ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সহ তোকমার নানা উপকারী গুণের কথা বলব। তোকমা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

ওজন-কমাতে-তোকমা-খাওয়ার-নিয়ম

বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটা মানুষ নিজেদের শরীর নিয়ে খুব বেশি সচেতন। সৌন্দর্য প্রেমী প্রায় প্রতিটি মানুষ চাই সুন্দর দেহ এবং উজ্জ্বল ত্বক। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি মানুষ ওজন কমিয়ে নিজেকে ফিট রাখতে চান। চলুন জেনে নিই ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম 

ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম অনেক সহজ। খুব সহজে আপনি তোকমা খেয়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নিজেকে ফিট রাখতে পারেন। বর্তমান সময়ে নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় প্রতিটি মানুষ চিন্তিত। সবাই চাই সুন্দর একটি দেহ এবং উজ্জ্বল, দাগহীন, সুন্দর ত্বক। আপনি জানলে অবাক হবেন আমাদের প্রকৃতিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের খেয়াল রেখে থাকে। এই সব উপাদান গুলোর মধ্যে তোকমা দানা প্রধান। বিভিন্ন জায়গায় এটিকে স্থানীয় ভাষায় বিদেশি তুলসী নামেও ডাকা হয়। ওজন কমাতে তোকমার বেশ কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। আসুন জেনে নিই ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

আরোও পড়ুন: সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

প্রথমে এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে এক চা চামচ তোকমা বীজ ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে দেখবেন এটি পানিতে ভিজে অনেক ফুলে উঠেছে। এবার পানি সহ তোকমার বীজগুলো ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলুন। তোকমার নিজস্ব কোন স্বাদ নেই তাই আপনি চাইলে এর সাথে একটু মধু অথবা লেবু যোগ করে খেতে পারেন। তোকমা বীজ প্রতিদিন এভাবে নিয়মিত খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজনকে অনেক গুণ বাড়িয়ে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

তোকমা বীজ এমন একটি উপাদান যা আপনার শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে কমিয়ে ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়াও এটি আমাদের রক্তে ভালো কোলেস্টেরল তৈরি করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তোকমার বীজ নিয়মিত খেলে এটি আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখবে। যার ফলে আমাদের শরীর অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করবে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও এটি এমন একটি উপাদান যা আপনার ক্লান্তি দূর করবে, পেটের প্রদাহ, পীড়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

তোকমা আমাদের শরীরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর ঠান্ডা রেখে আমাদের লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যদি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন তোকমা বীজ রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। অল্প কিছুদিন এভাবে খেলেই দেখবেন আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করবেন। 

তোকমার পুষ্টিগুণ 

তোকমার পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই তোকমা আমাদের শরীরে নানা উপকার করে থাকে। তোকমা বীজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী বলে বর্তমানে দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। চলুন জেনে নিই তোকমার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। 

  • কার্বোহাইড্রেট 
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • ফ্যাট 
  • ফাইবার 
  • প্রোটিন 
  • ক্যালসিয়াম 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • পটাশিয়াম 
  • তামা 
  • ভিটামিন সি 

তোকমায় থাকা ফাইবার আপনার পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। যদি আপনি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারই হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত তোকমা খেত। এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও কাজ করবে। নিয়মিত তোকমা দানা খেলে এটি আপনার শরীরের ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে বের করে দিতে সাহায্য করবে। তোকমায় থাকা ওমেগা থ্রি ফাটি এসিড আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। যা বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। এক কথায় তোকমা দানা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

খালি পেটে তোকমা খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা 

খালি পেটে তোকমা খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব আর্টিকেলের এই অংশে। তোকমা হচ্ছে ছোট ছোট এক ধরনের কালো বীজ যা বিভিন্ন শরবত বানিয়ে খাওয়া হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও সেই বহুকাল ধরে এই তোকমার ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি শুধুমাত্র আমাদের ওজন কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয় এটি আমাদের শরীরের জন্য আরও অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। ছোট কালো এই তোকমা বীজটি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে এতে মিলবে নানা রকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নিই খালি পেটে তোকমা খাওয়ার ২০ টি  উপকারিতা সম্পর্কে।

খালি-পেটে-তোকমা-খাওয়ার-২০-টি-উপকারিতা

খালি পেটে তোকমা খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা 

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 
  • পানি শূন্যতা দূর করে শরীর হাইড্রেট রাখে 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে 
  • দেহের তাপ কমায় 
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে 
  • এসিডিটি দূর করে 
  • ত্বক ও চুল সুন্দর করে 
  • ঠান্ডার সমস্যায় উপকারী
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ 
  • ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে 
  • আর্থ্রাইটিস এর প্রদাহ কমায় 
  • ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস 
  • হজমের জন্য উপকারী 
  • পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে 
  • তোকমায় রয়েছে কোমোপ্রিভেন্টিভ উপাদান 
  • দুশ্চিন্তা দূর করে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
  • মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
  • অকাল বার্ধক্য আটকায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: তোকমায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ডায়েটারি ফাইবার। আর এই ফাইবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন।

পানি শূন্যতা দূর করে শরীর হাইড্রেট রাখে: তোকমা বীজের শরবত এমন একটি পানীয় যা আমাদের শরীরের তরলের মাত্রা পূরণ করে আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: তোকমা বীজ ডায়াবেটিসের জন্য অনেক উপকারী। এতে থাকা ফাইবার কার্ডিওভাসকুলার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: শরীরের ওজন কমাতে তোকমা বীজের জুড়ি মেলা ভার। সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তকমা বীজ ফুলে ওঠে অনেকটা। এই ফুলে উঠা তোকমা বীজ পানিসহ খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার সহ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তোকমায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ যা আমাদের ক্ষুদাকে নিয়ন্ত্রণ করে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই ওজন খুব সহজেই কমানো যায়।

দেহের তাপ কমায়: গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে তোকমার শরবত বেশ উপকারী। কারণ এটি আমাদের দেহের তাপমাত্রা কমাতে অনেক সাহায্য করে। দেহের তাপমাত্রা কমাতে তোকমা শরবত অনেকেই মধু, চিনি অথবা নারিকেলের দুধ মিস করে খেয়ে থাকেন।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে: তোকমা আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে স্থির করে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজের রূপান্তর করতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি আমাদের শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিয়মিত খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এসিডিটি দূর করে: আমাদের পেটের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে এসিডিটি দূর করতে তোকমার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত তোকমা ভেজানো পানি পান করলে এটি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুল সুন্দর করে: তোকমা শুধু আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তা নয় এটি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য বেশ কার্যকরী। ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে তোকমার বিশেষ গুণ রয়েছে। তোকমার  বীজ গুঁড়ো করে নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগালে এটি আমাদের ত্বকের নানা ধরনের চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে একজিমা এবং সোরিয়াসিস নিরাময়ের জন্য এটি বেশ কার্যকরী। এছাড়াও তোকমা নিয়মিত খেলে এটি আমাদের চুল ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

ঠান্ডার সমস্যায় উপকারী: তোকমায় রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী বিশেষ উপাদান। নিয়মিত তোকমা খেলে এটি আপনার দেহে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনার শরীর থেকে সর্দি-কাশি দূরে থাকবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: তোকমায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের অস্থির অনু প্রতিহত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরকে ফ্রি রেডিক্যাল কোষ গুলোর ক্ষতি হওয়া থেকে রোধ করে। ফ্রি রেডিক্যালের কারণে অনেক সময় সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের মূল কারণ হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে: তোকমায় রয়েছে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

আর্থ্রাইটিস এর প্রদাহ কমায়: নিয়মিত তোকমা বীজ খেলে যাদের আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ রয়েছে তা কমে যায়। কারণ তোকমায় রয়েছে আর্থ্রাইটিসের প্রদাহবিরোধী বিশেষ উপাদান। যা প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস: তোকমায় ভিটামিন কে, খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এর মত নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

হজমের জন্য উপকারী: তোকমায় রয়েছে মিউকিলেজ উপাদান । এটি এক ধরনের জেলের মতো পদার্থ যা দীর্ঘক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা ফুলে যায়। তোকমায় থাকা এই জেলের মত টেক্সচার নিয়মিত খেলে এটি হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে।

পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে: তোকমা বীজ দীর্ঘক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি অনেক ফুলে যায়। ফুলে যাওয়া বাইরের আবরণে এক ধরনের জেলি জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়। এটি আমাদের খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এছাড়াও তোকমায় থাকা খাদ্য আঁশ আমাদের শরীরের খাদ্যকে দ্রুত পরিপাক করতে সাহায্য করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও এটি আমাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করতে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

তোকমায় রয়েছে কোমোপ্রিভেন্টিভ উপাদান: তোকমা বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লাইনলিক এসিড এবং ফ্যাটি এসিড। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোমোপ্রিভেন্টটিভ হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করে।

দুশ্চিন্তা দূর করে: বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তোকমাকে দুশ্চিন্তা দূর করার দারুন কার্যকরী উপায় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য তারা তোকমা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: তোকমা বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্লাবনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান। এছাড়াও এতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে থাকে।

মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: তোকমা বীজে প্রদাহ বিরোধী উপাদান থাকায় এটি আমাদের মুখের ভেতরের প্রদাহ ইনফেকশন আলসার এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এতে থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান আমাদের মুখের ভেতর কে ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি আমাদের মুখের ভেতরের যেকোনো ধরনের ইনফেকশন দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের বাজে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

অকাল বার্ধক্য আটকায়: নিয়মিত তোকমা দানা খেলে এটি আমাদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি আমাদের ত্বককে অকাল বার্ধক্য হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত তোকমা বীজ খেলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়।

তোকমা খাওয়ার অপকারিতা 

তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে থাকা প্রতিটা মানুষের উচিত। ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলের উপরের অংশে বর্ণনা করা হয়েছে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানব। আমরা জানি যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি একটু হলেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এগুলো অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সকল জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা গুলো জেনে থাকা অপরিহার্য। চলুন জেনে নিই তোকমা খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে। 

আরোও পড়ুন: প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা

  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তোকমা খাওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। কারণ গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একজন গর্ভবতী মহিলাকে যদি খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাওয়ানো হয় তাহলে তাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ অনেক কমে আসতে পারে। যার ফলে তারা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। 
  • তোকমা পূর্ণাঙ্গ বয়সের মানুষদের জন্য উপকারী হলেও এটি শিশুদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে। যেহেতু একজন শিশুর পেটে খুব বেশি পরিমাণ বিপাকীয় ক্ষমতা থাকে না তাই এটি খেলে ক্ষতি হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক সময় তোকমা শিশুদের জন্য আরও একটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে আর সেটি হচ্ছে শিশুদের দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। তাই একজন শিশুকে কখনোই তোকমা খেতে দেওয়া যাবে না। এটি শুধুমাত্র পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের সেবুনযোগ্য একটি বীজ।

তোকমা খেলে কি মোটা হয়? 

তোকমা খেলে কি মোটা হয় এটি অনেকের প্রশ্ন থাকে। তোকমায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, আয়রন, আঁশ এবং ক্যালোরি বিদ্যমান। এ সকল উপাদানগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তোকমা আমাদের শরীরের নানা ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি কার্যকরী। নিয়মিত তোকমা খেলে আমাদের শরীরের ওজন বাড়ে না বরং এটি আমাদের শরীরের ওজন কমবে সাহায্য করে।

প্রতিদিন কি তোকমা খাওয়া যায়? 

প্রতিদিন কি তোকমা খাওয়া যায় এটি সম্পর্কে ডাক্তাররা কি বলেন। আমরা জানি এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই এটি চাইলে আমরা প্রতিদিন খেতে পারি। প্রতিদিন রাতে তোকমা ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে এটি খাওয়া অনেক ভালো। প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ তোকমা একগ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে খাবেন। তবে মনে রাখবেন এতে কোন প্রকার চিনি মিশ দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন নিয়মিত তোকমা খেলে এটি আমাদের শরীরে উপকার কারণ তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা দূর করে।

তোকমা দানা আসলে কি? 

তোকমা দানা আসলে কি সেটি সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। তোকমা আসলে এক ধরনের কালো রংয়ের বীজ। এই বীজ গুলো তুলসির বীজের চেয়ে বড় এবং কিছুটা হালকা রঙের। সাধারণত এশিয়ার বেশ কিছু কিছু অংশে তাদের মুখের তিক্ত স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া হয়। এই বীজের তিতা ভাব কমাতে কিছুক্ষণ আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর যেকোনো ধরনের তরকারি, ভাজা, সুপ বা শরবত করে খাওয়া হয়।

তোকমা ও চিয়া বীজ কি একই?

তোকমা ও চিয়া বীজ কি একই নাকি এটা অনেকেই বুঝতে পারে না। অনেকেই মনে করেন এই দুটো বীজ একই জিনিস। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল। কারণ চিয়া বীজ এবং তোকমা মোটেও এক জিনিস নয়। চিয়া সিড এখানে মোটেও সাধারণ নয়। তাই এক জায়গায় মানুষ এই বীজকে বিভিন্ন রকম স্থানীয় নামে চেনে। তবে চিয়া সিড এবং তুলসী বীজ দেখতে কিছুটা একই রকম হওয়ায় তোকমাকে স্থানীয় নাম 'তুলসী বীজ' বলা হয়।

ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা একই সাথে খেলে কি হয়? 

ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা একই সাথে খেলে কি হয় সেটি জানেন কি? না জেনে থাকলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়ুন। ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা একই সাথে খেলে কি হয় সেটি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

ইসুবগুলের-ভুষি-ও-তোকমা-একই-সাথে-খেলে-কি-হয়

  • ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা একই সাথে খেলে এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • গ্রীষ্মকালে এটি আমাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
  • রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমার ভূমিকা অনেক। 
  • এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। 
  • এসিডিটি দূর করে। 
  • ত্বকের নানা ধরনের সমস্যায় তোকমা একটি সুন্দর সমাধান।

তোকমা দানার দাম কত? 

তোকমা দানার দাম কত তা অনেকেই জানেন না। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। দিন দিন এই তোকমার জনপ্রিয়তা শুধু আমাদের দেশেই নয় দেশের বাইরেও বেড়েই চলেছে। অনেকেই ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি তোকমার দাম সম্পর্কেও জানতে চান। প্রতি কেজি তোকমা সাধারণত ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

আরোও পড়ুন: জবা ফুলের ৩০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

শেষ কিছু কথা 

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সহ তোকমা দানার উপকারিতা ও অপকারিতা এছাড়াও তোকমা দানা সম্পর্কিত নানা অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানো চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েব সাইটের সঙ্গে থাকুন। ‌

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url