প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত

সুষম খাদ্য ছয়টি উপাদানের মধ্যে একটি হচ্ছে পানি। পানি আমাদের শরীরের খাদ্য পরিপাক, পরিশোষণ, পরিবহন বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণ এবং আমাদের দৈহিক তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইজন্য কথায় আছে পানির অপর নাম জীবন।

প্রতিদিন-কত-লিটার-পানি-পান-করা-উচিত

মানব দেহের মোট ওজনের ৭০% হচ্ছে পানি। তাই পানি আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত 

আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। খাদ্যের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে পানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রাণী জগৎকে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই পানি গ্রহণ করা অবশ্য। আপনি যেনে অবাক হবেন যে আমাদের শরীরের ৭০ ভাগই হচ্ছে পানি। তাই প্রতিদিন সুস্থ থাকতে একজন শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত প্রত্যেককেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা জরুরী। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে জানাবো। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত।

আরোও পড়ুন: কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার ২০ টি উপায়-কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও সতর্কতা

পানি আমাদের শরীর থেকে বজ্র পদার্থ ঘাম এবং প্রসাবের দ্বারা বের করতে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সংবেদনশীল টিস্যু সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা সারাদিনে বোতলের বোতল পানি খেয়ে ফেলেন আবার অনেকেই আছে যারা সারা দিনে এক বোতল পানিও খেতে চায় না। এই দুটোই শরীরের জন্য খারাপ। 

আমরা খাদ্য গ্রহণের হিসেব রাখলেও পানি কতটুকু খাচ্ছি সেই হিসাব রাখতে ভুলে যাই। আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে পানির ভূমিকা অনেক। তবুও আমরা এই পানি খাওয়ার বেলাতেই যত অনীহা এবং অবহেলা করি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তারা ভাবে অতিরিক্ত পানি খেলে বুঝি শরীরের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়।

  • একজন সুস্থ মানুষ দিনে কত লিটার পানি খেতে পারবে তা নির্ভর করে তার নিজের ওজনের উপর। একজন ব্যক্তির যদি ৮০ কেজি ওজন হয়ে থাকে তাহলে তাকে ৬০ কেজি ওজনের কোন ব্যক্তির পানি খাওয়ার পরিমাপের সাথে তুলনা করা যাবে না। সেই ক্ষেত্রে পানির পরিমাপ বের করার জন্য আপনাকে আপনার মোট ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগ ফলই বলে দিবে আপনার কতটুকু পানি খেতে হবে। অর্থাৎ আপনার ওজন যদি ৬০ কেজি হয় তাহলে আপনি ২ লিটার পানি খেতে পারবেন। আর আপনার ওজন যদি ৮০ কেজি হয় তাহলে ২.৬ লিটার পানি খেতে পারবেন। 
  • শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। পানির ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে এবং পরে আপনাকে ৭০০ মিলিলিটার পানি পান করতে হবে।
  • সাধারণত ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা উত্তম তবে সেটি নির্ভর করবে আবহাওয়ার উপর। আবহাওয়া যদি অতিরিক্ত গরম হয় তাহলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়বে আর আবহাওয়া যদি ঠান্ডা হয় তাহলে পানি খাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে।
  • যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে। সারাদিন রোদে পুড়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে পানি খাওয়ার পরিমাণ ৩.৫ লিটার বা তারও বেশি হতে পারে।
  • একজন গর্ভবতী মহিলা বা স্তন্যদানকারী মা এর পানি খাওয়ার পরিমাণ কিছুটা বেশি হবে। কারণ এই সময় তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির তুলনায় কিছুটা বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হয়।
  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা সারাদিনে এক লিটার এর পানি খেতে পারবে। এর থেকে বেশি পানি খেলে তাদের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিবে।

অতএব উপরের আলোচনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে প্রত্যেকের পানি খাওয়ার পরিমাণ এক নয়। এখানে একেকজনের শারীরিক গঠন এবং কাজের ধরন অনুযায়ী পানি খাওয়ার পরিমাণ এর ও কম এবং বেশি রয়েছে। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে বিবেচনা করতে হবে। একই রকম ভাবে বিবেচনা করা যাবে না।

পানি পান করার নিয়ম

আমরা জানি পানি আমাদের জীবনের অনেক মূল্যবান একটি উপাদান। কিন্তু পানি পানেরও নিয়ম আছে। নিয়ম মেনে পানি পান করলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাকে পানি পান করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। 

  • পরিষ্কার পানি পান করতে হবে প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
  • তৃষ্ণা না মেটা পর্যন্ত পানি পান করুন।
  • শরীরের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে সারাদিন ঘন ঘন পানি পান করুন। 
  • একবারে অতিরিক্ত পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে পানি পান করুন। 
  • একজন স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন কম করে আট  গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে তাপমাত্রা এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপর এটি কম বেশি হতে পারে।

পানি পান করার উপকারিতা

আমরা জানি প্রতিটা খাবারের উপকারিতা আছে। আপনি জেনে অবাক হবেন পানি পানের ও অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি খেলে পানি থেকেও আপনি অনেক উপকারিতা পাবেন যা আপনার শরীরের জন্য উপকারী। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে।

  • তৃষ্ণা মেটাতে পানি ছাড়া অন্য কোন বিকল্প তেমন কার্যকর নয়। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি অন্য যেকোনো পানীয়র তুলনায় ভালোভাবে তাড়াতাড়ি তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম। তাই বলা যায় তৃষ্ণা মেটাতে পানির বিকল্প নেই বললেই চলে। 
  • আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের কোর্সগুলোর নমনীয়তা বজায় রাখতে পানি প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দিয়ে থাকে। 
  • প্রতিদিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের ফলে আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং শরীরে থাকা কোষের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। 
  • পানি পানের ফলে ক্ষুধা নিবারণ হয়। 
  • নিয়মিত পানি পান করার ফলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে যার ফলে আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে। 
  • পানি আমাদের দেহের হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে আমাদের শরীরের মাংসপেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়। আর আমাদের এই মাংসপেশি গুলোতে শক্তি সরবরাহ করতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল এবং ভালো থাকে। 
  • পানি আমাদের শরীরে থাকা বিষাক্ত পদার্থ ঘাম এবং প্রসাবের সাহায্যে দূর করতে সাহায্য করে। 
  • শরীরে সুস্থতা বজায় রাখতে এবং সুন্দর রাখতে পানি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

দিনে কত লিটার পানি খেলে ওজন কমে

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এটি আমাদের শরীরের গঠন, শারীরিক পরিশ্রম, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। চলুন জেনে নিই দিনে কত লিটার পানি খেলে ওজন কমে সেই সম্পর্কে। 

ওজনের উপর নির্ভর করে আপনার পানি পান করার পরিমাণ বের করতে হবে। আপনার ওজন যদি ৬০ কেজি হয়ে থাকে তবে আপনাকে প্রতিদিন আড়াই লিটার বা ১০ ক্লাস পানি পান করতে হবে। আপনার ওজন যদি ৬৫ কেজি হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ২.৭ লিটার পানি পান করতে হবে। আপনার ওজন যদি ৭০ কেজি হয় তাহলে আপনাকে দৈনিক ২.৯ লিটার পানি পান করতে হবে। 

আপনার ওজন যদি ৭৫ কেজি হয় তাহলে আপনাকে ৩.২ লিটার পানি পান করতে হবে। আপনার ওজন যদি ৮০ কেজি হয় তাহলে আপনাকে দৈনিক ৩.৫ লিটার পানি পান করতে হবে। আপনার ওজন ৮৫ কেজি হলে সেই ক্ষেত্রে ৩.৭ লিটার পানি আপনার শরীরে প্রয়োজন। এরকমভাবে ওজন অনুযায়ী আপনার প্রতিদিনের পানি পান করার পরিমাণ নির্ণয় করুন। এভাবে পানি পান করলে আপনার ওজন কমবে।

বেশি পানি খেলে কি মোটা হওয়া যায়

আমাদের অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা কাজ করে যে বেশি পরিমাণ পানি খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায়। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের বেশি পানি পান খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আসলে পানি খাওয়ার সঙ্গে মোটা হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। পানিতে কোন প্রকার ক্যালরি নেই যা আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। তাই এই ধারণা একেবারেই ভুল। পানি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে না।

কতক্ষন পরপর পানি পান করা উচিত

আমরা প্রতিদিন পানি পান করি ঠিকই কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পানি পান করি না। যার ফলে দেখা দেয় অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা। আমরা যদি নিয়ম অনুযায়ী পানি পান করি তাহলে পানি থেকেও আমাদের শরীরে অনেক উপকারিতা মিলতে পারে যা আমরা উপরের আলোচনায় আপনাদের বলেছি। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কতক্ষণ পরপর পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে জানাবো। চলুন কতক্ষণ পরপর পানি পান করা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

কতক্ষন-পরপর-পানি-পান-করা-উচিত

পানি পান করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একটানা বেশি পরিমাণ পানি পান করা যাবে না। কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প করে ঘনঘন পানি পান করতে হবে। মনে রাখবেন খাবার খাওয়ার মধ্যে বা খাবার খাওয়ার পরপরই পানি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার ১৫ মিনিট পূর্বে বা খাবার শেষ করার ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি খেতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী পানি খেলে পানি আমাদের খাবারগুলো সঠিকভাবে হজম করবে এবং এসিডিটি সমস্যা দূর করবে। 

আরোও পড়ুন: জিরা কিভাবে খেলে দ্রুত ওজন কমে। তলপেটের চর্বি কমানোর উপায়

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি পান করা উচিত। আপনি যদি সকালে উঠে ব্যায়াম করেন তাহলে ব্যায়াম করার মধ্যেও কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে। আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারই হয়ে থাকেন তাহলে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে পানি পান করলে খাবার খাওয়া চাহিদা অনেকটা কমে যায় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই একসাথে অতিরিক্ত পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করুন।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত 

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত এই সম্পর্কে আলোচনা করব। পানিকে বাদ দিয়ে জীবন কল্পনা করা যায় না। আমাদের তৃষ্ণার চাহিদা মেটাতে এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পানি মৌলিক চাহিদা গুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিশু থেকে শুরু করে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রত্যেকের উচিত। চলুন জেনে নিই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে। 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২ লিটার থেকে ২.৫ লিটার বা ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষটি যদি প্রচুর পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করে এবং তার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম বের হয় তাহলে পানি খাওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হবে। আবহাওয়া অনুযায়ী পানি খাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করলে আমাদের শরীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আদ্র থাকে। তাই যাদের শরীরে আদ্রতা অনেক বেশি তারা ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি খাবেন। তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে।

বয়স অনুযায়ী পানি পান

প্রতিদিন একজন সুস্থ মানুষকে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে এটি সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একজন শিশু এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পানি খাওয়ার পরিমাণ এক নয়। বয়স অনুযায়ী পানি খাওয়ার পরিমাণ কম এবং বেশি হবে। একজন শিশু থেকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পানি খাওয়ার পরিমাণ অনেক গুণ বেশি। তাই পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক করার পূর্বে অবশ্যই বয়স অনুযায়ী সঠিক নিয়মে তালিকা নির্বাচন করুন। 

একজন শিশু কিংবা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করবে সেটি নির্ধারণ করা অবশ্যই জরুরী। কারণ পানি কম পান করলে যেমন অসুবিধা আছে তেমনি পানি বেশি পান করলেও হতে পারে নানা শারীরিক জটিলতা। তাই নিয়ম অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে এতে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকবে। শরীরের নানা জটিলতা দূর হবে।

শিশুর পানি পানের নিয়ম

একটি শিশু জন্মের পর থেকেই বাচ্চাটির খাওয়া-দাওয়া এবং সেবা যত্ন নিয়ে বাবা-মা সব সময় খুব দুশ্চিন্তায় ভোগে। প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত তা প্রতিটা বাবা-মায়ের জানা উচিত। প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের একজন শিশুর পানি পান করার পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন জেনে নিই একজন শিশুর প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে। 

  • বাচ্চার বয়স ১০ দিন এবং ওজন ৩.২ কেজি হলে ৪০০-৫০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ৩ মাস এবং ওজন ৫.৪ কেজি হলে ৭৫০-৮৫০ মিলি লিটার পানি খাওয়াতে হবে
  • বাচ্চার বয়স ৬ মাস এবং ওজন ৭.৩ কেজি হলে ৯৫০-১১০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ১ বছর এবং ওজন ৯.৫ কেজি হলে ১১৫০-১৩০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ৬ বছর এবং ওজন ২০ কেজি হলে ১৮০০-২০০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ১০ বছর এবং ওজন ২৮.৭ কেজি হলে ২০০০-২৫০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার বয়স ১৪ এবং ওজন ৪৫ কেজি হলে ২২০০-২৭০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে। 
  • বাচ্চার বয়স ১৮ এবং ওজন ৫৪ হলে ২২০০-২৭০০ মিলিলিটার পানি খাওয়াতে হবে।

উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন শিশুকে পানি খাওয়ালে শিশুটি সুস্থ থাকবে এবং তার পানির চাহিদা পূরণ হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন একজন শিশুর পানির চাহিদা মেটানোর প্রধান উৎস হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। তাই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার পাশাপাশি পানি খাওয়াতে হবে।

দৈনিক কত লিটার পানি খেলে মূত্রথলির রোগ হয় না

একজন সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষের একদিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ৬ থেকে ৮ বার প্রসব করা স্বাভাবিক। তাই এই অনুযায়ী একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করা উচিত। এর থেকে বেশি পানি পান করলে রোগীদের ঘন ঘন প্রসাব হয় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। এমনকি এর থেকে কম পানি পান করলে প্রসাব এর পরিমাণ কমে যায় এবং প্রসাব হলুদ ও গাঢ় আকার ধারণ করে যার ফলে মূত্রথলির নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। তাই মূত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করতে হবে।

খালি পেটে পানি পান করলে কি হয়

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমেই এক গ্লাস পানি পান করা উচিত। সকালে প্রথমে পানি পান করলে এটি আপনার পাকস্থলীর এসিডিটিকে পাতলা করবে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করলে এটি আপনার শরীরের সমস্ত অংশ থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করবে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেম কে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনি শারীরিকভাবে অনেক সুস্থতা বোধ করবেন এবং আপনার অম্বলের সমস্যা কমে যাবে। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নেই সকালে খালি পেটে পানি পান করার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে। 

  • প্রতিদিন সকালে নিয়মিত পানি পান করলে মলাশয় ঠিকঠাক হয় এবং এটি সচল রাখতে সাহায্য করে। 
  • সকালে খালি পেটে পানি পান করার ফলে পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। 
  • সকালে ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং সুন্দর হয়। 
  • দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ফলে মস্তিষ্ককে সচল করতে সকালে এক গ্লাস পানি অনেক উপকারী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে ৬৫০ মিলি বা ৩ কাপ পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠার পর শরীরকে হাইড্রেট করতে খালি পেটে এক গ্লাস পানি অত্যন্ত কার্যকরী।

রাতে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক হাইড্রেশন প্রয়োজন কারণ এটি হজম সঞ্চালন এবং বর্জ্য অবসারণে সাহায্য করে। প্রতিটা মানুষের চার ঘন্টা ঘুমের পাশাপাশি নয় গ্লাস পানি সারাদিনের পান করা প্রয়োজন। এ তো শারীরিক ভারসাম্য বজায় থাকে। স্বাস্থ্য ও ঘুমের উন্নতি ঘটায়। তবে মনে রাখতে হবে শোয়ার কিছুক্ষণ আগে পানি পান করতে হবে।

রাতে-কতটুকু-পানি-খাওয়া-উচিত

শোয়ার সময় সাথে সাথে পানি পান করা উচিত নয় এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শোয়ার আগে পানি খেয়ে ঘুমাতে গেলে হৃদরোগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ডিহাইড্রেশন এড়াতে এবং রাতে অতিরিক্ত পানি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে অবশ্যই সারাদিন আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। মনে রাখবেন ডিহাইড্রেশনের একটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে গাঢ় হলুদ প্রস্তাব। তাই দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন এবং রাতে তুলনামূলকভাবে কম পানি পান করুন। এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয়

আমরা সকলেই জানি কোন কিছু পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উপকার হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে সেটির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঠিক যতটুকু পানি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন ঠিক ততটুকু পানি খাওয়া উচিত। বাড়তি পানি খেলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে। 

আরোও পড়ুন: চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়। গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম

  • অতিরিক্ত মাত্রায় পানি খেলে শরীরের ক্লান্তি বোধ এবং মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। 
  • আমাদের শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ হ্রাস এবং বৃদ্ধি অনেক ক্ষতিকর। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অতিরিক্ত পানি পান করার ফলে আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইট গুলো পাতলা হয়ে যায় যার ফলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে শারীরিক দুর্বলতা, খিচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
  • অতিরিক্ত পানি পান করার ফলে অনেক সময় আমাদের শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে যা ওজন বৃদ্ধির একটি কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 
  • বিশেষজ্ঞদের মতে একটি সাধারণ কিডনি প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ এক কোয়াট বা ১ লিটারের সমান তরল পদার্থ ত্যাগ করতে পারে। তাই এর থেকে পানি বেশি পান করলে আপনার শরীরে পানি জমে থেকে যাবে যার ফলে হাইপোন্যাট্রিয়াম হতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতি করে। 

শেষ কিছু কথা 

আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে যা আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www.digitalabida.com এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url