পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা

আমরা জানি পেয়ারা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। আপনি জেনে অবাক হবেন যে শুধু পেয়ারায় নয় পেয়ারা পাতাতেও রয়েছে অনেক অনেক স্বাস্থ্য কারী উপকারিতা। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি পেয়ারা পাতার বিশেষ উপকারিতা ও চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

পেয়ারা-পাতার-১৬-টি-বিশেষ-উপকারিতা

গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন পেয়ারা পাতার চা ভেষজ হিসেবে পরিচিত এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং কোয়েসার্টিক সহ নানা ওষুধি গুনাগুন। আজকের এই আর্টিকেলে পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা সম্পর্কে জানাবো।

পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা 

পেয়ারা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু পেয়ারা পাতাও যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা জানলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ঔষধি উপাদান যা আপনার স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষকরা পেয়ারা পাতাকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। 

আরোও পড়ুন: পান্তা ভাতের অবিশ্বাস্য উপকারিতা-পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক

পেয়ারা পাতায় থাকা পলিফেনাল, ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং টেনিন রাসায়নিক পাওয়া যায় বলে এটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। শুধু পেয়ারা বা পেয়ারার পাতাতেই নয় এর বীজ এবং খোসাতেও রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা।পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা এ আর্টিকেলে আমরা আপনাদের এখন পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে।

  • ডায়রিয়ার জন্য উপকারী
  • ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে বাঁচায়
  • হজম শক্তি ভালো রাখে 
  • দাঁতের ব্যথা কমায় 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
  • শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • কফ ও ব্রংকাইটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • ত্বকের যত্নে
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 
  • চুল পড়া কমায়
  • কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে

ডায়রিয়ার জন্য উপকারী: প্রায় সময় মানুষকে ডায়রিয়া ভুগতে দেখা যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক মানুষকে পেয়ারা পাতার চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি ডায়রিয়ার গুণ। যা নিয়মিত খেলে ডায়রিয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে বাঁচায়: ব্যাকটেরিয়া ও ভাঙ্গাস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর রোগ জীবাণু। তাই প্রতিটা মানুষকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে হবে। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পেয়ারা পাতা অনেক উপকারী একটি উপাদান। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ট্যানিন এবং অ্যাসিড যা আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়াও ফাঙ্গাসের হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি ভালো রাখে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতার রস খেলে পেটের নানা রকম সমস্যা ভালো হয়। এটি আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা  দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

দাঁতের ব্যথা কমায়: দাঁতের ব্যথা কমাতে পেয়ারা পেয়ারার পাতাকে মহা ওষুধ বলা হয়। কারণ পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ইনফ্লোমেটরি উপাদান যা ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে। আপনি যদি দাঁতের ব্যথায় ভুগেন তাহলে কয়েকটি কচি পেয়ারা পাতা দাঁতের উপর রেখে আস্তে আস্তে চিবুতে থাকুন। দেখবেন প্রাথমিকভাবে আপনার দাঁতের ব্যথা দূর হয়ে গেছে। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপেন, কোয়ারকেটিন ভিটামিন এবং আরো কিছু পলিফেনল যা আমাদের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শুক্রাণু সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে: আপনি জেনে অবাক হবেন যে পেয়ারা পাতা সাহায্যে স্পার্ম কাউন্টও উন্নত করা সম্ভব। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি পেয়ারা পাতা উর্বরতা বাড়াতে সক্ষম বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শুক্রাণুর বিষাক্ততার উপর উপকারী প্রভাব ফেলে যা একজন পুরুষের উর্বরতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়ে থাকেন এবং ওজন কমাতে ব্যর্থ হন তাহলে পেয়ারা পাতা আপনার জন্য কার্যকরী একটি উপাদান। প্রতিদিন পেয়ারা পাতার রস খেলে বা পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে। পেয়ারা পাতায় রয়েছে অনেক ধরনের যৌগ যা আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণে বাধা দেই যার ফলে ওজন বাড়তে পারে না। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেয়ারা পাতায় উপকারী উপাদান আমাদের শরীরের নানা রোগকে প্রতিরোধ করে।

কফ ও ব্রংকাইটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কফ ও ব্রংকাইটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতার চা বেস্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যদি কফ ও ব্রংকাইটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্য অনেক উপকার আসবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফিনোলিক যা আমাদের শরীরর রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয়। তাই প্রতিদিন পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে বা পেয়ারা পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের পাশাপাশি চোখের ও নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। পেয়ারা পাতা চোখের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। পেয়ারা পাতায় থাকা উচ্চমানের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বয়স জনিত কারণে চোখের ছানি পড়া বা চোখের যে কোন সমস্যা দূর করতে পেয়ারা পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক লেকজেটিক উপাদান। এই উপাদান আমাদের পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বর্তমানে কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস খাবেন। এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং ভাজাপোড়া ও তেল চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

ত্বকের যত্নে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ  ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী। ত্বকের দাগ দূর করতে এবং ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে পেয়ারা পাতার জুড়ি মেলা ভার।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ফাইবার যা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস খেলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

চুল পড়া কমায়: পেয়ারা পাতার রস চুল পড়া কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কয়েকটি পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানি মাথায় ম্যাসাজ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে: পেয়ারা পাতার কার্যকরী উপাদান আমাদের শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণ এবং ভালো কোলেস্টর নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যার ফলে পেয়ারা পাতাকে কোলেস্টরলের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা 

পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের চুলের যত্নের পেয়ারা পাতা সম্পর্কে জানাবো। চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে পেয়ারা পাতার ভূমিকা অনেক। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি যা চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং খুবই উপকারী। গবেষকরা দাবি করেন নিয়মিত পেয়ারা পাতা চুলে ব্যবহার করলে মাথার চুল পড়া রোধ হয় এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। 

আরোও পড়ুন: দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত। খালি পেটে কলা খেলে কি হয় জানুন

চুলে নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস ব্যবহার করলে চুলের সংযুক্তিস্থ স্থল অর্থাৎ গ্রন্থি কোর্স গুলো চুলের গোড়াকে শক্ত করে। তাই এক মুঠো পেয়ারা পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে দুই কাপ পানি দিয়ে ২০ মিনিট ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এই মিশ্রণটি লালচে হলে চুলোর আঁচ বন্ধ করে দিতে হবে। মিশ্রণটি ঠান্ডা হবার পর একটি বোতলে থেকে ঢেলে নিয়ে হেয়ার টনিকের মত নিয়মিত চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। এটি একসাথে বেশি করেও বানিয়ে নিতে পারেন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

চুলের-যত্নে-পেয়ারা-পাতা

এছাড়াও এই মিশ্রণটি চুলে ব্যবহার করলে চুল লম্বা হতেও সাহায্য করে। এটি একটি শতভাগ প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এতে কোন ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এটি মাথার ত্বকে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বককে ভালো রাখে যার ফলে দ্রুত চুল লম্বা হয়।

পেয়ারা পাতার পুষ্টি উপাদান

পেয়ারা পাতার গুনাগুন এবং পুষ্টি উপাদান বলে শেষ করা যাবে না। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গুনাগুন এবং পুষ্টি উপাদান। চলুন জেনে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারা পাতায় কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে।

  • কার্বোহাইড্রেট ১৪.৩২ গ্রাম 
  • ভিটামিন সি ২২৮.৩ মিলিগ্রাম 
  • প্রোটিন ২.৫৫ গ্রাম
  • ভিটামিন বি ০.১১ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম 
  • আয়রন ১৩.৫০ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম

এছাড়াও পেয়ারা পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটা, থায়ামিন, ক্যারোটিন, ফোলেট, লৌহ, ভিটামিন কে, রিবোফ্লেভিন, লাইকোপেন সহ আরো অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান।

পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

পেয়ারা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava. এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় হল গাছ যা Myrtacear পরিবারের অন্তর্গত। এই গাছের ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয় এটি অনেক পরিচিত। এটি সাধারণত তাজা খাওয়া হয় বা বিভিন্ন রন্ধন প্রণালীতে ব্যবহার করা হয় আবার সালাদ হিসেবেও খাওয়া হয়।

পেয়ারা পাতা কি কাজ করে 

পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা এ আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের পেয়ারা পাতা কি কাজ করে সে সম্পর্কে জানাবো। মনোযোগ সহকারে পড়ুন । 

পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজ, ভিটামিন এবং ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত থাকা ভিটামিন আমাদের ত্বক এবং চোখকে ভালো রাখতে সর্বোত্তম চেষ্টা বজায় রাখে। তাই চোখ এবং ত্বকের জন্য পেয়ারা পাতা দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে। পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী তা বলে শেষ করা যাবে না।

পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা 

পেয়ারা পাতার অনেক গুণাগুণ আছে এটা আমরা জানি। কিন্তু আপনি জানেন কি পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা করার বিশেষ ভূমিকা সম্পর্কে। পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই ত্বকের জন্য পেয়ারা পাতা কতটা উপকারী।

  • তৈলাক্ত ত্বকের জন্য 
  • ব্রণ ও ব্ল্যাকহেড দূর করতে 
  • ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে 
  • বয়সের ছাপ কমাতে 

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: ১০ টি পেয়ারা পাতা অল্প একটু পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার ব্লেন্ড করে নেওয়া পেয়ারা পাতার পেস্টের সাথে দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখের উপর আধা ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। আধাঘন্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয় এবং ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ব্রণ ও ব্ল্যাকহেড দূর করতে: ১০ টি পেয়ারা পাতা অল্প একটু পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার ব্লেন্ড করা পাতার সাথে এক টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া এবং এক টেবিল চামচ এলোভেরার জেল মিশিয়ে ভালো একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ব্রনের ওপর খুব ভালো কাজ করে। তাই এই মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করলে দেখবেন ব্রন ও ব্ল্যাকহেড দূর হয়ে গেছে।

ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে: ১৫ থেকে ২০ টি পেয়ারা পাতা এক কাপ পানিতে ভালোভাবে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত পানি ঠান্ডা করে ভালোভাবে ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করার পর এই স্প্রে ব্যবহার করলে মশায় কামড়ানো দাগ এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া উপশম করতে খুব ভালো কাজ করে।

বয়সের ছাপ কমাতে: বর্তমানে মেয়েদের অল্প একটু বয়স হলেই মুখে বয়সে ছাপ পড়তে শুরু করে। বয়সের ছাদ দূর করে ত্বককে টান টান ভাব ধরে রাখতে পেয়ারা পাতার গুরুত্ব অনেক। পেয়ারা পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যাডিকালকে ধ্বংস করে। এই ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতি করে বলে গবেষণায় জানা গেছে। তাই অসময়ে বলিরেখা দূর করতে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে ত্বকের জেলা ফেরাতে পেয়ারা পাতার জুড়ি মেলা ভার। তাই ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে নিয়মিত পেয়ারা পাতা বাটা পেস্ট ব্যবহার করুন।

পেয়ারা পাতা খেলে কি ওজন কমে? 

আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে আর্টিকেলের এ অংশটুকু আপনার জন্য। পেয়ারা পাতায় থাকা উপাদান আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পেয়ারা পাতার জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে ফুটিয়ে সেই পানি খেলে ক্যালরি ঝরে যায়। যার ফলে আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। এছাড়াও পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরের রক্তক্ষরণ সারিয়ে দিতে  পারে।

পেয়ারা পাতার চা কাদের খাওয়া উচিত নয়? 

পেয়ারা পাতায় ভালো উপাদানের পাশাপাশি কিছুটা খারাপ উপাদানও রয়েছে। পেয়ারা পাতায় রয়েছে কিছু রাসায়নিক পদার্থ যা আমাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে কারো যদি একজিমা থাকে সেক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার রস না খাওয়াই ভালো। কারণ একজিমা রোগীরা পেয়ারা পাতার রস খেলে তাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করে থাকে তাহলে অবশ্যই সাবধানতার সাথে পেয়ারা পাতা চা খেতে হবে। তবে মনে রাখবেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

পেয়ারা পাতার চা দিনে কতবার খাওয়া উচিত?

আমরা জানি পেয়ারা পাতা চা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবেনা। প্রতিটা জিনিস পরিমিত মাত্রায় খেলে সেটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ পেয়ারা পাতার চা খাওয়া যেতে পারে। পেয়ারা পাতায় থাকা স্বাস্থ্যকরী উপাদান আমাদের হজম শক্তি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত এটি খাওয়া উচিত।

খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে কি হয় 

পেয়ারা পাতা অনেক উপকারী একটি উপাদান। প্রতিদিন সকালে পেয়ারা পাতা খেলে অনেক অসুখ থেকে মুক্তি মেলে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে কয়েকটি পেয়ারা পাতার চিবিয়ে খেলে এই সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্টিকের সমস্যা সহ সবকিছুই দূর হয়। পেট ভালো রাখতে পেয়ারা পাতার ভূমিকা অনেক। পেট ভালো রাখার পাশাপাশি এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে কয়েকটি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খান। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন সকালে পেয়ারা পাতার রস অত্যন্ত উপকারী একটি জুস। আপনি যদি এসব সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতার রস বা চিবিয়ে পেয়ারার পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। শরীর সুস্থ রাখতে পেয়ারা পাতার ভূমিকা অনেক।

এলার্জিতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার 

এলার্জি খুব বিরক্তিকর একটি রোগ। বর্তমানে আমাদের সমাজে এই রোগের রোগীর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এলার্জির কারণে মানুষ তার অনেক পছন্দের খাবারও খেতে পারে না। অনেক পুষ্টিকর সবজি আছে যেগুলো এলার্জির কারণে খাওয়া যায় না। শুধু খাবার নয় এই এলার্জির কারণে অনেকেই তাদের নিজেদের পছন্দের পোশাকও পড়তে পারেনা। 

পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের এলার্জি থেকে পেয়ারা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব। এলার্জিতে পেয়ারা পাতা দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। চলুন জেনে নিই এলার্জিতে পেয়ারা পাতা ব্যবহার সম্পর্কে।

  • ৪-৫টি পেয়ারা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারের সাহায্যে বা পাটায় ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। পেয়ারা পাতাটি কচি হলে বেশি ভালো হয়। এরপর পেয়ারা পাতার বাটা পেস্টের সাথে এক চামচ কালোজিরা গুড়ো এবং এক চামচ পানি মিশিয়ে রাতে খাবারের ৩০ মিনিট পর খেয়ে নিন। এটি খেলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অনেক পুরাতন এলার্জি হলেও সেটি দূর হয়ে যায়।
  • পেয়ারা পাতার পেস্টটি খেতে না পারলে অনেকেই পেয়ারা পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮ টি পেয়ারা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পানিতে কিছুক্ষণ ফুটাতে হবে। তারপর এর সাথে পরিমাণ মতো চা পাতা মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেকে নিন। পেয়ারা পাতার চা নিয়মিত কিছুদিন খেলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়।

কাশির জন্য পেয়ারা পাতার ব্যবহার 

পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কাশির জন্য পেয়ারা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি জেনে খুশি হবেন যে পেয়ারা পাতা কাশির জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অনেক দিনের পুরাতন কাশি দূর করতে এই পেয়ারা পাতার জুড়ে মেলা ভার। কাশি দূর করার জন্য ১০ থেকে ১২ টি পেয়ারা পাতা পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে একটু বেশি সময় ধরে ফুটিয়ে ছেকে নিতে হবে। পেয়ারা পাতার ফুটন্ত পানির সাথে কিছুটা মধু মিস করে কাশির রোগীকে খেতে দিলে খুব দ্রুত কাশি ভালো হয়ে যায়। এভাবে অল্প কিছুদিন খেলেই কাশির দূর হয়ে যায়।

ক্ষত সারাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার 

ক্ষতর উপর পেয়ারা পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতার নির্যাস অন্যান্য বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধি পণ্যের তুলনায় স্বাভাবিক এবং এটি দ্রুত ক্ষত নিরাময়ক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আবার পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করা পানি পেরিনাল সেলাইয়ের ক্ষত সহ প্রসবোত্তর মহিলাদের ক্ষত নিরাময়ের সময় কালের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। তাই এর থেকে বোঝা যায় ক্ষত ছাড়াতে পেয়ারা পাতার ভূমিকা অনেক।

ক্ষত-সারাতে-পেয়ারা-পাতার-ব্যবহার

পেয়ারা পাতার অপকারিতা

প্রতিটা জিনিসেরই উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারও রয়েছে। তাই পেয়ারা পাতারও উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। তবে পেয়ারা পাতায় অপকারিতার পরিমাণ খুব কম। এতে অনেক ওষুধি গুনাগুন রয়েছে তবে এতে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যদি আপনি পেয়ারা পাতা বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলেন তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে আপনার শরীরের কিছু ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নি পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।

আরোও পড়ুন: কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

  • পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেয়ারা পাতা খেয়ে থাকেন তাহলে উচ্চ রক্তচাপ একেবারে কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় পেয়ারা পাতা খাবেন। 
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পেয়ারা পাতা খাওয়া যাবে কিনা এ ধরনের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই গর্ভবতীদের জন্য পেয়ারা পাতা দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর দিবেন। 
  • একজিমার রোগীরা পেয়ারা পাতা এড়িয়ে চলবেন। কারণ একজিমা রোগীদের জন্য পেয়ারা পাতা ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই এই ধরনের রোগীরা পেয়ারা পাতা থেকে দূরে থাকবে। 
  • ডায়াবেটিসের রোগীরা পেয়ারা পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। কারণ ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং পেয়ারা পাতা একসাথে খাওয়া যাবেনা এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

শেষ কিছু কথা 

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকের এই পেয়ারা পাতার ১৬টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা আর্টিকেলটি আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www digitalabida.com ওয়েবসাইটটির সঙ্গেই থাকুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url