক কি ময়লা হলে বা এতে ঘামের দাগ লাগলে খুব সহজে লালচে হয়ে যায় যা দেখতে খুব খারাপ লাগে। কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি বিশেষ কার্যকরী উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা আপনাদের সাদা কাপড়ে লালচে রং তোলার উপায় সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই সাদা কাপড়ে লালচে রং তোলার উপায় সম্পর্কে।
- সাদা কাপড় ব্যবহারের পর প্রথমেই এটি বাতাসে শুকাতে দিতে হবে। কারণ কাপড়ের ঘামের দাগ পরে গেলে যতই কাঁচা হোক সেই দাগ সহজে উঠানো যায় না। তাই কাপড়টি ব্যবহারের পর সবার প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে।
- সাদা কাপড় লালচে হয়ে গেলে ডিটারজেন্টের সাথে একটি লেবুর রস মিশিয়ে সেই জলে সাদা কাপড়টি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাহলে সাদা কাপড়ের লাল দাগ চলে যাবে।
- সাদা কাপড়ে লালচে রং দূর করে ধবধবে সাদা ভাব দেখানোর জন্য নীল ব্যবহার করতে পারেন। তবে নীল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন এটি পানিতে ভালোভাবে মিশে গেলে তারপর কাপড়টি নীলের পানিতে ভেজাবেন। না হলে নীলের ছোপ ছোপ দাগ লেগে যেতে পারে। কাপড়ে গারো নীল কখনোই ব্যবহার করবেন না হালকা অল্প একটু নীল ব্যবহার করবেন।
- সাদা কাপড় বেশিক্ষণ ডিটারজেন্ট বা সাবান পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না এতে কাপড়ের রং নষ্ট হয়ে লালচে ভাব চলে আসে। ডিটারজেন্ট এ ভেজানোর পর পরই কাপড়টি ধুয়ে নিবেন।
- সাদা কাপড়ের ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার সময় সরাসরি কাপড়ের উপর ডিটারজেন্ট ঢেলে দিবেন না এতে কাপড়ের গুণগত মান নষ্ট হয় ফলে কাপড় লালচে দেখাবে। প্রথমে পানিতে ডিটারজেন্ট ভালোভাবে গলে তারপর সেই পানিতে সাদা কাপড়টি ডুবাবেন।
সাদা কাপড়ে অন্য কাপড়ের দাগ তোলার উপায়
সাদা কাপড় অন্য কোন কাপড়ের সাথে একসাথে ভিজিয়ে কাঁচা হলে অনেক সময় অন্য কাপড়ের দাগ সাদা কাপড়ের লেগে যেতে পারে। আর এটি সহজে উঠতে চায় না। এক কাপড়ের দাগ অন্য কাপড়ের লেগে গেলে দাগ উঠানোর জন্য একটি হাঁড়িতে বা পাত্রে কিছুটা পানির সাথে একটি লেবু চিপে দিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। সেই ফুটন্ত পানিতে যে কাপড়ের দাগ লেগে গেছে ওই কাপড়টি দিয়ে পাঁচ মিনিট মতো ফুটাতে হবে তাহলে দাগ চলে যাবে।
তবে মনে রাখবেন কাপড়টি যদি ভালো বা সিল্কের হয় তাহলে এটি গরম পানিতে দিয়ে ফুটানো যাবে না। এতে কাপড়টি নষ্ট হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানিতে লেবু চিপে দিয়ে দাগ লাগা কাপড়টি ভিজিয়ে রাখতে হবে একটু দীর্ঘ সময় ধরে। তারপর ভালোভাবে ডিটারজেন্ট বা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে তাহলে দাগ চলে যাবে।
কাপড়ে কচুর দাগ তোলার উপায়
অসাবধানতার ফলে কাপড়ে কচুর দাগ লেগে গেলে এটি কালচে হয়ে যায়। এ দাগ সহজে উঠতে চায় না। কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কাপড়ের কচুর দাগ তোলার উপায় সম্পর্কে বলবো। কাপড়ের কচুর দাগ লেগে গেলে হারপিক হতে পারে খুব সুন্দর একটি সমাধান। দাগ লাগা অংশে হারপিক দিয়ে ভালোভাবে ঘষে ঘষে দাগ উঠাতে হবে। সবশেষে কিছুটা লেবুর রস দাগের উপর ঘোষতে হবে তারপর ডিটারজেন্ট বা সাবান পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে কাপড়টি পরিষ্কার করে নিতে হবে। দেখবেন কাপড় থেকে কচুর দাগ উঠে গেছে।
সাদা কাপড়ে দাগ তোলার মেডিসিন
কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সাদা কাপড়ের দাগ তোলার একটি বিশেষ মেডিসিন সম্পর্কে আলোচনা করব। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনিও খুব সহজেই মেডিসিন টি ব্যবহার করে সাদা কাপড়ে দাগ তুলতে পারবেন। চলুন জেনে নেই সাদা কাপড়ে দাগ তোলার মেডিসিন সম্পর্কে।
সাদা কাপড় বা যে কোন কাপড় থেকে দাগ তোলার একটি সহজ মেডিসিন হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার। বেকিং পাউডার ব্যবহার করে খুব সহজে আপনি যেকোনো কঠিন দাগ তুলে ফেলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে ব্লিচিং পাউডার কাপড়ে ব্যবহার সম্পর্কে।
- এক বালতি পানির মধ্যে এক চামচ ডিটারজেন্ট বা সাবান পানির মধ্যে দাগ লাগা কাপড়টি ভিজিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
- এবার কিছুক্ষণ পরে বালতির কাপড়ের উপর ভালোভাবে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে সেটি ভালো করে মাখিয়ে আরো ১০ মিনিট রেখে দিন।
- সবশেষে কাপড় গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই কাপড়ের দাগ চলে যাবে এমনকি সাদা কাপড় থেকেও কালচে ভাব দূর হবে।
বোরখা থেকে তেলের দাগ তোলার উপায়
আমাদের মেয়েদের নিত্য সঙ্গী হচ্ছে বোরখা। অসাবধানতার কারণে অনেক সময় বোরখায় তেলের দাগ লেগে যায়। আজকে এখন আপনাদের কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে বোরখা থেকে তেলের দাগ তোলার উপায় সম্পর্কে বলবো। ঘরোয়া উপায়ে বোরকা থেকে আপনারা খুব সহজেই তেলের দাগ তুলে দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে ভিনেগার। দাগ লাগা অংশে ভিনেগার ঢেলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ঘন্টা খানিক পর পোশাকে যে অংশে দাগ লেগে আছে সেই অংশের ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘোষে দাগটি তোলার চেষ্টা করুন। দেখবেন উঠে গেছে। এছাড়াও পোশাক থেকে তেলের দাগ তোলার সবচেয়ে ভালো এবং সহজ উপায় হচ্ছে গরম পানি। যে অংশে দাগ লেগে আছে সেই অংশ গরম পানিতে ভালোভাবে চুবিয়ে রেখে ডিটারজেন্ট বা সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দিলেই তেলের দাগ উঠে যাবে।
কাপড় থেকে কলার কষের দাগ তোলার উপায়
কলার কষের দাগ অনেক কঠিন এবং এটি তোলাও অনেক কষ্টকর। আপনি অল্প কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে খুব সহজে কলার কষের দাগ তুলতে পারবেন। কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নেই কাপড় থেকে কলার কষের দাগ তোলার ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে।
- ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড
- বেকিং সোডা ও পানি
- ভিনেগার ও পানি
- লেবুর রস ও বেকিং সোডা
ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড: কাপড় থেকে কলার কষের দাগ দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে কাপড়ের যে অংশে দাগ লেগে আছে সেই অংশটুকু ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ৩০ মিনিট পর কাপড়টি ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই কলার কষের দাগ উঠে যাবে।
বেকিং সোডা ও পানি: কাপড় থেকে কলার কষের দাগ উঠানোর আরো একটি সহজ উপায় হচ্ছে বেকিং সোডা ও পানি। বেকিং সোডা ও পানি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে দাগের উপর লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর একটি নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে নিলেই কাপড় থেকে কলার কষের দাগ উঠে যাবে।
ভিনেগার ও পানি: কাপড় থেকে কলার কষের দাগ উঠানোর আরো একটি কার্যকারী উপায় হচ্ছে ভিনেগার ও পানি। পানির সাথে ভিনেগার যুক্ত করে দাগের উপর সেটি স্প্রে করে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে দেখবেন দাগ চলে গেছে।
লেবুর রস ও বেকিং সোডা: লেবুর রস ও বেকিং সোডা দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে কাপড়ের যে অংশে কলার কষের দাগ লেগে আছে সেই অংশে পেস্ট টি লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড়টি ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই দেখবেন কাপড় থেকে কলার কষের দাগ চলে গেছে।
রঙিন কাপড় থেকে দাগ তোলার সঠিক উপায় ও সতর্কতা
রঙিন কাপড় থেকে দাগ তোলার ক্ষেত্রে একটু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অনেক সময় রঙিন কাপড় থেকে দাগ তুলতে যেয়ে কাপড়ের রং উঠে যায়। বিশেষত এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে রঙিন কাপড়ের রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক দাগ অপসারণকারি কেমিক্যাল রয়েছে যা আপনার রঙিন কাপড় থেকে শক্তদাগ দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মনে রাখবেন এই কেমিক্যাল গুলো বিশেষভাবে বিভিন্ন ধরনের দাগ তোলার জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। আপনাকে শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে ধরনের দাগ তোলার চেষ্টা করছেন তার জন্য উপযুক্ত কেমিক্যাল নির্বাচন করা। দাগ অপরসরণকারী ওষুধের গায়ে পণ্যের লেভেলের নির্দেশনা বলি দেওয়া থাকে। এসব নির্দেশনাবলি অনুসরণ করে আপনাকে কেমিক্যাল নির্বাচন করতে হবে।
আরোও পড়ুন: দ্রুত কোমরের ব্যথা সারানোর ১৫ টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়-মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
এই কেমিক্যাল গুলো ফেব্রিক্সের কোন ক্ষতি করবে কিনা বা কাপড়ের ক্ষতি করবে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আপনি অন্য কাপড়ের ছোট্ট একটু জায়গায় লাগিয়ে সেটি পরীক্ষা করে নিতে পারেন। গৃহস্থালির সামগ্রী থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক দাগ অপসারণ করার জন্য জন্য কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে। এইসব পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে কোন রকম হতাশা না হয়ে আপনি নিশ্চিন্তে কাপড়ের কঠিন দাগ তুলে আপনার রঙিন কাপড় পরিষ্কার রাখতে পারেন।
শেষ কিছু কথা
আজকের কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার কার্যকরী কিছু উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আপনি যদি কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www.digitalabida.com এই ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url