বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ২০ টি ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় সহ আরো অনেক বিষয় জানতে পারবেন। 

বাচ্চাদের-কোষ্ঠকাঠিন্য-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়

প্রায় প্রতিটা বাবা-মায়ের ডাক্তারের কাছে যেয়ে একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে বাচ্চারা কিছু খেতে চায় না। বাচ্চাদের না খেতে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে বাচ্চাদের পেট ফাঁপা হয় এবং অরুচি দেখাবে। চলুন জেনে নিই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। 

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ২০ টি ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ২০ টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাবো আপনাকে আর্টিকেলের এই অংশ। বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক জটিল এবং কষ্টকর। কারণ বড়রা নিজেদেরকে সমস্যা বুঝতে পেরে এটি দূর করার চেষ্টা করলেও বাচ্চারা কোন কিছুই মুখে বলতে পারে না। যার ফলে তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা এবং কষ্টের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে কিনা সেটি সর্বদা বাচ্চার মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার বাবা মাকে সর্বদা বাচ্চাদের যে কোন সমস্যাই বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। 

আরো পড়ুন: চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়। গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম

অবশ্যই মনে রাখবেন যে বাচ্চারা শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করবে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিবে। অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেওয়া সত্ত্বেও বাচ্চাদেরকে ওষুধ খাওয়াতে চান না এতে করে বাচ্চাদের সমস্যারও বৃদ্ধি পায় এবং কষ্ট বেড়ে যায়। তাই এরকম না করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সেটি সমাধানের ব্যবস্থা করবেন অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ২০ টি উপায় সম্পর্কে জানাবো। চলো জেনে নিই।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ২০ টি ঘরোয়া উপায়

  • ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো 
  • বাচ্চার মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে হবে
  • ছয় মাস পর সলিউট খাবার দেওয়া 
  • সকালে পানি খাওয়ানো
  • সকালের নাস্তার আগে পটির অভ্যাস করানো 
  • পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও পানিযুক্ত খাবার দেওয়া 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলার ব্যবস্থা করা
  • কুসুম গরম পানিতে গোসল 
  • অধিক পরিমাণ পানি পান করানো 
  • পেট ম্যাসাজ 
  • দুই বছরের আগে গরুর দুধ না 
  • প্রাণিজ খাবার কম খাওয়া
  • ফলের রস বা ফল খাওয়ানো 
  • শাকসবজি বেশি খাওয়ানো 
  • মোবাইল টিভি বা অন্যান্য ডিভাইসের আসক্তি কমানো
  • নাশপাতি 
  • আলু বোখরা 
  • দই 
  • মিষ্টি আলু 
  • পেঁপে

ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো: একজন নবজাতক জন্ম লাভের পর থেকে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্য কোন খাবার বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যাবে না।

বাচ্চার মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে হবে: বাচ্চা যেন সঠিক পরিমাণ বুকের দুধ পায় সে জন্য বাচ্চার মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। তাহলে বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ পাবে। যা বাচ্চার পেটের জন্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

ছয় মাস পর সলিউট খাবার দেওয়া: ছয় মাস পর থেকে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ সলিউড এবং ফাইবার যুক্ত খাবার দিতে হবে। তাহলে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

সকালে পানি খাওয়ানো: বাচ্চার বয়স এক বছর হওয়ার পর থেকে বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি খাওয়াতে হবে। এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।

সকালে নাস্তার আগে পটির অভ্যাস করানো: সকালে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাকে নাস্তা খাওয়ার আগেই পটি করানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাচ্চার বয়স এক বছর পর থেকে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও পানিযুক্ত খাবার দেওয়া: বাচ্চার খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেই সাথে যেসব খাবার দেওয়া হচ্ছে সেগুলোই পানি আছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলার ব্যবস্থা করা: বাচ্চাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম এবং নিজের কাজ নিজেকে করার মতো বিষয়গুলোর দিকে অভ্যস্ত করতে হবে। এতে করে বাচ্চার কায়িক শ্রম হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে বাচ্চার পেট পরিষ্কার থাকবে।

কুসুম গরম পানিতে গোসল: বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে বাচ্চাকে হালকা কুসুম গরম পানিতে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। এতে করে বাচ্চার পেটের পেশী রিলাক্স হবে এবং পরিপাক তন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক হবে। যার ফলে বাচ্চা স্বস্তি বোধ করবে।

অধিক পরিমাণ পানি পান করানো: বাচ্চাকে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে। পানি আমাদের খাবার হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বাচ্চাকে বেশি করে পানি খাওয়ালে বাচ্চার মলাশয় পরিষ্কার হবে এবং নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি পাওয়া সহজ হবে। তাই বাচ্চার বয়স ছয় মাসের পর থেকেই বাচ্চাকে প্রতিদিন পর্যন্ত পরিমাণ পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। মান্নান

পেট ম্যাসাজ: শিশুদের পেটের সমস্যা দূর করার আরো একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছ বাচ্চার পেটে হাত ঘুরাতে থাকো। আবার শিশুর দুই পা একসাথে করে পেটের দিকে আস্তে আস্তে ঠেলে দিন আবার নিচে নামুন এইরকম বেশ কয়েকবার করলে বাচ্চাদের পেটের গ্যাস অনেক কমে যায়

দুই বছরের আগে গরুর দুধ না: অনেক সময় বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ না খাইয়ে গরুর দুধে অভ্যস্ত করে যা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য প্রধান একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলেছেন, বাচ্চাকে সাধারণত এক বছর বয়সের পর দুধের তৈরি খাবার এবং দুই বছর বয়স এরপর গরুর দুধ সরাসরি খাওয়াতে হবে এর আগে নয়।

প্রাণিজ খাবার কম খাওয়া: প্রাণিজ অর্থাৎ যেকোনো মাংস বাচ্চাদের কম খাওয়াতে হবে। মাংস জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়।

ফলের রস বা ফল খাওয়ানো: শিশুর বয়স ৬ মাস পার হলে তাদেরকে অল্প অল্প করে ফলের জুস দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে মনে রাখবেন বাজার থেকে কেনা কোন জুস বাচ্চাদের দিবেন না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়িতে বানানো জুস বাচ্চাকে খেতে দিতে হবে। ফলের রস বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

শাকসবজি বেশি খাওয়ানো: বাচ্চারা শাকসবজি খেতে চায় না। আর শাকসবজি না খাওয়ার ফলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায় তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কিছু না কিছু শাকসবজি অবশ্যই রাখতে হবে।

মোবাইল, টিভি বা অন্যান্য ডিভাইসের আসক্তি কমানো: বর্তমানে বাচ্চারা অধিক পরিমাণ মোবাইল, টিভি বা অন্যান্য ডিভাইসের সাথে আসক্ত। যার ফলে তারা বাইরে বের হতে চায় না সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকে। তাই তাদের খাবার হজম হয় না এবং পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

নাশপাতি: নাশপাতি এমন একটি খাবার যা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার বাচ্চা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে তাকে একটু করে নাশপাতি খাওয়াতে পারে।

আলু বোখরা: আলুবোখারায় থাকা পুষ্টি উপাদান বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে আলু বোখরার আচার করে বাচ্চাকে খাওয়াবেন। তাহলে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

দই: দই যে শুধুমাত্র বড়দের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তা নয় এটি ছোটদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার বাচ্চা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে তাকে নিয়মিত দই অথবা দই এর সাথে অন্যান্য খাবার মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন এতে করে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হবে।

মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ যা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন এ, বি এবং কার্বোহাইড্রেট শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত মিষ্টি আলুর ভর্তা করে খাওয়াতে পারেন।

পেঁপে: পাকা পেঁপে একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। তাই এটি খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট পরিষ্কার হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়াও পাকা পেঁপেতে থাকা পুষ্টি উপাদান বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পারে, বাচ্চার চুল নখ এবং ত্বক সুন্দর করতে পাকা পেঁপের জুরি মেলা ভার।

কোষ্ঠকাঠিন্য কি

কোষ্ঠকাঠিন্য কি সেটি সম্পর্কে জানা সবার আগে জরুরী। অনেক সময় বাচ্চার বাবা মায়েরা বোঝেনা যে কোষ্ঠকাঠিন্যটা আসলে কি। আজ আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কি সেটি সম্পর্কে জানাবো। যদি দেখেন আপনার বাচ্চা সপ্তাহে তিনবারের বেশি পায়খানা না করে এবং পায়খানা করার সময় ব্যথা পাই বা কষ্ট অনুভব করে সেক্ষেত্রে বুঝবেন আপনার বাচ্চা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য-কি

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চারা পায়খানা করার সময় প্রচুর কষ্ট পাই যার ফলে তারা কান্নাকাটি করে এবং ভয় পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল শক্ত হয়, কালো হয়, এমনকি অনেক সময় রক্তযুক্ত মলও দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে যেহেতু বাচ্চাদের ঠিকমতো পায়খানা হয়ে পেট পরিষ্কার হয় না যার ফলে বাচ্চাদেরকে পেটে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস হয় এবং পেট ফুলে যায়। এরকম কোন সমস্যা দেখা দিলে বুঝবেন আপনার বাচ্চা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অংশে আলোচনা করব। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি খুব সহজেই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার মূল কারণগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই কারণগুলো এড়িয়ে চললেই বাচ্চাদের পেট ভালো থাকবে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। চলুন জেনে নি নাই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কিছু মূল কারণ সম্পর্কে।

আরো পড়ুন: বাচ্চাদের রুচি বাড়ানোর উপায়-বাচ্চাদের কি খাওয়ালে খিদে বাড়ে

  • বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম একটি মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। যেসব বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণ হাঁটাচলা এবং খেলাধুলার সুযোগ পায় না তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি হয়। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়ার ফলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  • বাচ্চারা বর্তমানে টিভি এবং মুঠো ফোনে অতিরিক্ত আসক্ত হওয়ার কারণে এই কোষ্ঠকাঠিন্যত দেখা দেয়। 
  • বাচ্চারা প্রচুর পরিমাণ ফাস্টফুড, চিপস, দোকানের খাবার ইত্যাদি খাওয়ার ফলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
  • বাচ্চাদের আর কোষ্ঠকাঠিন্যের আরো একটি প্রধান কারণ হচ্ছে শাকসবজি না খাওয়া। শাকসবজি এবং ফলমূল না খাওয়ার ফলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  • অনেক সময় স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ টয়লেট না থাকার কারণে অনেক বাচ্চারা মল আটকে রাখে। যার ফলে পরবর্তীতে এই কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হয়। 
  • যে সকল বাচ্চারা মায়ের দুধের পরিবর্তে গরুর দুধ বেশি পরিমাণ খায় তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 
  • অনেক সময় বংশগত কারণেও শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে। 
  • শিশুরা যদি নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ, এনাল ফিশার, কার্স প্রাঙ্গ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় 

নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে বলবো আজকে এই আর্টিকেলের এই অংশে। বর্তমানে প্রায় সকল নবজাতক বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অল্প কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তাদের মেজাজ খিটমিট এর হয়ে থাকে এবং সব সময় কান্নাকাটি করে। তাই তাদের এ সকল বিষয়ের প্রতি বাবা মাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। চলুন জেনে নিই নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে।

  • নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য জন্মের পর থেকে প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। 
  • যেহেতু বাচ্চা বুকের দুধ খাবে তাই বাচ্চার মায়ের খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার মাকে পায়খানা কষে যাই এমন কোন খাবার দেওয়া যাবে না।
  • নবজাতকের মা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ছয় মাসের আগে বাচ্চার মুখে কোন খাবার দেওয়া যাবে না। 
  • নবজাতকের মায়ের বুকের দুধ যেন বৃদ্ধি পায় সেজন্য মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে 
  • নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চাকে ঘাড়ে নিতে হবে যেন পেটে একটু চাপ পড়ে এবং বাচ্চার ঢেকুর ওঠে। এতে করে বাচ্চার সহজেই খাবার হজম হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।

বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করণীয়

বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করণীয় কি তা জানেন কি। চলুন জেনে নিই। বাচ্চাদের পায়খানা না হলে বাচ্চাদেরকে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন কয়েক টুকরা আপেল নাশপাতি অথবা গাজর খেতে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ফাইবার সমৃদ্ধ ইস্মূদী ও চাইলে আপনি বানিয়ে দিতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে কলা এবং স্ট্রবেরি সাথে দই এবং এক চামচ চিয়া সিড একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি স্মোদি তৈরি করে নিন। এটি আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত খাওয়ালে বাচ্চার মনটাকে উন্নতি হবে

কী খেলে শিশুর পায়খানা নরম হবে

কি খেলে শিশুর পায়খানা নরম হবে সেটি বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে হবে। কারণ বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা শক্ত পায়খানার সাথে খাদ্য অভ্যাসের যোগসূত্র থাকে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। শিশুদের পায়খানা নরম করতে তাদের খাবারের তালিকায় প্রতিদিন আঁশ যুক্ত খাবার রাখতে হবে। ফল মূল শাকসবজি এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু ফল অথবা ফলের রস খাইয়ে দিলে পায়খানা নরম থাকবে।

নবজাতকের পায়খানা কেমন হবে 

নবজাতকের পায়খানা কেমন হবে তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা কাজ করে। একটি নবজাতক পৃথিবীতে আসার পর তার প্রথম মল হবে কিছুটা গমের মতো আঠালো, আদ্র এবং কালচে বর্ণের হয়। আসলে মেকোনিয়ামের কারণে মূলত নবজাতকের পায়খানা এরকম হয়। শতকরা ৯০ জনের বেশি বাচ্চা পূর্ণ গর্ভকাল পায় (৩৭ সপ্তাহের বেশি গর্ভকাল পেরোনো)। এক্ষেত্রে বাচ্চার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এবং বাকিদের জন্মের প্রায় ৩৬ ঘন্টার মধ্যে মলত্যাগ করে থাকে। এই সময়ের মধ্যে নবজাতকের প্রথম মলত্যাগ না হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের পায়খানা না হলে করণীয়

নবজাতকের পায়খানা না হলে করণীয় হচ্ছে বাচ্চাকে হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। এছাড়াও তাদেরকে পায়ের হালকা ব্যায়াম করাতে হবে ঠিক সাইকেল চালানোর মতো, তাহলে বাচ্চাদের অন্ত্রের নড়াচড়া হবে এবং বাচ্চা মলত্যাগ করবে। যদি দেখেন আপনার বাচ্চার মলত্যাগ করা বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে তাহলে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং ফলের রস খাওয়াতে হবে। এরপরেও না হলে অবশ্যই আপনি আপনার বাচ্চাকে গ্লিসালিন সাপোজিটর ব্যবহার করে বাচ্চার পটি করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬ মাস থেকে ১২ মাসের বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

৬ মাস থেকে ১২ মাসের বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে বলবো আপনাদের আজ। ছয় মাস পর থেকে বাচ্চাদের মুখে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার দেওয়া হয়। যার ফলে অনেক বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়। ৬ মাস থেকে ১২ মাসের বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার দুইটি খাবারের রেসিপি নিয়ে আলোচনা করব আর্টিকেলের এই অংশে। চলুন জেনে নিই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার দুইটি অসাধারণ খাবারের রেসিপি সম্পর্কে। যা আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পুরণেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।

রেসিপি নাম্বার-১: নাশপাতি ও সুজির রেসিপি 

প্রস্তুতি: প্রথমে একটি নাশপাতি থেকে অর্ধেক কেটে নিতে হবে। কেটে নেওয়া অধিক নাশপাতি কুচি কুচি করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার একটি প্যানে সুজি এবং ব্লেন্ড করা নাশপাতি ও অল্প একটু পানি ভালোভাবে একসাথে মিশিয়ে হালকা আঁচে জাল দিতে হবে। আপনি চাইলে হালকা একটু লবণ মেশাতে পারেন স্বাদ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এক বছরের নিচে বাচ্চার জন্য লবণ ব্যবহার না করাই ভালো। চার থেকে পাঁচ মিনিট হালকা আছে জাল করে নেওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। নাশপাতিতছ থাকা পুষ্টি উপাদান বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তাই এই খাবারটি বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে।

রেসিপি নাম্বার-২: পাকা পেঁপে ও সুজির রেসিপি 

প্রস্তুতি: প্রথমে এক টুকরো পাকা পেঁপে ছোট ছোট করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার একটি প্যানে একটু পানি দিয়ে সুজি ভালোভাবে গুলে রান্না করে নিতে হবে। অল্প আছে পাঁচ মিনিট ভালোভাবে জাল করে সুজি রান্না করতে হবে। এমন ভাবে রান্না করতে হবে যেন সুজিটি একটু ঘন হয়। এবার রান্না হয়ে গেলে চুলার আঁচ বন্ধ করে ব্লেন্ড করে রাখা পাকা পেঁপে সুজির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। 

আরো পড়ুন: পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা

পেঁপে একটি সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি বাচ্চার পেট পরিষ্কার করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও পেঁপে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, এটি বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বাচ্চার চুল, নখ, ত্বক সবকিছু সুন্দর করতে সহায়তা করে। তাই আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে অবশ্যই আপনি টাকা পেঁপে ও সুজির রেসিপিটি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এতে করে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে শিশুর খাদ্য তালিকায় কোন খাবার রাখতে হবে

কোষ্ঠকাঠিন্য-এড়াতে-শিশুর-খাদ্য-তালিকায়-কোন-খাবার-রাখতে-হবে

কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে শিশুর খাদ্য তালিকায় কোন খাবার রাখতে হবে তা সম্পর্কে অবশ্যই প্রতিটা বাবা মায়ের জেনে থাকা উচিত এবং শিশুদের খাদ্য তালিকায় নিয়ে তৈরি করা উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য এ রাতে শিশুদের খাদ্য তালিকায় বুকের দুধ লাল বা বাদামি চালের ভাত লাল চিড়া সাগু ছাতু কোর্ট লাউ চাল কুমড়া পেঁপে চিচিঙ্গা ঝিঙ্গা পালং শাক পাকা গলা, লাল শাক খেজুর ইত্যাদি রাখতে পারে। এগুলো খেলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। তাই আপনি আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় উপরের উল্লেখিত খাবার গুলো নিয়মিত রাখতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চাদের কোন কোন খাবার বাদ দিতে হবে

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চাদের কোন কোন খাবার বাদ দিতে হবে সে বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চাদের কোন কোন খাবার গুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেই কোন কোন খাবারগুলো বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আরো বাড়িয়ে চলতে পারে সেগুলো সম্পর্কে। 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে রুটি এবং শক্ত ভাত এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও পোলাও চালের ভাত গরুর মাংস ফর্মুলা দুধ এই সকল জিনিসগুলো বাচ্চাদের দেওয়া যাবে না। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রাতে অবশ্যই দোকানের যেকোনো ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। আম 

শেষ কিছু কথা 

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলে আমরা আপনাদের বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া উপায় সহ কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে আরো নানা ধরনের অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটির সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url