জবা ফুলের ৩০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা
আপনি কি জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চায়ছেন। তাহলে আজকের
আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি জবা ফুলের অনেক
অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারবেন। জবা ফুল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
অনেক উপকারী।
ঔষধি গুনাগুনে ভরপুর জবা ফুল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি আপনার
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জবা ফুলের চায়ের
অসাধারণ গুনাগুন আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি এটি রূপচর্চাতেও বেশ
উপকারী। জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।
জবা ফুলের ৩০ টি উপকারিতা
জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে সবার প্রথমে আছে এর ঔষধি গুনাগুন
সম্পর্কে। এই ফুল নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন এ ভরপুর। এছাড়াও এটি সৌন্দর্য
বৃদ্ধিতে সেই আদিকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। শুধু ঔষধি গুনাগুন বা সৌন্দর্য
বৃদ্ধি করনি নয় এই ফুলে স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন।
বিশেষ করে এটি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং রূপচর্চায় প্রথম সারির একটি উপাদান বলা
যেতে পারে।
আরোও পড়ুন: ঠোটের কালো দাগ দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়
জবা ফুলের চা বা জবা ফুলের তৈরি যে কোন পণ্যই বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এর স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বিবেচনা করে প্রায় সকল দেশের মানুষ এটি খেয়ে থাকেন।
প্রায় সারা বিশ্বেই জবা ফুলের পণ্য এবং জবা ফুলের চা এর জনপ্রিয়তা বেড়েই
চলেছে। জবা ফুলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। চলুন জেনে নিই জবা ফুলের ৩০ টি
উপকারিতা সম্পর্কে।
জবা ফুলের ৩০টি উপকারিতা
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে
- লিভারের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- কোলেস্টেরল কমায়
- বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
- পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে
- মানসিক অবসাদ কমায়
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধক
- চুল কালো করে
- দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে
- ব্রণ উপশম করে
- বয়সের ছাপ কমায়
- হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
- চুল পড়া রোধ করে
- শরীরে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে
- হৃদপিণ্ড সতেজ রাখে
- ঠান্ডার সমস্যা দূর করে
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- মুত্র বর্ধক বৈশিষ্ট্য
- কিডনি সুরক্ষায়
- আন্টি ইনফ্লামেটরের প্রভাব
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
- হাতের তালুর চামড়া উঠার প্রতিকার করে
- অনিয়মিত ঋতুস্রাবে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- মাথা ঘোরা উপশম করে
- চোখ ওঠা উপশমে
- জ্বর নিয়ন্ত্রণে
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে: সম্প্রতি আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশন
থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে প্রচার করা হয়েছে যে, এইচ আই এ থাকা আন্টি
ইনফ্লামেটরি প্রপারটিজ নিমিজ এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায়
নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই আপনি যদি অফিসের চাপ এবং দৈনন্দিন
কাজের নানা সমস্যার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে জবা ফুলের চা
খেতে পারেন।
লিভারের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়: জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। টক্সিন
বের হওয়ার ফলে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সেই সাথে অনেক
উপকারিতাও পাওয়া যায় এমনকি ক্যান্সারের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: জবা ফুল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে
থাকা ওষুধিগুণ আমাদের শরীরের নানা ধরনের জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়। তাই নিয়মিত
জবা ফুলের পণ্য বা এর চা খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
কোলেস্টেরল কমায়: উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে এবং খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো
নিয়ম তান্ত্রিকভাবে না হলে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। জবা ফুলের পণ্য বা এর চা আপনার
হার্টে সহজে রক্ত জমাট বাঁধা থেকে বিরত রাখবে। এটি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল জমা
বাদতে দেয় না। শুধু তাই নয় এটি আমাদের ব্রেন এবং এবং হার্টকে বিভিন্ন ক্ষতির
হাত থেকে রক্ষা করে সুরক্ষিত রাখে।
বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে: জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যাকরিক
অ্যাসিড যা আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা মেটাতে দারুন ভূমিকা পালন করে। এটি
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুন কার্যকরী। সেই আদিম কাল থেকে
সর্দি-কাশির আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে জবা ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে।
পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে: পিরিয়ডের সময় জবা ফুলের চা মেয়েদের জন্য
অনেক উপকারী। কারণ এটি পিরিয়ড যন্ত্রণা নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বিশেষ করে এটি হরমোনাল ইমব্যালেন্স কমাতে এটি অনেক উপকারী। তাই মেয়েরা যদি জবা
ফুলের যে কোন পণ্য বা জবা ফুলের চা নিয়মিত পান করেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
মানসিক অবসাদ কমায়: কোন কারনে যদি আপনার মন খারাপ হয় তাহলে তাড়াতাড়ি
এক কাপ জবা ফুলের চা বানিয়ে খেয়ে নিন। সাথে সাথেই দেখবেন আপনার মন অনেক ফ্রেশ
হয়ে গেছে। কারণ জবা ফুলে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল স্নায়ুতন্ত্রে তৈরি হওয়া
বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং অ্যাংজাইটি কমাতে দারুন ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত জবা ফুলের চা বানিয়ে খেলে এটি আমাদের শরীরের
শর্করা এবং ষ্টার্চের শোষণ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে ওজন কমে যায়। জবা ফুলের
চায়ের এমন একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে অ্যামিলেস নামক একটি উপাদান
কমিয়ে ফেলতে পারে। আর এই উপাদান কমে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমার
প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: জবা ফুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের
শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে নিয়মিত জবা ফুলের চা খেতে পারেন।
চুল কালো করে: আপনার যদি চুল লাল হয়ে যায় তবে জবা ফুল বেটে নারিকেল
তেলের সাথে মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে নিয়মিত লাগালে চুল
কুচকুচে কালো রঙের হয়ে যাবে।
দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে: জবা ফুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের
শক্তি এবং কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্রণ উপশম করে: বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করার
কারণে বা বয়সের কারণে অনেক সময় ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। জবা ফুলে থাকা আন্টি
ইনফ্লামেটরি এবং ভিটামিন সি আমাদের ব্রণের সমস্যা দূর করতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে। জবা ফুল নিয়মিত ব্যবহার করলে দ্রুত ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে
যায়।
বয়সের ছাপ কমায়: জবা ফুলে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এমন একটি প্রাকৃতিক
পুষ্টিকর উপাদান যা আমাদের শরীরের অনেক ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে। শুধু তাই
নয় এটি আমাদের বয়সের ছাপ দূর করে ত্বক সুন্দর রাখে।
হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে: জবা ফুল এর পণ্য বা এর চা নিয়মিত খেলে
আপনার যদি হজমের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এটি সমাধানে খুব ভালো কাজ করবে। হজমে
সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে এই ফুলের জুরি মেলা ভার।
চুল পড়া রোধ করে: চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা যেন বর্তমানে প্রতিটি মানুষের।
জবা ফুলে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান চুল ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী। এটি নিয়মিত
ব্যবহারে চুল পড়া রোধ হয় চুল মসৃণ হয় এবং ঘন কালো হয়।
শরীরে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে: পানি আমাদের শরীরের জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের শরীরে যদি পানির পরিমাণ কম বা বেশি হয়ে যায় তাহলে
বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই হতে পারে। জবা ফুল এমন একটি উপাদান যেটি নিয়মিত সেবন
করলে আমাদের শরীরে থাকা পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যার ফলে
বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই এর আক্রমণ থেকে আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকবে।
হৃদপিণ্ড সতেজ রাখে: জবাফুল আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
করে। যার ফলে নিয়মিত জবা ফুল খেলে এটি আমাদের হৃৎপিণ্ড সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
ঠান্ডার সমস্যা দূর করে: জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা
আমাদের ঠান্ডা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, সর্দি কাশি, দূর করতে দারুন কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে: জবা ফুলের যে কোন পণ্য বা এই ফুলের চা
বানিয়ে খেলে এটি যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি যৌনশক্তি
বৃদ্ধি করে স্থায়িত্ব বাড়াতেও দারুন কার্যকরী।
মুত্র বর্ধক বৈশিষ্ট্য: জবা ফুলের রস বা এর তাকে প্রাকৃতিকভাবে মূত্রবদ্ধ
হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি প্রসাবের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমাদের শরীরের
অতিরিক্ত তরল নির্মূলে সহায়তা করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে বলে মনে করেন
চিকিৎসকরা।
কিডনি সুরক্ষায়: জবা ফুলে থাকা লিকুইড ফার্মাল বৈশিষ্ট্য আমাদের প্রসাবের
নির্দিষ্ট খনিজ গুলোর ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করে এর ফলে কিডনিতে পাথর গঠনে
প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ হতে সহায়তা করে।
আন্টি ইনফ্লামেটরের প্রভাব: জবা ফুলে থাকা আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান
আমাদের শরীরের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত জবা ফুলের পণ্য অথবা জবা
ফুলের চা পান করলে বাতের ব্যথা, শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের
ব্যথা হতে নিরাময় করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফ্ল্যাভোনয়েড এবং
অ্যান্থোসায়ানিন। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি
রেডিক্যাল এর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে: আমরা জানি ব্যাকটেরিয়া হলো একটি
এককোষী অনুজীব। এটি আমাদের শরীরে ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এবং মুত্রনালীর বিভিন্ন
ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। জবা ফুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ক্যান্সার
বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও জবা ফুলে থাকা ই.কোলি নামক ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাদের শরীরে ক্যাম্পিং
গ্যাস্ট্রিক এবং ডায়রিয়ার মত অসুখের উপসর্গ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আপনি জেনে অবাক
হবেন যে জবা ফুলের নির্যাস এই সকল ব্যাকটেরিয়া গুলোর কার্যকলাপকে বিভিন্নভাবে
বাধা গ্রস্থ করতে পারে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই
করতে এ নির্যাস বেশ কর্মক্ষম। এই নির্যাস এতটাই শক্তিশালী যে ব্যাকটেরিয়া
সংক্রমণের চিকিৎসায় এটি যথারীতিভাবে এন্টিবায়োটিক এর মতই কাজ করে।
হাতের তালুর চামড়া উঠার প্রতিকার করে: অনেক সময় লক্ষ্য করবেন অনেকের
হাতের তালুর চামড়া উঠে যায়। এটি দেখতে খুব বিরক্ত লাগে। হাত পায়ের চামড়া উঠলে
হাতে কয়েক দিন জবা ফুল ঘষলে এটি প্রতিকার হয়।
অনিয়মিত ঋতুস্রাবে: ঋতুস্রাবে স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে ২৮ দিন পর পর
মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং চার থেকে পাঁচ দিন এইসব স্থায়ী হয়। কোন কারণে
মাসে দুইবার বা ২-৩ মাস পার হয়ে গেলেও ঋতুস্রাব না হলে এরকম অনিয়মিত ঋতুস্রাবে
জবা ফুল খুব ভালো কাজ করে। কয়েকটি জবা ফুল এবং দারুচিনি একসাথে ভালোভাবে বেটে
শরবত করে কিছুদিন নিয়মিত খেলে এরকম অনিয়মিত ঋতুস্রাব দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কার্ডিও ভাস্কুলার এবং সংবহনতন্ত্রের সমস্যায় জবা
ফুল অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন
তাহলে জবা ফুল হতে পারে আপনার জন্য একটি মহা ঔষধ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
সাহায্য করে।
মাথা ঘুরাও উপশম করে: জবার গুণ বলে শেষ করা যাবে না। এটি আপনার মাথা
ঘুরাতেও দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। মাথা চক্কর মারলে বা চলাফেরা করার সময়
পায়ের পেশীতে টান ধরলে জবা ফুল খেতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি উপশম পাবেন।
চোখ ওঠা উপশমে: কোন কারনে চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়লে সেক্ষেত্রে
কয়েকটি জবা ফুল বেটে চোখের উপরের এবং নিজের পাতায় ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘন্টা
রাখলে খুব ভালো উপশম পাওয়া যায়। এভাবে কয়েকবার ব্যবহার করলেই চোখ উঠা ভালো
হয়ে যায়।
জ্বর নিয়ন্ত্রণে: ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণের ফলে যদি কারো জ্বর
আসে সেক্ষেত্রে জবা ফুল এবং জবা ফুলের পাতা সিদ্ধ করে সে পানি চা বানিয়ে ফেলে
দ্রুত জ্বর উপশম হয়। মনে রাখবেন জ্বরের সময় জবা ফুলের চা আমাদের আমাদের শরীরকে
শীতলকারক হিসেবে কাজ করে।
জবা ফুলের ৭ টি অপকারিতা
জবা ফুলের অপকারিতা সম্পর্কে জানব আর্টিকেলের এই অংশ। আমরা জানি জবা ফুলের
উপকারিতা অনেক বেশি। তবে কোন কিছুর উপকারিতার পাশাপাশি তার কিছু অপকারিতাও থাকে।
যা আমাদের শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই জবা ফুলের অপকারিতা
সম্পর্কে সকলের জেনে রাখা উচিত। চলুন জেনে নিই জবা ফুলের অপকারিতা
সম্পর্কে।
জবা ফুলের ৭ টি অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায়
- নিম্ন রক্তচাপ
- এলার্জির কারণ
- আয়রন শোষণের সাথে মিথস্ক্রিয়া
- রেচন প্রভাব
- পেটের অস্বস্তি
- শরীরে ওষুধের কার্যকারিতা লোক পায়
গর্ভাবস্থায়: গর্ভাবস্থায় জবা ফুল বা ফুলের চা খাওয়া কিছুটা বিপদজনক
হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলারা এই ফুল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অথবা ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
নিম্ন রক্তচাপ: ব্লাড প্রেসারের রোগীরা জবা ফুল সাবধানতার সাথে খাবেন।
কারণ এটি ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে। হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে গেলে অনেক
সময় আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন তাই অবশ্যই সাবধানতার সাথে খাবেন।
এলার্জির কারণ: আপনার যদি এলার্জি সমস্যা থাকে তাহলে জবা ফুল এড়িয়ে
চলবেন কারণ জবা ফুল এলার্জি সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
আয়রন শোষণের সাথে মিথস্ক্রিয়া: জবা ফুলে রয়েছে পলিফেনল নামক একটি যৌগ
উপাদান। এটি আমাদের খাদ্য তালিকায় নন-হীম আয়রন শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই
যদি কেউ রক্তশূন্যতায় ভোগে এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে তাহলে জবাব ফুলের
যেকোন রকম পণ্য তার জন্য না খাওয়াই ভালো।
রেচন প্রভাব: কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে জবা ফুলের চা বা এই ফুলের যেকোনো
ধরনের পণ্য একটি হালকা রেচন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণ জবা
ফুল সেবন করলে ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
পেটের অস্বস্তি: জবা ফুলের পণ্য অতিরিক্ত মাত্রায় আপনি যদি সেবন করে
থাকেন তাহলে আপনার বমি বমি ভাব পেট খারাপ এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে
পারে। সেই ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো এটি খাওয়া উচিত। মনে রাখবেন প্রথমেই অনেক বেশি
খাবেন না। প্রথমে অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করবেন।
শরীরে ওষুধের কার্যকারিতা লোক পায়: কিছু কিছু ক্ষেত্রে জবা ফুলের কোন
পণ্য বা জবা ফুলের চা অতিরিক্ত মাত্রায় পান করলে এবং একই সাথে কোন অসুখের জন্য
ওষুধ খেলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন ধরুন যদি কারোর ম্যালেরিয়া
হয়ে থাকে এবং সে ম্যালেরিয়া ওষুধ ক্লোরোকুইন সেবন করে থাকে তাহলে তার জন্য জবা
ফুলের এই শক্তিধর পানীয় সেবন করা নিরাপদ নয়। কারণ এটি সেবন করলে শরীরে এই পানি
এর উপস্থিতি ও প্রভাব স্থায়িত্ব করার জন্য অন্য যেকোন ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট
করে দিতে পারে নিমিষের মধ্যে।
জবা ফুলের পুষ্টিগুণ ও খনিজ এর উপকারিতা
জবা ফুলের পুষ্টিগুণ ও খনিজ এর উপকারিতা অনেক বেশি। এতে অনেক স্বাস্থ্য উপকারী
উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। চলুন জেনে নিই
প্রতি ১০০ গ্রাম জবা ফুলের পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে।
১০০ গ্রাম জবা ফুলের পুষ্টিগুণ
- ক্যালোরি ১৬ kcal
- কার্বোহাইড্রেট 0.৮৯ গ্রাম
- প্রোটিন ২.৬৮ গ্রাম
- চিনি ০.৪৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬৮ mg
- কোলেস্টেরল ১৮ mg
- আয়রন ১.২১ mg
- সোডিয়াম ৩৭৯ mg
খনিজ এর উপকারিতা: জবা ফুলকে খনিজের একটি ভালো উৎস বলা হয়। আমরা জানি
খনিজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। আমাদের শরীরের হাড় মজবুত
করতে, রক্ত জমাট বাঁধতে এবং আমাদের পেশীর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের শরীরের লোহিত রক্তকণিকা
উৎপাদন করতে এবং রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত জবা ফুল
খেলে এটি আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে
তাদের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। জবা ফুলের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম যা আমাদের শরীরের সঠিক তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য
করে।
জবা ফুলের বৈশিষ্ট্য
জবা ফুলের বৈশিষ্ট্য হল এই ফুল মালভেসি গোত্রে অন্তর্ভুক্ত একটি চির সবুজ
পুষ্পধারি গুল্ম। এর প্রথম উৎপত্তি হয় পূর্ব এশিয়াতে। এটি অনেক জায়গায় চীনা
গোলাপ নামেও পরিচিত। জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে হিবিস্কাস রোসা সিনেন্সিস।
বিজ্ঞানী ক্যারলাস লিনেয়াস এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেছেন। লাতিন শব্দ 'রোসা
সিনেন্সিস' এর অর্থ হচ্ছে চীনা দেশের গোলাপ। যদিও জবা ফুলের সাথে গোলাপের কোন
সম্পর্ক নেই।
আরোও পড়ুন: কোনটি বেশি পুষ্টিকর আপেল না পেয়ারা
জবা ফুল একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। জনপ্রিয়
এই বাহারি রঙের ফুলটির জন্মস্থান চীনে। তবে সেই অনেক বছর আগে থেকেই আমাদের দেশে
এর চাষবাস শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫-২০ ধরনের জবা ফুল সচরাচর দেখতে পাওয়া
যায়। তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঝুমকো এবং লঙ্কা জবাব। জবা ফুলে রয়েছে
আধুনিক জিন প্রযুক্তি যার ফলে এটি বৈচিত্রের সীমাবদ্ধতার অতিক্রম করেছে। জবা
ফুলের রূপের যেন শেষ নেই বললেই চলে। এই ফুল শুধুমাত্র প্রাচ্যেই নয় বরং তৃণাকলাপ
খ্যাত এই ফুল ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চাতেও। জবা ফুলের গাছ একটি গুল্ম শ্রেণীর গাছ। এই
ফুলের ১০-১২ সেন্টিমিটার লম্বা, কিনারা কাটা কাটা সবুজ রঙের পাতা থাকে।
জবা ফুলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই ফুল ডালের আগায় একটি মাত্র ফুল ফোটে। প্রায় সারা
বছর এই ফুল ফুটতে দেখা যায় তবে গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে এই ফুল সবচেয়ে বেশি
ফোটে। এই ফুলের বোটা অনেক লম্বা এবং পাত্রীর মাঝখানে গুচ্ছবদ্ধ পুংকেশরের একটি
লম্বা ডাটা থাকে। এই ফুলের আগায় পাঁচটি গর্ভমণ্ড, সিঙ্গেল বা ডাবল এবং এটি গন্ধ
বিহীন। জবা ফুল সাধারণত লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ, পাটকীলে, কমলা, বেগুনি, নীলচে,
নীলচে বেগুনি রঙের দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক সময় মিশ্র রংয়ের গোলাপও
দেখতে পাওয়া যায়। জবা ফুলের রূপে মুগ্ধ প্রায় সকল মানুষ।
খালি পেটে জবা ফুল খেলে কি হয়?
খালি পেটে জবা ফুল খেলে কি হয় তা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ জবা ফুল খালি
পেটে খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আর্টিকেলের এই অংশে খালি পেটে জবা ফুল খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানাবো। চলুন
জেনে নিই। নিয়মিত খালি পেটে জবা ফুলের চা বা জবা ফুলের যে কোন পণ্য খেলে এটি
আমাদের শরীরে শর্করা এবং স্টার্চের শোষণ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। যার ফলে
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ওজন কমতে শুরু করে। জবা ফুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা
আমাদের শরীরে অ্যামিলেস নামক একটি উপাদান কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। আর এই উপাদান
কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ওজন খুব দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করে।
জবা পাতার রস খেলে কি হয়?
জবা পাতার রস খেলে কি হয় জানেন কি। এতক্ষণ আপনারা জবাব ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে
জেনেছেন। এখন আপনাদের জবা পাতার রস খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানাবো। জবা ফুলের
মতই জবা ফুলের পাতাও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। জবা ফুলের পাতা পানিতে
ফুটিয়ে চা বানিয়ে খেলে এটি আপনার শরীরে শক্তিতেই এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়াও এটি আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে এবং ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। জবা ফুলের পাতা হজমের উন্নতিতেও বেশ উপকারী।
চুলের জন্য জবা ফুল কেন ভালো?
চুলের যত্নে জবা ফুল কেন ভালো তা অনেকেই জানতে চাই। বর্তমানে চুলের সমস্যায় ভোগে
না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। ছেলে বা মেয়ে উভয়ের চুলের কোনো না কোনো
সমস্যায় ভুগছে। তাদের জন্য জবা ফুল অনেক উপকারী একটি উপাদান। চুলের যত্নে জবা
ফুল সেই আদিকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি আমাদের চুলের জন্য অনেক
উপকারী।
জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড যা আপনার চুলের কেরোটিন প্রোটিনের
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই উপাদান বাড়লে চুলের ঘনত্ব বাড়ে চুলের
গোড়া অনেক বেশি মজবুত হয়। 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফর্মেশন' এর
তথ্য অনুযায়ী জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি। এই
ভিটামিন গুলো চুলের প্রাকৃতিকভাবে জেলা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ফলিকল গুলো অনেক পুষ্টি তাই। এগুলো আপনার নতুন চুল গজাতে এবং আপনার মাথা
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তাই জবা
ফুল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী।
চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার
চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার অনেক উপকারী। কারণ বর্তমানে প্রতিটা মানুষের চুল
উঠে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, চুলের ডগা ফাটা, মাথায় খুশকি হওয়া, চুলে
পাক ধরা এ ধরনের সমস্যা যেন লেগেই আছে। বাজারে কিনতে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের
প্রসাধনী চুলের যত্নে ব্যবহার করছে ঠিকই কিন্তু এতে স্থায়ী কোন সমাধান পাওয়া
যায় না। বরং এই প্রসাধনীতে থাকা রাসায়নিকগুলো আপনার চুলের জন্য আরো বেশি ক্ষতির
কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
চুলের এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন চুলের স্বাস্থ্য
রক্ষায় চুলকে সঠিক পুষ্টি দেওয়ার জন্য। চুল সঠিকভাবে পুষ্টি পেলে তবেই চুল ঘন
হবে, লম্বা হবে, চুলের আগা ফাটা দূর হবে। চুলে প্রাকৃতিকভাবে জেল্লা ফেরাতে আপনি
চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন জবা ফুলের উপর। কারণ জবা ভুলে থাকা পুষ্টি উপাদান
গুলো আপনার চুল ঘন কালো এবং মসৃণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। চলুন জেনে নিই
চুলের যত্নে জবা ফুলের কয়েকটি ব্যবহার সম্পর্কে।
জবা ফুলের তৈরি হেয়ার প্যাক:
উপকরণ:
জবা ফুল ৪-৫ টি
এ্যালোভেরা পাতা ১ টি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ১ টি
প্রস্তুত প্রণালী:
- প্রথমে জবা ফুলগুলো খুব ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন।
- এবার এ্যালোভেরা পাতাটি মাঝ বরাবর ভালোভাবে কেটে একটি চামুচের সাহায্যে এলোভেরার জেল বের করে নিন।
- এ্যালোভেরা জেলগুলো ব্লেন্ড করা জবা ফুলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- পেস্টটি ভালোভাবে মিশে গেলে এর সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোভাবে মেশালেই তৈরি হয়ে গেল একটি সুন্দর জবা ফুলের হেয়ার প্যাক।
- এবার এই হেয়ার প্যাকটি অল্প অল্প করে হাতে নিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
- আধা ঘন্টা পর চুলে শ্যাম্পু করে ভালোমতো ধুয়ে ফেললেই চুল হবে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল এবং এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে।
ত্বকের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার
ত্বকের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার হয়ে আছে সেই আদিম যুগ থেকেই। কারণ এটি আমাদের
ত্বকের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। সুন্দর ত্বক চান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া
ভার। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই সেই ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ব্রণের সমস্যা,
ত্বকের বয়সে ছাপ, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া ছাড়াও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার
মত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জবা
ফুলের ব্যবহার নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। চলুন জেনে নিই ত্বকের যত্নে জবা ফুলের
কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে।
- জবা ফুলে উপস্থিত থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি অক্সিড্যান্ট উপাদান আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও এই ফুলে থাকা প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের ভেতর থেকে জেল্লা ফিরে আসে এবং ত্বকের দাগ ছোপ দূর হয়।
- আপনার ত্বকে কোন ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হলে সেই ক্ষত সারিয়ে তুলতে জবা ফুল কার্যকরী। এছাড়াও ত্বকের আদ্রতা ফিরিয়ে এনে গরমের মধ্যেও ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে জবা ফুলে জুড়ি মেলা ভার।
- জবা ফুলে রয়েছে ডাইইউরেটিক উপাদান যা আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ গুলোকে খুব সহজেই প্রসবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। এক কথায় এটি আমাদের শরীরকে খুব ভালো মতো ডিটক্স করতে পারে। তাই ত্বক খুব কোমল এবং সুন্দর দেখায়।
- নারিকেল তেল বা তিলের সাথে জবা ফুলের পাপড়ি জাল করে এটি ঠান্ডা হওয়ার পর ত্বকে লাগালে ত্বকের যেকোনো ধরনের ফাটা দূর হয়।
- জবা ফুল রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। এরপর এক চামচ ফুলের গুড়োর সাথে টক দই এবং এক চামচ চন্দন গুড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট নিয়মিত ত্বকের ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ এর আরো অনেক
অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি
আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা
ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url