শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায়
শীতে পা ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান? আপনি কি পা ফাটার
সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে পড়ুন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের পা ফাটা সংক্রান্ত সকল বিষয়
নিয়ে আলোচনা করব।
শীতকালে পায়ের গোড়ালি ফাটা সাধারণ একটি বিষয়। এই সময় প্রায় সকল মানুষের পা
ফেটে যায়। শীতকালে গোড়ালি ফাটার মূল কারণ হলো পায়ের ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া।
পায়ের সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। চলুন জেনে নিই শীতে পা ফাটা
দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায়
শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাবো। যেগুলো মেনে চললে
আপনি খুব সহজেই পা ফাটা দূর করতে পারবেন। পা ফাটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং কষ্টকর
একটি অবস্থা। এর ফলে অনেক সময় লজ্জাতেও পড়তে হয় আমাদের। মূলত শীতকালে আমাদের
পা ফেটে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শীতের সময় ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়েও পা
ফাটা দেখা যায়। কমবেশি সবাইকেই কোন না কোন বয়সে এই বিব্রতকর সমস্যার মুখোমুখি
হতে হয়। শীতকালে হাত-পায়ের একটু যত্ন নিলেই এই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
আরোও পড়ুন: প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
মূলত পা ফাটা হওয়ার একটি মূল কারণ হচ্ছে ত্বকের শুষ্কতা। রাস্তার ধুলাবালি,
শুষ্ক আবহাওয়া, অপরিষ্কার জুতা পরিধান করা এবং অনেক সময় সচেতনতার অভাবে পায়ের
গোড়ালি ফেটে যায়। ঘরোয়াভাবে অল্প একটু যত্ন নিলেই খুব সহজেই এই পা ফাটা দূর
করা যায়। শীতে পা ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই
শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ না করা
- নারিকেল তেল
- পেট্রোলিয়াম জেলি
- সল্ট, গ্লিসালিন ও গোলাপজলের ফুট মাস্ক
- মধু
- এলোভেরা
- ভ্যাসলিন
- বেকিং সোডা
- অলিভ অয়েল, তিলের তেল, সরিষার তেল এবং বাদামের তেল
- লেবু
- অতিরিক্ত ওজন কমানো
- মোম
- শ্যাম্পু ও চন্দন তেল
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: পা ফাটার একটি মূল কারণ হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার না
খাওয়া। মূলত ক্যালসিয়াম জিংক এবং আয়রনের ঘাটতিজনিত কারণে আমাদের অনেক সময় পা
ফেটে যায়। তাই আপনাদের শরীরে যেন ভিটামিনের অভাব না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল
রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে শরীর
শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। পা ফেটে যাওয়ার একটি মূল কারণ হচ্ছে এই শুষ্কতা। পা ফাটা
ঘরোয়াভাবে রোধ করতে চাইলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ না করা: অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে
কাজ করার কারণে পায়ের গোড়ালি শরীরের ওজন নিতে না পেরে পা ফেটে যায়। তাই খেয়াল
রাখতে হবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যেন কাজ না করা হয় সেদিকে।
নারিকেল তেল: নারিকেল তেল প্রাকৃতিকভাবে ত্বক মশ্চারাইজিং এর কাজ করে।
নারিকেল তেল আমাদের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এমনকি এটি
আমাদের শুষ্কতা কেউ আদ্রতা যোগান দিতে পারে। আমাদের ত্বকে মৃত কোষ গুলো সরিয়ে
প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দিতে নারিকেল তেলের জুড়ি মেলা ভার। ওকে নিয়মিত
নারিকেল তেল ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বকের ভেতরে পুষ্টির যোগান দিতেও সাহায্য
করবে। তাই প্রতিদিন রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেল আপনার
পায়ের গোড়ালিতে ভালোভাবে মালিশ করে নিলে পা ফাটা দূর হবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি: শীতকালে পেট্রোলিয়াম জেলি আমাদের ত্বকের জন্য অনেক
উপকারী। এটি আপনার শুষ্ক ত্বকের আদ্রতা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। ত্বক শুষ্ক
হয়ে ফেটে গেলে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে আদ্রতা বজায়
থাকবে এবং ত্বক নরম হবে। পা ফাটা দূর করতে চাইলে সামান্য কিছু গরম পানিতে এক
টেবিল চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি একসাথে মিশিয়ে সেই পানিতে ১৫-২০ মিনিট পা চুবিয়ে
রাখুন। এরপর এর সাথে পিউমিক টন ব্যবহার করে পা ভালোভাবে স্কাব করুন। পা শুকিয়ে
গেলে পায়ের গোড়ালিতে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখিয়ে ঘুমোতে চলে যান। নিয়মিত এই
নিয়ম মেনে চললে পা ফাটা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।
সল্ট, গ্লিসালিন ও গোলাপজলের ফুট মাস্ক: গোলাপ জলে রয়েছে প্রচুর পরিমান
আন্টি অক্সিডেন্ট এবং অল্প পরিমাণ এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এই উপাদানগুলো আপনার
ত্বক ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও গ্লিসারিনের এমন কিছু উপাদান
রয়েছে যা আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। গরম পানিতে অল্প একটু
লেবু গ্লিসালিন এবং গোলাপ জল মিশিয়ে পায়ের গোড়ালিতে ব্যবহার করলে পা ফাটা ঠিক
হয়।
মধু: পা ফাটা সাড়িয়ে তুলতে মধুকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে
নামকরণ করা হয়। এজন্য প্রথমে গরম পানিতে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে ভালোমতো ধুয়ে রাতে
ঘুমাতে যাওয়ার আগে সামান্য পরিমাণ মধু নিয়ে গোড়ালিতে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।
এরপর পা কোন কিছু দিয়ে ভালোমতো পেচিয়ে শুয়ে পড়ো। সকালে পা পরিষ্কার পানি
দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে একটি মশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করুন।
কয়েকদিনের মধ্যেই পার্থক্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
এলোভেরা: অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি এবং ই। এগুলো
আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। হালকা কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ভালোমতো
পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর মোটা করে এলোভেরা জেল পায়ের তলায় লাগিয়ে পা কোন
কিছু দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে যেতে হবে। সকালে উঠে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে পা
ধুয়ে নিতে হবে। অল্প কিছুদিন এরকম পদ্ধতি অবলম্বন করলেই দেখবেন পা ফাটা দূর হয়ে
গেছে।
ভ্যাসলিন: ভ্যাসলিনের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোমতো একটি প্যাক তৈরি করে
সারারাত পায়ে লাগিয়ে রেখে সকালে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে দিতে হবে।
তাহলে দেখবেন পা ফাটা দূর হয়ে গেছে।
বেকিং সোডা: হালকা কুসুম গরম পানিতে দুই থেকে তিন চামচ বেকিং সোডা দিয়ে
এই মিশ্রণে কিছুক্ষণ পা ঢুকয়ে বসে থাকতে হবে। ১৫ মিনিট পর দেখবেন পায়ের ত্বক
অনেক নরম হয়ে গেছে। এরপর পা থেকে শক্ত কোন পাথর দিয়ে ভালোমতো ঘষে ঘষে পরিষ্কার
করে নিতে হবে যেন ফাটার মধ্যে কোন ময়লা লেগে না থাকে। তাহলে পা ফাটা দূর হবে।
অলিভ অয়েল, তিলের তেল, সরিষার তেল এবং বাদামের তেল: অলিভ অয়েল, তিলের
তেল, সরিষার তেল এবং বাদাম তেল পা ফাটা রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সব তেলের মধ্যে যেকোনো একটি পায়ে ভালোমতো লাগিয়ে
ঘুমিয়ে যেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন পায়ে তেল ম্যাসাজ করলে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
লেবু: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা পা ফাটা দূর করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পা ফাটাই লেবু খাওয়া যেমন জরুরী তেমনি প্রতিদিন
ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফাটা জায়গায় লেবু কিছুক্ষণ ঘষে ভালোভাবে পা ধুয়ে নিলেই
দেখবেন পায়ের শুষ্ক ত্বক অনেক নরম হয়ে গেছে। এভাবে ব্যবহার করলে পা ফাটা দূর
হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত ওজন কমানো: আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে তাহলে এটি হতে
পারে আপনার পা ফাটার আরো একটি মূল কারণ। পা ফাটা রোধ করতে চাইলে অবশ্যই শরীরে
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
মোম: পা ফাটা দূর করতে মোমবাতি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেজন্য
প্রথমে মোমবাতি ব্লেন্ডারের ভালোমতো গুঁড়া করে সেই সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে একটি
পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রনটি ভালোমতো ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এই মিশ্রণটি প্রতিদিন পায়ের ফাটা গোড়ালিতে ব্যবহার
করলে দ্রুত পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
শ্যাম্পু ও চন্দন তেল: হালকা কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোটা শ্যাম্পু এবং
চন্দন তেল মিশিয়ে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে বসে থাকতে হবে। এর সাথে কয়েকটি নিম পাতাও
দিতে পারেন। এবার পিউমিক স্টোন দিয়ে পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ভালোভাবে
ঘষলে দেখবেন আপনার পায়ের মৃত কোষ গুলো উঠে যাবে। এভাবে কয়েকদিন এ পদ্ধতি
অবলম্বন করলে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
পায়ের গোড়ালি ফাটে কেন?
পায়ের গোড়ালি ফাটে কেন এই প্রশ্নটি প্রায় সকল মানুষের জানার ইচ্ছা হয়। কারণ
শীতকাল আসলেই পা ফেটে যায় অনেকের। এছাড়াও অনেকের আবার গরমেও পা ফাটা সমস্যা
থাকে। তবে পা ফাটার কারণ শুধু শীতকাল নয়। বিভিন্ন কারণে পা ফাটতে পারে। পা ফাটার
একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ভিটামিনের অভাব।
বিশেষত ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি এই দুটি ভিটামিন আপনার ত্বকের যত্নে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি এই ভিটামিন গুলোর অভাব দেখা দেই তাহলে
ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা
হচ্ছে পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া।
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ ও প্রতিকার
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলের এই অংশটুকু
পড়ুন। বিভিন্ন কারণে পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে। চলুন জেনে নিই পায়ের
গোড়ালি ফাটার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ:
- আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাব জনিত কারণে পা ফেটে যায়। মূলত আমাদের শরীরে যদি ক্যালসিয়াম জিংক এবং আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে পা ফেটে যায়। এই ভিটামিন গুলোর অভাব পা ফাটার অন্যতম কারণ।
- অনেক সময় আমাদের শরীরে পানি শূন্যতার কারণে পা ফাটতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে আমাদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- খুব বেশি গরমের কারণে, ধুলাবালির কারণে, দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে, দীর্ঘক্ষণ পায়ের যত্নের অভাবে বা অনেক সময় অপরিষ্কার জুতা পড়ে থাকার কারণে পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক সময় স্নায়ুজনিত সমস্যার কারণে পায়ের আদ্রতা হারিয়ে ফেলতে পারে। যার ফলে পা ফাটা দেখা দেয়।
- কোন জায়গা অল্প একটু কেটে গেলে সেই জায়গার চামড়াকে জোরে টান মেরে ছিঁড়ে তুলার কারণেও অনেক সময় পা বা ত্বক ফেটে যায়।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে পা ফাটা জেনেটিক কারণেও হতে পারে। যেমন মা, বাবা, চাচা বা বংশের কারো এই সমস্যা থাকলে ছেলেমেয়েরা বংশ পরম্পরায় এ রোগ পেয়ে থাকে।
- পায়ে কোন ধরনের মশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার না করলে বা দীর্ঘক্ষণ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকলে পা ফেটে যায়।
পায়ের গোড়ালি ফাটার প্রতিকার:
- দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ না করা।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা।
- মশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করা।
- শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।
- ঘরোয়া বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে পায়ের যত্ন নিতে হবে।
পায়ের গোড়ালি ফাটা কিসের লক্ষণ?
পায়ের গোড়ালি ফাটার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হচ্ছে ছত্রাকের সংক্রমণ। এছাড়াও
যদি আপনার পায়ের গোড়ালির চারপাশের ত্বক শুষ্ক এবং পুরো হয়ে যায় তখন পায়ের
গোড়ালির নিচের ওপর অনেক চাপ বাড়ে। যার ফলে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। শীতকালে
সাধারণত পায়ের মাসলগুলোতে আদ্রতা কমে যায় এবং বাইরে তাপমাত্রা কম থাকায় পায়ের
গোড়ালি ফেটে যায়। এই কারণগুলো মূলত অনেক সময় ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে হয়ে
থাকে।
নারিকেল তেল কি ফাটা হিল সারাতে পারে?
নারিকেল তেল কি ফাটা হিল সারাতে পারে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। শীতে পা ফাটা
দূর করার ঘরোয়া উপায় এই আর্টিকেলে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো আজ।হ্যাঁ,
নারিকেল তেল ফাটা হিল সারানোর জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপায়। শুধু পা ফাটা নয়
পা নরম মসৃণ এবং ফাটল মুক্ত করার জন্য নারিকেল তেল একটি চূড়ান্ত কার্যকারী
সমাধান। নারিকেল তেলে থাকা প্রাকৃতিক মস্চারাইজিং এবং নিরাময় বৈশিষ্ট্য গুলো
আপনার পা ফাটা রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বা মেসেজ করা থেকে শুরু
করে পায়ের মাস্ক পর্যন্ত আপনার পায়ের যত্নে প্রতিদিনের রুটিনে এই তেলটি
প্রাকৃতিক মশ্চারাইজিং হিসেবে কাজ করবে।
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন হয়?
পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয় কেন তা কি আপনি জানেন? শীতকালে পা ফাটা দূর করার ঘরোয়া
উপায় এই আর্টিকেলের এই অংশে পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানাবো।
পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার কারণ হচ্ছে পায়ের সামনের দিকের ছোট ছোট কিছু হাড়
সামনের দিকের গোড়ালির হারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই যুক্ত থাকা ব্যান্ডের মত
লিগামেন্ট তাকে বলে প্লান্টার ফাসা। আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন যেন সরাসরি
পায়ের গোড়ালির ওপর চাপ ফেলতে না পারে সেজন্য এ ব্যান্ড কাজ করে। সাধারণত কোন
কারনে এই ব্যান্ডে প্রদাহ সৃষ্টি হলে গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব হয়।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি গোড়ালি ফাটে?
অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি গোড়ালি ফাটে এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? চলুন এই
সম্পর্কে আলোচনা করি। হ্যাঁ, অতিরিক্ত ওজন এর অধিকারী ব্যক্তিদের পায়ের গোড়ালি
ফাটার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ ওজন বৃদ্ধির কারণে পায়ের গোড়ালি চর্বিযুক্ত
প্যাডের উপর বেশি চাপ পড়ে। যার ফলে চর্বি প্যাড অনুভূমিক ভাবে বৃদ্ধি হতে থাকে।
মূলত এই কারণটির কারণে গোড়ালির পিছনের ফাটল হওয়া সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়।
পানি খেলে কি গোড়ালি ফেটে যায়?
একজিমা এবং সোরিয়াসিস সহ অন্যান্য চিকিৎসার কারণে অনেক সময় গোড়ালি ফেটে যেতে
পারে। এ অবস্থায় নিয়মিত পেডিকিউর করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও ঘন ঘন
পানি পান করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে। তাই গোড়ালি ফাটা রোধ করতে
নিয়মিত পানি পান করতে হবে। তাহলে ত্বক ভালো থাকবে।
পা ফাটা দূর করার ক্রিমের নাম
পা ফাটা দূর করার ক্রিমের নাম সম্পর্কে জানতে চাইলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়ুন।
শীতে পা ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বাড়িতে
তৈরি একটি ক্রিমের কথা আলোচনা করব। এই ক্রিমটি পা ফাটা রোধে দ্রুত কাজ করবে।
সেজন্য প্রথমে একটি মোমবাতি ব্লেন্ডারের সাহায্যে গুরো করে নিতে হবে। সেই গুরো
করা মোমবাতিতে দুই থেকে তিন চামচ সরিষার তেল দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
এবার এই পেস্টটি চুলায় দিয়ে হালকা একটু ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা
হয়ে গেলে একটি ক্রিম তৈরি হবে এই ক্রিমটি আপনি ৬-৭ দিন রেখে পা ফাটায় ব্যবহার
করতে পারেন। খুব দ্রুত ফল পাবেন।
এছাড়াও বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন দুটি ক্রিম হল Foot Care এবং Cracked
Heels. দ্রুত পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধ করতে এই দুটি ক্রিম খুব ভালো কাজ করে।
পা ফাটা দূর করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ
পা ফাটা দূর করার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। হোমিওপ্যাথিতে পা
ফাটাকে একটি চর্মরোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্কিনের উপর যে কোন চটা ফাটা কে
হোমিওপ্যাথি চর্মরোগ হিসেবে বিবেচনা করে। পা ফাটা দূর করার কয়েকটি হোমিও ঔষধ
সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।
- পেট্রোলিয়াম ২০০: শীতকালে যদি পা ফাটা বারবার ফিরে ফিরে আসে তাহলে পেট্রোলিয়াম ২০০ খুব সুন্দর কাজ করে।
- এসিড নাইট্রিক ২০০: কারো বংশগতভাবে গোড়ালি ফাটা হলে এবং গোড়ালি ফেটে সেখান দিয়ে রক্ত বের হলে এসিড নাইট্রিক খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও পায়ের গোড়ালি যদি প্রচন্ড শক্ত হয়ে ফেটে যায় তাহলেও এই ওষুধটি ভালো কাজ করে।
- PsoraleaCorylifolia Q : যাদের অত্যন্ত পা ফেটে গেছে তাদের পায়ের পাঁচ গ্রাম পেট্রোলিয়াম জেলি সাথে ২০ ফোঁটা এই ওষুধ মিশিয়ে ফাটার উপর মালিশ করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে এটি ব্যবহার করে শুয়ে দিতে হবে।
- Anacardium Oc 1m : শুধু শীতকাল বলে নয় যাদের সারা বছর পা ফেটে থাকে তাদের জন্য এই ওষুধটি খুব ভালো কাজ করে। তিন দিন পর পর এই ওষুধটি সকাল রাত্রে দশ ফোটা করে খেতে পারেন। পা ফাটা দূর হয়ে যাবে।
- Sulphur oilmen এবং Petroleum oilmen: এই ওষুধ দুটো অল্প করে দুটো একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পায়ের ফাটা গোড়ালিতে কিছুদিন লাগালে খুব ভালো কাজ করবে।
গরমকালে পা ফাটে কেন?
সাধারণত শীতকালে পা ফাটে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক সময় গরমকালেও অনেকের পা
ফাটতে দেখা যায়। গরমে সময় আমাদের পা ফাটার একটি অন্যতম কারণ হলো শরীরে পর্যাপ্ত
পরিমাণ পানি না থাকা। গরমকালে আমাদের শরীরে ঘাম অনেক বেশি হয়। যার ফলে পানি
অনেকটা শরীর থেকে ঘাম আকারে বের হয়ে যায়। গরমকালে আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশনের
সমস্যা ও খুব বেশি দেখা যায় যার ফলে পা ফেটে যায়।
গরমে পা ফাটা দূর করার উপায়
গরমে পা ফাটা দূর করার উপায় অনেক সহজ। শীতকালে মানুষের পা ফাটে তো বটেই তবে অনেক
সময় গরমকালেও পা ফাটতে দেখা যায়। কয়েকটি সহজ উপায় অবলম্বন করলে গরমকালে পা
ফাটা দূর হয়। দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করলে বা গ্রীষ্মকালে শরীরে পানির
অভাব দেখা দিলে মূলত এই সময় পা ফাটা বেশি হয়। চলুন জেনে নিই গরমে পা ফাটা দূর
করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে।
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ না করে কিছুক্ষণ বসা বা হাঁটাহাঁটি করা।
- গ্রীষ্মকালে শরীরে যেন পানির অভাব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিটামিন এ, বি৩, সি, ডি এবং ই এই অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে এমন গোলাপজল পায়ে ব্যবহার করতে হবে।
- গ্লিসালিন ত্বকে নরম করতে সাহায্য করে। তাই গরম কালেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোলাপজল এবং গ্লিসালিন মিশিয়ে প্রতিরাতে পায়ের গোড়ালি এবং পাতায় মেসেজ করলে এ সমস্যা দূর হয়।
- পায়ের যত্নে নিয়মিত ফুট ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
হাত-পা ফাটা দূর করার উপায়
হাত পা ফাটা দূর করার উপায় সম্পর্কে বলবো আজ। শীতকাল আসলেই অনেকের হাত-পা ফেটে
যায়। এটি অনেক অস্বস্তিকর একটি বিষয়। হাত পায়ের ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়ার
কারণেই মূলত এমনটি ঘটে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেই
এই হাতপা ফাটা দূর করা যায়। চলুন জেনে নিই হাত পা ফাটা দূর করার কয়েকটি উপায়
সম্পর্কে।
- শীতকালে হাত-পা ফেটে যাওয়ার একটি সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে হাত পা রুক্ষ হয়ে যাওয়া। মূলত সঠিক যত্ন এবং অবহেলা জনিত কারণেই অনেকের হাত-পা ফেটে যায়। তবে এই ফাটা রোধ করতে চাইলে আপনাদের অবশ্যই শীতের শুরু থেকে মশ্চারাইজার ক্রিম হাতে পায়ে ব্যবহার করা শুরু করতে হবে।
- শীতকালে হাত-পা ফেটে যাওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে। অনেক সময় বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয় না বলে রোদের কারণে হাত পা ফেটে যায়। তাই রোদের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে হাত পা সুরক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- হাত পায়ের ত্বক বেশি রুক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় হাত পা ফেটে যায়। তাই রুক্ষ জায়গাগুলোতে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে জায়গাগুলো নরম হয় এবং হাত-পা ফাটা রোধ হয়।
- শীতকালে হাত পা ফেটে গেলে বাইরে থেকে ফিরে এসে সোডা মেশানো কুসুম গরম পানিতে হাত-পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিলে মরা চামড়া উঠে যাবে। মাঝে মাঝে ম্যানিকিওর ও পেডিকিউর করালে হাত পা ফাটা সমস্যা দূর হয়।
- তবে হাত পায়ের ত্বক সুন্দর এবং সজীব রাখতে হলে অবশ্যই খাদ্য অভ্যাসের দিকে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কারণ ভালো খাদ্য না পেলে শরীর ঠিকমতো পুষ্টি পাবে না যার ফলে যতই পরিচর্যা করা হোক না কেন ত্বক নিস্তেজ দেখাবে। তাই হাত পা ফাটা দূর করতে চাইলে অবশ্যই খাবারের দিকে নজর দিতে হবে।
- শীতকালে হাত পা ফেটে যাওয়ার আরও একটি মূল কারণ হচ্ছে পানি কম খাওয়া। হাত পায়ের ত্বক সুন্দর রাখতে পানির গুরুত্ব অনেক। ত্বক সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে চাইলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
উপরের উল্লেখিত কারণগুলো মেনে চললে অবশ্যই হাত-পা ফাটা দূর করা সম্ভব হবে। কারণ
সঠিক যত্নের অভাবেই মূলত হাত-পা ফেটে যায়। হাত পায়ের ভালো ভাবে যত্ন নিলে এগুলো
সুন্দর এবং কোমল থাকবে।
ফাটা গোড়ালির জন্য কোন তেল ভালো?
ফাটা গোড়ালির জন্য কোন তেল ভালো তা জানতে চাচ্ছেন? ফাটা গোড়ালিতে ব্যবহার করার
জন্য বেশ কয়েক ধরনের তেল আছে। সেগুলো ব্যবহার করলে পা ফাটা দূর হয়। যেমন ধরুন
কোকা মাখন এবং সিয়া মাখন পা ফাটার জন্য অনেক উপকারী। এগুলো মাখিয়ে সারারাত রেখে
দিলে শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও কাস্টার্ড অয়েল ত্বকের জন্য অনেক
উপকারী।
এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে মশ্চারাইজার করে। এই তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা
ফ্যাটি এসিড যা ত্বকে অতিরিক্ত হাইড্রেশন প্রদান করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরও
একটি উপকারী তেল হচ্ছে নারিকেলের তেল। এই তেল যেকোনো ধরনের শুষ্ক ত্বকের জন্য
একটি আদর্শ তেল। যেকোনো ধরনের শুষ্ক ত্বকে এই তেল ম্যাসাজ করলে ত্বক নরম হয়।
ফাটা গোড়ালির জন্য মধু কি ভালো?
ফাটা গোড়ালীর জন্য মধু অনেক উপকারী। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক
বৈশিষ্ট্য যা পা ফাটা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পা ফেটে গেলে তার
উপরের ভিনেগারের সেই শক্ত শুষ্ক ফাটা ত্বকে ভেঙে দিতে সাহায্য করে যার ফলে আবার
নতুনভাবে চামড়া বের হয়। এভাবে মধু গোড়ালি ফাটার জন্য ব্যবহার করা হয়।
শেষ কিছু কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে শীতে পা ফাটা দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ আরো অনেক
কিছু আলোচনা করেছি। এই আর্টিকেল থেকে আপনি অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছেন।
আর্টিকেলটি নিশ্চয়ই আপনার উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে
ওয়েবসাইটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url