গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ১৭ টি উপকারিতা ও ৫টি অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ভাতের মাড় খাচ্ছেন কি? গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার বিশেষ কার্যকরী কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। আজকের এই পোষ্টের মধ্যে আপনাদেরকে জানাবো গর্ভাবস্থায় ভাতের মার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

গর্ভাবস্থায়-ভাতের-মাড়-খাওয়ার-১৭-টি-উপকারিতা

আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ছাড়াও ভাতের মাড়ের আরো অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ১৭ টি উপকারিতা 

    আমরা বাঙ্গালীদের প্রায় প্রতিটা ঘরে প্রতিদিন ভাত রান্না হয়। ভাত ছাড়া যেন আমাদের চলে না। আমরা ভাত খেলেও ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তাই প্রতিদিনের ভাতের মাড় আমরা ফেলে দেই। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ভাতের মাড়ের অনেক অজানা পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। 

    আরোও পড়ুন: গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায়

    আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে ভাতের মাড়ের অনেক উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মা চিন্তায় থাকে তাদের অনাগত সন্তানের জন্য। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি এই  মাড় কখনোই ফেলে দিবেন না। ভাত আমাদের প্রিয় খাবার হলেও ভাতের মাড়ের উপকারিতার কথা আমরা জানি না। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে।

    • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 
    • তাৎক্ষণিক শক্তি যোগান দেই 
    • ঘুমের সমস্যা দূর করে 
    • শরীরের হার মজবুত করে 
    • ত্বক সুন্দর করে 
    • ব্রণের সমস্যা দূর করে 
    • চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে 
    • ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য
    • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 
    • পানি শূন্যতা দূর করে 
    • নবজাতক ও ভ্রুনের বিকাশ ঘটায় 
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
    • সকালের দুর্বলতা প্রতিরোধ করে 
    • অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে 
    • গর্ভকালীন ক্লান্তি দূর করে
    • ভিটামিন ও খনিজের উৎস
    • স্টার্চের উৎস

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: গর্ভাবস্থায় মেয়েদের একটি সাধারণ অসুখ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। গর্ভকালীন সময় প্রায় প্রতিটা মেয়ে এ রোগে ভুগে থাকে। গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভাতের মাড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত অল্প পরিমাণ ভাতের মাড় খান। এতে সমস্যা দূর হবে।

    তাৎক্ষণিক শক্তি যোগান দেই: ভাতের মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা যা আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের শক্তি জোগাতে ভাতের মাড়ের বিকল্প নেই।

    ঘুমের সমস্যা দূর করে: গর্ভবতী মায়েদের আরো একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে ঘুমের সমস্যা। গর্ভকালীন সময় তাদের ঘুম কম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ঘুমের সমস্যা দূর হবে।

    শরীরের হাড় মজবুত করে: ভাতের মাড় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর উপকারী একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি। যা আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা থাকা অন্যান্য ভিটামিন আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজন।

    ত্বক সুন্দর করে: ভাতের মাড়কে প্রাকৃতিকভাবে টোনার বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মুখে প্রতিদিন ভাতের মাড় ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। সেই সাথে ত্বকের উপরের অংশে জমে থাকা মৃত কোষগুলো দূর হয়। যার ফলে ত্বক স্বাভাবিকভাবে অনেক সুন্দর এবং মসৃণ হয়।

    ব্রণের সমস্যা দূর করে: যাদের অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন দুইবার করে ভাতের মাড় মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। কারণ ভাতের মাড়ে উপস্থিত থাকা আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের ভেতরের প্রদাহ মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যার ফলে ব্রণ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।

    চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: গোসলের কিছুক্ষণ পূর্বে ভাতের মাড় চুলে লাগালে চুলের পুষ্টির অভাব দূর হয়। যার ফলে খুব সহজেই চুল পড়া কমতে শুরু করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা ও ঝলমলে ভাব বেড়ে যায়।

    ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য: ডায়রিয়া সমস্যায় ভাতের মাড় সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘনঘন পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে এবং সেই সাথে পেটে খোঁচা মারা ব্যথা হলে সাথে সাথেই ভাতের মাড় খাওয়া শুরু করতে হবে। এতে পেট খারাপ কমে যাবে। পেট খারাপের সময় এক গ্লাস ভাতের মাড়ের সাথে অল্প একটু লবণ মিশিয়ে খেলে শরীরে উপকারী খনিজের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে দ্রুতভাবে পেট খারাপ সেরে যায়।

    হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: গর্ভবতী মহিলাদের হজম সমস্যা বৃদ্ধি করতে ভাতের মাড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় হজমে সমস্যা হলে এবং পেট ফুলে গেলে দ্রুত ভাতের মাড় খাওয়া শুরু করতে হবে এতে এই সমস্যাগুলো দূর হবে।

    পানি শূন্যতা দূর করে: গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এতে পানির চাহিদা পূরণ হবে এবং সেই সাথে পানির ঘাটতিও পূরণ হবে। এর ফলে ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গর্ভবতী শরীরে পানির মাত্রা সর্বোত্তম নিশ্চিত করতে সারাদিন অল্প পরিমাণের ভাতের মাড় খাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

    নবজাতক ও ভ্রুনের বিকাশ ঘটায়: ভাতের মাড় নবজাতকের ব্রণের বিকাশ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ভাতের মাড় শিশুদের মস্তিষ্ক, বায়ু তন্ত্র, ত্বক, চোখ এবং হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভাতের মাড় গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা শিশুর শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গর্ভকালীন সময় গর্ভবতীদের শরীর প্রচন্ড পরিমাণ দুর্বল থাকে যার ফলে যে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় ভাতের মাড় খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।

    সকালের দুর্বলতা প্রতিরোধ করে: গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে সকালের দুর্বলতা। প্রথম তিন মাস সকালে ঘুম থেকে উঠে গর্ভবতী মায়ের শরীর দুর্বল থাকে এবং বমি বমি ভাব হয়। তাই সকালের দুর্বলতা প্রতিরোধে ভাতের মাড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

    অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: ভাতের মাড় গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের দেহের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ভাতের মাড়ে থাকে কোলেস্টেরল এবং চর্বি যা অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। এছাড়াও এটি ভ্রুনের স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    গর্ভকালীন ক্লান্তি দূর করে: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের শরীর সবসময় দুর্বল থাকে যার ফলে ক্লান্তি অনুভব হয়। গর্ভকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরে শক্তি যোগাতে ভাতের মাড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। নিয়মিত ভাতের মাড় খেলে গর্ভবতী মহিলারা কোনরকম ক্লান্তি ছাড়াই সারাদিন কাজ করতে সক্ষম হয়।

    ভিটামিন ও খনিজের উৎস: ভাতের মাড় ভিটামিন বি ম্যাগনেসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ জিংক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস। যা গর্ভাবস্থায় অনেক উপকার করে।

    স্টার্চের উৎস: ভাতের মাড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট। এতে উপস্থিত থাকা স্টার্চ ধীরে ধীরে শরীরে শোষিত হয় যার ফলে শরীর দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করতে পারে।

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ৫ টি অপকারিতা 

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে কিছু অপকারিতা। ভাতের মাড় আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এ কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এর পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই ভাতের মাড় খাওয়ার পূর্বে ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এ আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে। 

    গর্ভাবস্থায়-ভাতের-মাড়-খাওয়ার-৫-টি-অপকারিতা

    • ওজন বৃদ্ধি করে 
    • ডায়াবেটিস বাড়ায় 
    • স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে 
    • পেট খারাপ হয় 
    • এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়

    ওজন বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ভাতের মাড় খেলে এটি কোলেস্টেরলের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয় যার ফলে অতিরিক্ত হারে ওজন বেড়ে যায়। তাই ওজন যাদের বেশি তাদের ভাতের মাড় এড়িয়ে চলায় উত্তম।

    ডায়াবেটিস বাড়ায়: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাতের মাড় এড়িয়ে চলা উত্তম। কারণ ভাতের মাড়ে থাকে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টেরল। যা আমাদের রক্তে শর্করা এবং চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।

    স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে: ধান জৈব আর্সেনিক শোষণ করে যার ফলে ভাতের মাড়ে আর্সেনিকের উপস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে যার ফলে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

    পেট খারাপ হয়: অতিরিক্ত ভাতের মাড় খেলে অনেকের পেট খারাপ হতে পারে। যার ফলে ডায়রিয়া বা পেট ব্যথার মত সমস্যা দেখা যায়।

    এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়: অতিরিক্ত ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের এলার্জি বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় ভাতের মাড় না খাওয়ায় উত্তম।

    আরোও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

    ভাতের মাড়ের পুষ্টিগুণ

    ভাতের মাড়ের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের মাড়ে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই এর পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়াও ভাতের মাড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ, শর্করা, লৌহ, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের দেশ ভাতের মাড় নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো ভাতের মাড় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের বিজ্ঞানী মি. লিন ভাতের মাড় নিয়ে গবেষণা করে তিনি দেখেছেন এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, লৌহ, জিংক ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং মিলেনিয়াম এই ছয়টি উপাদান বিদ্যমান। তিনি আরো গবেষণা করে দেখেছেন ভাতের মাড়ে রয়েছে লৌহ ১০ গুণ ক্যালসিয়াম ৪ গুণ ম্যাঙ্গানিজ ১২ গুন কপার ৬ গুণ এবং মিলেনিয়াম ২ গুণ।

     এছাড়াও এতে রয়েছে টোকোট্রাইনোল ও অন্যান্য নানা ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের শরীরে অনেক উপকারে আসে। কিন্তু কষ্টের কথা এই যে ভাতের মাড়ের এই পুষ্টিগুণ আমাদের দেশে অপচয় হয় বললেই চলে। কারণ আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মাড় নিঙরিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। যার ফলে ভাতের মাড়ের পুষ্টিগুণ মারাত্মকভাবে অপচয় হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে ফেলে দেওয়া ভাতের মাড়ে প্রায় ১৫% ক্যালরি, ১৫% আমিষ ১০% শর্করা ৫০% লোহ ৫০% ফসফরাস ৪০% আয়োডিন ২৫% রিবোফ্লেভিন ২৩% নায়াসিন এবং ৫০% ক্যালসিয়াম প্রতিদিন অপচয় হয়।

    কিভাবে ভাতের মাড় তৈরি করতে হয়

    ভাতের মাড় তৈরি করা খুব সহজ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ভাতের মাড় প্রস্তুত করার কয়েকটি ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করব। যেটি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই পুষ্টিকর ভাতের মাড় তৈরি করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই ভাতের মাড় প্রস্তুত কারো কয়েকটি ধাপ সম্পর্কে। 

    • প্রথমে পরিমাণ মতো চাল নিন 
    • চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিন 
    • একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি মেপে নিন যেন চালের থেকে প্রায় চার গুণ বেশি হয়। 
    • এবার একটি পাত্রে চাউল উঠিয়ে চুলার উপর রেখে জাল করতে থাকুন।
    • চাল সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত জাল দিন 
    • এভাবে কিছুক্ষণ জাল দিলে চাল সিদ্ধ হয়ে ভাতে পরিণত হয়েছে 
    • এবার ভাতের মাড় সংগ্রহ করতে ভাত ভালোভাবে থেকে নিন। 
    • ভাতের মাড় থেকে চাল ছেঁকে নিলেই মাড় আলাদা হয়ে যাবে। 

    উপরের উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করে মাড় প্রস্তুত করা হয়।

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়া যাবে?

    ভাতের মাড় খুব সাধারণ একটি জিনিস যা আমরা ফেলে দেই। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে এটি গর্ভাবস্থায় অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতার কারণে চিকিৎসকরা গর্ভবতী মায়েদের ভাতের মাড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খেলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে এটি গর্ভবতী মেয়েরা খেলে তার গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা সন্তান উভয়েরই অনেক উপকার করে। তাই চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার পরামর্শ দেন।

    দৈনিক কতটুকু ভাতের মাড় খাওয়া ভালো? 

    আমরা জানি ভাতের মাড় অনেক উপকারী একটি পানীয়। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকার অনেক। তবে কোন জিনিসের উপকারের পাশাপাশি ক্ষতিকরও রয়েছে। যে কোন জিনিস পরিমিত মাত্রায় খেলে সেটি আমাদের শরীরে উপকার করে কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের জানাবো দৈনিক কতটুকু ভাতের মাড় খাওয়া ভালো সে সম্পর্কে। 

    প্রতিদিন এক গ্লাস পরিমাণ ভাতের মাড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে একসাথে ১ গ্লাস ভাতের মাড় খেতে না পারলে দিনে ২ থেকে ৩ বার অল্প অল্প করে এটি খেতে পারবেন। প্রতিদিন ১ গ্লাস ভাতের মাড় খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে মনে রাখবেন বেশি খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভব না রয়েছে।

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম 

    ভাতের মাড়ের কথা বিবেচনা করে অনেকেই ভাতের মাড় বর্তমানে খাচ্ছেন। কিন্তু ভাতের মাড় খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলবো। আপনি জেনে অবাক হবেন যে গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

    • রান্না শেষ হবার পর ভাব থেকে মার গুলো আলাদা করার পর সাথে সাথেই এটি গ্লাসে করে পান করতে পারেন। 
    • ভাতের মাড়ের সাথে চিড়া ভিজিয়ে খেলে এর উপকারিতা অনেক। ভাতের মাড়ের সাথে চিড়া ভিজিয়ে খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকরী। তাই চাইলে আপনিও ভাতের মাড়ের সাথে চিড়া ভিজিয়ে খেতে পারেন। 
    • স্যুপের সাথে মিশিয়ে ভাতের মাড় খেলে সুস্বাদু অনেকটা বেড়ে যায়। যার ফলে সুপ এবং ভাতের মাড় একসাথে খেলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অনেক বেশি পাওয়া যায়।
    • ভাতের মাড়ের সাথে সামান্য একটু লেবুর রস এবং চিনি যোগ করেও খেতে পারেন। 
    • ভাতের মাড় দিয়ে পোলাও, পায়েস এবং পিঠা ইত্যাদি তৈরি করেও খাওয়া যায়।

    ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় 

    ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি একথা আমরা সকলেই জানি। ভাতের মাড় খাওয়ার সময় অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। তাদের মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন সব সময় উঁকি দেয়, ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়ে যাব এই দুশ্চিন্তায় ভোগে। আসলে ভাতের মাড় খেলে স্বাস্থ্য মোটা হয় একথা একদম সত্য। 

    আরোও পড়ুন: ঠোটের কালো দাগ দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়

    আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যাদের ওজন অনেক বেশি আবার অনেকেই আছি যাদের ওজন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই উচ্চতা অনুসারে ওজন ঠিক রাখতে হবে তাহলে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করা যাবে। অতিরিক্ত ওজন যেমন ভালো নয় তেমনি অতিরিক্ত কম ওজনও ভালো হয়। যাদের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম তাদের জন্য ভাতের মাড় একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।

    ভাতের মাড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টরেল যা খেলে আমাদের শরীরে চর্বি বৃদ্ধি পায় যার ফলে শরীর মোটা হয়ে যায়। যারা মোটা হতে চান তারা নিয়মিত ভাতের মার খেলে শরীর মোটা হবে এবং শরীরের চর্বি জমবে। যাদের স্বাস্থ্য বেশি তারা ভাতের মাড় খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এতে থাকা উচ্চকলেস্টেরল ওজন আরো বৃদ্ধি করে দিবে।

    ভাতের মাড় খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে 

    উপরের আলোচনায় গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ভাতের মাড় খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে এই সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ যারা ডায়াবেটিসের রোগী তারা প্রতিটা খাবার খাওয়ার পূর্বে চিন্তা করে এটি খেলে কি ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর দিব আজ। 

    নিয়মিত ভাতের মাড় খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। কারণ হাতের মাড়ে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় এটি আমাদের শরীরে চর্বি জমতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীরে শর্করা বা চিনির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। আর শর্করা বা চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে এই কথা আমরা সবাই জানি। যার ফলে আপনি স্বাস্থ্যঝুঁকির সমস্যায় পড়তে পারেন।

    তাই ডায়াবেটিস এর রোগীরা অবশ্যই ভাতের মাড় খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন। কারণ ভাতের মাড় খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। ভাতের মাড় খেলে ডায়াবেটিস কমে না বরং বেড়ে যায়। সুতরাং ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ভাতের মাড় এড়িয়ে চলুন।

    রূপচর্চায় ভাতের মাড় 

    সুন্দর ত্বক আমাদের সকলের কাম্য। সবাই চাই ত্বক সুন্দর করতে। তাই তারা অনেক পণ্য সামগ্রী এবং কসমেটিক ব্যবহার করে থাকেন। ভাতের মাড় দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে আপনি জানেন কি। আপনি জেনে অবাক হবেন যে ভাতের মাড় ব্যবহার করে ত্বক হয়ে উঠবে অনেক উজ্জ্বল এবং মসৃণ। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নেই রূপচর্চায় ভাতের মাড়ের ব্যবহার সম্পর্কে। 

    ভাতের মাড় মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে এটি ত্বকের আদ্রতা কমায় উজ্জ্বলতা বাড়ায় দাগ যোগ দূর করে মেস্তা দূর করে ত্বকের রুক্ষতা কমিয়ে ত্বককে মসৃণ করে তোলে। এছাড়াও যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ভাতের মাড় ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন জেনে নিই ভাতের মাড় ব্যবহার করার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে। 

    • ভাতের মাড়ের সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজার হয়। 
    • দুধের সাথে ভাতের মাড় মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক খুব টানটান হয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। 
    • ভাতের ঘন মার ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ভরে একটি তুলোর সাহায্যে পাঁচ মিনিট মুখে মালিশ করতে হবে। এরপর শুকনো সিট মাস্ক মারের উপর দিয়ে মুখে বসিয়ে শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে আস্তে আস্তে টেনে তুললে দেখবেন ত্বকের আদ্রতা কমে গেছে, উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে এবং দাগ ছোপ ও মেসতার দাগ কমে যায়।
    • ভাতের মাড়ের ঘন পেস্ট মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা দূর হয় 
    • ভাতের মাডের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিলে মুখের দাগ কমে যায়।

    চুলের যত্নে ভাতের মাড়

    চুল প্রতিটা মানুষের সৌন্দর্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দর ঝলমলে চুল আমরা সকলেই পছন্দ করি। চুলের যত্ন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকে। কারণ চুল নষ্ট হয়ে গেলে মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে চুলের যত্নে ভাতের মাড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাতের মাড় দিয়ে চুলের যত্ন করলে এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যার ফলে এটি চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। চলুন জেনে নিই চুলের যত্নে ভাতের মাড়র উপকারিতা সম্পর্কে।

    চুলের-যত্নে-ভাতের-মাড়

    • ভাতের মাড় একটি স্প্রে বোতলে ভরে চুলে নিয়মিত স্প্রে করলে চুল লম্বা ও সুন্দর হয়। 
    • ভাতের মাড়ে থাকা ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক চুল সুন্দর করতে সাহায্য করে।
    • ভাতের মাড় চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার এবং ডিট্যাংগলার হিসেবে কাজ করে। 
    • ভাতের মাড় চুলে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চুল নরম মসৃণ এবং ঝলমলে হয়।

    শেষ কিছু কথা 

    গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ভাতের মাড়ের অনেক অজানা তথ্য সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে www.digitalabida.com এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url