মেহগনি গাছের বীজের ১৫ টি উপকারিতা
মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি মেহগনি গাছের নানা ধরনের উপকারিতা ও আরো অজানা অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা আপনার অনেক উপকারে আসবে।
আমাদের শরীরে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মেহগনি বীজের রয়েছে অনেক উপকারিতা। মেহগনি বীজকে সাধারণত ভেষজ প্রতিকারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সেই আদিকাল থেকে মেহগনি বীজ ব্যবহার হয়ে আসছে। চলুন জেনে নিই মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে।
মেহগনি গাছের বীজের ১৫টি উপকারিতা
মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। মেহগনি গাছের আদি নিবাস হচ্ছে উত্তর আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চলে। বিশেষ করে এই গাছের আদি নিবাস হিসেবে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ইউরোপীয় বণিকদের হাত ধরে এই গাছটি ভারত বর্ষ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়েছে। মেহগনি গাছগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দক্ষিণ অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে জন্ম লাভ করে থাকে। বর্তমানে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চাষ করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: পটল বীজের ১০ টি উপকারিতা ও ২ টি অপকারিতা
মেহগনি গাছকে প্রজাতি ভেদে বড় বা ছোট নামে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি চাষ করা হয়। এই গাছের বীজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সাধারণত মেহগনি গাছের বীজকে ভেষজ প্রতিকারক হিসেবে সেই আদিকাল থেকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন থেকে শুরু করে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সহ আরো বিভিন্ন চিকিৎসার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেহগনি গাছের কাঠ অনেক দামী একটি কাঠ। এই কাঠ দিয়ে দামি দামি ফার্নিচার তৈরি করা হয়। চলুন জেনে নিই মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে।
মেহগনি গাছের বীজের ১৫ টি উপকারিতা
- ফ্ল্যাভোনয়েড
- হাইপার টেনশন
- সাপোনিন
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
- পোকা দমন কারি
- কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী
- ঋতুস্রাবের ব্যথা উপশমে
- ক্ষুধা বৃদ্ধিতে
- জ্বর ও ঠান্ডা নিরাময়ে
- একজিমা ও রিউম্যাটিজোম উপশম
- রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ত্বকের যত্নে
ফ্ল্যাভোনয়েড: ফ্ল্যাভোনয়েড মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। কারণ এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রী রেডিক্যাল গুলো টক্সিন দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফ্ল্যাভোনয়েড এর উপস্থিতিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য গুলো বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে মেহগনি বীজের উপকারিতা অনেক। এটি এলডিএল বিল্টআপ উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে
ফ্ল্যাভোনয়েড গুলো আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত করতে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে আরো বেশি উন্নত করতে কোলেস্টেরলের দ্বারা রক্তনালী গুলো ব্লক হওয়া থেকে রক্ষা করতে রক্ত পরিষ্কার করতে এবং আর্টেরিয়োস্ক্লেরোসিস এর প্রতিরোধ করতে পারে। ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বিশিষ্ট যা আমাদের টিস্যু প্রদাহ রোধ করতে বেশ কার্যকরী। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো আঘাতের সময় ফ্ল্যাভোনয়েড গুলো আমাদের শরীরে ব্যথা নাশক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
হাইপার টেনশন: হাইপার টেনশন কমাতে মেহগনি বীজ বেশ উপকারী। মোটামুটি ৪ গ্রাম মেহগনি বীজ সংগ্রহ করে ভালোমতো পরিষ্কার করে দুই গ্লাস গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঠান্ডা হওয়ার পর এক ফিল্টার করে সকালে এবং বিকেলে অর্ধেক অর্ধেক করে খেয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন খেলে হাইপারটেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সাপোনিন: মেহগনি বীজের উপকারিতা গুলো সাপোনিন হিসেবে পাওয়া যায়। মেহগনি বিজে থাকা সাপোনিন গুলো হলো গ্লুকোসাইড যা পানিসাদের নিচে সাবানের ফেনা তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। এটি মূলত উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সাবান যা আমাদের হালকা খাবার হিসেবে ব্যবহার করার সময় হাইপোগ্লাইসেমিক। মেহগনির বীজে থাকা সাপনিন সামগ্রী গুলো ডায়াবেটিস মেলিটাস আক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকারক হিসেবে তৈরি করা হয়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: মেহগনি বীজ রক্তের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। খাবারের কিছুক্ষণ আগে দুই চামচ মেহগনি বীজের পাউডার হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে খেলে এটি আমাদের শরীরের স্থিতিশীল হতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেহগনি বীজে থাকা সাপোনির পদার্থগুলো আমাদের রক্তের স্তরকে স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে।
পোকা দমন কারি: পোকা দমনকারী প্রতিশোধক হিসেবে মেহগনি বীজের বেশ সুনাম রয়েছে। মেহগনি বীজকে পাউডার হিসেবে তৈরি করা হয় এবং এটি পোকামাকড়ের স্প্রে হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। গ্রীষ্মকালে যেকোন গাছের পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এই পোকামাকড় এর আক্রমণ থেকে বাঁচতে একটি খুব সুন্দর ভেষজ হিসেবে এটি ব্যবহার হয়। যেমন পোকামাকড়ের রোগ বালাই এর বিরুদ্ধে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে ঠিক তেমনি এটি ফসল কেউ রক্ষা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী: কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের সেই আদিমকাল থেকে বীজ ব্যবহার হয়ে আসছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য মেহগনি বীজের পাউডার হালকা কুসুম গরম পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
ঋতুস্রাবের ব্যথা উপশমে: ঋতুস্রাবের ব্যথা উপশমের একটি খুব ভালো উপাদান হচ্ছে মেহগনির বীজ। ঋতুস্রাবের শুরুতে মেহগনি বীজের পাউডার হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে এটি আমাদের শরীরের ব্যথা দূর করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্ষুধা বৃদ্ধিতে: ক্ষুধা বৃদ্ধিতে মেহগনি বীজ খুব সুন্দর একটি সমাধান। আপনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ একটি করে বীজ সংগ্রহ করতে পারেন এবং আপনার ক্ষুধা নিবারণের জন্য খেতে পারেন। প্রতিদিন একটি করে বীজ খেলে এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে খুব ভালো কাজ করবে।
জ্বর ও ঠান্ডা নিরাময়ে: মেহুনি বীজের পুষ্টি উপাদান সর্দি এবং জ্বর নিরাময়ে খুব ভালো কাজ করে। সর্দি এবং জ্বর নিরাময় করতে এক থেকে দুই চামচ মেহগনি বীজের গুড়া সামান্য একটু মধু দিয়ে হাফ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে হালকা কুসুম করে খেতে হবে। এটি দিনে ২-৩ বার খেলে ঠান্ডা জ্বর নিরাময় হবে।
একজিমা ও রিউম্যাটিজোম উপশম: একজিমা ও রিউম্যাটিজোম উপশমে মেহগনি বীজের পাউডার বেশ কার্যকরী। মেহগনি বীজের পাউডারের সাথে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে দিনের দুই তিনবার খেলে একজিমা এবং রিউম্যাটিজোম উপশম লাভ করা যায়।
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে: আপনি জানলে অবাক হবেন যে রক্ত জমাট বাঁধা এবং অনিদ্রা দূর করার জন্য মেহগনি বীজের সাপনিন অনেক কার্যকরী একটি উপাদান।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: মেহগনি বীজ ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কার্যকরী। যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত মেহগনি বীজের গুড়া খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে: মেহগনি বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত মেহগনি বীজের গুঁড়া খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: মেহগনি বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ত্বকের যত্নে: মেহগনি বীজে থাকা উপাদান আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের ব্রণ এবং এলার্জি সমস্যা দূর করে।
মেহগনি বীজ খেলে কি হয়
মেহগনি বীজ খেলে কি হয় সেটি সম্পর্কে জানবো মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে। মেহগনি বীজ অনেক উপকারী একটি উপাদান। মেহগনি এই বীজে রয়েছে ঔষধি ভেষজ গুণাবলী ভরপুর যা আমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগের মোকাবেলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বীজটি যে শুধুমাত্র মানব দেহের জন্য উপকারী এমনটি কিন্তু নয় এটি উদ্ভিদের জন্যেও অনেক উপকারী।
মেহগনি বীজ থেকে যে কীটনাশক তৈরি করা হয় তা উদ্ভিদের যেকোনো পোকামাকড় দমন করতে বেশ কার্যকরী। এছাড়াও মেহগনি গাছের বাকলের নির্যাস আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি আমাদের শরীরে শক্তি যোগানো থেকে শুরু করে পেটের সমস্যা দূর করতেও বেশ কার্যকরী। নিয়মিত মেহগনি গাছের বাকলের নির্যাস খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায় বলে মনে করেন চিকিৎসা।
মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম
মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পর তারপর এটি খেতে হবে। তাহলে মেহগনি বীজের সঠিক উপকারিতা পাওয়া যাবে। মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। আমরা সকলেই জানি মেহগনি বীজ আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী। তাই পুরোপুরি উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে তারপর এটি খেতে হবে। চলুন জেনে নিই মেহগনি বীজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
আরো পড়ুন: তুলসী পাতার ২০ টি উপকারিতা ও ১১ টি অপকারিতা
সর্দি কাশি এবং জ্বর নিরাময়ে মেহগনি বীজ বেশ উপকারী। সেই জন্য হাফ চা চামচ মেহেগনি বীজের গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে এক কাপ পানিতে দিয়ে হালকা কুসুম গরম করে নিতে হবে। কুসুম গরম অবস্থায় এটি খেলে সর্দি কাশি এবং জ্বর খুব সহজেই ভালো হয়। এছাড়াও এটি আমাদের মুখের রুচি ফিরিয়ে দেয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। সেই জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেহগনি বীজের গুড়া খেলে মুখের রুচি ফিরে আসবে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে।
মেহগনি গাছের বীজ দিয়ে কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি
মেহগনি গাছের বীজ দিয়ে কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত। মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের মেহগনি গাছের বীজ দিয়ে কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। মেহগনি বীজ দিয়ে অনেক ভালো মানের কীটনাশক তৈরি করা যায়। বাজার থেকে কিনে আনা কীটনাশক পোকা দমনের জন্য জমিতে স্প্রে করলে সেটি আমাদের স্বার্থের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা ধরনের জটিল কঠিন অসুখ।
কিন্তু সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মেহগনি গাছের বীজ থেকে তৈরি কীটনাশক অনেক বেশি নিরাপদ। এতে ক্ষতিকারক কোন কিছু থাকে না। যার ফলে এটি ফসলের স্প্রে করলে সেটি আমাদের শরীরে কোন ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না। বাজারের কিনা ক্ষতিকারক স্প্রে জমিতে না দিয়ে আপনি চাইলে খুব সহজেই বাসায় শুধুমাত্র মেহগনি গাছের বীজ দিয়ে নিরাপদ কীটনাশক তৈরি করে আপনার জমিতে স্প্রে করতে পারেন। চলুন জেনে নিই মেহগনি গাছের বীজ দিয়ে কীটনাশক তৈরির কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে।
পদ্ধতি: ১
প্রথমে দুই-আড়াই কেজি মেহগনি বীজ কুচি কুচি করে কেটে হালকা একটু থেঁতো করে নিতে হবে। এবার একটি পরিষ্কার পাত্রে ১০ লিটার পানি নিয়ে থেঁতো করে নেওয়া মেহগনি বীজগুলো ভালোভাবে ভিজিয়ে তিন চার দিন রেখে দিতে হবে। তিন চার দিন পর মেহগনি বীজের নির্যাস ভালো হবে বের হয়ে গেলে একটি কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে। ছেঁকে নেওয়া পানির সাথে ৫০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে ফসলের জমিতে স্প্রে করলে এটি খুব ভালো পোকা দমনের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
এই মিশ্রণটি ধানের ফসলেও অনেক উপযোগী একটি স্প্রে। ধানের ফসল নষ্ট করে এমন পোকা যেমন মাঝরা, পাতা মোড়ানো, বাদামি গাছ ফড়িং ইত্যাদি দমনে এই স্প্রেটি খুব ভালো কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন সবজি ক্ষেত যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, বরবটি, সিম সহ আরো সব ধরনের সবজিতে স্প্রে করা যায়। এভাবে যেকোনো ফসলে মেহগনি বীজ থেকে তৈরি করা উপাদানটি যেকোনো ফসলে স্প্রে করলে এটি পোকা দমনে খুব ভালো কাজ করে।
একবার এটি স্প্রে করার পর আবার ৫ লিটার পানিতে মেহগনি বীজ একই পদ্ধতিতে ভিজিয়ে রেখে তিন চার দিন পরপর জমিতে স্প্রে করলে আর কোন পোকামাকড় ফসল নষ্ট করতে পারে না। এটি মানুষের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। মেহগনি বীজ থেকে নির্যাস বের করার পর এর ছোবড়া গুলো খুব ভালো ভেষজ জৈব সার হিসেবে ধান এবং সবজি বীজ তলায় ব্যবহার করলে চারা গাছগুলোতে পোকামাকড় কম হয় এবং রাসায়নিক সার হিসেবে ব্যবহার হয়।
পদ্ধতি-২
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মেহগনি গাছের বীজ ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম গুঁড়ো করে বা ভালোভাবে থেঁতো করে ৫০০ গ্রাম ফলের বাকলের গুড়া অথবা পাতা নিয়ে পাঁচ লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মাটির হাঁড়িতে করে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ভালোভাবে জাল করে নিতে হবে। জাল করার ৫ মিনিট পর ৫০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার, ৫ গ্রাম সোহাগা এবং ১০ গ্রাম তুঁতে ওই পানির সাথে ভালোভাবে মিশাতে হবে।
এবার একটি কাঠ অথবা বাসের কাঠি দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন নির্যাসগুলো ভালোভাবে একসাথে মিশে। এবার এই নির্যাসটি ঠান্ডা হয়ে গেলে ৫ গুণ পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে ছেকে নিতে হবে। এবার যে কোন আক্রান্ত গাছে স্প্রে টি এক থেকে দুই দিন অন্তর অন্তর গাছে স্প্রে করলে গাছের পোকা মাকড় দমন হয় এছাড়াও কোন আক্রান্ত গাছে স্প্রে করলে গাছ দ্রুত সুস্থ লাভ করে। এটি বেগুনের পোকা দমনের জন্য খুব ভালো উপযোগী একটি উপাদান। ছত্রাক রোগ দমনের জন্য এই স্প্রে টি বেশ কার্যকরী।
পদ্ধতি-৩
প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম বীজ খোসা ছাড়িয়ে এক লিটার পানিতে তিন থেকে চার দিন ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পানির সাথে মিশে গেলে ৯ লিটার পানির সাথে নির্যাস এর মিশ্রণটি মিশিয়ে একসাথে এক চামচ ডিটারজেন্ট পাউডার ভালোভাবে মিশিয়ে ফসলের খেতে স্প্রে করতে হবে। এটি মাজরা, পোকা পাতা মোড়ানো এবং বাদামি গাছ ফড়িং পোকা দমনের জন্য বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। এই উপাদানটি আপনি আপনার ফসলের জমিতে স্প্রে করে খুব সহজেই পোকা দমন করতে পারবেন।
মেহগনি গাছের পাতার উপকারিতা
মেহগনি গাছের পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জেনে থাকা উচিত। কারণ এটি একটি উপকারী গাছ। মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলে আমরা মেহগনি গাছ সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের মেহগনি গাছের পাতার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই মেহগনি গাছের পাতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে।
- ঔষধি গুণ
- হজমের উন্নতি
- ত্বকের যত্নে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
- মৌসুমী জ্বরে উপকারী
ঔষধি গুণ: মেহগনি গাছের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শরীরে শক্তির যোগান দেয়।
হজমের উন্নতি: মেহগনি গাছের পাতা আমাদের পেটের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং সেই সাথে আমাদের পাচনতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
ত্বকের যত্নে: মেহগনি গাছের পাতা থেকে তৈরি করা পেস্ট ত্বকের ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার ফলে এই পাতা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মেহগনি গাছের পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের স্তর কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে যার ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
মৌসুমী জ্বরে উপকারী: মেহগনি গাছের পাতা আমাদের মৌসুমী জ্বর অথবা সিজিন্যাল জ্বর এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে
মেহগনি গাছের অপকারিতা
মেহগনি গাছের অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানেন কি? মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানলেও এই গাছের অপকারিতা সম্পর্কে জানি না। যার ফলে নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। মেহগনি গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের মেহগনি গাছের কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই
- মেহগনি গাছের পাতায় এক ধরনের ক্ষতিকারক বিষাক্ত রস রয়েছে যা মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে দেয়।
- মেহগনি গাছের পাতা যেখানে পরে সেখানকার মাটির উপকারী এবং অপকারী দুই ধরনের গুণাগুনি নষ্ট করে দেয়।
- মেহগনি গাছের পাতার রসের ক্ষতিকারক উপাদানের ফলে মাটির কীটপতঙ্গ বেঁচে থাকতে পারে না।
- মেহগনি গাছের ফল যেহেতু কোন পাখি খেতে পারে না সেহেতু এই গাছে তারা বাসা বাঁধে না।
- মেহগনি গাছের পাতা পানিতে পড়লে পানি দূষিত হয়ে পড়ে।
- কোন পুকুরপাড়ে মেহগনি গাছ থাকলে এর পাতা পানিতে পড়লে পানি দূষিত হয় এবং যার ফলে মাছ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।
- হাঁস মুরগির জন্য এই মেহগনি গাছটি অনেক বেশি ক্ষতিকর।
মেহগনি গাছের দাম কত
মেহগনি গাছের দাম কত এটি সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। আমাদের দেশে অনেক ধরনের সৌখিন মানুষ রয়েছে যারা মেহগনি গাছের তৈরি বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র ব্যবহার করতে পছন্দ করে। মেহগনি গাছের কাঠ দিয়ে অনেক ধরনের সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র প্রতিনিয়ত তৈরি করা হয়। এর কারণ হচ্ছে এই কাঠ অন্যান্য কাঠের তুলনায় অনেক বেশি টেকসই এবং মজবুত হয়। যার ফলে অনেকেই এই কাঠের তৈরি আসবাবপত্র তৈরি করতে আগ্রহী হন।
যেহেতু অন্যান্য কাঠের তুলনায় মেহগনি কাঠ অনেক বেশি টেকসই তাই এই গাছের কাঠ প্রতি কেবিতে সর্বনিম্ন প্রায় ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়ে থাকে। তবে কাঠের যোগান এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে এই কাঠের দামের তারতম্য ঘটতে পারে। আবার জায়গা ভেদে এই কাঠের দাম কিছুটা কম বেশি হয়ে থাকে। গুণগত মান ভালো হওয়ায় দিন দিন মেহগনি গাছের কাঠের চাহিদা বেড়েই চলেছে যার ফলে এর দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা যায়।
মেহগনি গাছ জন্মাতে কত সময় লাগে
মেহগনি গাছ জন্মাতে কত সময় লাগে সেটি সম্পর্কে জানা থাকলে এই গাছের ফলন আরো বৃদ্ধি পাবে। মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাকে মেহগনি গাছ জন্মাতে কত সময় লাগে সেটি সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জানাবো। মেহগনি সাধারণত একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ। তাই এই গাছ বড় হতে এবং পরিপক্ক হতে অনেক বেশি সময় লাগে। একটি মেহগনি গাছ পুরোপুরি পরিপক্ক হতে সময় লাগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর। এরপর এই কাঠ ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন: চুইঝালের যত পুষ্টি উপকারিতা খাওয়া এবং সংরক্ষণের নিয়ম
এই গাছ আমাদের বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটা জেলাতেই জন্মে থাকে। কারণ এই গাছের বিপুল পরিমাণ চাহিদা বাংলাদেশে রয়েছে। বেগুনি গাছের কাঠের গুণাগুণ ভালো হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক সৌখিন মানুষ এই গাছের কাঠ অনেক টেকসই হওয়ায় আসবাবপত্র তৈরি করেন। মেহগনি গাছ যেহেতু একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ তাই এটি খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অল্প একটু পরিচর্যা নিলেই এটি খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে এবং অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম
মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে জেনে তারপর গাছ লাগালে এই গাছের বৃদ্ধি আরো দ্রুত হয়। তাই মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে জেনে তারপর গাছ লাগাতে হবে। মনে রাখবেন এই গাছ উষ্ণ, আদ্র এবং যেখানে পরিপূর্ণভাবে সূর্যের তাপ লাগে সেই জায়গায় লাগাতে হবে। অর্থাৎ দিনের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা সূর্যের তাপ থাকে এইরকম জায়গা মেহগনি গাছ লাগানোর জন্য নির্বাচন করতে হবে। তাহলে এই গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠবে। কারণ ছায়াযুক্ত জায়গায় এই গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে না।
মেহগনি গাছ লাগানোর পূর্বে মাটি সাথে ভালোভাবে কম্পোস্ট এবং জৈব সার মিশিয়ে মাটি উর্বর করে নিতে হবে। মনে রাখবেন মাটি যত বেশি উর্বর হবে গাছের বৃদ্ধি তত দ্রুত হবে। মেহগনি বাগাছ লাগানোর পূর্বে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে জায়গাটি যেন আদ্র হয়। ভেজা জায়গায় এই গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। তাই জায়গা নির্বাচন করে সঠিক নিয়ম মেনে এই গাছ লাগানো উচিত। তাহলে গাছ দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং কাঠ শক্তিশালী হবে।
মেহগনি গাছ কত বছর বাঁচে
মেহগনি গাছ কত বছর বাঁচে জানেন কি? জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। একটি মেহেগনি গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গাছ এর সঠিক পরিচর্যা নিলে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে মনে রাখবেন গাছটির বৃদ্ধির হার এবং এর জীবন দশা নির্ভর করে সাধারণত এর জাত, পরিবেশ, জলবায়ু, মাটির গুণগত মান এবং সঠিক পরিচর্যার ওপর ভিত্তি করে।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা সহ মেহগনি গাছের এবং এর পাতা সম্পর্কে আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনি তাইলে মেহগনি গাছের বীজ ব্যবহার করে খুব ভালো প্রাকৃতিক কীটনাশক তৈরি করে আপনার জমিতে ব্যবহার করতে পারেন।
এটি অনেক স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী। মেহগনি গাছের বীজের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতার কথা আমরা আপনাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানিয়েছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইট টির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url