গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ২৬ টি উপকারিতা ও ১০ টি অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাসহ জাফরান খাওয়ার আরো নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
জাফরান এমন একটি জিনিস যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করেন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা। শুধু গর্ভবতীদের জন্য নয় এটি প্রতিটা মানুষের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ২৬ টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। জাফরান একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য এতটাই উপকারী যে এটি বলে শেষ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রচুর পরিমাণ যত্নের প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে যেটি বেশি খেয়াল করতে হয় সেটি হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা। কারণ গর্ভবতী মা পরিপূর্ণ পুষ্টি পেলে তবে গর্ভে থাকা সন্তানটি সম্পূর্ণরূপে পুষ্টি পাবে এবং একটি সুস্থ সুন্দর বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে।
আরোও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ১৭ টি উপকারিতা ও ৫টি অপকারিতা
গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণে জাফরান একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান। গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে গর্ভবতী মেয়েদের নানা ধরনের সমস্যা সমাধান হয়, পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় এবং গর্ভে থাকা বাচ্চা সুস্থ ও সুন্দর থাকে। একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক এবং শারীরিক দিক ঠিক রাখতে জাফরান প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ২৬ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো, চলুন জেনে নিই।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ২৬ টি উপকারিতা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
- মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে রাখে
- হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
- ব্যথা কমায়
- ভালো ঘুমের সহায়ক
- সকালের অসুস্থতাকে শান্ত করে
- হজমে সহায়তা করে
- ক্রাম্পস থেকে মুক্তি পান
- হার্টের অসুখ থেকে রক্ষা করে
- আয়রনের স্তর বৃদ্ধি করে
- শ্বাস যন্ত্রের অসুস্থতা নিরাময় করে
- চুল পড়া কমায়
- ত্বকের সমস্যা নিরাময় করে
- এলার্জির কারণে অস্বাভাবিকভাবে জমাট বাধা এড়াতে সহায়তা করে
- মাড়ির ব্যথার রোধ করে
- চোখের সমস্যা সমাধান করে
- শিশুর চলাচলের অভিজ্ঞতা পেতে সাহায্য করে
- স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
- হাড় ঠিক রাখে
- সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেই
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধে
- গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- অকাল প্রসব এর ঝুঁকি কমে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: গর্ভাবস্থায় অনেক মেয়েদের হার্টবিটের পরিমাণ ২৫% গতিতে বেড়ে যায় যার ফলে রক্তচাপ উঠানামা করতে দেখা যায়। এ অবস্থায় জাফরান গর্ভবতী মহিলাদের এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ জাফরানের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ক্রোসটিন যা গর্ভবতীদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে রাখে: গর্ভাবস্থায় প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের মুহূর্তে মুহূর্তে মুড সুইং হতে দেখা যায়। কখনো দেখবেন প্রচন্ড ঘ্যানঘ্যানের, কখনো প্রচন্ড আবেগী বা সংবেদনশীল, কখনো বা অনেক রাগী এরকমভাবে প্রতিমুহূর্তে মুড সুইং হতেই থাকে। এই সমস্যার একটি বেশ কার্যকরী সমাধান হচ্ছে জাফরান। কারণ জাফরানের রয়েছে অ্যান্টি ডিপ্রেশন উপাদান যা গর্ভবতী মহিলাদের মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। যার ফলে গর্ভবতী মহিলারা জাফরান খেলে তাদের হরমোন সেরোটোনিন তৈরি হয়। এটি গর্ভবতীদের মেজাজ উন্নত করতে সহায়তা করে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: গর্ভকালীন সময় হৃদযন্ত্রের ওপর প্রচুর পরিমাণ চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু জাফরানের অসাধারণ গুণাবলীর কারণে এটি গর্ভাবস্থায় হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
ব্যথা কমায়: জাফরানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা নাশক উপাদান। যা গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের পেট ব্যথা, হাত ব্যথা, পিঠ ব্যথা পা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ভালো ঘুমের সহায়ক: গর্ভকালীন সময় মহিলাদের একটি সাধারন সমস্যা হচ্ছে ঘুম কম হওয়া। এ সময় তাদের মধ্যে নানা ধরনের উদ্দীপনা কাজ করে এবং নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার ফলে ঘুম হতে চায় না। কিন্তু গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত জাফরান খেলে এটি তাদের ঘুম ভালো হতে সহায়তা করে।
সকালের অসুস্থতাকে শান্ত করে: একজন গর্ভবতী মহিলার মর্নিং সিকনেক অত্যান্ত বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। কারণ গর্ভবতীদের সকাল হলেই বমি এবং বমি বমি ভাবের ফলে তাদেরকে নিস্তেজ এবং অলস করে দেয়। এই অবস্থায় তাদের জন্য জাফরানের চা অনেক উপকারী। জাফরের চা সকালের বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরার সমস্যা সমাধানে অনেক বেশি কার্যকরী।
হজমে সহায়তা করে: গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা এবং হজম কম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকদের মতে জাফরান পাচনতন্ত্রের রক্ত প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে যার ফলে গর্ভবতীদের বিপাক প্রবাহ বেড়ে যায় যার ফলে হজমে সমস্যা দূর হয়। জাফরানে থাকা উপাদান পাচনতন্ত্রের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ গঠনে প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে। আর এই আবরণের স্তরটিকে গ্যাস্টোইনস্টাইনাল এসিডিটির সমস্যা প্রশমিত করে এবং ফোলা ভাব কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ক্রাম্পস থেকে মুক্তি পান: গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগের দিকে হালকা হালকা থেকে শুরু করে মারাত্মক অবস্থা পর্যন্ত ক্রাম্পস এবং সমস্যা হতে দেখা যায়। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের হাড় এবং পেশিগুলো ক্রমবদ্ধমান ভাবে শিশুকে উপস্থাপনের জন্য প্রসারিত এবং স্থানান্তরিত হতে থাকে। এ সময় পেট এবং শ্রেণীর জয়েন্টগুলো ব্যথা হয় এবং ক্রাম্পের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জাফরান প্রাকৃতিকভবে ব্যথা উপশম এ কাজ করে। যার ফলে শরীরের পেশিগুলো সিথিল হয় এবং পেটের ব্যথা অনেক উপশম করে। এছাড়াও এটি গর্ভকালীন খিঁচুনি প্রশমিত হতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
হার্টের অসুখ থেকে রক্ষা করে: গর্ভকালীন সময় মেয়েরা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে বেশি ভোগে। কারণ এই সময় মেয়েদের ক্ষুধা বেশি লাগে আর এই ক্ষুধা মেটানোর জন্য তারা অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করে। আর এই অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গুলো তাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের মধ্যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি থেকে মুক্তি দিতে পারে জাফরান। জাফরান রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রোসটিন এবং পটাশিয়াম যা আমাদের দেহের ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
আয়রনের স্তর বৃদ্ধি করে: গর্ভকালীন সময় চিকিৎসকরা গর্ভবতী মাকে লৌহ জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কারণ একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণ লোহার প্রয়োজন হয়। জাফরান এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। আর এ আয়রন তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং লোহিত রক্ত কণিকা গঠনে সহায়তা করে।
শ্বাস যন্ত্রের অসুস্থতারে নিরাময়ক: গর্ভবতী মহিলার মধ্যে অনেক মহিলায় হাঁপানিতে আক্রান্ত থাকে। এ সকল হাঁপানিতে আক্রান্ত গর্ভবতী রোগীদের ফুসফুস এবং শ্বাসনালীতে উপস্থিত যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে জাফরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা নাকের শাসনালীকে প্রসারিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি হাঁপানি রোগীদের ফুসফুসে ফোলা ভাব এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে তারা সুন্দরভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারেন।
চুল পড়া কমায়: গর্ভাবস্থায় একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে চুল পড়ে যাওয়া। কারণ এই সময় হরমোন প্রচুর উঠানামা করে যার ফলে চুল পড়ে যায়। জাফরান এমন একটি উপাদান যা গর্ভবতী মহিলাদের চুল পড়া কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাফরানের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং চুল পড়া কমায়।
ত্বকের সমস্যা নিরাময় করে: অনেক গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে গর্ভকালীন সময় বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি মেলা সময় এমনকি ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। যদি কোন গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাফরান খান তাহলে তাদের এই সমস্যাগুলো দূর হবে। কারণ জাফরানের থাকা উপাদান রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে যার ফলে রক্তের অশুদ্ধতার কারণে ত্বকের সৃষ্ট রোগ গুলো সমাধান করতে সাহায্য করে।
এলার্জির কারণে অস্বাভাবিকভাবে জমাট বাধা এড়াতে সহায়তা করে: একজন গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। তাই তারা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বা অ্যালার্জি কবলে খুব সহজেই করতে পারে। যেহেতু জাফরানের রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য তাই গর্ভবতী মা এটি নিয়মিত খেলে হাঁচি-কশি এলার্জি সহ নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের শরীরের জ্বর হলে জাফরান ও চন্দনের পেস্ট জ্বর কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাড়ি ব্যথার রোধ করে: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় হরমোনের তীব্রতার কারণে দাঁতের মাড়ি ব্যথা বা দাঁতের মাড়িতে ঘা হতে দেখা দেয়। এ সকল সমস্যা সমাধানে জাফরান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মাড়ি ব্যথা হলে মাড়ির উপর আস্তে আস্তে জাফরান ম্যাসাজ করলে খুব সহজে স্বস্তি পাওয়া যায়। জাফরান মাড়ির ঘা এবং সংবেদনশীলতা দূর করতে সাহায্য করে।
চোখের সমস্যা সমাধান করে: জাফরানে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভকালীন মায়েদের দৃষ্টিশক্তি প্রখার করতে সহায়তা করে। গর্ভকালীন সময় যদি গর্ভবতী মা নিয়মিত জাফরান খান তাহলে তাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক বেশি উন্নত হয় এবং ছানি দূর হয়।
শিশুর চলাচলের অভিজ্ঞতা পেতে সাহায্য করে: আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্যমতে নিয়মিত গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে এটি গর্ভবতী মায়ের দেহে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলে যার ফলে গর্ভে থাকা শিশুটি নড়াচড়া করে। আর গর্ভে থাকা শিশু নড়াচড়া করলে গর্ভবতী মায়ের মন অনেক বেশি আনন্দিত থাকে।
স্বাস্থ্য ঠিক রাখে: জাফরানে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে যার ফলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি নিয়মিত পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে আপনার হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং চর্বিহীন ওজন তৈরি হবে। জাফরান এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড, নিয়াসিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যার ফলে জাফরানকে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য আদর্শ ভেষজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হাড় ঠিক রাখে: একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে তা একজন শিশুর বিকাশের জন্য সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা হয় যার ফলে গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ হারে ক্যালসিয়াম কমে যায়। শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং শরীরের হাড় গুলো ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভে থাকা হাড় ও দাঁত এর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গর্ভবতী মাকে নিয়মিত জাফরান খেতে হবে।
সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়: জাফরানের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিফাঙ্গাল এবং ভিটামিন সি। এগুলো আমাদের শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দিতে জাফরানের জুড়ি মেলা ভার।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: জাফরান এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিফাঙ্গাল, এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং ম্যাঙ্গানিজ উপাদান যা একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: জাফরান এমন একটি খাদ্য উপাদান যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। জাফরানের রয়েছে কেরোটিন নামক একটি উপাদান যাকে পুরোসিন বলা হয়। এই উপাদানটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কোষ যেমন ধরুন লিউকোমিয়া, ওভারিয়ান কার্শিয়ানামো, ক্লোন এন্ডোম কার্শিয়ানমো ইত্যাদি ধ্বংস করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে নিয়মিত জাফরান খেতে পারেন।
গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে: জাফরানের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এন্টি ইনফ্লামেটরি অ্যান্টিক আনসার এবং হাইপারলিপারডিম ইত্যাদি উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আপনি নিয়মিত এক গ্লাস পানিতে কয়েকটি জাফরানের সুতা রেখে তা পান করুন। এটি আপনার হজমে সহায়তা করবে এবং পেট পরিষ্কার করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। যার ফলে আপনার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হবে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার থেকে দেখা গেছে নিয়মিত জাফরান খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। জাফরানে বিভিন্ন চিকিৎসকরা পারকিনসন এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার মত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহার করে থাকেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: একজন গর্ভবতী মায়ের অত্যন্ত জরুরি বিষয় হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে বেশি থাকা। কারণ গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এ সময় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগ জীবাণু ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সহ আরো নানা ধরনের জীবাণুতে শরীর আক্রমণ করে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাফরান গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। কারণ জাফরানের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাস এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গর্ভবতী মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
অকাল প্রসব এর ঝুঁকি কমে: গর্ভধারণের প্রায়ই ৫ মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই জাফরান খাওয়া শুরু করবেন। কারণ এই সময় গর্ভাবস্থা স্থিতিশীল থাকে যার ফলে অকাল প্রসব বা অন্যান্য ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে পাঁচ মাসের শুরু থেকেই জাফরান খাওয়া শুরু করলে এইসব ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ১০ টি অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ১০ টি অপকারিতা সম্পর্কে প্রতিটা গর্ভবতী নারীর জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমরা সবাই জানি গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি তাই জাফরান খাওয়ার অপকারিতা গুলো বিবেচনা না করেই এটি খাওয়া শুরু করি। যার ফলে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি থেকে এড়াতে হলে অবশ্যই জাফরান খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এটি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে হবে।
আমরা জানি জাফরান একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। কিন্তু কখনো কখনো এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে সঠিকভাবে জাফরান খেতে হবে। তাহলে জাফরান থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ১০ টি অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ১০টি অপকারিতা সম্পর্ক।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ১০টি অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া উপকারী বলে আপনি যদি এটি গর্ভবতী হওয়ার প্রথম থেকেই খেতে লাগেন তাহলে এটি আপনার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ প্রথম দিকে জাফরান খেলে গর্ভপাত হওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই জাফরান খাওয়া শুরু করার পূর্বে মনে রাখবেন এটি প্রথম দিকে নয় বরং পঞ্চম মাসের পর থেকে খাওয়া শুরু করতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণ জাফরান খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি উপকারের বদলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে যার ফলে জন্ডিস, রক্তক্ষরণ, ডায়রিয়া, প্রসাবে রক্ত যাওয়া ইত্যাদির মত মারাত্মক কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান খেলে এটি অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের জরায়ুর উদ্দীপনা বাড়িয়ে তোলে যার ফলে অকাল প্রসব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- জাফরান খাওয়া উপকারী বলে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া শুরু করলে গর্ভবতী মেয়েদের শরীরের উষ্ণতা অনেক বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে জরায়ু সংকোচন হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এজন্য জাফরান খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন।
- জাফরান গর্ভবতী মেয়েদের মুড সুইং স্থির ও শান্ত রাখে বলে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে মাথা ঘোরা এবং মাথা ব্যথার মতো সমস্যা অনেক বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান খেলে এটি গর্ভবতী মহিলাদের বমি বমি ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার মত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথেই জাফরান খাওয়া বন্ধ করবেন এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
- জাফরান খাওয়ানোর পূর্বে গর্ভবতী মায়ের এলার্জি সমস্যা রয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হয়ে তারপর জাফরান খাওয়াবেন। কারণ শরীরে এলার্জি থাকলে অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান খেলে অনেক সময় নাক, কান, চোখ চুলকানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের হাত পায়ের সংবেদনশীলতা হারিয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান খেলে এটি আমাদের শরীরে উপকারের বদলে বিষক্রিয়া তৈরি করে যার ফলে চোখ ত্বক সেললেসাজিলি হলুদ হয়ে যায় এছাড়াও নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, রক্তযুক্ত ডায়রিয়া হয়, ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ে, অসাড়তা ইত্যাদির মত অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এইজন্য জাফরান খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিশেষ ধরনের সতর্কতা মেনে তারপর এটি খেতে হবে।
- ওলিয়া, লোলিয়াম, সাসোলা ইত্যাদি জাতীয় এলার্জি যেসব খাবারের রয়েছে সেই খাবারগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে এবং সেই খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো খেলে এতে আপনার শরীরে এলার্জির পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।
- জাফরান কেনার পূর্বে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেভেল এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিশ্চিত হয়ে তারপর কিনবেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া জাফরান খেলে গর্ভবতী মায়ের ক্ষতি হতে পারে।
- জাফরান মূলত অনেক দামী একটি উপাদান। তাই এতে ভেজাল থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। জাফরান কিনার পূর্বে অবশ্যই রং দেখে তারপর জাফরান কিনবেন। কারণ জাফরানের মূল্য নির্ধারণ করা হয় মূলত রংয়ের ওপর নির্ভর করে। জাফরান কেনার সময় যদি দেখেন এটি সাদা হয়ে আছে তাহলে বুঝবেন জাফরানগুলো নকল। আর এই নকল জাফরান খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই জাফরান কিনার পূর্বে অবশ্যই উপরের আলোচিত এই লক্ষণগুলো মিলিয়ে তারপর কিনবেন।
জাফরান কি?
জাফরান কি তা জানেন কি? জাফরান হলো আসলে ক্রোকাস সেভিটাস নামক ফুলের ভেতরে থাকা শুকনো শিস বা গর্ভমূল। এই ফুলে সাধারণত সুতোর মতো একটি কাঠামো হয় যা ফুলের কেন্দ্রস্থলে পরাগ ধরে থাকে। একটি জাফরান গাছ সাধারণত প্রায় চারটি ফুল বহন করে। এই ফুলগুলো থেকে স্টাইলিশ এবং ক্রিমশন রং এর শিস গুলো সংগ্রহ করে শুকানো হয়। একটি ফুল থেকে কেবলমাত্র তিনটি সুতা পাওয়া যায়।
আরোও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা
অর্থাৎ এক পাউন্ড জাফরান তৈরি করতে প্রায় ১৪০০ মত জাফরানের সুতার প্রয়োজন হয়। অনেক পরিশ্রম এর মাধ্যমে এই জাফরানের সুতার ফসল কাটা হয়। যার ফলে এটি সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ব্যয়বহুল মসলা হিসেবে পরিচিত। এই মসলাটি মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। এছাড়াও ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এই দুই অঞ্চলে এই ফুলটির চাষাবাদ হয়। বিদেশি এই মসলাটিকে ভারতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন ধরুন স্যাফরান, কেশর, কাউং, জাফরান বা কুমকুমাপুভুর।
জাফরানকে 'গোল্ডেন স্পাইস'নামে নামকরণ করা হয়েছে, কারণ এটি যে শুধুমাত্র আমাদের খাবারের সুগন্ধ বা স্বাদ এনে দেয় তা কিন্তু নয় এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। খাবার হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে আমাদের শরীরকে যেকোনো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে শরীরে একটি প্রতিরক্ষামূলক আবরণ গঠন করে। জাফরান যুক্ত খাবারগুলো সাধারণত হলুদ এবং কমলা রঙের হওয়ায় এতে উপস্থিত কেরোটিনয়েড পিগমেন্ট ক্রসটিনের ফলাফল।
জাফরানের পুষ্টি উপাদান
জাফরানের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানাবো আপনাদের আর্টিকেলের এই অংশে। জাফরান মূলত একটি অনেক মূল্যবান মসলা যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই মসলাটি মূলত তার গন্ধ এবং রঙের জন্য বিভিন্ন জিনিসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তবে এটি শুধু রং ও স্বাদের জন্যই নয় এর পুষ্টি উপকারিতার জন্য এ মসলাটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জাফরানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল সহ আরো নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান যা গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য এবং গর্ভে থাকা বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। চলুন জেনে নিন আর্টিকেলের প্রধান প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলো সম্পর্কে।
১০০ গ্রাম জাফরানের পুষ্টি উপাদান
- ফ্যাট ৬ গ্রাম
- সোডিয়াম ১৪৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১৭২৪ মিলিগ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১.৬ গ্রাম
- ফাইবার ৩.৯ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম এবং
- প্রোটিন ১১ গ্রাম
বিভিন্ন ভিটামিনের কার্যকারিতা
- ভিটামিন
- মিনারেল
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- ফাইবার
ভিটামিন: জাফরানকে ভিটামিনের একটি অন্যতম প্রধান উৎস বলা হয়। কারণ জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ভিটামিন এ আমাদের চোখের এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই এটি একজন গর্ভবতী মায়ের চোখ ও ত্বক ভালো রাখতে বেশ উপকারী। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের মেটাবলিজম এবং শক্তি উন্নয়নের ভালো উৎস। এটি একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে শক্তির উন্নত করে। তাই গর্ভবতীর বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে জাফরান গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
মিনারেল: জাফরানকে মিনারেলের একটি অন্যতম উৎস মনে করা হয়। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এতে থাকা পটাশিয়াম গর্ভবতীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে গর্ভবতী মাকে সুস্থ রাখে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মায়ের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের শক্তির যোগান দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও জাফরানে থাকা ম্যাগনেসিয়াম গর্ভবতী মায়ের পেশী ও স্নায়ুর কার্যক্রকে আরো বেশি সক্রিয় করে তোলে এবং সবশেষে এতে থাকা আয়রন একজন গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর করতে দারুন কার্যকর। অতএব একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য মিনারেল কতটা উপকারী তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: জাফরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে থাকা ক্রোসিন, ক্রোসেটিন এবং সালফার জাতীয় প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান। জাফরানে থাকা এই সমস্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই সমস্ত এন্টিঅক্সিডেন্টগুলো গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো একজন গর্ভবতী মাকে সুরক্ষা দেয় এবং গর্ভে থাকা সন্তানের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ফাইবার: জাফরানে ফাইবারের পরিমাণ কিছুটা হলেও কম। তবুও জাফরানে থাকা ফাইবার গর্ভবতী মহিলার পাঁচক স্বাস্থ্য উন্নয়ন করে। ফাইবার পাচক প্রক্রিয়াকে উন্নয়ন করে গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এক কথায় পাঁচক তন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জাফরানের ভূমিকা অনেক।
নানা পুষ্টি উপকারিতায় ভরপুর এই জাফরান গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভে থাকা সন্তানের পুষ্টি উপকারিতায় নানা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার একটি বিশেষ অংশ হিসেবে পরিচিত হতে পারে। শুধু মনে রাখবেন জাফরান ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি সতর্কতা মেনে চললেই এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভবতীরা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে তারপর খাবেন।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া কি নিরাপদ কিনা এটা প্রতিটা গর্ভবতীর জেনে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভেবে চিন্তে খেতে হবে। কোন গর্ভবতী যদি গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার কথা চিন্তা করেন তাহলে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া অনেক উপকারী। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং ঔষধি গুনাগুন গর্বে থাকা সন্তানের এবং গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন নানা সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।
তবে গর্ভাবস্থায় জাফরান খেতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে খেতে হবে। সতর্কভাবে না খেলে অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রেস ব্যথা যন্ত্রণা মেজাজ দলমল এছাড়াও গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে অল্প মাত্রায় জাফরান খেলে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু জাফরান প্রচুর পরিমাণে খেলে এটি সংকোচনের সূত্রপাত এবং অকাল প্রসব এর মত বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়ম মেনে তবেই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার পূর্বে কয়েকটি সতর্কতা মেনে চললেই হবে। যেমন ধরুন:
- গর্ভধারণের পর প্রায় পঞ্চম মাস শুরু হওয়ার পর জাফরান হওয়া শুরু করবে। তাহলে গর্ভাবস্থায় স্থিতিশীলতা এবং অকাল প্রসাব হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
- যে কোন রান্নায় বা যেকোনো খাবারের সাথে শুধুমাত্র দুই থেকে তিনটি জাফরানের সুতা ব্যবহার করবেন। কারণ এর বেশি এটি ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
- জাফরান কিনার আগে অবশ্যই ভালো জায়গা থেকে দেখে শুনে বুঝে তারপরেই কিনবেন। নাহলে জাফরানের কৃত্রিম রং এবং অসুদ্ধির ফলে গর্ভবতীরা কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে মেনে তারপর জাফল হওয়া উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের অল্প একটু ভুলের কারণেও অনেক সময় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। জাফরান টাও ঠিক তেমনি। সঠিক মাত্রায় নিয়ম অনুযায়ী খেলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী আবার নিয়ম মেনে না খেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে। আমরা জানি যে কোন জিনিস পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উত্তম আর বেশি খেলে সেটি উপকারের বদলে ক্ষতিটাই বেশি করে ।
এরকম ক্ষতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অবশ্যই গর্ভবতী মাকে নিয়ম মেনে তারপর জাফরান খেতে দেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
জাফরান সাধারণত দুইভাবে খাওয়া হয়
- জাফরান ভেজানো এবং
- জাফরান চূর্ণ
জাফরান ভেজানো এবং জাফরান চূর্ণ এই দুইটি আপনি আবার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন নিয়মে খেতে পারেন। আমরা আপনাদের দুইভাবেই জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অংশে জানাবো।
জাফরান ভেজানো: জাফরান খুব সহজেই আপনি চাইলে আপনার রান্নার রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারবেন। জাফরান ব্যবহারের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে রান্নায় ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে আপনি জাফরানের সুতা গুলো আস্তে আস্তে করে সাবধানে বের করে পানিতে কিংবা দুধের মধ্যে দিয়ে তরকারির ঝোলে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি রান্নার কাজে ব্যবহার করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন যে কোন রেসিপিতে দেওয়ার পূর্বে এটিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেই ভিজিয়ে রাখবেন। চলুন জেনে নেই ভেজানো যখন আপনি কোন কোন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খুব সহজেই খেতে পারেন সে সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে যাবেন যেন পানি দিয়ে চা তৈরি করে প্রতিদিন খেলে এতে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা বোধ এবং সকালের বমি বমি ভাব দূর হয়। এছাড়াও অলসতা এবং দুর্বলতা কেটে যায়।
- গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য অথবা শিশুর মানসিক বিকাশ সঠিক রাখতে এবং শারীরিক গঠন তৈরির জন্য খনিজ উপাদান হিসেবে গর্ভাবস্থায় পাঁচ মাসের পর থেকেই দুধের সাথে পেস্তা বাদাম বাদাম কিংবা বিভিন্ন ধরনের সাথে জাফরানের সুতো বের করে ভিজিয়ে রেখে পিছে অথবা ব্লেন্ড করে খেতে পারেন। একজন গর্ভবতী মহিলা এই খাবারটি সকালে অথবা সন্ধ্যায় যে কোন সময় খেতে পারবেন।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের হজমে সমস্যা আছে দেখা দিলে কয়েকটি জাফরানের সুতা বের করে এক গ্লাস পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে পারে। হজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- গর্ভাবস্থায় কোন গর্ভবতী মহিলার জ্বর হলে জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য জাফরান খুব ভালো কাজ করে। সেক্ষেত্রে জাফরান ও চন্দন একসাথে ভালোভাবে বেটে পেস্ট বানিয়ে কপালে লাগালে জ্বর সেরে যায়।
- গর্ভাবস্থায় দুধের সাথে প্রতিদিন এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খেলে গর্ভবতীদের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি হয় এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর হয় এবং হরমোনের উদ্দীবিত হতে সহায়তা করে।
জাফরান চূর্ণ: জাফরান আপনি চাইলেই বিভিন্ন ধরনের রান্নার রেসিপিতে খুব সহজেই খাবারের স্বাদ এবং খাবারকে কালারফুল করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এইজন্য আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না, জাফরানের সুতোগুলো আঙ্গুল দিয়ে ছোট ছোট করে ভেঙে খাবারের মধ্যে ব্যবহার করলেই পারবেন। এছাড়াও আপনি যদি জানতে চান জাফরান চূর্ণ কোন কোন খাবারে ব্যবহার করবেন সেই ক্ষেত্রে আপনি বিশেষত পায়েস, বিরিয়ানি, সুপ, সালাদ, লস্যি, ফালুদা বা বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার কে আরো বেশি কালারফুল করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
- এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধের সঙ্গে এক চিমটি জাফরান চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে শরীরের যেকোনো ব্যথা দূর হয়। পেইনকিলার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। শরীরের ব্যথা থেকে শুরু করে দাঁতের মাড়ীর ব্যথা এছাড়াও জয়েন্টের ব্যথাতেও কেউ দারুন কার্যকরী।
- এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধের সাথে এক চিমটি জাফরান চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে গর্ভবতী মহিলাদের নিদ্রা জনিত সমস্যা দূর হয়।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার সময়
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কারণ গর্ভাবস্থায় সঠিক সময়ই জাফরান খেলে এটি গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা শিশু সবার জন্যই উপকারী। গর্ভবতীদের রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে দুধের সাথে অথবা চায়ের সাথে জাফরান মিশিয়ে খাওয়া উচিত। রাত্রে জাফরান খেলে ঘুমের মান অনেক বেশি উন্নত হয় এবং রাতে পাঁচক তন্ত্রের কার্যক্রম সঠিক গতিতে পরিচালিত হয় যার ফলে হজম ভালো হয়। তাই রাতে ঘুমানোর পূর্বে গর্ভবতীদের জাফরান খাওয়া উচিত। জাফরান খাওয়ার পূর্বে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তারপর কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান ও দুধ খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় জাফরান ও দুধ খাওয়ার নিয়ম অনেক সহজ। খুব সহজেই গর্ভাবস্থায় আপনি চাইলে জাফরান ও দুধ খেতে পারে। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের গর্বাবস্থায় জাফরানের দুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলবে। চলুন জেনে নিই।
- উষ্ণ এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিন। মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশে গেলে সেটি আপনি খেতে পারেন।
- জাফরান ও দুধ খাওয়ার আরও একটি সহজ নিয়ম হচ্ছে এটি আপনি দুধের তৈরি যে কোন ডিজার্ড জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে খাবারের স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি এর কালার খুব সুন্দর হয়। গর্ভবতী মহিলারা দুধের তৈরি যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে জাফরান খেলে অনেক বেশি পুষ্টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এই প্রশ্নের উত্তর প্রায় সকলেই জানতে চাই। কারণ প্রাচীনকাল থেকেই এ ধারণা মানুষের মধ্যে রয়েছে যে জাফরান খেলে গর্ভে থাকা বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে আপনাদের এই ধারণা ভুল। কারণ গর্ভে থাকা বাচ্চা ফর্সা হওয়ার সাথে জাফরানের কোন ভূমিকা নাই। গর্ভে থাকা বাচ্চাটি ফর্সা হবে কি কালো হবে সেটি নির্ভর করে মূলত জেনেটিক গঠনের উপর।
গর্ভে থাকা বাচ্চার গায়ের রঙের উপর কোনমতেই জাফরান কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে শুধুমাত্র গর্ভের বাচ্চার সঠিক বিকাশ ঘটে এবং তাদের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া গর্ভে থাকা বাচ্চার শরীরের হাড় মজবুত করতে এবং ক্যালসিয়ামের সঠিক চাহিদা পূরণ করতে জাফরান খুব ভালো ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কোন জাফরান ভালো?
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কোন জাফরান ভালো বলে মনে করেন চিকিৎসকরা চলুন জেনে নিই। সমস্ত প্রকার লাল জাফরান প্রমাণিত ভাবে ১০০% খাঁটি এবং প্রাকৃতিক। এটি সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আনা হয়। গর্ভবতী মহিলারা বিভিন্ন প্রকার খাবারের সাথে মিশিয়ে, বিরিয়ানির জন্য, আইসক্রিমে, ক্ষীরসা, ফিরনি এবং বিভিন্ন ধরনের লাড্ডুর মত মিষ্টান্নের সাথে এই লাল জাফরান নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এটি গর্ভবতীদের জন্য অনেক উপকারী একটি মসলা জাতীয় খাবার।
জাফরান খেলে কি দৃষ্টি শক্তি বাড়ে?
জাফরান খেলে কি দৃষ্টি শক্তি বাড়ে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন? জাফরানের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আন্টি ইনফরমেটরি এবং নিউরোপ্রটেস্টিভ বৈশিষ্ট্য যা আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী। এটি চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ম্যাকুইলার ডিজেনারেশনের অগ্রগতিকে কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে জাফরানের সাথে স্বল্পমেয়াদী পরিপূরক হিসেবে দৃষ্টিশক্তির কিছু কিছু দিক অনেক উন্নত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। যার ফলে নিয়মিত জাফরান খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক থাকে।
চুলের যত্নে জাফরানের তেল ব্যবহারের নিয়ম
চুলের যত্নে জাফরানের তেল ব্যবহারের নিয়ম অনেক সহজ। এটি একটি প্রাকৃতিক তেল যা জাফরান ফুল থেকে উৎপাদন করা হয়। চুলের যত্নে এই জাদুকরি তেল বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। এই তেলের মন ভরানো সুগন্ধ এবং চুলের অনেক উপকারিতার জন্য এটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এই তেল সঠিকভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের চুলের যত্নে জাফরানের তেল ব্যবহার করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।
- তেলের পরিমাণ নির্ধারণ
- জাফরান তেল ব্যবহারের সময়
- তেল সংরক্ষণের নিয়ম
তেলের পরিমাণ নির্ধারণ: জাফরানের তেল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী এবং কার্যকরী। এই তেল আমাদের মাথার ত্বকের যত্নে এবং চুল লম্বা করতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই চুলের যত্নে আপনি প্রতিদিন জাফরানের তেল ৫-১০ ফোটা ব্যবহার করতে পারেন। এর থেকে বেশি পরিমাণ তেল ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব আসবে যার ফলে অনেক অস্বস্তি বোধ হতে পারে। তাই এটি সব সময় অল্প পরিমাণ ব্যবহার করবেন।
জাফরান তেল ব্যবহারের সময়: চুলের যত্নে অনেক বেশি উপকার পেতে জাফরানের তেল সবসময় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করবেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অল্প একটু তেল হাতে নিয়ে হালকা মাথার ত্বকে এবং চুলে ম্যাসাজ করলে অনেক ভালো ফল পাবেন। চুলের যত্নে এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন। এই তেল মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগানোর প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর তারপর শ্যাম্পু করবেন। তাহলে ভালো ফল পাবেন।
তেল সংরক্ষণের নিয়ম: জাফরানের তেল আমাদের মাথার ত্বকের জন্য অনেক উপকারী তাই এটি অবশ্যই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে এই তেলের সম্পূর্ণ গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকে। এই তেল সংরক্ষণ করার জন্য ছায়াযুক্ত শীতল জায়গা নির্ধারণ করতে হবে যাতে রোদের তাপ না পড়ে। রোদের তাপ লাগলে তেলের মান নষ্ট হয়ে যাবে। বোতল খোলার পর এটি ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গেই বোতলের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে তেল অনেকদিন ভালো থাকবে।
ত্বকের যত্নে জাফরানের ব্যবহার
ত্বকের যত্নে জাফরানের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলে আসছে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে ত্বককে সুন্দর করতে জাফরানের জুড়ি মেলা ভার। জাফরানে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং সুতনাময় গুণাবলী আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। চলুন জেনে নিই ত্বকের যত্নে জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে।
- ত্বক উজ্জ্বল করতে
- ত্বকের লাল ভাব ও ফুসকুড়ি কমাতে
- ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধিতে
- বয়সে ছাপ কমাতে
- দাগ কমাতে
ত্বক উজ্জ্বল করতে: জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের ক্ষতিকর কোর্সগুলোকে পুনর্জীবিত করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে। ত্বকে নিয়মিত জাফরান ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হবে। ত্বকে জাফরান ব্যবহারের জন্য প্রথমে ৫-৬ পিস জাফরান এক চামচ দুধের সাথে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজিয়ে রাখার পর এটি হালকাভাবে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ত্বকে জাফরান ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং সজীব দেখাবে।
ত্বকের লাল ভাব ও ফুসকুড়ি কমাতে: জাফরনে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ত্বকের লাল ভাব এবং ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের এই সমস্যা দূর করার জন্য ৩-৪ পিস জাফরান ভালোভাবে গুঁড়ো করে এক চামচ গোলাপজল অথবা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তৈরি করা এই পেস্টটি ত্বকের সমস্যাযুক্ত স্থানে হালকা করে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন ব্যবহার করলেই দেখবেন এই সমস্যা দূর হয়ে গেছে। এমনকি ফুসকুড়িতে যদি প্রদাহের সমস্যা থাকে সেটিও দূর করবে এই জাদুকারি পেস্টটি।
ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধিতে: জাফরান ত্বকের প্রাকৃতিক মশ্চারাইজ হিসেবে কাজ করে। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ৫ পিস জাফরান ভালোভাবে গুঁড়ো করে ২ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখের ত্বকের লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধি পাবে। টক প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজ হবে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
বয়সে ছাপ কমাতে: জাফরানের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বকের বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকে তারুণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করে এবং সূর্যের ক্ষতিকারক ইউ ভি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। ত্বকের বয়সের ছাপ কমিয়ে তারুণ্যতা ধরে রাখতে ৪-৫ পিস জাফরান ভালোভাবে গুঁড়ো করে দুই চামচ টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ত্বকে এটি ব্যবহার করলে ত্বক তরুণ হবে এবং কোমল দেখাবে।
দাগ কমাতে: জাফরানে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান গুলো ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকে বিভিন্ন দাগ কমাতে জাফরানের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের দাগ স্পট কমানোর জন্য ৪-৫ পিস জাফরান ভালোভাবে গুঁড়ো করে ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি দাগ যুক্ত স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে বলুন। অল্প কিছুদিন ব্যবহার করলেই দাগ দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক অনেক বেশি পরিষ্কার দেখাবে।
বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম জেনে তারপর বাচ্চাদের জাফরান খাওয়াতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি বাচ্চাদেরও জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। জাফরান খাওয়ানোর নিয়ম জেনে তারপর এটি খাওয়ালে তাদের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু নিয়ম মেনে না খাওয়ালে কিছুটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাচ্চাদের নিয়ম মেনে জাফরান খাওয়ানো আবশ্যক। চলুন জেনে নিই বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
- জাফরানের পরিমাণ নির্ধারণ
- খাওয়ার সঠিক সময়
- প্রস্তুত পদ্ধতি
- শিশুদের জন্য জাফরানের খাদ্য তালিকা
জাফরানের পরিমাণ নির্ধারণ: বাচ্চাদের জন্য খাবারের জাফরানের পরিমাণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ জাফরান খাওয়ালে শিশুদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নিয়ম মেনে খাওয়াতে হবে। সাধারণত এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ পিস জাফরানই যথেষ্ট। একটু বড় বয়সী বাচ্চাদের জন্য যেমন ধরুন ৩-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য সর্বোচ্চ ২-৪ পিস জাফরান খাওয়ানো যেতে পারে।
জাফরান বেশি খাওয়ানো ঠিক না। জাফরান বেশি পরিমাণ খাওয়ালে এর উপকারিতার বদলে অপকারিতা বেশি করবে। যেমন ধরুন বাচ্চাদের পেটের সমস্যা থেকে শুরু করে এলার্জি সমস্যা এমনকি আর ও নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে। তাই শিশুদের নিয়মিত জাফরান খাওয়াতে চাইলে এটি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২-৩ বার খাওয়ানোয় উত্তম। এছাড়াও আপনি চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর বাচ্চাদের জাফরান দিতে পারেন।
খাওয়ার সঠিক সময়: বাচ্চাদেরকে জাফরান খাওয়ানোর সঠিক সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক টাইমে সঠিক জিনিস খাওয়াতে হয়। তাই বাচ্চাদের সকালের খাবারের সাথে বা দুপুরের খাবারের সাথে এটি খাওয়ানো যেতে পারে। বিভিন্ন মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার বা দুধের সাথে মিশিয়ে এটি খাওয়াতে পারেন।
প্রস্তুত পদ্ধতি: বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ানোর আগে এটি প্রস্তুত করার পদ্ধতি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদেরকে তাদের বয়স অনুযায়ী প্রথমে ১-২ পিস এবং পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ২-৪ পিস জাফরান দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াবেন। অবশ্যই মনে রাখবেন জাফরান খাওয়ানোর প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এটি বাচ্চাদেরকে যেকোনো তরল জাতীয় খাবার যেমন ধরুন দুধ, জুস বা যে কোন মিষ্টান্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
মনে রাখবেন জাফরান শিশুদের কে কখনোই সরাসরি খাওয়াবেন না। এটি যেকোন খাবারের সাথে মিশিয়ে তারপর খাওয়াবেন। আর খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন। তাহলে এর স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পাবে এবং বাচ্চাদের খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে।
শিশুদের জন্য জাফরানের খাদ্য তালিকা: শিশুদেরকে জাফরান খাওয়ানোর সময় মনে রাখতে হবে অবশ্যই যে খাবারের সাথে মিশিয়ে জাফরান খাওয়াবেন সেই খাবারটি যেন স্বাস্থ্যকর হয়। যেমন ধরুন দুধ, বিভিন্ন ফলের রস অথবা বিভিন্ন জাতের মিষ্টান্ন সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। তাহলে শিশুর সম্পূর্ণরূপে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
আরোও পড়ুন: গর্ভবতী অবস্থায় কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়-গর্ভকালীন সমস্যা দূর করার উপায়
বাচ্চাদেরকে জাফরান খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে তারপর খাওয়াবেন। সঠিক নিয়ম, সঠিক সময়, সঠিক পদ্ধতি এবং সকল ধরনের সতর্কতা অনুসরণ করে জাফরান খাওয়ালে এটি শিশুদের জন্য অনেক বেশি উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর হবে। কোন প্রকার ক্ষতির ভয় থাকবে না।
শেষ কিছু কথা: গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ জাফরানের আরো অনেক পুষ্টিগুণের কথা সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url