কাসাভার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
কাসাভার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার
জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে কাসাভা খাওয়ার উপকারিতা ও এর চাষ করার
পদ্ধতিসহ কাসাভার আরো নানা অজানা বিষয় সম্পর্কে জানাবো।
কাসাভা মূলত আমাদের দেশে নতুন কোন ফসল নয়। এটি সেই অনেক দিন আগে থেকেই বাংলাদেশে
শিমুল আলু নামে পরিচিত। তবে জায়গা ভেদে একেক জায়গায় একেক জন এটিকে কাঠ আলু
বলেও জানে। চলুন জেনে নিই কাসাভার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
কাসাভার ১০ টি উপকারিতা
কাসাভার উপকারিতা অনেক বেশি। আপনি জানলে অবাক হবেন যে আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় ৫০
কোটি মানুষের প্রধান খাবার এই কাসাভা। এটি শুধু আফ্রিকা মহাদেশের নয় এটি আরো
অনেক দেশের প্রধান খাবার হিসেবে পরিচিত। এটি সর্বপ্রথম মায়া সভ্যতার লোকজন
চাষাবাদ শুরু করেছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে দক্ষিণ আমেরিকায় এই কাসাভার চাষ
শুরু হয়। দীর্ঘ সময় পর আস্তে ধীরে পর্তুগিজদের হাত ধরে এটি ভারতে আসে।
খ্রিস্টান মিশরীয়দের হাত ধরে উনিশ শতকের প্রায় শেষের দিকে এটি বাংলায় চাষাবাদ
শুরু হয়।
কাসাভা বাংলাদেশের খুব বেশি প্রচলিত না হলেও দিন দিন এর পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা
বেড়েই চলেছে। এই গাছের পাতা অনেকটা শিমুল গাছের পাতার মতো দেখতে বলে এটি
বাংলাদেশের অনেক জায়গায় শিমুল আলু নামে পরিচিত। কিছুদিন আগেও এটি খুব বেশি
বাণিজ্যিক আকারে রূপ দেওয়া না গেলেও বর্তমানে বিশ্ববাজারে এটি খুব সহজেই রপ্তানি
করা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে
বাণিজ্যিক আকারে এই কাসাভার চাষ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে বিশেষ করে কুমিল্লা
পঞ্চগড় চট্টগ্রাম সিলেটসহ আরো সব পাহাড়ি এলাকায় এটি ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করা
হচ্ছে।
কাসাভার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ার আরো একটি কারণ হলো এটি পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে
গমের আটার চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিকর। কাসাভাকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে
এটি থেকে খুব ভালো মানের আটার তৈরি করা হয়। এই সকল আঠা দিয়ে রুটি, পাউরুটি,
চিপস এছাড়াও আরো অনেক ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। এটি শুধু মাত্র খাবার হিসেবেই
ব্যবহার করা হয় তা নয় এটি বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কেমিক্যাল এবং গার্মেন্টস
শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পের কাপড়ের মাড় দেওয়ার
কাজে মাড় হিসেবে এই কাসাভার স্টাচ ব্যবহার হচ্ছে।
কাসাভার ১০ টি উপকারিতা
- ভিটামিনের উৎস
- ক্যান্সার প্রতিরোধক
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- হৃদরোগ কমায়
- হজমের সমস্যা দূর করে
- ত্বক সুন্দর করে
- হাড় মজবুত করে
- শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে
- চিনি তৈরিতে
ভিটামিনের উৎস: কাসাভাকে ভিটামিনের দিক দিয়ে সবার শীর্ষে বিবেচনা করা
হয়। কারণ কাসাভায় রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারী প্রায় সকল ধরনের ভিটামিন যা আমাদের
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: কাছাকাছি চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধক বলে বিবেচনা
করেছেন। কারণ নিয়মিত কাসাভার তৈরি খাবার খেলে ক্যান্সার এর মত মরণব্যধি রোগ
প্রতিরোধ করা সম্ভব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কাসাভায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন,
মিনারেল এবং ফাইবার গ্লুটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কাসাভায় থাকা অ্যামাইনো এসিড ও
কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের রক্তে থাকা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
ডায়াবেটিস হওয়ার পিছনে একমাত্র প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ
বৃদ্ধি পাওয়া। তাছাড়া এমন একটি খাদ্য উপাদান যা আমাদের শরীরের রক্তে গ্লুকোজের
পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হৃদরোগ কমায়: বর্তমানে হৃদরোগ যেন প্রতিটা মানুষের নৃত্য সঙ্গী হয়ে
দাঁড়িয়েছে। দিন দিন এ রোগে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিছুটা খাদ্য অভ্যাস
পরিবর্তন করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন আমরা যদি কাসাভা পাউডারের
তৈরি রুটি বানিয়ে খায় তাহলে এটি আমাদের রক্তনালী পরিষ্কার রাখবে যার ফলে সহজেই
রক্ত চলাফেরা করতে পারবে। আর এতে করে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
হজমের সমস্যা দূর করে: কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের
হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কাসাভায় থাকা ফাইবার আমাদের পেটের খাবারকে
সহজে হজম করতে সাহায্য করে যার ফলে বদহজম এবং ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দূরে থাকে।
ত্বক সুন্দর করে: কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন
সি। আমাদের ত্বক সুন্দর রাখতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে। যার ফলে নিয়মিত কাসাভা খেলে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের রেস এবং ব্রণের
সমস্যা দূর হয়।
হাড় মজবুত করে: কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের
হাড় মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের হাত পায়ের ব্যথা জনিত
সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কাসাভার খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ হয় এবং
সহজেই ব্যথা সেরে যায়।
শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে: কাসাভা শুধুমাত্র খাদ্য হিসেবেই আমাদের শরীরের
জন্য উপকারী তা কিন্তু নয় এটি বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কাসাভা থেকে তৈরি স্টাচ বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার
হচ্ছে। কাসাভার স্টাচ টেক্সটাইল, ওষুধ ও রাসায়নিক শিল্পে, সিমেন্টের গুণগত মান
উন্নয়নে, কাগজ শিল্পে, প্রসাধন, আঠা তৈরিতে, রাবার ও সাবান শিল্পে ব্যাপক আকারে
ব্যবহার হচ্ছে।
চিনি তৈরিতে: কাসাভা চিনি তৈরি তো ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন ধরুন স্টাচ,
লিকুইড মল্টোজ এবং গ্লুকোজ সহ অন্যান্য আরো রূপান্তরিত চিনি তৈরির কাজে ব্যবহার
হয়ে থাকে এই কাসাভা।
কাসাভা কি
কাসাভা হলো এক ধরনের গাছের শিকড় যা মাটির নিচে জন্ম নেয়। একে এক ধরনের আলু বলা
হয়। এই আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা। আফ্রিকা মহাদেশের মানুষের অনেক
জনপ্রিয় একটি খাবার হচ্ছে এই কাসাভা। এই মহাদেশের অনেক মানুষ এটি খেয়ে জীবনধারণ
করে থাকে। এটি আফ্রিকা মহাদেশের মানুষের কাছে অনেক প্রিয় একটি খাবার।
আরো পড়ুন: নাপা শাকের ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
বাংলাদেশের সকল জেলায় এ আলুর তেমন কোন পরিচিতি নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র পাহাড়ি
অঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবত এই আলু চাষাবাদ করা হচ্ছে। কাসাভা গাছ চেনার একটি সহজ উপায়
হচ্ছে এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের পাতার মতো। এই গাছের পাতা অনেকটা
শিমুল গাছের পাতার মতো হওয়ায় আমাদের দেশের মানুষ এটিকে শিমুল আলু বলেও নামকরণ
করা হয়। এই শিমুল আলু বা কাসাভার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে manihot esculent. আমাদের
দেশেও এই আলুর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাসাভার চাষ পদ্ধতি
কাসাভার চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব আর্টিকেলের এই অংশ। কাসাভা বর্তমানে আমাদের
দেশে বেস্ট আলোচিত এবং পরিচিত একটি অর্থকারী ফসল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আলু
আন্তর্জাতিক মার্কেটে রপ্তানি করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে বলে বর্তমানে বাংলাদেশের
বিভিন্ন জায়গায় এই আলুর চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে চাষীদের মধ্যেও এ আলু
চাষাবাদ করার আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে অনেকেই জানেন না এই আলু কিভাবে চাষাবাদ করতে হয় সেই সম্পর্কে। আজকের
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কাসাভা বা শিমুল আলুর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে
আলোচনা করব। আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনিও খুব সহজেই কাসাভার
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। যার ফলে আপনি চাইলে খুব সহজেই কাসাভা চাষ করে
লাভবান হতে পারবেন। চলুন জেনে নিই কাসাভা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
কাসাভা চাষ পদ্ধতি নিয়ম
- চাষ পদ্ধতি
- জলবায়ু
- মাটি প্রস্তুত করা
- কাটিং লাগানোর নিয়ম
- কাটিং লাগানোর সময়
- প্রয়োজনীয় সার ব্যবস্থাপনা
- পরিচর্যা
চাষ পদ্ধতি: কাসাভা চাষ করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে এটি চাষ পদ্ধতি করার
নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। না হলে আপনি আপনার কাঙ্খিত মানের ফসল উৎপাদন করতে
পারবেন না। এটি সাধারণত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা
যায়। তাই কাসাভা চাষ করার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে জলবায়ু কেমন সে সম্পর্কে।
তবে মনে রাখবেন কাসাভা যেখানে চাষ করা হয় সেখানে অন্য কোন ধরনের ফসল ফলানো যায়
না
জলবায়ু: কাসাভা চাষাবাদের জন্য অবশ্যই জলবায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। কারণ এটি সব মৌসুমে চাষাবাদ করা যায় না। শুধুমাত্র খরা এবং শুষ্ক মৌসুমের
এটি চাষ করার যায় কারণ কাসাভা হচ্ছে খরা সহনশীল ফসল। এটি ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি
তাপমাত্রায় ফসল ফলানো যায়।
মাটি প্রস্তুত করা: কাসাভা চাষ করার পূর্বে মাটি নির্বাচন করতে হবে। মনে
রাখতে হবে মাটিটি যেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ বা ৩০০ মিটার উপরে হয়। কারণ লবণাক্ত
মাটিতে এটি চাষ করা যায় না। কাসাভা চাষ করার জন্য উর্বর মাটি হতেই হবে এমনটি নয়
এটি যে কোন অনুর্বর বা বেলে মাটিতেও চাষ করা যায়।
কাসাভা চাষ করার জন্য যে মাটিটি নির্বাচন করবেন সেটি কয়েকটি সারিতে ভাগ করে
নিবেন। সারিগুলো তৈরি করার সময় পিঠ আকারে তৈরি করতে হবে এবং কাসাভা গাছ বা এর
কাটিং পিঠের উপর লাগাতে হবে। মনে রাখবেন পিটগুলো যেন জমি থেকে একটু উপরে হয়
তাহলে গাছ শক্তি পাবে এবং ফলন ভালো হবে।
কাটিং লাগানোর নিয়ম: কাটিং লাগানোর সময় প্রতিটা কাটিং এর মাঝে সঠিক
পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কাটিং মাটির নিচে লাগানোর সময় প্রায় ১৫
সেন্টিমিটার গর্ত করে লাগাতে হবে এছাড়াও মনে রাখবেন পিঠ যেন মাটি থেকে প্রায় ৫
সেন্টিমিটার উপরে থাকে। এভাবে সঠিক নিয়ম মেনে লাগালে কাটিং লাগানোর প্রায় ২০
থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নতুন কুশি বের হবে।
কাটিং লাগানোর সময়: কাসাভা চাইলেই আপনি সবসময় লাগাতে পারবেন না। কারণ
এটি শীতকালে চাষ করা যায় না। যেহেতু এটি খরা সহনশীল একটি ফসল সেহেতু এটি আপনাকে
মে অথবা এপ্রিল মাসের মধ্যেই লাগাতে হবে। কারণ এটি অতিরিক্ত শীত বা অতিরিক্ত পানি
কোনটাই সহ্য করতে পারে না। মাটিতে যেন অতিরিক্ত পরিমাণ পানি জমতে না পারে সেই
জন্য মে অথবা এপ্রিল মাসে এই গাছ লাগাতে হবে।
প্রয়োজনীয় সার ব্যবস্থাপনা: কাসাভা এমন একটি ফসল যা চাষাবাদ করতে তেমন
কোন স্যারের প্রয়োজন হয় না। তবে আপনি যদি একটু বেশি ফসল উৎপাদন করতে চান তাহলে
প্রয়োজনে কিছু কিছু স্যার প্রয়োগ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রতি সেক্টরে ২০০
কেজি নাইট্রোজেন, ২০ কেজি ফসফরাস এবং ১৫০ কেজি পটাশিয়াম স্যার প্রয়োগ করতে হবে।
তাহলে আপনি একটু বেশি ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন।
পরিচর্যা: কাসাভা তেমন কোনো স্যারের প্রয়োজন না হলেও অবশ্যই পরিচর্যার
প্রয়োজন আছে। আপনি ভালোমতো পরিচর্যা নিলে তবেই ভালো ফলন ফলাতে পারবেন। এইজন্য
আপনাকে কাটিং লাগানোর পর গাছগুলো যখন একটু বড় হবে তখন প্রতি একমাস পর পর এই
গাছের আশেপাশের আগাছা গুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়ার মাটিগুলো
হালকা করে আলগা করে দিতে হবে। এতে করে মাটির নিচের কাসাভার।
কাসাভায় তেমন কোন রোগ বালাই হয় না বললেই চলে। শুধুমাত্র চাষ করার পূর্বে
রোগমুক্ত কাটিং বাছাই করলেই আর কোন রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু
খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ায় সাপ কিংবা ইঁদুর গর্ত করে আপনার ফসল নষ্ট করছে কিনা।
কারণ গাছের গোড়ায় সাপ কিংবা ইঁদুরের গর্ত থাকলে মাটির নিচে কাসাভার ফলন ভালো
হয় না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাটির মধ্যে কোন ধরনের কোন গর্ত দেখলে তা দ্রুত নিধনের
ব্যবস্থা করতে হবে।
তাহলে আপনি আশানুরূপ ফলন পাবেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে ভালো লাভবান
হবেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এই ফসলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
উপরোক্ত নিয়ম মেনে কাসাভা চাষাবাদ করলে অবশ্যই লাভবান হবেন বলে আশা করা যায়।
কাসাভার পুষ্টি উপাদান
কাসাভার পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি বলে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে
কাসাভার তৈরি যে কোন খাবার এর পুষ্টি উপকারিতার জন্য অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সেলুলোজ যা গমের আটার চেয়ে অনেক গুণ বেশি পুষ্টি
উপাদান। কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট,
শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, গ্লুকোজ, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এছাড়াও
এতে আরো রয়েছে ফাইবার গ্রুমাটিন এবং মিনারেল।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভায় রয়েছে
- প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড এবং কার্বোহাইড্রেট।
- ৩৫ গ্রাম শর্করা
- ২ গ্রাম চর্বি
- ১ গ্রাম আমিষ
- ২০ গ্রাম ফাইবার
- ৭ মিলিগ্রাম আয়রন
- ৩৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম
- ১৪৬ গ্রাম ক্যালরি
- ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ এবং
- ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় কাসাভা আলুকে সারা বিশ্বের মধ্যে তিন নম্বর
স্থানে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ভবিষ্যতে কাসাভা চাষের মাধ্যমে দেশের
অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কৃষকদের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। বর্তমানে বাজারে কাসাভা বিভিন্ন
পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আলুকে
রুটি অথবা বিস্কুট বানিয়ে বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে। এক কথায় বলা যায় কাসাভায়
রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান।
কাসাভা কিভাবে খায়
কাসাভা কিভাবে খায় তা অনেকেই জানেন না। কারণ আমাদের দেশে এর প্রচলন এখনো ভালোমতো
শুরু হয়নি। আর্টিকেলের এই অংশে কাসাভা খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।
কাসাভার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই এখন জানেন। তাই এটি দিন দিন অনেক বেশি
জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কাসাভা বা শিমুল আলু খেতে অনেকটা হালকা মিষ্টি এবং অম্লীয়
স্বাদ যুক্ত খাবার। তবে কোন কোন অঞ্চলে অনেকেই এটিকে মিষ্টি আলু মনে করে থাকে।
এটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় আবার অনেকেই আগুনে পুড়িয়ে হালকা একটু নরম করেও
খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার সবজির সাথে রান্না করে খান।
কাসাভা ভাজি এবং চিপস বানিয়ে খেতেও অনেকেই পছন্দ করেন। এটি আফ্রিকান লোকদের অনেক
জনপ্রিয় একটি খাবার। আফ্রিকানরা এটিকে রুটি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের খাবার
তৈরি করে খান। অনেকেই আবার কাসাভা দিয়ে তৈরি করা মিষ্টি খেতে অনেক পছন্দ করেন।
বিশ্বের অনেক ভালো ভালো দেশে কাসাভার জুস, জ্যাম বা ওয়াইন তৈরি করে খান। এক এক
দেশে এটিকে একেক নিয়মে খেয়ে থাকেন। কাসাভা অত্যন্ত উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি
খাবার।
কাসাভা পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
কাসাভা পাউডার কোথায় পাওয়া যায় তা জানাবো এখন আপনাদের। কাসাভা বর্তমানে
বাংলাদেশে ও এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে এদেশের অনেক কৃষকেরাই এটি চাষ শুরু
করেছেন। আপনি জানলে অবাক হবেন আমাদের দেশে এবছর প্রায় ২৮ হাজার টন কাসাভা
সংরক্ষণ করেছেন বাংলাদেশের সরকার। বর্তমানে আমাদের দেশের রাঙামাটি, সিলেট,
টাঙ্গাইল, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা সহ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই কাসাভা চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ সকল জেলা থেকে প্রাণ
কোম্পানির এবছর প্রায় ৩০ হাজার টন কাসাভা কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আরো পড়ুন: ত্রিফলার ২৫ টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
প্রাণ কোম্পানির বিভিন্ন এলাকা থেকে এই কাসাভা সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত এর
মাধ্যমে কাসাভা পাউডার আকারে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। তাই আপনি এখন চাইলেই
কাসাভা পাউডার আপনার হাতের কাছে থাকা যেকোনো বাজারে অথবা মার্কেটে পেয়ে যাবেন।
এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজে কাসাভা পাউডার বিক্রি করা
হচ্ছে। আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও এটি সংগ্রহ করতে পারেন।
কাসাভা খেলে কি ওজন বাড়ে
কাসাভা খেলে কি ওজন বাড়ে এটি সম্পর্কে চলুন জেনে নিই বিশেষজ্ঞরা কি বলে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি যা
অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হলে আমাদের ওজন কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে রয়েছে
উচ্চ মানের ফাইবার যার ফলে এটি খেলে আপনার সারাদিন ক্ষুধা কম লাগবে। তাই সেই দিক
থেকে বিবেচনা করতে গেলে এটি পরিমিত মাত্রায় খেলে ওজন কমাতে সক্ষম। কিন্তু বেশি
মাত্রায় খেলে এটি ওজন বাড়িয়ে দেবে।
কাসাভা কি নিরাপদ
কাসাভা কি নিরাপদ কিনা এটি নিয়ে অনেকেই অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন। আসলে কাসাভার
উপকারিতা অনেক। বর্তমানে ময়দার পরিবর্তে কাসাভার পাউডার ব্যবহার করা অনেক বেশি
স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ কাসাভার ময়দায় রয়েছে ক্যালোরি, চর্বি এবং চিনির পরিমাণ
অনেক কম। যার ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং অনেক বেশি নিরাপদ।
কাসাভা কি স্বাস্থ্যকর
কাসাভা কি স্বাস্থ্যকর কিনা সেটি জেনে থাকা প্রত্যেকের উচিত। এটি অন্যান্য
খাবারের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন,
খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কাসাভাকে ফ্লেক্স
ভিটামিন সি এর একটি খুব ভালো উৎস বলা যায় যা আমাদের ইউনিয়ন সিস্টেমকে উন্নত করে
থাকে। এছাড়াও এই ভিটামিন সি আমাদের রক্তনালী, হাড় এমনকি তরুণাস্থির গঠন
রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই এক কথায় বলা যায় কাসাভা আমাদের
জন্য স্বাস্থ্যকর।
কাসাভার আটা কতদিন খাওয়া যায়
কাসাভার আটা কতদিন খাওয়া যায় সিটি জেনে আটা সংরক্ষণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের
জন্য বেশি নিরাপদ। কাসাভার আটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এটা আমরা
সবাই জানি। তবে এটি সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা জরুরী। সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হলে
এটি প্যাকেট না খোলা হলে প্যাকেটের গায়ে মদ্রিত তারিখের সময় থেকে দুই বছর
পর্যন্ত এটি ভালো থাকে। আর প্যাকেট খোলা হলে এটি প্রায় এক বছরের মধ্যে ব্যবহার
করতে হবে। তাহলে এর গুণগত মান ভালো থাকবে। সঠিকভাবে সঠিক নিয়ম মেনে সংরক্ষণ না
করলে এটি সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যাবে এবং এর গুণগত খারাপ হবে।
কাসাভার আটা বেশি খেলে কি হয়
কাসাভার আটা বেশি খেলে কি হয় সিটি খুব ভালোভাবে জেনে তারপর এর আটা খাওয়া শুরু
করবেন। কারণ কাসাভায় রয়েছে সায়ানোজেনিন গ্লাইকোসাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক
উপাদান। যা আমাদের শরীরে সায়ানাইড ছেড়ে দিতে পারে। আর এই সাজানোজেনিন
গ্লাইকোসাইট বেশি পরিমাণ খেলে এটি সায়ানাইড বিষক্রিয়ার ঝুঁকি আমাদের শরীরে
বাড়াতে পারে। তাই কাসাভার আটা খুব বেশি পরিমাণ খাওয়া ঠিক নয়।
কাসাভার পাতা কি রক্তচাপ কমায়
কাসাভার পাতা কি রক্তচাপ কমায় কিনা সিটি নিয়ে আলোচনা করব আর্টিকেলের এই অংশে।
কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরের তরল গুলোকে বিভিন্ন
ধরনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের হৃদস্পন্দন
এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ
রক্তচাপের রোগীদেরকে পটাশিয়াম সিস্টোলিক খাওয়ালেউচ্চ রক্তচাপ এর পরিমাণ কমতে
সহায়তা করে।
কাসাভা খেলে কি পেট খারাপ হয়
কাসাভা খেলে কি পেট খারাপ হয় কিনা তা অনেকেই জানতে চান। আসলে অতিরিক্ত মাত্রায়
কাসাভা খেলে অনেক সময় পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি কেমন কি ডায়রিয়া সমস্যা হতে
পারে। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকের মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা এমনকি খিচুনি
সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কাসাভা খাওয়ার সময় এটি পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে।
খুব বেশি মাত্রায় রেখে খেলে পেট খারাপের সমস্যা দেখা দিবে।
কাসাভার মূল শুকানোর উপায়
কাসাভার মূল শুকানোর উপায় অনেক সহজ। পশু পাখির খাদ্যের জন্য যে সমস্ত কাসাভার
শিকড় প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় সেগুলো প্রাকৃতিক সৌর বিকরণ ব্যবহার করে শুকানো
হয়ে থাকে। শুকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে জলবায়ুর পরিস্থিতি এবং ভেরিয়েবলের
মধ্যে চিপের আকার এবং লোডিং এর হার ঠিকঠাক আছে কিনা। অনেক সময় কনক্রিটের মেঝেতে
ও এটি শুকানো হয়ে থাকে। আরো দ্রুত শুকাতে চাইলে এটি যোক ট্রেতে শুকাতে দিতে হবে।
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে কাসাভার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি সহ এর আরো অনেক অজানা
বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক
উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে
থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url