প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
আপনি কি প্যাশন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের প্যাশন ফলের
পরিচিতি, পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা, অপকারিতাসহ আরো অনেক কিছু আলোচনা করব।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ নানা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ প্যাশন ফলের উপকারিতা অপরিসীম।
পুষ্টিবিদরা প্যাশন ফল কে সত্যিকারের পুষ্টিকর একটি পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচনা
করেছেন। নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ফ্যাশন ফল। চলুন জেনে নিই প্যাশন ফলের
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা
প্যাশন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। এটি একটি সুস্বাদু ফল যা গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে।
ফ্যাশন ফলকে অনেক জায়গায় ট্যাং ফল হিসেবেও ডাকা হয়। অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ
সুস্বাদু এই ফলটির উৎপত্তিস্থান ব্রাজিলে। এছাড়াও এই ফলটি হাওয়াই,
নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, কোনিয়া সহ আরো অনেক দেশে
বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয়। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
থেকে শুরু করে নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের কাজ করে।
আরোও পড়ুন: তুলসী পাতার ২০ টি উপকারিতা ও ১১ টি অপকারিতা
আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করে পেটের যে কোন সমস্যা সমাধানে এই ফলের জুড়ি মেলা
ভার। ফ্যাশন ফলটির ভেতরে হলুদাভ রস পূর্ণ একটি থলে থাকে। এই অংশটুকুই খেতে হয়।
সাধারণত একটি ৬০ গ্রাম ফল থেকে প্রায় ৩০ গ্রাম রস পাওয়া যায়। প্যাশন
ফলের বীজকে হলুদ জিলাটিনাস সুগন্ধিযুক্ত অংশ দিয়ে আবৃত করা থাকে। এর ভেতরের
সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানির সাথে মিশিয়ে অনেক সুস্বাদু রস তৈরি করা যায়। এই
ফলের তৈরি জুস অনেকেই পছন্দ করে।
এছাড়াও এই ফলের পাল্পকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম,
জুস, জ্যাম-জেলি এবং স্কোয়াশ তৈরি করা হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে প্যাশন ফলের
বীজ এবং খোসা থেকে পেকটিন ও উচ্চ মাত্রার লিনোলিক এসিড যুক্ত তেল আয়রন করা যায়
যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নিই প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে।
প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা
- ওজন কমায়
- দীর্ঘস্থায়ীভাবে রোগ প্রতিরোধ করে
- তুলনামূলকভাবে কম গ্লাইসেমিক সূচক
- হার্ট ভালো রাখে
- হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধক
- অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- ফাইবারের ভালো উৎস
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ
- ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নতি
- উদ্বেগ কমায়
- অনিদ্রা দূর করে
- ত্বক ভালো রাখে
- বার্ধক্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য
- চুল ভালো রাখে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- অ্যানিমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে
- দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখে
- ডায়রিয়া ও আমাশয় প্রতিরোধক
- অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ
ওজন কমায়: ফ্যাশন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট এবং
শর্করা যা আপনার শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে
আপনার শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে এই ফলের রস আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
দীর্ঘস্থায়ীভাবে রোগ প্রতিরোধ করে: প্যাশন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
ভিটামিন সি এবং ফলিফেন। এছাড়াও এতে আরো রয়েছে উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা
আপনার অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করবে এবং আপনার শরীরে থাকা
দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাবে।
তুলনামূলকভাবে কম গ্লাইসেমিক সূচক: প্যাশন ফল কম গ্লাইসেমিক সূচক হাওয়াই
এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে দেয় না ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য অত্যন্ত নিরাপদ একটি ফল। প্রিভেন্টিভ নিউট্রেশন এন্ড ফুড সায়েন্স থেকে
প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে প্যাশন ফলে থাকা অ্যাসকরবিক এসিড আমাদের রক্তে
শর্করার জন্য অনেক উপকারী।
হার্ট ভালো রাখে: প্যাশন ফলে থাকা পটাশিয়াম আমাদের হার্ট ভালো রাখতে
সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা আমাদের শরীরের ধমনীতে কোলেস্টেরল তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যার
ফলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করে: প্যাশন ফল হাঁপানি রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
হাঁপানি রোগীরা নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে মনে করেন অ।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: প্যাশন ফলে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীর মরণ ব্যাধি
ক্যান্সার থেকে রক্ষা পায়।
অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: প্যাশন ফল অধিক পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। প্যাশন ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের
দেহের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলগুলোকে কুচকে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফলে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম গুলোকে সুস্থ রাখতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো
আমাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের রক্ত প্রবাহকে অনেক উন্নত করে। এছাড়াও
এগুলো আমাদের স্ট্রেস কমায় এবং শরীরের প্রদাহ দূর করে।
ফাইবারের ভালো উৎস: প্যাশন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ডাইরেক্টরি ফাইবার যা
প্রতিটি ডায়েটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্যাশন ফলে থাকা ফাইবার আপনার
হজম সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখবে। এছাড়াও এটি
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং আপনার শরীরে থাকা কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি
কমাতে সাহায্য করবে। তাই সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত প্যাশন ফল আপনার ডায়েটে
প্রতিদিন রাখতে পারেন।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ: প্যাশন ফলকে ভিটামিন সি এর উৎস বলা হয়। কারণ এটি
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। প্যাশন ফল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নতি: প্যাশন ফলে জিআই এর মান কম থাকে বলে এটি
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য অনেক ভালো একটি খাদ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন
প্যাশন ফলের বীজে থাকা যৌগিক উপাদান কোন ব্যক্তির ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে
সাহায্য করে। ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নতির কারণে এটি ডায়াবেটিস সহ আরো নানা
রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
উদ্বেগ কমায়: প্যাশন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। কিছু কিছু
বিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছেন প্যাশন ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের উদ্বেগ কমাতে
সাহায্য করে। তবে এটির জন্য আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
অনিদ্রা দূর করে: নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে আমাদের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য
করে। যার ফলে কারো যদি অনিদ্রা সমস্যা থাকে সে নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে এই সমস্যা
দূর হবে। অনিদ্রা কমাতে প্যাশন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের মনকে
প্রশান্ত করে।
ত্বক ভালো রাখে: প্যাশন ফলের বীজ থেকে তৈরি তেল আমাদের ত্বককে গভীরভাবে
মশ্চারাইজিং করে এবং ত্বকের শুষ্কতা ও ডিহাইড্রেট ভাব কমিয়ে একটি চমৎকার
ইমোলিয়েন্ট তৈরি করে। প্যাশন ফলে থাকা ওমেগা-6 এবং ওমেগা-9 আমাদের প্রয়োজনীয়
সকল ফ্যাটি এসিডের উৎস উপাদান, এটি ত্বকের যেকোনো বাধাকে শক্তিশালী করে,
স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে এবং ত্বককে নরম ও কোমল বর্ণ তৈরি করতে সাহায্য করে।
বার্ধক্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য: প্যাশন ফলের বীজের তৈরি তেলে ভিটামিন সি এবং
ফ্ল্যাভোনয়েডের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা ফ্রী রেডিক্যাল এবং
অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং অকাল
বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করে। প্যাশন ফলের বীজের তেল তোকে নিয়মিত ব্যবহার করলে
বলিরেখা সূক্ষ্মরেখা এবং বয়সের দাগ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের
তারুণ্য ও উজ্জ্বল বর্নকে পরিণত করে।
চুল ভালো রাখে: প্যাশন ফলের বীজের তেল শুধুমাত্র ত্বকের জন্যই উপকারী
এমনটি নয়। এটি আমাদের চুলের জন্যেও অনেক উপকারী। এই তেলে থাকা লাইটওয়েট
টেক্সচার এবং এর পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্য গুলো আমাদের মাথার ত্বকের জন্য চমৎকার একটি
প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো করে চুলের বৃদ্ধি
প্রসার করে এবং সেই সাথে নিস্তেজ ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলগুলোকে চকচকে সিল্কি করতে
সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: এক কাপ প্যাশন ফলে কি প্রায় ৮২১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম
বের করে কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম আমাদের শরীরের
ভাসোডিলেশন বা ধমনীর প্রশাস্থ্যকরণ এবং নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে: প্যাশন ফলে থাকা উচ্চমানের আয়রন সমৃদ্ধ
প্রোফাইলের সাথে আপনার রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনার রক্তকে
সুস্থ ও অক্সিজেনযুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখে: প্যাশন ফলে থাকা ভিটামিন সি আপনার
দৃষ্টিশক্তিকে তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে দীর্ঘদিন
পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ থাকে বলে মনে করে চিকিৎসকরা।
ডায়রিয়া ও আমাশয় প্রতিরোধক: আপনাদের যাদের ডায়রিয়া এবং আমাশয় এর
সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত প্যাশন ফল খেলে এই সমস্যা দূর হয়। পেটের সমস্যা জনিত
কারণ সমাধানে প্যাশন ফলের ভূমিকা অনেক বেশি।
অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ: আশ্চর্যজনক এই ফলটিকে ভিটামিন এবং পুস্তির ভান্ডার
বলা হয়। অন্যান্য ফলে তুলনায় এই ফলে ভিটামিন এবং পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি
থাকে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য
করে।
প্যাশন ফলের ৫ টি অপকারিতা
প্যাশন ফলের উপকারিতার পাশাপাশি এর রয়েছে কয়েকটি অপকারিতাও। উপরে আমরা প্যাশন
ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের এই ফলের অপকারিতা
সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই প্যাশন ফলের ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জ্বালা হতে পারে
- এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়
- এলার্জেনের প্রতি সংবেদনশীলতার
- পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে
- সায়ানাইড মৃত্যু ঘটাতে পারে
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জ্বালা হতে পারে: আমরা জানি প্যাশন ফলে প্রচুর
পরিমাণ ফাইবার থাকে। তাই এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে অস্থায়ীভাবে
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জ্বালা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়: ফ্যাশন ফল খাওয়ার ফলে ল্যাটেক্সের প্রতি
সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অনেক সময় এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এর
প্রধান কারণ হলো ল্যাটেক্সের তাড়াতাড়ি করুন মধ্যে একই রকম প্রোটিন পাওয়া যায়।
এলার্জেনের প্রতি সংবেদনশীলতার: প্যাশন ফল খাওয়ার পূর্বে এলার্জেনের
প্রতি সংবেদনশীলতার সাথে অনেক সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাহলে স্বাস্থ্য
ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে: আপনার যদি কোন পেটের সমস্যা থাকে তাহলে এই ফল
খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করুন। কারণ পেটের কোন
সমস্যা থাকলে এই ফল খাওয়ার পর তা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পেটের সমস্যায় এই ফল
এড়িয়ে চলা উচিত।
সায়ানাইড মৃত্যু ঘটাতে পারে: প্যাশন ফলের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক
উপাদান রয়েছে যা আমাদের সায়ানাইড গঠনের ক্ষমতা রাখে। যার ফলে অতিরিক্ত মাত্রায়
এই ফল সেবন করলে সায়ানাইড মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই এই ফল পরিমিত মাত্রায় খাওয়া
উত্তম।
প্যাশন ফলের পুষ্টি উপাদান
- ক্যালোরি ২২৯ গ্রাম
- সোডিয়াম ৬৬.১ মিলিগ্রাম
- চর্বি ১.৭ গ্রাম
- ফাইবার ২৪.৫ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৫৫.২ গ্রাম
- চিনি ২৬.৪ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৭০.৮ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ৫.২ গ্রাম
- ভিটামিন এ ১৫১mcg
- ম্যাগনেসিয়াম ৬৮.৪ মিলিগ্রাম
- আয়রন ৩.৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৮২১ মিলিগ্রাম
প্যাশন ফলের বৈশিষ্ট্য
প্যাশন আসলে একটি ফলের নাম। এটি কে অনেক যায়গায় ট্যাং ফল হিসেবেও চিনেন। এটি
একটি টক মিষ্টি জাতীয় ফল।এটি মূলত একটি বিদেশি ফল। এই ফলটি সাধারণত দক্ষিণ
আফ্রিকা ফিলিপাইন এবং ব্রাজিলের অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। বর্তমানে আমাদের দেশেও
ব্যাপক হারে এই ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। প্যাশন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। এটি শুধু ফল
হিসেবেও নয় এই ফলের গুঁড়াও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। বাজারে প্যাশন ফলের
গুঁড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশে। গরমে ক্লান্তি দূর করতে এবং অতিথি
আপ্যায়নে এই ফলের গুঁড়ার জুড়ি নেই।
দিনে কতগুলো প্যাশন ফল খাওয়া উচিত?
প্যাশন ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একথা আমরা সবাই জানি। প্যাশন ফলের
উপকারিতা অনেক বেশি বলে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। প্যাশন
ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের প্রতিদিন কতগুলো
প্যাশন ফল খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানাবো। কারণ এটি নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই
প্রশ্ন থাকে। আসলে কি পরিমান এই ফল খাওয়া উচিত তা আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন জেনে
নিই দিনে কতগুলো প্যাশন ফল খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচাল (ইউএসডিএ) এর সম্প্রদায়িক খাদ্য তালিকা
নির্দেশনা অনুসারে একজন ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী পুরুষের জন্য দৈনিক ৩৪ গ্রাম এবং ১৯
থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলাদের জন্য দৈনিক ২৮ গ্রাম প্যাশন ফল খাওয়া যাবে। প্যাশন
ফলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকাই এটি নিয়মিত খেলে আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ
করবে হজমে সহায়তা করবে এছাড়াও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করবেন
বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। এর থেকে বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্যাশন ফল কিভাবে খেতে হয়?
ফ্যাশন ফলের উপকারিতা অনেক। এই ফল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি
ফল। প্যাশন ফলের উপরের শক্ত অংশটুকু ফেলে ভেতরের মাংসলো অংশটুকু খেতে হয়। প্যাশন
ফলকে অর্ধেক করে কেটে এতে চামচ দিয়ে ভেতরের সজ্জা বা বীজগুলোকে খেতে হয়। এগুলো
বিভিন্ন রেসিপিতেও ব্যবহার করে খাওয়া হয়। আপনি প্যাশন ফলের ভেতরের এই সজ্জা এবং
বীজ মিশ্রিত করে একটি সুগন্ধি পিওরি ও তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও এটি বিভিন্ন
ধরনের স্মুদি এবং বেকিং ডেজার্ট হিসেবেও খেতে পারেন।
ত্বকের জন্য প্যাশন ফল কিভাবে ব্যবহার করব?
প্যাশন ফল শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এমন কিন্তু নয়। এটি আমাদের
ত্বকের জন্যেও অনেক উপকারী। প্যাশন ফল দিয়ে চাইলেই আপনি আপনার রূপচর্চা করতে
পারেন। কারণ এই ফলে রয়েছে প্রাকৃতিক এনজাইম ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা
আপনার ত্বককে ভেতর থেকে মোশ্চারাইজিং, নরম, দাগ মুক্ত এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য
করে।
আরোও পড়ুন: ঠোটের কালো দাগ দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়
এছাড়াও এটি নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে বার্ধক্য জনিত বয়সের ছাপ পড়া থেকেও
বিরত রাখে। প্যাশন ফল সরাসরি আপনি আপনার মুখে পাল্প হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
বা এই ফলের নির্যাস ধারণ করে এমন স্কিন কেয়ার পণ্যগুলো সন্ধান করে সেগুলো আপনি
আপনার মুখে লাগাতে পারেন।
প্যাশন ফল বেশি খেলে কি হয়?
প্যাশন ফল বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এই ফল খাওয়ার পরে এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
তবে এই ফল খাওয়ার পরেও সেই সকল ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারেনা যাদের শরীরে
ল্যাটেক্স থেকে এলার্জি সমস্যা রয়েছে। আপনি জানলে অবাক হবেন প্যাশন ফলের প্রোটিন
গঠনে ল্যাটেক্স প্রোটিনের অনুরূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্যাশন ফলের মধ্যে
এক ধরনের রাসায়নিক রয়েছে যা সায়ানাইড গঠনের ক্ষমতা রাখে। তাই এই ফল বেশি
পরিমাণ খেলে সায়ানাইড মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্যাশন ফলের ত্বক কি বিষাক্ত?
হ্যাঁ, প্যাশন ফলের ত্বক অনেক বিষাক্ত। এই ফলের বাইরের শক্ত ত্বকের অংশ সাধারণত
খাওয়া হয় না এবং এই বাইরের অংশটিকে অখাদ্য হিসেবেও বিবেচিত হয়। কারণ বেগুনি
আবেগের ফলে এই ফলের ত্বকে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক
থাকে। যা এনজাইমের সাথে একত্রিত হয়ে এক ধরনের বিষ সায়ানাইড তৈরি করে যা প্রচুর
পরিমাণে বিষাক্ত (২৬,২৭)
প্যাশন ফলে কি চিনি থাকে?
প্রতি এক কাপে প্রায় ৫৫ গ্রাম ফল থাকে। যার প্রায় অর্ধেক পরিমাণের থাকে ফাইবার
(দৈনিক মূল্যের প্রায় ১০০%) এবং বাকি অর্ধেকে থাকে প্রাকৃতিক শর্করা। পুষ্টি
উপাদানের মধ্যে ফাইবার প্যাশন ফলের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
সাধারণত এটি গ্লাইসেমিক সূচকের অনেক নিচের দিকে রয়েছে, যেমন ধরুন 4.5 এবং 27.5
এর মধ্যেই সেখানে রেটিং রয়েছে।
প্যাশন ফল কি চুলের জন্য ভালো?
প্যাশন ফল আমাদের শরীর ত্বক এবং চুল সব কিছুর জন্যই অনেক উপকারী। প্যাশন ফলে থাকা
পটাশিয়াম ভিটামিন বি6 এবং ভিটামিন বি2 আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন করতে
সাহায্য করে। এই ফলে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের মাথার ত্বক স্বাস্থ্যকর এবং
স্বাস্থ্যকর ফলিকলের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। যার ফলে চুলের গোড়া মজবুত
হয় এবং দ্রুত চুল বৃদ্ধি পায়। চুলের জন্য অনেক উপকারী এই প্যাশন ফল।
প্যাশন ফল খেলে কি ওজন কমে?
ওজন কমানোর জন্য প্যাশন ফল দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ প্যাশন ফল একটি
কম ক্যালরিযুক্ত এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত একটি ফল যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ এবং ইনসুলিন
সংবেদনশীলতাকে উপকৃত করতে সাহায্য করবে যার ফলে আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে।
প্যাশন ফলটি একা খাওয়া যেতে পারে, আবার কেউ কেউ চাইলে এটি ডিজার্টের জন্য ফিলিংস
হিসেবেও খেতে পারে, এছাড়াও অনেকেই এই ফলটিকে বিভিন্ন পানীয়তে যোগ করে খেয়ে
থাকে।
শেষ কিছু কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের প্যাশন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা সহ আরো অনেক
অজানা তথ্য সঠিক তথ্য প্রদান করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার অনেক
উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url