পুঁটি মাছের ১৫ টি উপকারিতা ও ২ টি অপকারিতা
পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের পুঁটি মাছের সমস্ত প্রকার উপকারিতা ও বিভিন্ন অপকারিতা সহ পুঁটি মাছের আরও অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
পুঁটি মাছ আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর একটি মাছ। প্রায় সকল বাঙ্গালীদের বাড়িতে নিয়মিত মাছের ঝোল থেকে শুরু করে মাছের ভাজা বা মাছের বিভিন্ন পদ রান্না হয়। পুঁটি মাছ এমন একটি পুষ্টিকর মাছ যা সমস্ত ভিটামিনের একটি ভালো উৎস। চলুন জেনে নিই পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পুঁটি মাছের ১৫ টি উপকারিতা
পুঁটি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। দামে কম ছোট্ট এই মাছটিতে রয়েছে জাদুকারি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত পুঁটি মাছ খেলে শরীরের নানা জটিলতা দূর হয়। নামে খুব ছোট হলেও এর কর্মক্ষমতা অনেক বড়। পুঁটি মাছ উপকারের দিক দিয়েই অনেক বেশি কিন্তু এর অপকারিতার পরিমাণ অনেক কম।
আরো পড়ুন: পানিফলের ২৫ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
পুঁটি মাছ থেকে আপনি কতটুকু পুষ্টি উপাদান পাবেন তা নির্ভর করবে আপনার রান্নার উপর। আপনি যদি রান্নায় অতিরিক্ত তেল মসলা ব্যবহার করেন তাহলে এর গুণগত মান নষ্ট হবে। পুঁটি মাছ নানা রকম ভাবেই রান্না করে খাওয়া হয়। এই মাছের ঝোল থেকে শুরু করে ভাজা সবকিছুই বাঙ্গালীদের পছন্দের একটি খাবার। পুঁটি মাছের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে আমাদের দেশে ব্যাপক আকারে এর চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদের দেশে নদী নালা খাল বিল পুকুর সবখানেই পুঁটি মাছ চাষ করা হয়। চলুন জেনে নিই পুঁটি মাছের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে।
পুটি মাছের ১৫ টি উপকারিতা
- প্রোটিন সমৃদ্ধ
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- ভিটামিনের ভালো উৎস
- হাড় ক্ষয় রোধ করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- চোখের জন্য উপকারী
- কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়
- মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- হৃদরোগ প্রতিরোধক
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
- কম ক্যালরিযুক্ত
- হাড় মজবুত করে
- দাঁতের জন্য উপকারী
প্রোটিন সমৃদ্ধ: পুঁটি মাছ কে প্রোটিনে ঠাসা মাছ বলা হয়। কারণ পুঁটি মাছের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: পুঁটি মাছকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি খুব ভালো উৎস বলা হয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহের নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।
ভিটামিনের ভালো উৎস: পুঁটি মাছের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, মিনারেল প্রভৃতি।
হাড় ক্ষয় রোধ করে: পুঁটি মাছে থাকা প্রোটিন আমাদের পেশির গঠন এবং হাড় ক্ষয় রোধ হওয়া থেকে বিরত রাখে। একটা বয়সের পর প্রতিটা মানুষের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত পুঁটি মাছ খেলে এটি হাড় হয় হওয়া থেকে রোধ করবে। এছাড়াও পুঁটি মাছের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস যা আমাদের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পুঁটি মাছের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সব ধরনের রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
চোখের জন্য উপকারী: চোখ আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। পুঁটি মাছে থাকা ভিটামিন আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী। এটি চোখে জ্যোতি বাড়াতে এবং চোখের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পুঁটি মাছে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের শরীরে পুষ্টিযোগে শরীরকে আরো বেশি শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম করে তোলে।
ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়: পুঁটি মাছে থাকা পুষ্টি উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত পুঁটি মাছ খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়: পুঁটি মাছ বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাচ্চাদের শুরু থেকেই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পুঁটি মাছ রাখতে হবে। তাহলে তাদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: পুঁটি মাছের থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। মরণব্যাধী এই ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় পুঁটি মাছ রাখতে হবে।
হৃদরোগ প্রতিরোধক: পুঁটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ৯ টি অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হৃদরোগের জন্য এটি বেশ উপকারী।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে: সপ্তাহে অন্তত একদিন পুঁটি মাছ খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে থাকা প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড তাছাড়া আরও পুষ্টি উপাদান ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কম ক্যালরিযুক্ত: পুঁটি মাছকে কম ক্যালরিযুক্ত মাছ বলা হয়। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় এটি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় পুঁটি মাছ রাখতে পারে।
হাড় মজবুত করে: বয়সের একটা সময় যে প্রত্যেকের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পুঁটি মাছ হাড় ক্ষয় রোধ করে হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এটি শুধু বয়স্ক লোকদের জন্যই প্রযোজ্য তা কিন্তু নয় এটি ছোট বাচ্চাদের হাড় মজবুত করতেও বেশ কার্যকরী। তাই বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত সকলের জন্যই পুঁটি মাছ বেশ উপকারি।
দাঁতের জন্য উপকারী: পুঁটি মাছ যে শুধুমাত্র আমাদের হাড় শক্ত করে এমনটি কিন্তু নয় এটি আমাদের দাঁতের জন্য বেশ হতে পারে। বাচ্চাদের দাঁ ত শক্ত মজবুত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত পুঁটি মাছ খেলে দাঁতের গোড়া পুষ্টি পায় এবং দাঁত মজবুত হয়।
পুঁটি মাছের ২ টি অপকারিতা
পুঁটি মাছের ২ টি অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো আজকের এই আর্টিকেলে। আমরা জানি যে কোন জিনিসের উপকারের পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। তাই উপকারিতা জানার পাশাপাশি প্রতিটা জিনিসের অপকারিতা সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। চলুন জেনে নিই পুঁটি মাছের ২ টি অপকারিতা সম্পর্কে।
- পুঁটি মাছ অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর। তাই এটি সপ্তাহে একদিন খাওয়াই যথেষ্ট।
- পুঁটি মাছ ঝোল করে কম মসলা দিয়ে রান্না করা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী কিন্তু একে অতিরিক্ত মাত্রায় তেল মশলা ব্যবহার করে রান্না করলে বা ভাজলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ
পুঁটি মাছের পুষ্টিগণ অনেক বেশি। আকারে ছোট বলে এই মাছের পুষ্টি কম এটা ভাবা মোটেও ঠিক নয়। কারণ আকারে ছোট দামে কম এই মাছটিতে রয়েছে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এর আঁকা ছোট কিন্তু পুষ্টিগুণ অনেক বড়। চলুন জেনে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্ক।
আরো পড়ুন: ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম
প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছের রয়েছে
- প্রোটিন ১৯.০
- ফ্যাট ২.০
- লোহা ০.৩
- ক্যালসিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১৯০ মিলিগ্রাম এবং
- পানি ৭৫.৫ ভাগ
পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য
পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই এই মাছ চিনতে পারবেন। পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই পুঁটি মাছের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
- পুটি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম পুন্টিয়াস সফোরে (Puntius sophore)
- এ মাছটি ছোট আকারের হয় এবং এর পেছনের অংশ সরু এবং রূপালী রংয়ের হয়।
- এই মাছটি আকারে প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এই মাছের কানকো পাখনার পেছনের পৃষ্ঠে পাখনার উপস্থিতি এবং পৃষ্ঠ পাখনার নিচে বক্ষ পাখনার অবস্থান রয়েছে।
- এ মাছের উপরের অংশটি উজ্জ্বল ছাই ও সবুজাভ বর্ণের হয়ে থাকে এবং এর নিচের অংশ সাদা হয়।
- এই মাছের খুব সুন্দর কালো দুটি ফোটা থাকে। একটি ফোটা বড় এবং একটি ফোঁটা ছোট। ছোট ফোটাটি কানকোর পেছনের দিকে এবং বড় ফোটাটি পায়ু পাখনার ওপরে থাকে।
- পুঁটি মাছ জলাশয়ের সাধারণত মধ্যস্তরের খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে। তাই এটি ছোট অথবা বড় সব ধরনের জলাশয় চাষ করা যায়। এটি যেকোনো ছোট প্রজাতির মাছের সঙ্গে অথবা কাফ জাতীয় মাছ জাতীয় মাছের সাথে একসাথে মিশ্র চাষ করলেও এর উৎপাদন ভালো হয়।
- এই মাছ বছরে দুইবার প্রজনন দেই এবং বর্ষাকালে এর প্রজনন অনেক বেশি হয়।
- প্রজনন এর সময় পুরুষ মাছের দেহের উভয় পাশেই লাল গাঢ় রঙের দাগ দেখা যায়।
- উপকারিতার দিক দিয়ে পুঁটি মাছ রয়েছে প্রথম সারিতে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও এ মাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন।
সরপুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য
সরপুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাবো পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশ। পুঁটি মাছ এবং সরপুঁটি মাছ নামে কিছুটা একই রকম হলেও অল্প একটু বাধ্য হয়েছে। পুঁটি মাছ আকারে ছোট হলেও সরপুঁটি মাছ আকারে কিছুটা বড়। চলুন জেনে নিই সরপুঁটি মাছের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
- সরপুঁটি মাছের দেহ কিছুটা চ্যাপ্টার এবং মাছের রং রূপালী বর্ণের
- সরপুঁটি মাছ আকারের পর ৬০ সেন্টিমিটার বা ২৩.৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
- সাদা বা রূপালী বর্ণের এই মাছটির মুখে দুই জোড়া স্পর্শী বিদ্যমান।
- কানকোর উপর সোনালী দাগ বিশিষ্ট এই এই মাছের পাখনার রং কিছুটা লালচে বা কমলা রঙের।
পুঁটি মাছ কত প্রকার
পুঁটি মাছ কত প্রকার তা যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলে যে অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। দেশীয় পুঁটি এবং থাই পুঁটি আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায়। দেশীয় যে পুঁটি সেগুলো সাধারণত Puntius গণের বিভিন্ন প্রজাতির আর থাই পুঁটি গুলো সাধারণত Barbunnymus গণভক্ত। এই দুই ধরনের পুঁটির মধ্যে আমাদের দেশীয় পুঁটির স্বাদ এবং পুষ্টির মান অতুলনীয়। আমাদের দেশীয় পুঁটির থাই পুঁটির চেয়ে অনেক বেশি সেরা। কিন্তু বাজারে যে সকল পুঁটি পাওয়া যায় তা বেশিরভাগই হচ্ছে থাই পুঁটি।
পুঁটি মাছের চাষ পদ্ধতি
পুঁটি মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অং থাইশে জানাবো। পুঁটি মাছ আমাদের দেশের খালে বিলে জলাশয় নদীতে সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায়। এই মাছটি দেখতে খুব ছোট হলেও এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই মাছ চাষ করা হয়। যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল, ভারত, মায়ানমার এমনকি চিনেও এই মাছ ব্যাপক আকারে চাষাবাদ হয়। এটি মূলত মিঠা পানির মাছ। আমাদের দেশের খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর ,বাওর, জলাভূমি, ধানক্ষেত সহ যেকোনো ছোট জলাশয় ও এটি চাষাবাদ করা যায়।
আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির পাশে থাকা ছোট্ট পুকুর বা জলাশয় অথবা ছোট্ট কোন খালেও এই মাছ চাষ করতে পারেন। এই মাছটি চাষ করতে অনেক বড় কুকুর বা জলাশয় এর প্রয়োজন হয় না এছাড়া এটি প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের প্রতি ব্যাপক দক্ষ এবং সম্পূরক খাবারের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও এই মাছের আরও একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে এটি যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি তাই চাষিরা এই মাছ চাষাবাদ করতে অনেক বেশি আগ্রহী।
পুঁটি মাছ চাষ করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না এবং এটি খুব সহজেই অল্প পুঁজি ব্যবহার করে চাষ করা যায় তাই কৃষকেরা এটি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে এই মাছের চাহিদা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটি আমাদের দেশে অনেক চাষাবাদ হচ্ছে বলে প্রায় সারা বছর এই মাস পাওয়া যায়। পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলে চলুন জেনে নিই পুঁটি মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
- চাষের জন্য পুকুর বাছাই
- চাষের সময়
- পোনা ছাড়ার নিয়ম
- পুটি মাছ চাষাবাদ পদ্ধতি
- খাবার প্রয়োগ
- সার প্রয়োগ
- পুটি মাছের পরিচর্যা
চাষের জন্য পুকুর বাছাই: পুঁটি মাছটি মূলত মিঠা পানির মাছ বলে এটি মিঠা পানিতে চাষাবাদ করা হয়। এটি সাধারণত আমাদের দেশের খাল বিল নদী নালা এসব জায়গায় চাষ করা হয়। তবে এটি ছোট পুকুর অথবা জলাশয় ও চাষাবাদ হচ্ছে। পুঁটি মাছ চাষ করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে একটি পুকুর উপনির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখবেন পুকুরের পাড় যেন শক্ত এবং উঁচু হয় অর্থাৎ বন্যা মুক্ত হতে হবে। এছাড়া পুকুরে পুঁটি মাছ চাষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পুকুরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস এবং জলজ আগাছা মুক্ত থাকে।
চাষের সময়: বছরের যে কোন সময় অর্থাৎ সারা বছর এটি চাষাবাদ করতে পারেন। কোন ছোটখাটো পুকুর কিংবা জলাশয়ে মাছ ছাড়ার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন সেটি যেন সকালে অথবা সন্ধ্যায় হয়। কারণ সকাল এবং সন্ধ্যায় তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে ফলে মাছ ভালো থাকে। না হলে মাছ মরে যাওয়া সম্ভব না বেড়ে যায়। পুঁটি মাছ সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে ডিম পারে যার ফলে এই সময়টিকে পুটি মাছ চাষ করার সর্বোত্তম সবাই বলে মনে করা হয়।
পোনা ছাড়ার নিয়ম: যেকোনো ধরনের ছোটখাটো জলাশয়ের পুঁটি মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সর্বপ্রথম পোনা সংগ্রহ করতে হবে। আপনার আশেপাশে থাকা যে কোন নার্সারি অথবা বড় কোন পুকুর থেকে আপনি পোনা সংগ্রহ করতে পারেন। পোনা সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে পোনাটি যেন সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয়।
পুঁটি মাছ চাষাবাদ পদ্ধতি: পুঁটি মাছ সাধারণত বড় পুকুর কিংবা নদীতে বছরে দুইবার করে ডিম দেয় বলে এতে আলাদাভাবে পোনা মজুদ করার প্রয়োজন হয় না। পোনা ছাড়ার সময় খেয়াল রাখবেন পোনা পরিবহন করার ব্যাগে যেন অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে। এরপর ব্যাগের মুখ খুলে অল্প অল্প করে ব্যাগে পানি দিতে হবে এবং ব্যাগের ভেতরে পানি অল্প অল্প করে পুকুরে ফেলতে হবে। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় ধরে এরকম করে ওনাকে প্রথমে পুকুরের পানির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে করে পুকুরে পুঁটি মাছের পোনা ছেড়ে দিতে হবে।
খাবার প্রয়োগ: মাস দ্রুত বড় করতে চাইলে নিয়মিত খাবার দিতে হবে। মাছ প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে শেওলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। পুঁটি মাছ এমন একটি মাছ যা সব ধরনের খাবার খায় তাই চাষ করার ক্ষেত্রে একে আলাদা ভাবে খাবার দেওয়া তেমন কোন প্রয়োজন পড়ে না। তবে মাছ দ্রুত বড় করতে চাইলে পুকুরে নিয়মিত খাবার দিতে হবে।
সার প্রয়োগ: পুঁটি মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত পুকুরে ইউরিয়া এবং অন্যান্য স্যার মাঝেমধ্যে দিতে হবে। তাহলে পানির গুনাগুণ বজায় থাকবে এবং মাছের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। এই পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে মাছের বৃদ্ধি আরো অনেক ভালো হবে।
আরো পড়ুন: ঠোটের কালো দাগ দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায়
পুটি মাছের পরিচর্যা: আপনি যদি পুঁটি মাছ চাষ করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পুকুর থেকে রাক্ষুসের মাছ দূর করতে হবে। রাক্ষুসের মাছ যেমন শোল মাছ, টাকি মাছ, গজার, বোয়াল, মাগুর ইত্যাদি মাছ প্রথমে পুকুর থেকে দূর করতে হবে না হলে এই মাছ পুকুরের ছাড়া পুঁটি মাছের পোনা খেয়ে ফেলবে। তাই মাছ ছাড়ার পূর্বে আপনাকে পুকুরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে সকল মাছ দূর করতে হবে। পুকুর কিংবা জলাশয়ের তলদেশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মাছের ভালোমতো যত্ন নিতে হবে মনে রাখবেন বৃষ্টির দিনে অথবা মেঘলা আবহাওয়া মাছের খাবার বেশি একসাথে দেওয়া যাবে না। একটু যত্ন নিলে খুব সহজেই আপনি অধিক সংখ্যা পুটিঊ মাছ চাষ করতে পারবেন।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ পুঁটি মাছের পুষ্টির উপকারিতা, পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য , পুঁটি মাছের প্রকারভেদ এছাড়াও পুঁটি মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পরে আপনি পুঁটি মাছ সম্পর্কিত অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url