গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায়

একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে আরেকটি প্রাণ বেড়ে ওঠা মোটেও সহজ কথা নয়। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এমনকি নানা ধরনের শারীরিক জটিলতাও দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যাগুলো গর্ভবতী মহিলারা আগেই অনুভব করতে পারে। 

গর্ভকালীন-সমস্যা-দূর-করার-উপায়

গর্ভাবস্থায় মেয়েরা মানসিকভাবে খুব অস্থিরতা বোধ করে। তাদের মন সবসময় ছটফট করতে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানাবো। ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেই

গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় এই আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের গর্ভাবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এ সম্পর্কে আলোচনা করব। ধৈর্য ধরে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।

আরোও পড়ুন: ড্রাগন ফলের কার্যকরী ২০ টি উপকারিতা। গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা।

একটি জীবনে আরও একটি নতুন প্রাণ বেড়ে ওঠা মোটেও সহজ বিষয় নয়। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দেয়। তবে গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই সন্তানের মুখে হাসি দেখে মায়ের সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যায়। চলুন জেনে নিই গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেই সেই সম্পর্কে। 

  • হাড়ের সংযোগ স্থল ঢিলা ও ব্যথা হয় 
  • পিঠে ব্যথা হয় 
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে
  • দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় 
  • ঘনঘন প্রসাব হয় 
  • শ্বাসকষ্ট হয় 
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় 
  • শরীর ফুলে যায় 
  • উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় 
  • স্তন ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় 
  • বুকে দুধ তৈরি হয় 
  • যৌন আগ্রহ কমে বা বেড়ে যেতে পারে 
  • সাদা স্রাব বা রক্তক্ষরণ হতে পারে 

হাড়ের সংযোগস্থল ঢিলা বা ব্যথা হয়: গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়েদের হারের সংযোগস্থল ঢিলা হয়ে যায় এবং অনেক সময় হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা অনুভূত হয়।

পিঠে ব্যথা হয়: গর্ভকালীন সময় পেট ভারী এবং শরীরের সামনে অংশ বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্পূর্ণ চাপটি পিঠের ওপর পড়ে। তাই অনেক সময় শুয়ে থাকার সময় পিঠে ব্যথা হয়।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে: কিছু কিছু গর্ভবতী নারীদের অনেক সময় রক্তে চিনি পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে এটি সন্তান প্রসবের পর একা একাই চলে যায়।

দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়: গর্ভকালীন সময় শারীরিক দুর্বলতা জনিত কারণে অনেক সময় দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্রাশ করার সময় মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয় ও ব্যথা অনুভূত হয়।

ঘনঘন প্রস্রাব হয়: গর্ভকালীন সময় পেটের বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ুর আকার বড় হয়ে মূত্রথলির উপর চাপ পড়ে। যার ফলে বারবার ঘন ঘন প্রসব হয়।

শ্বাসকষ্ট হয়: গর্ভকালীন সময় জরায়ুর আকার বড় হয়ে যাওয়ার কারণে ফুসফুস পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রসারিত হতে পারে না। তাই অনেকেই এই সময় শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভোগেন।

রক্তশূন্যতা দেখা দেয়: গর্ভকালীন সময় প্রায় সব মেয়েরাই রক্তশূন্যতায় ভোগে। কারণ এই সময় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই আয়রন জাতীয় খাবার না খেলে রক্তশূন্যতা বেড়ে যায়।

পা ফুলে যায়: গর্ভকালীন সময় নারীদের শরীরে তরল উৎপাদন বেড়ে যায়। তাই দীর্ঘ সময় এক রকম ভাবে বসে থাকলে পায়ে পানি জমে ফোলা ভাব হয়।

উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়: গর্ভকালীন সময় মায়েদের দুশ্চিন্তাজনিত কারণে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়।

স্তন ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়: গর্ভকালীন সময় হরমোনের কারণে স্তনের আকার বড় হতে থাকে। এমনকি স্তন বৃত্তের আশপাশ আরো বেশি কালো হয়ে যায়। এই সময় শিশুকে খাওয়ানোর জন্য মায়েদের স্তন প্রস্তুত হয়। তাই স্তন ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।

বুকে দুধ তৈরি হয়: গর্ভকালীন সময় মায়েদের শরীরে ল্যাক্টোজেন হরমোন বুকের দুধ তৈরি করে।

যৌন আগ্রহ কমে বা বেড়ে যেতে পারে: গর্ভকালীন সময় অনেক নারীদের যৌন আগ্রহ অনেক কমে যায় আবার কোন কোন সময় দেখা যায় যৌন আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। এটি এক একজনের শরীরের একেক রকম হরমোন জনিত কারণে হতে পারে।

সাদাস্রাব বা রক্তক্ষরণ হতে পারে: গর্ভকালীন সময় একটি বড় সমস্যা হচ্ছে যোনিপথ দিয়ে সাদা স্রাব হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় রক্তক্ষরণও হতে পারে। এটি অতিরিক্ত মাত্রায় হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে গর্ভে থাকা সন্তান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় 

গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানাবো। আমরা জানি গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়েদের নানা ধরনের শারীরিক মানসিক জটিলতা দেখা দেয়। তাই এই সময় প্রয়োজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অতিরিক্ত যত্নের। চলুন জেনে নিই গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে। 

  • সব সময় হাসি খুশি রাখা 
  • পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা 
  • চিকিৎসকের কাছে যাওয়া 
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরা
  • হালকা ব্যায়াম করা

সব সময় হাসি খুশি রাখা: গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মা মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলে গর্ভের বাচ্চার এবং গর্ভবতী মায়ের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখাবে। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এই সময় গর্ভবতী মা যেন সব সময় হাসিখুশি এবং প্রফুল্ল থাকে।

পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভবতী মা পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভে থাকা শিশুটি সুস্থ থাকবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাবে।

চিকিৎসকের কাছে যাওয়া: গর্ভবতী মাকে অবশ্যই প্রতি মাসে চেকআপের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেকে মনে করেন আমার তো কোন সমস্যা হচ্ছে না তাহলে কেন যাব। আসলে এই ধারণা ভুল । কোন সমস্যা দেখা দিক বা না দিক তবুও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।

ঢিলেঢালা পোশাক পড়া: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের চিপা বা টাইট পোশাক করা ঠিক নয়। এই সময় তাদেরকে ঢিলা ঢোলা আরামদায়ক পোশাক পড়তে দিতে হবে।

হালকা ব্যায়াম করা: সব সময় শুয়ে বসে না থেকে গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মাকে টুকটাক বাড়ির হালকা কাজগুলো করতে হবে এবং সেই সাথে ধীরে ধীরে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। এমনকি হালকা ব্যায়াম করারও পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ 

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে খুব বেশি লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে চোখ কান খোলা রাখলে এবং একটু খেয়াল করলে প্রথম সপ্তাহে সন্তান ধারণের ব্যাপারটা আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। বিশেষ করে পিরিয়ড মিস হলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জীবনে নতুন অতিথি আসার আগমন। 

তবে শুধু পিরিয়ড মিস হওয়ায় যে এর প্রধান লক্ষণ তা নয়। পিরিয়ড মিস হওয়া ছাড়াও আপনি আরো কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখে বুঝতে পারবেন গর্ভধারণের ব্যাপারটা। চলুন জেনে নিই প্রথম সপ্তাহে গর্ভধারণের শারীরিক কিছু লক্ষণ।

  • সকালে দুর্বল লাগা 
  • বমি বমি ভাব 
  • বমি হওয়া 
  • প্রেগনেন্সি টেস্ট 
  • ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং
  • খাবারে অরুচি
  • মাথা ব্যথা
  • শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি 
  • স্তন ব্যথা

সকালে দুর্বল লাগা: গর্ভধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হচ্ছে মর্নিং সিকনেস। অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীর দুর্বল এবং ক্লান্তি বোধ হবে। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে মর্নিং সিকনেস কিছুতেই পিছন ছাড়বে না। কারণ প্রথম সপ্তাহে এমনটা অনেক বেশি হয়। 

বমি বমি ভাব: গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের আরো একটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বমি বমি ভাব হবে এবং গা গোলাবে। তবে এটি শুধু প্রথমদিকেই নয় প্রথম চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত এই বমি ভাব থাকতে পারে। মূলত এই সময় এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই সকালে উঠেই বমি বমি ভাব হয়। তবে শুধু সকালেই বমি বমি ভাব হবে এমন কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। দিনের যেকোনো সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।

বমি হওয়া: গর্ভকালীন সময়ের প্রথম সপ্তাহেই ৮০⁰ শতাংশ নারী বমির সমস্যায় ভুগেন। আবার প্রায় ৫০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভ অবস্থায় ছয় সপ্তাহ বা তার আগে থেকেই বমি হওয়া শুরু করে। 

প্রেগনেন্সি টেস্ট: অনেক সময় পিরিয়ড বন্ধ না হলে/ও শারীরিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা হলেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো উচিত। কারণ এই ক্লান্তি এবং দুর্বলতার লক্ষণ দিয়েই আপনার জীবনে নতুন সংবাদে সূচনা হতে পারে। 

ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং: এ সময় অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হতে পারে। তবে ভয় না পেয়ে সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আবার প্রেগনেন্সি কিট কিনে নিয়ম অনুযায়ী ঘরে বসেও টেস্ট করে দেখতে পারেন। 

খাবারে অরুচি: গর্ভকালীন সময়ের প্রথম সপ্তাহেই গর্ভবতী মায়ের খাবারের অনেক অরুচি দেখা যায়। একেবারে খাবার খেতে পারে না এমনকি অনেক সময় খাবারের গন্ধও নিতে পারে না। অনেকেই আবার খাবারের নাম শুনলেই বমি করে। এ সময় দেখা যায় অনেক পছন্দনীয় খাবারও গর্ভবতী মহিলারা খেতে পারে না। 

মাথা ব্যথা: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই রক্ত সঞ্চালন এবং হরমোনের বৃদ্ধি জনিত কারণে মাথাব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের প্রায় তীব্র মাথাব্যথা এবং ক্লান্তিবোধ অনুভব হয়। 

শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি: গর্ভধারণের ২০ দিন পর থেকেই গর্ভবতী মায়েদের শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। চাঁদের গা অনেক সময় গরম অনুভূত হয়। তাপমাত্রা ওভুলেশানের কারণ নে বৃদ্ধি পেয়ে একটি জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনার দিকে ইঙ্গিত দেই। তাই এরকম লক্ষ্য নিয়ে গা গরম হলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করাবেন। 

স্তন ব্যথা: গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের আরো একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে স্তন ব্যথা হওয়া এবং ফুলে যাওয়া। এটা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ। অনেক সময় স্তন ভারী হয়েও যেতে পারে। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করাবেন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি কি সমস্যা হয় 

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক কষ্টকর একটি সময়। এসময় গর্ভবতী মায়েদের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মায়েদের শরীরের হরমোন জনিত পরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। 

আরোও পড়ুন: ভিডিও দেখে প্রতিদিন ৫০০ ১০০০ টাকা আয় করার উপায়

যেমন: বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বোধ, স্তনের পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া, শরীর খারাপ লাগা, অস্থিরতা বোধ করা, বুক জ্বালাপোড়া করা, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া এই ধরনের সমস্যাগুলো গর্ভাবস্থায় একদম স্বাভাবিক কিছু সমস্যা। তাই বলে এসব সমস্যাকেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এসব সমস্যা থেকেও নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়া সম্ভবনা রয়েছে তাই অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই প্রথম তিন মাসের কিছু সমস্যা সম্পর্কে।

  • গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি 
  • জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ বা এক্টোপিট প্রেগনেন্সি 
  • মোলার প্রেগনেন্সি 
  • বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি 

গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি: গর্ভকালীন সময় প্রথম তিন মাস গর্ভপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গবেষণা করে দেখা যায় ৭৫ শতাংশ গর্ভপাত গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই হয়ে থাকে। নানা কারণে গর্ভপাত হতে পারে যেমন ধরুন, বাচ্চার জিন বা গঠনগত ত্রুটি, থাইরয়েড হরমোন এর তারতম্য, মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এসএলই, এন্টি-ফসফোলিপিড সিনড্রোম, ইনফেকশন ইত্যাদির কারণে।

জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ বা এক্টোপিট প্রেগনেন্সি: অনেক সময় দেখা যায় নিষিক্ত ভ্রুণ জরায়ুর ভেতরে স্থাপিত না হয়ে বাইরে স্থাপিত হয়, বিশেষ করে ডিম্বনালিতে ভ্রূণ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা না হলে মায়ের মৃত্যুও হতে পারে।

মোলার প্রেগনেন্সি: অনেক সময় দেখা যায় নিষিক্ত ভ্রুণ থেকে বাচ্চা না হয়ে সেটি আঙ্গুরের থোকার মত এক ধরনের টিউমার হয়। যা সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে পরবর্তীতে তা ক্যান্সারের রূপ নিতে পারে। যার ফলে মায়েদের জীবনহানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি: গর্ভের প্রথম তিন মাস ভ্রুন গঠনের মূল সময় বলে দাবি করেন চিকিৎসকরা। তাই এ সময় যদি কোন গর্ভবতী মা ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, নানা ধরনের সংক্রমণ এমনকি ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করা, যেমন: ওয়ারফেরিন, মৃগি রোগের ওষুধ ক্যান্সারের ওষুধ উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং রেডিয়েশন ইত্যাদি জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মায়েদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। চলুন আর্টিকেলের এই অংশে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের কিছু সর্তকতা সম্পর্কে বলি। 

  • গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে কোন ধরনের কোন জটিল রোগ আছে কিনা সে সম্পর্কে জানার জন্য।
  • গর্ভধারণের একমাস আগে থেকেই ফলিক এসিড এবং আয়রন জাতীয় খাবার সেবন করতে হবে ।
  • গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে এবং কোন ক্ষতিকর ওষুধ আগে থেকে সেবন করে থাকলে তা সাথে সাথে বর্জন করতে হবে। 
  • গর্ভধারণের প্রথম দিকে অবশ্যই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে। কারণ আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বাচ্চার ভ্রুনের সংখ্যা, বয়স, বাচ্চা প্রসবের সম্ভবত তারিখ, ভ্রুনের হৃদস্পন্দন, এক্টোপিট বা মোলার প্রেগনেন্সি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
  • গর্ভাবস্থায় অবশ্যই বিশ্রাম এর সময় এবং ঘুমের দিকে নজর রাখতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে রাতে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা এবং দুপুরে দুই ঘন্টা ঘুম বা বিশ্রাম নিতে হবে। 
  • গর্ভকালীন সময় মায়ের খাবারের ব্যাপারে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। কারণ মনে রাখবেন গর্ভবতী মা যেমন খাবার খাবে গর্ভে থাকা শিশুটি ঠিক তেমন পুষ্টি পাবে। মা পুষ্টি হীনতায় ভুগলে অবশ্যই গর্ভে থাকা বাচ্চাটিও পুষ্টি হীনতায় ভুগবে।
  • যানবাহনে যাতায়াতের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে দূরের যাত্রা এবং ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন এড়িয়ে চলতে হবে 
  • গর্ভবতী সময় প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভারী কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে গর্ভপাত হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
  • গর্ভকালীন সময় প্রথম তিন মাস সহবাস নিষেধ। এই সময় সহবাস করলে গর্ভবতী মায়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে। 
  • গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের মন সবসময় অস্থিরতা এবং ছটফট করতে থাকে। তাই বাড়ির লোকজনকে এই সময় খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী মায়ের মন যেন ভালো থাকে এবং প্রফুল্ল থাকে। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের শরীর ও মনের সুস্থতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
  • গর্ভবতী সময় গর্ভবতী মায়ের ওপর কোন ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। এটি সম্পূর্ণ গর্ভে থাকা বাচ্চার উপর প্রভাব পড়ে। তাই এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বমি দূর করার ঘরোয়া উপায় 

গর্ভকালীন সময় প্রথম দিকে বমি বা বমি বমি ভাব হওয়াটা গর্ভবতী মায়েদের জন্য স্বাভাবিক একটি বিষয়। এই সমস্যা সমাধান না করতে পারলে শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টি পাইনা। গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৫০ ভাগেরও অধিক সংখ্যার গর্ভবতী মায়ের গর্ভবস্থায় এই বমি সমস্যা দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায়-বমি-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়

এই বমি সমস্যা দূর করতে না পারলে গর্ভবতী মা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এমনকি কোন কিছু খেতে পারে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় বমি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়। 

  • আদা চা 
  • মৌরির বীজ 
  • আমসত্ত্ব 
  • লেবু 

আদা চা: গর্ভাবস্থায় বমি দূর করার একটি দারুন কার্যকারী উপায় হচ্ছে আদা চা খাওয়া। গর্ভাবস্থায় বমিতে আদা চা দারুন ভূমিকা পালন করে। এক চামচ আদা কুচি এক কাপ পানিতে ৫ মিনিট ফুটিয়ে তার সাথে অল্প একটু চা পাতা মিশিয়ে চা বানিয়ে খেলে গর্ভাবস্থায় বমি দূর হয়।

মৌরির বীজ: আমরা মুখ সতেজ রাখার কাজে মৌরি ব্যবহার করি। তবে মনে রাখবেন পাকস্থলীর আরাম দিতে মৌরির জুড়ি মেলা ভার। যখনই বমি বমি ভাব হবে তখনই কয়েকটা মৌরি বীজ মুখে দিয়ে চিবালে বমি ভাব কমে আসবে।

আমসত্ত্ব: আমসত্ত্ব বা অন্য কোন ফলের মাংসাল অংশ শুকিয়ে সত্ত্ব বানিয়ে খেলে বমি ঠেকানো যায়। এই ফলের সত্ত্ব গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে যা পানি স্বল্পতা দূর করে। আমসত্ত্ব বানানোর সময় সেগুলোতে প্রচুর চিনি ব্যবহার করা হয় যা শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এবং গর্ভকালীন বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি দূর করে।

লেবু: বমি বমি ভাব হলে লেবুর কর্মক্ষমতা প্রায় প্রবাদ তুল্য। যখনই বমি বমি ভাব আসে তখনই লেবুর গন্ধ শুকলে বা অল্প একটু লেবুর রস খেলে বমি ভাব দূর হয়। লেবু পাওয়া না গেলে লেবুজাতীয় যে কোন ফল বা খোসা থাকলেও সেটি শুকলে বমি ভাব দূর হয়।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস কি খাওয়া উচিত 

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রথম তিন মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হতে হয়। গর্ভাবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস কি খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেব।

গর্ভকালীন সময় মায়েদের খাবারের তালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুধ, দই, বাঁধাকপি, পনির, ঢেঁড়স, ব্রকলি, কাটাযুক্ত মাছ, পালং শাক, ডিম, তিল, ডুমুর, তিশি, আমন্ড ইত্যাদি। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন শুধু ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেলেই হবে না ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য অবশ্যই ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন সকালে গর্ভবতী মাকে অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগাবেন।

গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত 

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে একজন সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি যত্ন সহকারে রাখতে হবে। তাদের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন দিতে হবে। অবশ্যই মনে রাখবেন, গর্ভবতী মা গর্ভকালীন সময় যা খাবে পেটে থাকা শিশুটি ঠিক সেই অনুযায়ী পুষ্টি পাবে। একটি সুস্থ বাচ্চা পাওয়ার আশায় অবশ্যই গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তবেই পেটের বাচ্চা পুষ্টি পাবে। 

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন মাছ, মাংস, বাদাম, বীজ, ফল, শাকসবজি, মটরশুঁটি এছাড়াও আপনার আশেপাশে পাওয়া যায় এমন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই গর্ভবতী মাকে দেবেন। এমনকি অবশ্যই সমস্ত খাবার একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের থেকে পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।

গর্ভাবস্থায় যৌনি মুখ ব্যথার কারণ কি 

গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়েদের যোনির মুখ ব্যথা হয়। গর্ভাবস্থায় যোনির মুখ ব্যথা হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে হরমোনের পরিবর্তন। হরমোনের এই পরিবর্তনগুলি ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে পারে যার ফলে যোনির মুখ শুষ্ক এবং যৌনিতে চুলকানির মত সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি অনেক সময় খামির সংক্রামন ক্যান্ডিডা ছত্রাকের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় 

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে বিশ্রাম নিতে হবে তাই বলে এই নয় যে গর্ভবতী মা সব সময় শুয়ে থাকবে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা সব সময় শুয়ে থাকলে গর্ভে থাকা বাচ্চা অনেক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকতে পারে। কারণ গর্ভবতী মা যদি চিত হয়ে শুয়ে থাকে তাহলে তার মৃত বাচ্চা প্রসব করা সম্ভব না অনেক বেশি থাকে। 

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন যে, গর্ভবতী মা চিত হয়ে শুয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দন এবং নড়াচড়া কমে যায়। কারণ চিত হয়ে শুয়ে থাকার কারণে গর্ভস্থ বাচ্চাটির অক্সিজেন কমে যাচ্ছে এবং সে অনবরত খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। গর্ভবতী মা চিত হয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশু শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকির এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮২ হাজার মৃত শিশু প্রসব হয়। নতুন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, মায়ের ভিন্ন ভিন্ন দেহ ভঙ্গিমার প্রভাব গর্ভস্থ শিশুটিকে কিভাবে প্রভাবিত করে তা মূল্যায়ন করাই ছিল এই গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য।

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় 

গর্ভকালীন সময় প্রথম তিন মাসের পর থেকে চিত হয়ে শুয়ার ফলে জরায়ুতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে ফলে আপনার মাথা ঘুরতে পারে এমনকি শিশুর শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে চিত হয়ে শুয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন চিকিৎসকরা।

গর্ভাবস্থায় শুধু চিত হয়ে সোয়া নয় ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানো নিষিদ্ধ। কারণ প্রতিটা মানুষের লিভার পেটের ডান দিকে অবস্থান করে যার ফলে ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের সম্পূর্ণ চাপ ডান অঙ্গের উপর এসে পড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলা যদি ডানদিকে কাত হয়ে ঘুমায় তাহলে তার সন্তানের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। 

ঘুমানোর সময় যেন লিভারের সমস্যা না হয় সেই জন্য লিভারকে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা দিতে হবে তাই গর্ভবতী মেয়েদের ডান পাশে না ঘুমানোই ভালো। প্রতিটা মেয়ের সব থেকে বড় শিরা হচ্ছে ইনফিরিয়র ভেনা কাভা বা IVC. আর এই শিরা মেয়েদের ডান দিকে থাকার ফলে ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের এই শিরার উপর প্রেসার পড়ে এবং শরীরের রক্ত চলাচল করতে ব্যর্থ হয়।

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের চিত হয়ে বা ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া যাবেনা। এই অবস্থায় বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রক্ত এবং পুষ্টি চারিদিকে ছড়াতে পারে। তাই অবশ্যই একজন গর্ভবতী মাকে বাম দিকে কাত হয়ে শোয়াই উত্তম।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাক

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার একটি সাধারণ অবস্থান হচ্ছে শীর্ষ স্থানীয় অবস্থান। এই অবস্থানে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে অর্থাৎ যোনিপথের দিকে অবস্থান করে। আর শিশুর পিঠ মায়েদের পেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এরকম অবস্থায় যোনিপথের জন্মের সর্বোত্তম এবং সহজ বোধ সন্তান প্রসব করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই পেটের মধ্যে বাচ্চার কিছু অবস্থান সম্পর্কে।

  • শিশু শীর্ষ: মনে রাখবেন যখন শিশু শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করে তখন আপনার পেটের বাচ্চার বিপরীত পিট অনুভব করবেন। এ অবস্থায় খেয়াল করবেন বাচ্চার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন, হাত-পা পেট বা মহিলাদের পেটের বা পাশের দিকে বেশি অনুভূত হয়। ব্রিচ পজিশন পা মাথার পরিবর্তে বেরিয়ে আসতে পারে। সাধারণত তিন থেকে চার পার্সেন্ট ব্রিচ এর উপস্থিত সম্পন্ন হলে গর্ভাবস্থায় সৃষ্টি হয়।
  • মধ্য অবস্থান: মধ্য অবস্থানের সময় বাচ্চা জরায়ুর অংশ জুড়ে শুয়ে থাকে। এ সময় বাচ্চার পা একপাশে এবং মাথা এক পাশে থাকে। 
  • পশ্চাৎপদ অবস্থান: পশ্চাৎপদ অবস্থানের সময় বাচ্চার মাথা নিচু হয়ে অবস্থান করে কিন্তু বাচ্চা তার পিঠের পরিবর্তে মায়ের পেটের দিকে মুখ থাকে।
  • গতিশীল প্রকৃতি: গর্ভাবস্থায় বাচ্চা গর্ভবতী মায়ের পেটের বিভিন্ন স্থান নিতে পারে। গর্ভাবস্থায় সময় বেড়ে যাওয়া সাথে সাথে সন্তানের শারীরিক বিকাশও বেড়ে যায়। যার জন্য বাচ্চার নড়াচড়া এবং এদিক ওদিক ঘুরার জন্য যথেষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয়। বাচ্চাদের একাধিকবার স্থান পরিবর্তন এটি একটি সাধারণ বিষয়। তবে মনে রাখবেন তিন মাস পরে বেশিরভাগ বাচ্চা শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করে।

গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাওয়া ভালো 

গর্ভাবস্থায় ফল নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন কোনটি গর্ভবতী মায়ের এবং পেটে থাকা শিশুর জন্য উপকারী। গর্ভকালীন সময় আপেল, অ্যাভোকাডো, বেরি, পেয়ার, সাইট্রাস ফল, আম এবং তরমুজ খাবেন। কারণ এইসব খাবারকে  ভিটামিন ও মিনারেলের পাওয়ার হাউস বা উৎস বলা হয়। এই ফলগুলোতে গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরল সোডিয়াম এবং ক্যালোরি কম থাকে। তাই এই ফলগুলো গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য এবং বাচ্চার জন্য অনেক উপকারী।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা

গর্ভাবস্থায় খাবার নির্বাচনের কাজটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এই সময় অনেক ধরনের ফল আছে যেগুলো খাওয়া গর্ভবতী মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। ফল নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা সেই সম্পর্কে। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা। 

  • পেঁপে 
  • আনারস 
  • আঙ্গুর 

পেঁপে: গর্ভাবস্থায় আধা কাঁচা বা কাঁচা পেঁপে খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর। আধা কাঁচা বা কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্স একটি উপাদান যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী হতে পারে। এটি শুধুমাত্র পাকস্থলীতে ব্যথায় সৃষ্টি করে না তার পাশাপাশি গর্ভে থাকা সন্তানের ক্ষতি ও করে। তাই গর্ভকালীন সময় পেঁপে না খাওয়াই ভালো বলে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। 

আনারস: পেঁপের মতো আনারস গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিষিদ্ধ একটি ফল। আনারস একটি টক মিষ্টি জাতীয় ফল। এতে থাকা ব্রোমেলাইন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা জরায়ুর পথকে কোমল করে এবং প্রারম্ভিক ব্যথা সৃষ্টী করতে পারে। শুধু তাই নয় অনেক সময় আনারস খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে এই ফল না খাওয়াই ভালো। 

আঙ্গুর: আঙ্গুরের রয়েছে রেসভেরাট্রল নামক একটি যৌগ যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট করে। এছাড়াও আঙ্গুরের রয়েছে তাপ উৎপাদনকারী উপাদান যা মা ও শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনকি গর্বে থাকা শিশুর পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের জন্য শেষের তিন মাস আঙ্গুর না খাওয়াই ভালো বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় 

গর্ভে থাকা বাচ্চা ফর্সা হবে, না কালো হবে এটা সম্পূর্ণ উপরওয়ালার নেয়ামত। এটা সম্পূর্ণ উপর ওয়ালার হাতে, তিনি ইচ্ছে করলে বাচ্চা ফর্সা বা কালো দিতে পারেন। বাচ্চার শারীরিক গঠন এবং গায়ের রং সম্পূর্ণটাই উপরওয়ালা থেকে নির্ধারিত। তিনি নির্ধারণ করে পৃথিবীতে পাঠান। তবে বিজ্ঞান বলে ভিন্ন কথা। বিজ্ঞান বলে যে একজন সন্তানের গায়ের রং এবং শারীরিক গঠন বাবা-মায়ের জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়। 

গর্ভাবস্থায়-কি-খেলে-বাচ্চা-ফর্সা-হয়

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গর্ভাবস্থায় সন্তানের গায়ের রং কেমন হবে তা গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের খাবারের উপর অনেকটা নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের খাওয়া স্বাভাবিক অবস্থা চেয়ে একটু বেশি হয়। গর্ভবতী মায়ের সঠিক সময় পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ খাবারের সাথেই সন্তানের গায়ের রং উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চলুন জেনে নিই কোন খাবার গুলো খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। 

  • দুধ 
  • ডিম 
  • চেরি ফল 
  • জাফরান দুধ 
  • টমেটো ও কলা 

দুধ: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দুধ একটি আদর্শ খাবার। তাই গর্ভবতী মহিলাদের দুধ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। গর্ভবতী মহিলারা দুধ খেলে গর্ভে থাকা বাচ্চা শারীরিক গঠন ঠিক থাকে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে বাচ্চাদের গায়ের রং ফর্সা করতে দুধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ডিম: বয়োজ্যেষ্ঠরা মনে করেন বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে গর্ভবতী মেয়েদের ডিমের সাদা অংশ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু সাদা অংশ নয় গর্ভকালীন সময় ডিমের কুসুমও গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক উপকারী।

চেরি ফল: চেরি ফলে থাকা উচ্চমাত্রায় অক্সিডেন্ট বাচ্চা শরীরের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই মনে রাখবেন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং ব্ল্যাকবেরি জাতীয় ফল খেলে বাচ্চার গায়ের রং উজ্জ্বল ও সুন্দর হয়।

জাফরান দুধ: গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ গর্ভবতী মহিলা এবং বাচ্চার জন্য অনেক উপকারী। বয়োজ্যেষ্ঠরা মনে করেন, গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খেলে গর্ভ থাকা শিশুর গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা হয়।

টমেটো ও কলা: টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা গর্ভে থাকা সন্তানের শারীরিক গঠন ঠিক করতে এবং গায়ের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মাকে টমেটো এবং কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় 

গর্ভবতী মায়েদের গর্ভে থাকা বাচ্চা নিয়ে চিন্তার কোন শেষ থাকে না। তারা ভাবে গল্পকালীন সময় কি খেলে বাচ্চা বেশি বুদ্ধিমান হবে এবং সেই অনুযায়ী খাবার খায়। আপনিও যদি গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় এটি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

গর্ভকালীন সময় মহিলাদের উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার হচ্ছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল। এই খাবারগুলো গর্ভবতীদের গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

আয়রন এবং এসিড জাতীয় খাবার গর্ভে থাকা সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশের সাহায্য করে। তাই গর্ভবতীদের অবশ্যই শুকনো ফল পুদিনা পাতা কলা কাঁচা শাকসবজি এবং বিভিন্ন ধরনের আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়। 

অবশ্যই মনে রাখবেন শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কিন্তু মায়ের গর্ভে থেকেই শুরু হয়। তাই কোন কিছুই অতিরিক্ত মাত্রায় না খেয়ে সঠিক জেনে বুঝে সঠিক পুষ্টিকর খাবার দ্বারা আপনার খাবারের মেনু ঠিক করবেন। মনে রাখবেন গর্ভ অবস্থায় বাচ্চার ব্রেনের ২৫ ভাগ বিকাশ ঘটে। তাই গর্বে থাকা সন্তানের ব্রেন ঠিকঠাক গঠনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম দুধ মাছ মাংস এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। 

আরোও পড়ুন: চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়। গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এছাড়া কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছ গর্ভের থাকা বাচ্চার জন্য অনেক উপকারী। গর্ভকালীন সময় ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেই গর্ভবতী মহিলাদের প্রচুর পরিমাণ উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার দিতে হবে। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো হল:

  • মাছ 
  • ডিম 
  • আয়োডিন 
  • স্ট্রবেরি 
  • ব্লুবেরি 
  • ব্ল্যাকবেরি 
  • আয়রন ফলিক এসিড 
  • আমান্ড
  • কলিন যুক্ত খাবার 
  • ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার 
  • আয়রন জাতীয় খাবার 
  • কপার ও জিন জাতীয় খাবার

শেষ  কিছু কথা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি সম্পূর্ণ জানতে পেরেছেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www.digitalabida.com ওয়েবসাইট এর সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url