চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার ১০ টি উপকারিতা
চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি চুলে মেহেদী পাতা দেওয়াসহ আরো নানা উপকারিতা জানতে পারবেন। মেহেদি পাতা আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী।
ছেলে হোক কিংবা মেয়ে সব ক্ষেত্রেই চুলের জন্য মেহেদি পাতা অনেক উপকারী। হাত সাজানো থেকে শুরু করে চুলের যত্নে মেহেদি পাতার জুড়ী মেলা ভার। মেহেদি পাতা ছাড়া যেন মেয়েদের সাজ পরিপূর্ণ হয় না। চলুন জেনে নিই চুলে মেহেদী পাতা দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
চুলে মেহেদী পাতা দেওয়ার ১০ টি উপকারিতা
চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। কারণ এটি শুধু হাত সাজানোর ক্ষেত্রে নয় এটি চুলের পরিচর্যার জন্য অনেক উপকারী এবং জনপ্রিয়। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে প্রত্যেকের সৌন্দর্য রক্ষায় চুল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুন্দর ঘন কালো চুল কে না চায়। প্রতিটা মেয়ের জন্যই সুন্দর ঘন কালো লম্বা চুল একটা স্বপ্নের মত। কিন্তু এখানেই যেন যত বিপত্তি।
আরোও পড়ুন: শীতে পা ফাটা দূর করার ১৫ টি ঘরোয়া উপায়
চুলে নানা ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে। চুল উঠে যাওয়া মেয়েদের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ আবার চুলে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে চুল নষ্ট করে ফেলে। সব ক্ষেত্রেই চুলের যত্নে মেহেদি পাতার জুড়ি মেলা ভার। চুল রুক্ষ হওয়া থেকে শুরু করে চুল উঠে যাওয়া সহজ নানা সমস্যায় এই মেহেদী পাতা সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। চলুন জেনে নিই চুলে মেহেদী পাতা দেওয়ার দশটি উপকারিতা সম্পর্কে।
চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার ১০ টি উপকারিতা
- মাথা ঠান্ডা করতে
- খুশকি দূর করতে
- চুল পড়া কমাতে
- চুল রাঙাতে
- চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে
- ডিপ কন্ডিশনিংয়ে সাহায্য করে
- চুলের গোড়া মজবুত করতে
- মাথার ত্বকে পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে
- চুলের রুক্ষতা দূর করতে
- নতুন চুল গজাতে
মাথা ঠান্ডা করতে: চুলে মেহেদি পাতা ব্যবহার করলে এটি মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে চুলের নানা ধরনের সমস্যা দূর হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।
খুশকি দূর করতে: অতিরিক্ত চুল পরার আরো একটি বিশেষ কারণ হলো মাথার ত্বকে খুশকি। আর এই খুশকি কমবেশি প্রায় সকলের মাথায় দেখা যায়। মাথায় একবার খুশকি হলে খুব সহজে সেটি যেতে চায় না। এজন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বা অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। এত কিছু করার পরেও দেখা যায় বর্ষাকালে এবং শীতকালে খুশকিতে মাথা ভরে যায়।
চুল পড়া কমাতে হলে এবং চুলের ভালোমতো যত্ন নিতে হলে সবার প্রথম মাথা থেকে খুশকি দূর করতে হবে। আর খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে মেহেদী পাতা। সপ্তাহে অন্তত একবার মেহেদী পাতার পেস্ট মাথায় লাগালে খুব সহজেই খুশকি চলে যাবে। মেহেদি পাতায় রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। ভালো ফল পেতে মেহেদি পাতার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত খুশকি দূর হয়ে যায়।
চুল পড়া কমাতে: ঘন চুল কেনা পছন্দ করে। কিন্তু প্রধান সমস্যা হচ্ছে চুল পড়ে চুল পাতলা হয়ে যায়। যাদের চুল পড়ে চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে তারা নিঃসন্দেহে মেহেদী পাতা বেটে চুলে লাগাতে পারে। চুলে মেহেদী পাতা এবং এর সাথে মেথি গুড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন লাগালে দ্রুত চুল পড়া কমে যায়।
চুল রাঙাতে: অনেকের লাল রংয়ের চুল অনেক পছন্দ। যার ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে চুল রং করে থাকেন। কিন্তু এভাবে চুল রাঙালে চুলের অনেক ক্ষতি হয়। মেহেদি পাতা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি খুব সহজে চুল রাঙাতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে প্রথমে অল্প একটু পানিতে কফি দিয়ে ফুটিয়ে ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এর সাথে মেহেদি পাতা বাটা অথবা গুড়া মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগাতে হবে। পছন্দের রং পেতে তিন থেকে চার ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই চুল।
চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে: লম্বা চুল সবাই পছন্দ করে। কিন্তু অনেকের চুল সহজে লম্বা হতে চায় না। চুল দ্রুত লম্বা হতে মেহেদি পাতা অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। এজন্য প্রথমে আপনাকে ২৫০ মিলি তিলে তেলে সাথে মেহেদি পাতা বাটা পেস্ট একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৬ মিনিট গরম করে নিতে হবে। এরপর এই পেস্ট সপ্তাহে দুইদিন গোসলের আগে চুলের ব্যবহার করলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে চুল দ্রুত লম্বা হয়ে যাবে।
ডিপ কন্ডিশনিংয়ে সাহায্য করে: চুলে প্রাকৃতিক উপায়ে কন্ডিশনিং করতে মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। চুলে নিয়মিত মেহেদী পাতা বেটে লাগালে এটি চুল অনেক বেশি উজ্জ্বল হয় এবং চুলের আদ্রতা দূর হয়। ডিপ কন্ডিশনিং করতে মেহেদী পাতা বেটে এর সাথে ডিম ও তেল মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললে চুল হবে অনেক ঝলমলে, কোমল ও সুন্দর।
চুলের গোড়া মজবুত করতে: চুলের গোড়া মজবুত করতে মেহেদী পাতা বেশ কার্যকর। আপনার যদি চুল পড়া সমস্যা থাকে তাহলে নিয়মিত চুলে মেহেদী পাতা ব্যবহার করুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল পড়া কমে যাবে। ভালো ফল পেতে চুলের সাথে টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
মাথার ত্বকে পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে: বিভিন্ন ধরনের সাধারণ তেল ব্যবহার করার ফলে আমাদের মাথার স্কাল্প তৈলাক্ত হয়ে যায়। যার ফলে পিএইচ ব্যালেন্স এর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মাথার ত্বকের পিএইচ এর মান সঠিক রাখতে মেহেদী পাতা বেশ কার্যকরী ।
চুলের রুক্ষতা দূর করতে: চুলের রুক্ষতা দূর করতে মেহেদি পাতার পেস্ট বেশ উপকারী। সেক্ষেত্রে মেহেদী ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে এর সাথে এক এক করে অলিভ অয়েল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট নিয়মিত চুলে লাগালে চুলের রুক্ষতা দূর হয়। যার ফলে চুলের আগা ফাটার মত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার হাত থেকে চুল রক্ষা পায়।
নতুন চুল গজাতে: চুল একবার উঠে গেলে আবার যেন বের হতেই চায় না। অথবা অনেকের যে তুলনায় চুল ওঠে সেই তুলনায় নতুন চুল গজায় না। যার ফলে মাথায় টাক পড়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে মাথায় নতুন চুল গজাতে মেহেদি পাতা বেশ উপকারী। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মেহেদী পাতার সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে চুলের ব্যবহার করলে এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার নিয়ম
চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার নিয়ম খুব সহজ। এজন্য প্রথমে আপনাকে মেহেদী পাতা বেটে নিতে হবে অথবা মেহেদী পাতা গুড়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টে কালো চা এবং লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে আরো ভালো ফল পেতে এই পেস্টের সাথে আমলা পাউডার এবং কফির মত অন্যান্য ভেষজ উপাদান যোগ করতে পারেন। এসব উপাদান যত বেশি যোগ করবেন তাতে চুল আরও বেশি পুষ্টি পাবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে। চুলের রং ও অনেক সুন্দর হবে।
মেহেদি পাতা ব্যবহারে কিছু সতর্কতা
মেহেদী পাতা ব্যবহারে কিছু সতর্কতা রয়েছে। মেহেদী পাতা ব্যবহার করার পূর্বে এই সতর্কতা গুলো অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আমরা চুলে মেহেদি পাতার ব্যবহার করি ঠিকই কিন্তু সতর্কতা মেনে চলি না। নানা ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর সতর্কতা মেনে মেহেদী ব্যবহার করলে আর কোন ক্ষতি হওয়া সম্ভব না। চলুন জেনে নিই মেহেদী পাতা ব্যবহারে কিছু সতর্কতা সম্পর্কে।
- আপনার ত্বকে যদি কোন ধরনের এলার্জি বা চর্মরোগ জাতীয় কোন সমস্যা থাকে তাহলে মেহেদী পাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার যদি অল্পতেই ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বা ঠান্ডা জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে মেহেদি পাতা অবশ্যই এড়িয়ে চলুন। কারণ মেহেদি পাতায় রয়েছে শীতল প্রভাব যা ঠান্ডা জনিত যে কোন সমস্যাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কপালে কিংবা মাথার তালুতে মেহেদি ব্যবহারের সময় দাগ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এই দাগ এড়াতে আপনি চুলের লাইনের পেট্রোলিয়াম জেলির কোট লাগিয়ে নিতে পারেন।
- চুলে মেহেদি পাতার পেস্ট লাগানোর পর এটি সম্পূর্ণরূপে শুকাতে দিবেন না। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে চুলে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হওয়া সম্ভবনা থাকে।
- চুলে মেহেদি পাত্তা পেটে লাগানোর পর ভালোমতো জট ছড়িয়ে নিতে হবে। না হলে চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর এই উপাদান চলে যাওয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
- মেহেদির পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগানোর সময় ধাতব বাটি এড়িয়ে চলুন। কারণ মেহেদি পাতায় থাকা উপাদান ধাতব বাটির সাথে মিশে বিক্রিয়া করে বাটির রং পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।
চুলে মেহেদি পাতা মাসে কয়বার ব্যবহার করা যায়?
চুলে মেহেদী পাতা মাসে কয়বার ব্যবহার করা যায় এটি নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নাই। চুলে এক মাসে তিন থেকে চারবার মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে এর চেয়ে বেশিও ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি চুলের কোন ক্ষতি করে না। বরং চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। চুলের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে এই মেহেদী পাতা বেশ কার্যকারী। চুল ওঠা রোদ থেকে শুরু করে চুলের খুশকি দূর করতেও এর কার্যকারিতা অনেক। তাই আপনি চাইলে মাসে বেশ কয়েকবার মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের যত্নে মেহেদি ও ডিম
চুলের যত্নে মেহেদি ও ডিম এর ব্যবহার অনেক উপকারী। স্কুলের যত্নে মেহেদীর পাতা ও ডিম ব্যবহার করার জন্য কিছু মেহেদী পাতা বেটে তার সাথে ডিমের সাদা অংশ এবং দুই চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর এই পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগাতে হবে। এবার প্রায় এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চুল যেন পুরোপুরি ভাবে শুকিয়ে না যায়। এক ঘন্টা পর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোমতো চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এই প্যাকটি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন চুলে লাগালে চুল অনেক বেশি সিল্কি হবে এবং চুলের গোড়া অনেক শক্ত ও মজবুত হবে। এছাড়াও চুলে মেহেদি পাতা ও ডিম ব্যবহার করলে অকালে চুল পড়া রোধ করবে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করবে। তাই চুলের যত্নে আপনি মেহেদী ও ডিম ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি আপনার চুলকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।
চুলের যত্নের সরিষার তেল ও মেহেদী
চুলের যত্নে সরিষার তেল ও মেহেদী অনেক বেশি উপকারী। কারণ মেহেদী পাতায় থাকা ট্রেনিন ও ভিটামিন এ চুলকে প্রাকৃতিকভাবে মসৃণ করতে সাহায্য করে। চুলে মেহেদি পাতা বেটে ব্যবহার করার সময় এর সাথে অল্প একটু সরিষার তেল ভালোভাবে পেস্ট করে চুলে আগা থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। এরপর চুল কিছুটা শুকিয়ে এলে এক ঘন্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
আরোও পড়ুন: ঠোটের কালো দাগ দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়
মেহেদি পাতা ব্যবহার করার পর অল্প একটু সরিষার তেল চুলে মাখিয়ে সারাদিন রেখে তারপরের দিন ধুয়ে ফেললে চলো প্রাকৃতিকভাবে কন্ডিশনারের কাজ করে। সরিষার তেল এবং মেহেদী উভয়ই চুলের জন্য অনেক উপকারী হওয়ায় এটি আমাদের চুলকে নানা ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এককথায় বলা যায় চুলের যত্নে ছবিে মেহেদি পাতার উপকারিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মেহেদী চুলের প্রাকৃতিক উপায়ে পিএইচ এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং তেল চুলের উৎপাদন করার গ্রন্থিকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
চুলে মেহেদি দেওয়ার পর কি শ্যাম্পু করা যায়?
চুলে মেহেদি দেওয়ার পর কি শ্যাম্পু করা যায় এটা নিয়ে প্রায় অনেকের মধ্যেই দুশ্চিন্তা কাজ করে। হ্যাঁ চুলে মেহেদি দেওয়ার পর শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়। তবে মনে রাখবেন চুলে মেহেদি দেওয়ার পর তাই ২৪-৪৮ ঘন্টা শ্যাম্পু না দেওয়াই ভালো। কারণ চুলে মেহেদির দেওয়ার পর এটি সম্পূর্ণরূপে চুলের সেট হতে কিছুটা সময় লাগে।
আর আপনি যদি চুল রং করার উদ্দেশ্যে মেহেদী ব্যবহার করে থাকেন তাহলে পরপরই শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। ২৪-৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর তবে চুলের শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। তাহলে চুলে ভালোমতো আপনার কাঙ্খিত রংটি আসবে। আর একান্তই যদি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয় তাহলে মৃদু সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
ত্বকের যত্নে মেহেদী পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে মেহেদি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো আর্টিকেলের এই অংশে। চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু ত্বকের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। মেহেদি পাতা শুধুমাত্র হাত-পা সাজানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এটি কিন্তু নয়।
মেহেদী পাতা আমাদের ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দর ত্বক পেতে সবাই চায়। আর ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করে ত্বককে আরো বেশি সুন্দর করে তুলতে মেহেদি পাতা বেশ কার্যকরী। ত্বকের যত্নে আমরা মেহেদী পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি। তো চলুন জেনে নিই ত্বকের যত্নে মেহেদি পাতা ব্যবহারের কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে।
- গ্রীষ্মকালে আমাদের পিঠ বা ঘাড়ে ঘামাচি আক্রান্ত হলে মেহেদী পাতার পেস্ট বেশ উপকারী। মেহেদি পাতা পেটে ঘামাচির উপর লাগালে এতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার অনেক উপকার হয়।
- যেকোনো ধরনের ক্ষতর উপর মেহেদী পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। ক্ষতস্থান ভালো করতে মেহেদী পতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
- অনেক সময় কোন ধরনের নোংরা ময়লা বা জীবানুযুক্ত পানি লেগে পচা রোগের সৃষ্টি হয়। দুই আঙ্গুলের মাঝে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় এই ক্ষতস্থানে মেহেদী পাতা বেটে কয়েকবার প্রলেপ দিলে ঘা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
কালো চুলে মেহেদি দিলে কি হয়?
কালো চুলে মেহেদি দিলে কি হয় তা জানার জন্য প্রশ্ন করেন অনেকেই। লম্বা কালো চুল অনেক মেয়েদেরই ভীষণ প্রিয়। তাই চুল কালো করার জন্য তারা নানা ধরনের বাজার থেকে কিনে আনার প্রসাধনী ব্যবহার করে। এতে চুলের উপকারের চাইতে ক্ষতি অনেক বেশি হয়। এ সকল প্রসাধনীতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যাল গুলো চুলের অনেক ক্ষতি করে। কিন্তু আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করেন তাহলে চুলের কোন ক্ষতি হয় না। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করার অনেক বেশি উপকারী।
আর এজন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মেহেদী। মেহেদি পাতা বেটে নিয়মিত চুলে লাগালে চুল কালো হয় আর এটি চুলের কোন ক্ষতি করে না। এটি বাজার থেকে কিনে আনা প্রসাধনীর চাইতে অনেক বেশি নিরাপদ। তাই আপনিও চাইলে মেহেদি দিয়ে খুব সহজেই চুল কালো করতে পারেন। কালো চুলে মেহেদি দিলে চুল আরো কালো হয়।
মেহেদি পাতার সাথে কি দিলে চুল কালো হয়?
মেহেদি পাতার সাথে কি দিলে চুল কালো হয় তা কালো চুল প্রেমী মেয়েদের জেনে থাকা প্রয়োজন। কারণ চুল কালো করার জন্য বাজার থেকে কিনে আনা প্রসাধনী ব্যবহার করতে চুলের মান অনেক নষ্ট হয়ে যায়। চুল মেয়েদের সৌন্দর্যের প্রধান একটি অংশ আর এই চুল যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সৌন্দর্যের আর কোন কিছুই থাকেনা। তাই চুলের যত্ন সব সময় সচেতন থাকা সকলে। বাইরের বাজার থেকে কিনে আনা প্রসাধনী ব্যবহার না করে আপনি চাইলে মেহেদী পাতা ব্যবহার করেই খুব সুন্দর ভাবে চুল কালো করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মেহেদী পাতা। এজন্য প্রথমে এক চামচ কফি ভালোভাবে অল্প একটু পানি দিয়ে ফুটিয়ে এর সাথে মেহেদি পাতা বাটা অথবা গুড়া এবং আমলকী বেটে ভালোভাবে মিস করে নিতে হবে। এই পেস্টটি সপ্তাহে অন্তত একবার চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগাতে হবে। এক ঘন্টা চুলে লাগিয়ে রেখে অপেক্ষা করার পর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অল্প কিছুদিন এরকম ভাবে ব্যবহার করলেই দেখবেন চুল অনেক বেশি কালো হয়ে গেছে।
মেহেদী মাথায় কতক্ষণ রাখতে হয়?
মেহেদী মাথায় কতক্ষণ রাখতে হয় তা আপনি জানেন কি? না জেনে থাকলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু ভালোভাবে পড়ুন। চুলে মেহেদি দেওয়ার পর এক ঘন্টা লাগিয়ে রাখাই যথেষ্ট। কারণ চুলে মেহেদি দেওয়ার পর খুব বেশি সময় ধরে শুকাতে দেওয়া যাবে না। বেশি শুকিয়ে গেলে চুলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি এক ঘন্টা রাখতে পারেন। যার ফলে চুল অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়।
আরোও পড়ুন: পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা
তবে আপনি যদি চুল কালার করতে চান সে ক্ষেত্রে এক থেকে তিন ঘন্টা লাগিয়ে রাখলেই চুলে খুব সুন্দর কালার হয়ে যায়। আর যদি আরও বেশি গারো রং করতে চান তাহলে তিন থেকে চার ঘন্টা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে চুলের রং অনেক বেশি গারো হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন কখনোই মেহেদী পাতা চুলে ৫ ঘন্টার বেশি সময় ধরে লাগিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে চুলের অনেক ক্ষতি হতে পারে। এভাবে সময় অনুযায়ী চুলে মেহেদি পাতা ব্যবহার করাই উত্তম।
শেষ কিছু কথা: চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার উপকারিতা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের চুলের মেহেদী পাতা দেওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ মেহেদী পাতা সম্পর্কে আরো নানা ধরনের বিষয়ে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url