সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে আপনি পাবেন নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
আপনি কি সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে
চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বর্তমানে মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বড়ই সচেতন। তাই তারা পুষ্টিগুণে
ভরপুর খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিবেচনা করলে চিয়া সিট
কে সুপার ফুড বলা হয়। চলুন এই আর্টিকেলের মধ্যে আপনাদের সকালের খালি পেটে চিয়া
সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানায়।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। অনেকেই মনে করেন চিয়া
সিড শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য সবাই খেয়ে থাকেন কিন্তু এই ধারণা ভুল। চিয়া
সিড শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য নয় বরং এটি খেলে পাওয়া যায় অনেক স্বাস্থ্য
উপকারিতা যা জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে সেই
প্রাচীন কাল থেকে মানুষ এই চিয়া সিড খেয়ে আসছে। পুষ্টিবিদরা এটিকে সুপার ফুড
হিসেবে বিবেচনা করেন।
চিয়া সিড মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে চিয়া নামক এক ধরনের গাছ
থেকে জন্ম নেয়। এটি পুদিনা পরিবারের বীজ জাতীয় একটি গাছ। এই গাছে সাদা, কালো
এবং বাদামী রঙের বীজ হয়। চিয়া বীজগুলো দেখতে অনেকটা তিলের মতো। এটি পানিতে
ভিজিয়ে তারপর খাওয়া হয়। পানিতে ভেজানোর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই চিয়া সিড
গুলো ফুলে প্রায় ১২ গুন পর্যন্ত বড় হতে পারে। চলুন জেনে নিই সকালে খালি পেটে
চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা সম্পর্কে।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা
- হজম প্রক্রিয়া উন্নতি করে
- ওজন কমায়
- শক্তি বৃদ্ধি করে
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতি করে
- শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে
- ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে
- ত্বক চুল ও নখ সুন্দর করে
- বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধির করে
- ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করে
- রক্তস্বল্পতা দূর করে
- কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে
- বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
হজম প্রক্রিয়া উন্নতি করে: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা সকালে
খালি পেটে খেলে এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ভালো করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য
উন্নতি করে।
ওজন কমায়: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের ক্ষুধা
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে চিয়া সিড খেলে এটি আমাদের অনেকক্ষণ
পেট ভরা রাখে যার ফলে দীর্ঘ সময় কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে খাবার
নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমানো যায়।
শক্তি বৃদ্ধি করে: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার।
তাই এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে এটি আপনার শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তির
ব্যবস্থা করবে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত চিয়া
সিড খেলে এটি আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক আছে যার ফলে ডায়াবেটিস এর
ঝুঁকি কমায়। এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও চিয়া সিডের ভূমিকা অনেক।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ যা
আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে হৃদরোগ হবে
না বলে দাবি করেন পুষ্টিবিদরা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে আরো শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম করে
তোলে।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতি করে: চিয়া সিডে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের
শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। হাড় মজবুত করতে
চিয়া সিডের জুরি মেলা ভার।
শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে: এক চামচ চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে
সারারাত রেখে দিন। এরপর এর সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে
খেলে এটি আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করবে।
ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে: প্রতিদিন খালি পেটে চিয়া সিড খেলে এটি
আমাদের ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তাই যাদের ঘুমের
সমস্যা রয়েছে তাদের চিয়া সিড খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ত্বক চুল ও নখ সুন্দর করে: চিয়া সিড এমন একটি খাদ্য যা আমাদের
শুধুমাত্র শারীরিক উপকার করে তা নয় এটি আমাদের শরীরে থাকা চুল, নখ এমনকি ত্বক
সুন্দর করতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধির করে: আপনি জেনে অবাক হবেন যে চিয়া সিডকে
এন্টি এজিং ফুড হিসেবেও ডাকা হয়। কারণ চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ফ্রী রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি মেডিকেল আমাদের শরীরের
ডিএনএ ও জীবিত কোর্সগুলোকে ধ্বংস করতে পারে যার ফলে আপনার দ্রুত বুড়িয়ে
যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এটি আপনার শরীরে বয়সে ছাপ দূর করবে।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে: চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ অ্যাসিড আমাদের
শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে। যার ফলে শরীরে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: প্রতিদিন সকালে নিয়মিত চিয়া সিড খেলে এটি
আমাদের কোলন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যার ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে
বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করে: আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে তাহলে
আপনি প্রতিদিন সকালে নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারে। কারণ নিয়মিত চিয়া সিড খেলে
এটি এসিডিটি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের
শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা দূর করে আমাদের শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চিয়া সিডের ভূমিকা অনেক।
কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে: নিয়মিত চিয়া সিড খেলে কিডনির সমস্যা দূর হয়।
এটি আমাদের কিডনির কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কিডনির যাবতীয় স্বাস্থ্য উন্নতি
ঘটায়। কিডনির যেকোনো সমস্যা দূর করতেও এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে: শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে চিয়া সিড বেশ
কার্যকরী। চিয়া সিডে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড,
মিনারেল, আয়রন বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে দারুন কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত তাকে চিয়া সিড খেতে দিতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: নিয়মিত চিয়া সিড খেলে এটি আমাদের পেটের সমস্যা
দূর করে। এছাড়াও এতে থাকা ফাইভার হজম প্রক্রিয়া উন্নতি করে যার ফলে আপনার যদি
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে তাহলে এটি দূর করতে চিয়া সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করবে।
চিয়া সিড খাওয়ার ৭ টি অপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে এর
কয়েকটি অপকারিতা। যে কোন জিনিস পরিমিত মাত্রায় ফেলে সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের
জন্য উপকারী হলেও অপরপক্ষে এটি বেশি পরিমাণ খেলে সেটি আমাদের শরীরের জন্য
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চিয়া সিড আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী
হলেও এটি বেশি পরিমাণ খেলে কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। ইতিমধ্যে
আপনারা চিয়া সিডের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন চলুন আর্টিকেলের এই অংশে জেনে
নেওয়া যাক চিয়া সিডের ৭টি অপকারিতা সম্পর্কে।
চিয়া সিড খাওয়ার ৭ টি অপকারিতা
- পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে
- উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়
- শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়
- ক্যান্সারের ঝুকি সৃষ্টি করে
- এলার্জি সৃষ্টি করে
- ডায়রিয়া হতে পারে
- ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় কমিয়ে দেয়
পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে: আমরা জানি চিয়া সিডে উচ্চ লেভেলের ফাইবার
রয়েছে। ফাইবার যুক্ত খাবার পরিমিত মাত্রায় খেলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী কিন্তু এটি বেশি মাত্রায় খেয়ে নিলে পেটে ব্যথা, গ্যাস, পেট ফুলে
যাওয়া,ডায়রিয়া, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়: বেশি পরিমাণ খেলে এটি ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ
রক্তচাপের পরিমাণ অনেক মাত্রায় কমিয়ে দেই যার ফলে সেটি শরীরের জন্য ক্ষতির
কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়: পরিমিত মাত্রায় চিয়া সিড খেলে এটি আমাদের
শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলে সরকারের
পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয় যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে
দাঁড়ায়।
ক্যান্সারের ঝুকি সৃষ্টি করে: চিয়া সিড বেশি পরিমাণের খেলে এটি কিছু
কিছু ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত
মাত্রায় সিয়া সিড খেলে অনেক সময় এটি আমাদের শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ
আরো অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এলার্জি সৃষ্টি করে: কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিয়া সিড বেশি পরিমাণ খেলে এটি
আপনার শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। আবার যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে
তাদের এই সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় সিয়া সিড খাওয়া উচিত।
ডায়রিয়া হতে পারে: আমাদের পায়খানা নরম হতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি
অস্বাভাবিক মাত্রায় ফেলে এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা
দেয়।
ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় কমিয়ে দেয়: নিয়মিত সিট খেলে আমাদের শরীরের
ওজন কমাতে এটি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে বেশি পরিমাণ সিয়া সিট খেলে
এটি আমাদের অস্বাভাবিক মাত্রায় ওজন কমিয়ে দেই যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা সহ
আরো নানা জটিলতা দেখা দেয়। এমনকি এর ফলে কাজ করার ক্ষমতাও অনেকেই হারিয়ে
ফেলে।
চিয়া সিড কি
মরু অঞ্চলে জন্ম নেওয়া সালভিয়া উদ্ভিদের বীজকে চিয়া সিড বলা হয়। মধ্য
আমেরিকায় বেশ কিছু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ চিয়া সিড পাওয়া যায়। সাধারণত এটি
এক ধরনের বীজ মনে করা হলেও এটি আসলে একটি ভেষজ জাতীয় খাদ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন প্রাচীনকালে অ্যাজটেক জাতির লোকজন চিয়া সিডকে প্রধান খাদ্য হিসেবে
খেত। বর্তমানে চিয়া সিডের পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে আমাদের দেশে এটি সুপার
ফুড হিসেবে পরিচিত। একসময় এই বীজ বাংলাদেশের উৎপাদন হতো না বলে বিশ্বের
বিভিন্ন দেশ থেকে এটি আমদানি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচুর
পরিমাণ চিয়া সিড উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
চিয়া সিডকে অনেকেই চিয়া বীজ হিসেবেও চিনেন। তবে অনেক মানুষ চিয়া সিডকে তোকমা
দানা হিসেবে মনে করেন। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল। কারণ চিয়া সিড এবং তোকমা
দানা দুটো আলাদা জিনিস। চিয়া সিড এবং তোকমা দানা পাশাপাশি এক জায়গায় রাখলে
এর তফাৎ আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়া আমাদের
শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা বর্তমানে অনেক মানুষ জানে না। প্রতিটা মানুষের এটি
খাওয়া উচিত।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
অধিক পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে চিয়া সিড একটি। চিয়া সিডে রয়েছে দুধের
তুলনায় ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কমলার
তুলনায় দ্বিগুণ বেশি পটাশিয়াম, মুরগির ডিমের তুলনায় তিনগুণ বেশি প্রোটিন এবং
স্যামন মাছের তুলনায় ৮ গুণ বেশি ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এছাড়াও এতে রয়েছে আরো
নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। চলুন জেনে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে কি পরিমান
পুষ্টি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে।
- ৪৮৬ কিলো ক্যালরি
- চর্বি ৩০ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৩৩৫ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৪৩ গ্রাম
- জিংক ৪.৬ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৪০৭ মিলিগ্রাম
- ফাইবার ৩৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬৩১ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৪৮০ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম
- ভিটামিন বি১ ০.৬৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৩ ৮.৯ মিলিগ্রাম
- আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানলেও চিয়া সিড
খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকের অজানা। চিয়া সিড খাওয়া অনেক সহজ একটি ব্যাপার।
এর কোন স্বাদ এবং গন্ধ নেই যার ফলে এটি রান্না করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
এটি এক ধরনের দানাদার বীজ জাতীয় খাবার। তাই এটি পানির সাথে মিশিয়ে খুব সহজেই
খাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই চিয়া সিড খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে।
- হালকা কুসুম গরম পানিতে চিয়া সিড ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
- শসা, টক দই এবং চিয়া সিড একসাথে মিশিয়ে এটি পাউরুটির সাথে খেতে পারেন। এভাবে খেলে এটি সুপার ফুড হিসেবে বিবেচিত হয়।
- চিয়া সিডের পুডিং, সুপ অথবা স্মুদি বানিয়ে সকালে নাস্তা হিসেবে এটি খেতে পছন্দ করেন।
- বিভিন্ন ধরনের ফলের জুসের সাথে এক চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিন। এরপর আধা ঘন্টা পর এর সাথে কিছুটা পানি মিশিয়ে খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় প্রতিটা গর্ভবতী মায়েরা দুশ্চিন্তায় থাকে তাদের খাবার নিয়ে।
কোন খাবার তাদের জন্য উপকারী এবং কোন ধরনের খাবার খেলে পেটের বাচ্চা সুস্থ
থাকবে এটি নিয়ে গর্ভবতী মায়েদের দুশ্চিন্তার যেন কোন শেষ নেই। গর্ভাবস্থায়
এমনই একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হচ্ছে চিয়া সিড। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত
প্রতিদিন ১-২ চামচ চিয়া সিড প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট আগে ভিজিয়ে রেখে খেলে
অনেক উপকার পাবে। আপনি জানলে অবাক হবেন প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় বিশ
গ্রাম প্রোটিন থাকে।
তাই প্রতিদিন এক চামচ চিয়া সিড খেলে মোটামুটি ৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
এছাড়াও চিয়া সিডে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং আয়রন যা একজন গর্ভবতী
মহিলার জন্য অনেক উপকারী। গর্ভবতী মহিলাদের ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের ঘাটতি
পূরণের জন্য প্রতিদিন সকালে নাস্তায় চিয়া সিডের স্মুদি, পানির সাথে মিশিয়ে
বা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর সালাদের সাথে মিশিয়ে খেলে গর্ভাবস্থায় অনেক উপকার
পাওয়া যায়। এটি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য একেবারে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর
খাবার।
শুধু গর্ভকালীন সময়ই নয়, বাচ্চার জন্মদানের পরেও একজন মায়ের শরীরে প্রচুর
পরিমাণ পুষ্টি এবং শক্তির প্রয়োজন। একজন মায়ের সন্তানের জন্য দুধ উৎপাদন করতে
প্রায় পাঁচশো ক্যালোরি অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। গবেষণা করে দেখা গেছে ২৮
গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় ১৩৮ ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই পুষ্টিবিদরা বাচ্চার
মায়েদের ডায়েটে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম চিয়া সিড রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
নিয়মিত চিয়া সিড খেলে মায়েদের বুকের দুধে ডিএইচএ কন্টেন্ট বৃদ্ধি পায় এবং
সেই সাথে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে।
চিয়া সিড সপ্তাহে কয়দিন খাওয়া উচিত
আমরা সবাই জানি সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি কিন্তু
অনেকেই জানিনা এটা কি পরিমাণ খেতে হয় সেই সম্পর্কে। চিয়া সিড অনেক উপকারী
খাবার হলেও এটি বেশি খাওয়া ঠিক নয়। পরিমাণ মতো খেলে এর উপকারিতা আছে কিন্তু
বেশি পরিমাণের খেলে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে। তাই আপনি আপনার খাদ্য
তালিকায় প্রতি সপ্তাহের কমপক্ষে অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন চিয়া সিড রাখতে পারেন।
এভাবে খেলে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা থাকবে না।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
সকালে খালি পেটে নিয়মিত চিয়া সিড খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি আমাদের ওজন
কমাতেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। চিয়া সিড আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন
কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম
সম্পর্কে।
- সপ্তাহে ৩-৪ দিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানিতে ২ চামচ চিয়া সিড এবং সেই সাথে ২-৩ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এটি আমাদের দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সাধারণত চিয়া সিড খাওয়া ৩০ মিনিট পূর্বে সাধারণ তাপমাত্রায় ভিজিয়ে রাখলে এতে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। যার ফলে এটি খেলে আমাদের ক্ষুধা নিবারণ হয় এবং ওজন কমে।
- ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড টক দই, স্মুদি, শরবত বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- পুষ্টিবিদরা মনে করেন প্রতিটা মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
- ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি চিয়া বীজ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় এটি আমাদের হজমে সাহায্য করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং আমাদের শরীরের মেদ কমিয়ে ক্যালোরির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার আমাদের পরিহার করতে হবে। কারণ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ব্যতীত ওজন কমানো সম্ভব নয়।
চিয়া সিড কি সারারাত ভিজিয়ে খাওয়া যায়?
পুষ্টিবিদরা গবেষণা করে দেখে বলেছেন চিয়া সিড বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩
ফ্যাটি অ্যাসিড এবং উচ্চমানের ফাইবার। এগুলো আমাদের শরীরের বিপাক হার বাড়িয়ে
তুলতে অনেক সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ঘুম থেকে উঠে চিয়া সিড
ভেজানো পানি অথবা সারারাত চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে সেটিকে স্মুদি মিশিয়ে খাওয়া
অনেক উপকার। তবে পুষ্টিবিদরা মনে করেন চিয়া সিড অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। যার
যেমনভাবে খেতে সুবিধা সে তেমনভাবেই এটি খেতে পারে।
চিয়া সিড খেলে কি পেটে চর্বি কমে?
চিয়া সিট খেলে ওজন কমবে একথা সত্য। কারণ চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার
যা আপনার শরীরের হজমের সমস্যা দূর করবে এবং সেই সাথে খুদা নিয়ন্ত্রণ করবে। চিয়া
সিডের সাথে লেবু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে শরীরের এবং পেটের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে
এবং আপনার মেটাবলিক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনার শরীরের ওজন কমবে
এবং পেটে চর্বি দূর হবে। তাই পেটের চর্বি কমাতে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত
চিয়া সিড রাখতে পারেন।
চিয়া সিড খেলে কি পায়খানা নরম হয়?
হ্যাঁ, অবশ্যই চিয়া সিড পায়খানা কষা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক উপকারী একটি
খাদ্য হতে পারে। কারণ চিয়া সিডে থাকা প্রচুর পরিমাণের ফাইবার আমাদের শরীরের পানি
শোষণ করে এবং আমাদের পরিপাকতন্ত্রে জেলের মতো নরম পদার্থ তৈরি করে। যার ফলে এটি
আমাদের মলকে নরম করতে বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে এবং যাদের নিয়মিত
পায়খানা হয় না তাদের নিয়মিত মলত্যাগের সহায়তা করে। তাই বলা যায় সপ্তাহে ৩-৪
দিন চিয়া সিড খেলে এটি আমাদের পায়খানা নরম হতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড কি দুধের সাথে খাওয়া যায়
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক এ কথা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে চিয়া সিড কি দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় কিনা। হ্যাঁ
চিয়া সিড দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। সেই জন্য প্রথমে আপনাকে হালকা কুসুম
গরম দুধে চিয়া সিড মিশিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ মিনিট চিয়া সিড দুধে
ভিজিয়ে রেখে খেলে এতে চিয়া সিডের মান ঠিক থাকে। যেহেতু চিয়া সিডে ফাইবার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে সেহেতু নিঃসন্দেহে এটি
একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। আর এর সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে এর উপকারিতা আরো অনেক গুণ
বেড়ে যায়। তাই চিয়া সিডের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়া অনেক উপকারী।
চিয়া সিড কি ফ্যাটি লিভারের জন্য ক্ষতিকর?
আমরা জানি,যেকোনো বাদাম বা বীজ জাতীয় খাদ্য থেকে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যকর
চর্বি পাওয়া যায়। চিয়া ভিবীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। তাই
বলা যায় এটি আমাদের লিভারের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং অনেক উপকারী।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভালো?
কিডনি মানুষের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনির ব্যাপারে প্রতিটা
মানুষকেই সচেতন থাকা জরুরী। কি খেলে কিডনি ভালো থাকে এবং কি খেলে কিডনিতে সমস্যা
দেখা দেয় সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। চিয়া সিড কিডনির জন্য উপকারী তবে এর কিছু
ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই কিডনি রোগীরা চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন। চলুন জেনে নিই কিডনি রোগীর জন্য চিয়া সিডের কয়েকটি
সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে।
সুবিধা:
- ডায়উরেটিক গুণ: চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চ লেভেলের ফাইবার যা আমাদের শরীরের প্রার্থিক পানি বের করে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে কিডনির চাপ অনেক কমে যায়।
- শর্করা নিয়ন্ত্রণে: চিয়া সিডে থাকা উচ্চ লেভেলের ফাইবার ইনসুলিন প্রক্রিয়াকে ভালো রাখতে সাহায্য করে যার ফলে কিডনি ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পায়।
- সংক্রমণ প্রতিরোধে: চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিব্যাকেরিয়াল এবং এন্টি ফাংগাল গুণ আমাদের শরীরের কিডনির সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- এন্টি ইনফ্লামেটরি: চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ কিডনির যাবতীয় প্রদান সাহায্য করে। তাই চিয়া সিড খেলে কিডনি রোগীরা প্রদাহ থেকে মুক্তি পায়।
অসুবিধা:
- অতিরিক্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চ লেভেলের ওমেগা এসিড যা কিডনির জন্য অনেক ক্ষতিকর হতে পারে।
- অক্সালেট যুক্ত: সি আসিডে রয়েছে উচ্চ লেভেলের অক্সালেট। যা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় চিয়া সিড খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত পুষ্টি নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়: চিয়া সিডে রয়েছে থাকা উচ্চ লেভেলের ফাইবার কিডনি রোগীদের পুষ্টি শোষণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কিডনি রোগীরা অতিরিক্ত পরিমাণ চিয়া সিড খেলে তাদের শরীরে পুষ্টি নিয়ন্ত্রণে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
চিয়া সিড অতিরিক্ত মাত্রায় না খেয়ে পরিমিত মাত্রায় খেলে এটি কিডনি রোগিসহ
প্রতিটা মানুষের জন্য অনেক উপকারী একটি বীজ। তবে কিডনি রোগীরা থেকে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন। তাহলে ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।
রূপচর্চায় চিয়া সিডের ব্যবহার
চিয়া সিড শুধুমাত্র আমাদের শরীরের জন্য উপকারী এমনটি নয় এটি রূপচর্চাতেও সেই
বহুকাল ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। চিয়া সিড দিয়ে তৈরি মাস্ক ত্বক ব্যবহার করলে এটি
আমাদের ত্বক থেকে ময়লা ও মৃত কোষগুলো সরিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে অনেক পরিষ্কার এবং
উজ্জ্বল করে তোলে। চলুন জেনে নিই রূপচর্চায় চিয়া সিডের কয়েকটি ব্যবহার
সম্পর্কে।
চিয়া সিডের তৈরি মাস্ক
উপকরণ:
- ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড
- ১ চা চামচ মধু
- ১ টেবিল চামচ গোলাপজল
- ১ চা চামচ টক দই
প্রস্তুত প্রণালী:
- প্রথমে চিয়া সিড গুলো একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে গুরো করে নিতে হবে। এরপর এর সাথে গোলাপজল, টক দই, এবং মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট বানাতে হবে।
- সবগুলো উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে সেই পেস্টটি আলতোভাবে মুখের উপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
- ১৫-২০ মিনিট পরে পেস্টটি শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- মুখ ধুয়ে ফেলার পর একটি ভালো মশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন মুখে লাগাতে হবে। তাহলে ত্বক অনেক নরম এবং মসৃণ হবে।
- এই পেস্টটি মুখে ব্যবহারের ফলে চিয়া সিডে থাকা শক্ত এক্সফ্যালিয়েটরি উপাদান শরীরের মৃত কোষ গুলো দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জল হয়।
বডি স্ক্রাব
শুধুমাত্র ত্বকের জন্য উপকারী তা নয় এটি আমাদের বডি স্ক্রাব হিসেবেও ভালো কা@জ
করে। এর জন্য প্রথমে চিয়া সিড ব্লিন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে এর সাথে সাদা
চিনি এবং অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে সেটি শরীরে লাগান।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন শরীরের মৃত কোষ দূর হয়ে
ত্বক অনেক নরম এবং উজ্জ্বল হয়ে যাবে। চিয়া সিড বডি স্কাব হিসেবে অনেক ভালো কাজ
করে।
চুলের যত্নে চিয়া সিডের ব্যবহার
চিয়া সিডের তৈরি হেয়ার প্যাক আমাদের চুলের জন্য কতটা উপকারী তা জানলে অবাক হয়ে
যাবেন। চুল প্রতিটা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিসিএস কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে। তাই চুলের যত্নে সর্বদা সচেতন থাকা প্রতিটা মানুষের উচিত। চুলের জন্য চিয়া
সিড অনেক উপকারী।চিয়া সিডের তৈরি হেয়ার প্যাক চুলের ব্যবহার করলে চুলকে ভেতর
থেকে শক্ত, সিল্কি এবং জীবন্ত করতে সাহায্য করে। চলুন জেলে নিই চিয়া সিডের
হেয়ার প্যাক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে।
উপকরণ:
- ২ টেবিল চামচ সিয়া সিড
- দুই টেবিল চামচ লেবুর রস
- হাফ কাপ টক দই
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল।
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে চিয়া সিড গুলো ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
- ব্লেন্ড করা চ সিডের সাথে লেবুর রস টক দই এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এবার পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোমতো লাগিয়ে দিন।
- চুলে লাগানোর পর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চিয়া সিড কিছুটা শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- সবশেষে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন।
- চুল ধুয়ে ফেলার পর ভালোমতো শুকিয়ে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন।
চিড়া সিডের হেয়ার প্যাক এর উপকারিতা
আরোও পড়ুন: কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা
- চিয়া সিডে থাকা উচ্চ লেভেলের প্রোটিন এবং ফাইবার আপনার চুলকে শক্ত করে তুলতে সাহায্য করবে।
- লেবুর রস মাথার ত্বকের এবং চুলের ময়লা দূর করে চুলকে নরম করতে সাহায্য করবে।
- টক দই এবং অলিভ অয়েল তেল চুলকে আদ্র এবং জীবন্ত রাখতে সাহায্য করবে।
- চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল চুল পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- চিয়া সিডের তৈরি এই হেয়ার প্যাকটি নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে এটি চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখবে এবং চুলকে প্রাকৃতিক উপায়ে সিল্কি করে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
শেষ কিছু কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে সকালের খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা সহ চিয়া সিডের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সঠিক তথ্য প্রদানের চেষ্টা করেছি।
আশা করি এটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে
www.digitalabida.com এই
ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url