ত্রিফলার ২৫ টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ত্রিফলা খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও এটি খাওয়াসহ আরো নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

ত্রিফলার-উপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম

ত্রিফলা মূলত একটি ভেষজ জাতীয় উপাদান। স্বাস্থ্য উপকারী এই ভেষজ উপাদানে রয়েছে নানা রোগের প্রতিকার। সেই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসায় ত্রিফলা ব্যবহার হয়ে আসছে। মোট তিন ফলের সমষ্টি নিয়ে এটি তৈরি। যেমন আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ত্রিফলা। চলুন জেনে নিই ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

ত্রিফলার ২৫ টি উপকারিতা 

ত্রিফলার উপকারিতা এতটাই বেশি যে আপনি জানলে নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। এটি মূলত একটি ভেষজ জাতীয় উপাদান। সেই বহুকাল আগে থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিকারক হিসেবে ত্রিফলা ব্যবহার হয়ে আসছে। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়া মূলত এই তিনটি ফলের সমন্বয় করে ত্রিফলা তৈরি করা হয়েছে। এই তিনটি উপাদানে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

বিশেষত আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এটি বেশি ব্যবহার করা হয়। ত্রিফলাই রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের শরীরের যে কোন সমস্যা দূর করতে জাদুর মত কাজ করে। ত্রিফলাই থাকা আমলকি, হরিতকী এবং বহেরায় এই তিনটি ফলেই রয়েছে আলাদা আলাদা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এক কথায় বলা যায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ত্রিফলার জুড়ি মেলা ভার। 

ত্রিফলা বাজারে ক্যাপসুল, পাউডার জুস বা বিভিন্ন ধরনের নির্যাস আকারে কিনতে পাওয়া যায়। ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ত্রিফলার ২৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন জেনে নিই।

ত্রিফলার ২৫ টি উপকারিতা

  • হজমে সহায়তা করে 
  • ডিটক্সিফিকেশন 
  • কোলেস্টেরল কমায় 
  • মাথাব্যথা দূর করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
  • ওজন কমায় 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ  
  • ত্বক ভালো রাখে
  • চোখ ভালো রাখে 
  • প্রদাহ কমায় 
  • স্ট্রেস কমায় 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 
  • কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে 
  • দাঁতের সমস্যা ও গহ্বর থেকে রক্ষা করে
  • টাইপ টু ডায়াবেটিস কমায় 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  • জীবাণু বিরোধী
  • ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে 
  • যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
  • কিডনি সবল রাখে 
  • হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে 
  • শ্বাসকষ্ট দূর করে 
  • ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়
  • বাত ব্যথার প্রকোপ কমায়

হজমে সহায়তা করে: ত্রিফলা মূলত ব্যতিক্রমধর্মী বিশেষ পাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত একটি উপাদান। এটি আপনার অন্ত্রের গতিবেধি নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার ফলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যকর পাঁচ তন্ত্র বজায় রাখতে সহায়তা করে। তিন ফলের সংমিশ্রণের ফলে এতে থাকা উপাদান আমাদের অন্তরকে উদ্দীপিত করে যার ফলে অন্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য অপসারণ করতে সহজ করে তোলে। তাই ত্রিফলা খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ডিটক্সিফিকেশন: ত্রিফলাকে আমাদের শরীরের জন্য প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার বলা হয়। কারণ এটি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক উপায়ে ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। ত্রিফলায় থাকা বিভিন্ন উপাদান আমাদের লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি আমাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থগুলো দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্রিফলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের লিভারকে রক্ষা করতে সর্বোত্তম রক্ষক হিসেবে কাজ করে।

কোলেস্টেরল কমায়: নিয়মিত ত্রিফলা খেলে আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। এটি আমাদের শরীরে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ত্রিফলা রাখতে পারেন। 

মাথা ব্যথা দূর করে: মাথাব্যথার মতো বিরক্তি কর একটি সমস্যা যেন বর্তমানে প্রায় প্রতিটা মানুষেরই। আর এই মাথাব্যথা দ্রুত সমাধান পেতে চাইলে আপনি ত্রিফলা খেতে পারেন। কেউ কেউ মনে করেন মাইগ্রেনের সমস্যাও নাকি সমাধান দিতে পারে এই ত্রিফলা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ত্রিফলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এর ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, অসুখ-বিসুখ এবং ঠান্ডা জনিত অসুখ প্রতিরোধ করে।

ওজন কমায়: ত্রিফলা ওজন নিয়ন্ত্রণে দারুন কার্যকরী। এটি আমাদের শরীরে থাকা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সহায়তা করে এবং আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা হালকা রেচক প্রভাব আমাদের পাচক তন্ত্র পরিষ্কার করে যার ফলে যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তা কমাতে সহায়তা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ত্রিফলার রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ফ্লাভনয়েড এবং পলিফেনল সহ আরো বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ত্রিফলায় থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিক্যাল এর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যার ফলে বার্ধক্য জনিত রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন নিয়মিত ত্রিফলা খেলে আমাদের শরীর ও মন সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

ত্বক ভালো রাখে: আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে ত্রিফলার জুরি মেলা ভার। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি আমাদের শরীরের নানা ধরনের ব্রণ, ফুসকুড়ি, খোসপাচড়া বা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে। এছাড়াও নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি আমাদের ত্বকের জেল্লা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে।

চোখ ভালো রাখে: বর্তমানে অতিরিক্ত সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইল দেখার কারণে আমাদের চোখের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যার ফলে চোখে কম দেখা থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ত্রিফলা খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়। যেমন চোখে ছানি পড়া, গ্লকোমা, কর্নিয়াল ডিস্ট্রোফি, কনজাংটিভাইটিস, চোখের প্রদাহ এছাড়াও চোখের আরো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

প্রদাহ কমায়: আপনি যদি কোন প্রদাহ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং সেই সমস্যা দূর করার জন্য প্রাকৃতিক কোনো উপায় খোঁজেন তাহলে ত্রিফলা হতে পারে আপনার জন্য খুব ভালো ভেষজ। কারণ তিন ফলের সমষ্টি মিলে তৈরি ত্রিফলায় রয়েছে প্রদাহ কমানোর জাদুকরি কার্যকারিতা। এতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং প্রদাহ দূর করে।

স্ট্রেস কমায়: ত্রিফলা এমন একটি কার্যকরী ভেষজ উপাদান যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ত্রিফলা নিয়মিত খেলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। তাই আপনি যদি মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ত্রিফলা রাখতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ত্রিফলা সেই প্রাচীনকাল থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা বা অনিয়মিত মলত্যাগ সহ পেটে যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ত্রিফলায় থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পলিফেনাল এবং গ্যালিক এসিড উপাদান শক্তিশালী ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। এটি নিয়মিত খেলে লিম্ফোমা, পেটের ক্যান্সার, অগ্নাশয় এর ক্যান্সার, মলাশয়ের ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার প্রভৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। একদল গবেষক টেস্ট টিউব অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা করার জন্য আরো গবেষণা করছেন বলে জানা যায়।

দাঁতের সমস্যা ও গহ্বর থেকে রক্ষা করে: ত্রিফলা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা আমাদের মুখের যেকোনো সমস্যার প্রতিকার করে মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অন্তরে এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আমাদের মুখে প্লাক তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ত্রিফলার তৈরি মাউথ অফ প্লাগ তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং মাড়ির প্রদাহ দূর করা যায়।

টাইপ টু ডায়াবেটিস কমায়:রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে টাইপ টু ডায়াবেটিস দীর্ঘস্থায়ী হয় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। ত্রিফলায় থাকা উপাদানগুলো কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্রিফলায় থাকা আমলকি এবং বহেড়া এ দুটি প্রধান ফলে ডায়াবেটিসের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই এগুলো আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্রিফলা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে যার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া নার্ভের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে মোকাবেলা করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: ত্রিফলায় থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আমাদের রক্তনালীর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে বলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিকিৎসকরা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ত্রিফলা ব্যবহার করে থাকে।

জীবাণু বিরোধী: ত্রিফলা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় অনেক অসুখের সংক্রমণ আটকানোর প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ত্রিফলা একটি জীবাণুবিরোধী উপাদান এটি বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। কিছু কিছু জীবাণু যেমন: এসচেচিয়া কলি, সালমেনেলা টাইফি, স্টাফাইলোকোকাস অরেয়াস, সুডোমোনাস এরেগিনোসা, ভিব্রিও কোলেরি প্রভৃতি জীবাণুর বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকারিতা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ক্ষত সারাতে সাহায্য করে: ত্রিফলায় থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিব্রেটেরিয়াল উপাদানে ভরপুর হওয়ায় এটি নিয়মিত খেলে শরীরের যে কোন জায়গার ক্ষত সারাতে খুব ভালো কাজ করে। ছোট বাচ্চাদের পড়ে যেয়ে যে যেকোনো ক্ষত সারাতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ত্রিফলা ব্যবহার করা হয়।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি আমাদের গ্যাস্ট্রিক এবং আলসার হওয়ার প্রবণতাকে অনেক বেশি কমিয়ে দিতে পারে। কারণ ত্রিফলায় থাকা আমলকি আমাদের হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে যার ফলে ইস্টমাক অ্যাসিগে ব্যালেন্স বজায় রাখে।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহুর রচিত 'এহইয়াউল উলুম নামক গ্রন্থে' মানুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য যে চারটি উপাদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে ত্রিফলা অন্যতম একটি উপাদান। আমাদের প্রজনন তন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ত্রিফলার উপকারিতা অনেক বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা। এটি আমাদের প্রজনন অঙ্গ গুলোর Ph লেভেল কে নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে প্রজনন অঙ্গকে আরো বেশি শক্তিশালী করে। ত্রিফলার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং সেই সাথে মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়মিত করে। তাই বলা যায় প্রজনন তন্ত্রের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ত্রিফলার জুড়ি মেলা ভার।

কিডনি সবল রাখে: বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিডনির সমস্যা দূর করতে ত্রিফলা একটি চমৎকার ভেষজ উপাদান বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। কারণ ত্রিফলা এমন একটি উপাদান যা আমাদের রেচনতন্ত্রের কার্যাবলীতে সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের অন্ত্রে পরিমাণমতো পানি সরবরাহ পায়। এছাড়াও ত্রিফলা আমাদের মূত্র সংবেদনতন্ত্র ও রেচনতন্ত্রের ভারসাম্যপূর্ণ স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার ফলে আমাদের দেহ শীতল থাকে এবং উচ্চ তাপমাত্রায় হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে: সারা বিশ্বে হৃদরোগ এমন একটি ঘাতক ব্যাধি যার ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে বলে জানা যায়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৩০ সালে এই সংখ্যা যে দাঁড়াবে প্রায় আড়াই কোটিতে। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ত্রিফলা খান তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শ্বাসকষ্ট দূর করে: আপনি জানলে অবাক হবেন যে ত্রিফলা আমাদের শ্বাসনালী থেকে সব ধরনের শ্লেষ্মা নিঃসরণ করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের কর্মক্ষমতা অনেক বেশি স্বাভাবিক থাকে। এটি আমাদের দেহ এবং শ্বাসনালীতে এলার্জির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে অ্যাজমা রোগের চিকিৎসায় এটি খুব উপকারী বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। এটি আমাদের সাইনাস থেকে শ্লেষ্মা বের করতে সাহায্য করে যার ফলে সাইনোসাইটিস জনিত মাথাব্যথা দূর হয়।

ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়: নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি আমাদের শরীরের রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং সারা দেহে পুষ্টি যোগান দিতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া এবং সেল ডি জেনারেশনের অন্যতম একটি কারণ ফ্রিরেডিক্যাল কে ধ্বংস করে এবং আমাদের ত্বকের মৃতকোষ কমায়। যার ফলে নিয়মিত ত্রিফলা খেলে ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ দূর হয়, বলিরেখা কমে, মলিনতা দূর করে ত্বকের লাবণ্য ধরে রেখে আপনাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় ও তারুণ্যদীপ্ত করতে সহায়তা করে।

বাত ব্যথার প্রকোপ কমায়: ত্রিফলায় এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি বাত ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত ত্রিফলা খেতে পারেন। কারণ নিয়মিত ত্রিফলা খেলে ইনফ্লেমেশন কমে যায় যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই জয়েন্টের ব্যথা কমতে থাকে। যার ফলে আপনার শরীর অনেক বেশি সচল হয়। বাত ব্যথায় সেই যুগ যুগ ধরেই ত্রিফলা ব্যবহার হয়ে আসছে।

ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম 

ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে প্রত্যেকের জেনে তারপর ত্রিফলা খাওয়া উচিত। আমরা জানি ত্রিফলা অনেক উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। তবে নিয়ম মেনে এটি খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। প্রতিটা জিনিস খাবার পড়বে অবশ্যই তার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। নিয়ম না জেনে খাবার খেলে উপকারের বদলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই তার নিয়ম মেনে তারপর খাবেন। ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

  • এক কাপ পানিতে এক চা চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো বা ত্রিফলা চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। 
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন ‌
  • ত্রিফলার বড়ি বা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। আপনি চাইলে প্রতিদিন সকালে একটি করে ত্রিফলার বড়ি বা ট্যাবলেট খেতে পারেন।
  • সকালে খালি পেটে ত্রিফলা খেলে খুব বেশি উপকার পাওয়া যায়। 
  • বাজার থেকে ত্রিফলার ক্যাপসুল পাউডার বা চূর্ণ কেনার পূর্বে অবশ্যই এর তারিখ দেখে শুনে নিবেন।
  • এছাড়াও ত্রিফলা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়া শুরু করুন। কারন আপনার শরীরের অবস্থা কেমন আছে তা জেনে তারপর ত্রিফলা খাওয়া শুরু করা উচিত। চিকিৎসকের কাছে গেলে আপনার শরীরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপর আপনাকে ত্রিফলা খাওয়ার পরামর্শ দিবেন তারা। তাই ত্রিফলা খাওয়ার শুরু করার পূর্বে অবশ্যই নিয়ম গুলো মেনে চলবেন। তাহলে এর উপকারিতা পাবেন।

ত্রিফলা কি

ত্রিফলা কি সেটি সম্পর্কে প্রত্যেকের জেনে থাকা উচিত। কারণ ত্রিফলা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভেষজ একটি উপাদান যা সেই আদিমকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আছে। আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান এবং আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত ত্রিফলা খাবার শুরু করুন। কারণ ত্রিফলায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে সব ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।

ত্রিফলা-কি

এটি আমাদের শরীরের ওজন কমানো থেকে শুরু করে লিভারের যত্নে, ত্বকের যত্নে, চুলের যত্নে, দাঁতের যত্নে এছাড়াও আরো নানা স্বাস্থ্য উপকারিতায় সেই আদিমকাল থেকে ব্যবহার হয়েছে। ত্রিফলা মূলত আমলকি বা আমলা, হরিতকী ও বহেড়া এই তিনটি হল দ্বারা গঠিত একটি ভেষজ উপাদান। আর এই তিনটি উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যার ফলে ত্রিফলা আমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগের একটি সুন্দর সমাধান হিসেবে কাজ করে। চলুন জেনে নিন আমলকিতে ব্যবহৃত তিনটি ফল সম্পর্কে। 

ত্রিফলায় ব্যবহৃত তিনটি ফল 

  • আমলকি বা আমলা 
  • হরিতকী এবং 
  • বহেড়া

আমলকি বা আমলা: আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ক্যারোটিন এবং জিংক। যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি সঠিক রাখতে, হাড় মজবুত করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আমলকি খেতেও বেশ সুস্বাদু এবং এর উপকারিতাও অনেক। 

হরিতকী: হরিতকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড ও ট্যানিন যা আমাদের জন্ডিস, চোখের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের সমস্যা, হার্টের সমস্যা থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হরিতকী ত্রিফলার গুনাগুন আরো বেশি বাড়িয়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুন: পটল বীজের ১০ টি উপকারিতা ও ২ টি অপকারিতা

বহেড়া: বহু গুণাগুনে ভরপুর এবং নানা উপকারিতা সম্পূর্ণ একটি ভেষজ হচ্ছে বহেড়া। এই গাছের বাকল থেকে ছাল, বীজ থেকে ফল সবকিছুই আমাদের রোগ নিরাময়ের জন্য বেশ উপকারী। বহেড়ায় থাকা ঔষধি গুনাগুন গুলো আমাদের কৃমি সমস্যা, আমাশয়, যৌন সমস্যা, চুল পড়া সহজ আরো নানা সমস্যার সমাধান দিতে পারে এক নিমিষেই। ত্রিফলাই থাকা মূল তিনটি উপাদানের মধ্যে একটি হচ্ছে বহেড়া। এই বহেড়া ত্রিফলার উপকার এবং ঔষধি গুনাগুনকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ত্রিফলায় থাকা আমলকি হরিতকির মত বহেড়াও একটি অধিক গুনাগুন সম্পূর্ণ উপাদান। আর এই তিনটি উপাদান একসাথে মিলে তৈরি হয় ত্রিফলা।

ত্রিফলা তৈরির নিয়ম

ত্রিফলা তৈরীর নিয়ম অনেক সহজ। আপনি চাইলেই আপনার হাতের কাছে থাকা তিনটি ফলের সমন্বয় ঘটিয়ে ত্রিফলা তৈরি করতে পারেন। সেই জন্য আপনার প্রয়োজন আমলকি, হরিতকি এবং বহেড়া এই তিনটি ফল। ত্রি অর্থ তিন এবং ফলা অর্থ ফল অর্থাৎ তিন ফলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যা তৈরি হয় তাই ত্রিফলা। আর এই তিন ফল একসাথে মিশে তিন ফলের গুনাগুন একত্রিত হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

ত্রিফলা তৈরির জন্য আপনাকে এর সঠিক নিয়ম জানতে হবে। ত্রিফলা তৈরীর সঠিক নিয়ম হচ্ছে এটি তৈরি করার জন্য আপনি একটি পাত্রে চার ভাগ আমলকি, এক ভাগ হরিতকি এবং দুই ভাগ বহেড়া নিয়ে এটি ভালোভাবে চূর্ণ করে নিতে হবে। আর এই উপায়ে ত্রিফলা তৈরি করা হয়। ত্রিফলা এভাবে তৈরি করলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ত্রিফলা খাওয়া যেমন উপকারী ঠিক তেমনি এর খাওয়ার নিয়ম জানাও প্রয়োজনীয়।

ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে তারপর ত্রিফলা খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আমরা জানি, ত্রিফলা অনেক গুনাগুন সম্পূর্ণ ভেষজ জাতীয় একটি উপাদান। আর এইসব ভেষজ গুলো আমাদের শরীরে ভালোভাবে শোষণের জন্য এটি সকালে খালি পেটে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ত্রিফলা খাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে সকালে খালি পেটে খাওয়া। আপনি চাইলে খাবারের আগে গরম পানি সাথে ত্রিফলা পাউডার মিশিয়ে চায়ের মত করে খেতে পারেন। এটি আরো বেশি স্বাস্থ্যসম্মত এবং গুণাগুণ সম্পন্ন হবে।

ত্রিফলা কাদের খাওয়া উচিত নয়

ত্রিফলা কাদের খাওয়া উচিত নয় তা অবশ্যই জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়া সম্ভাবনা থাকে না। চলুন জেনে নেই ত্রিফলা কাদের খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে। 

সাধারণত যাদের লাইফ স্টাইল কাচের মত অর্থাৎ যাদের জিন মিউটেশনের সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ত্রিফলা খাওয়া উচিত নয়। 

আপনার যদি গ্যাস অথবা ডায়রিয়ার মত সমস্যা থাকে তাহলে ত্রিফলা খাওয়া যেতে পারে তবে খেয়াল রাখতে হবে এটি আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাইড করছে কিনা। যদি ডিটক্সিফাইড করে তাহলে এই সময় কখনই ত্রিফলা খাওয়া যাবে না। 

ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায়

ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায় এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে অনেকেই। আপনাদের এই দুশ্চিন্তা দূর করব আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। চিকিৎসকরা সাধারণত ত্রিফলা খালি পেটে সকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন হাফ চা চামচ ত্রিফলা পাউডার চায়ের মতো করে সকাল এবং বিকেল দিনে দুইবার খাওয়া যায়। আপনি চাইলে ত্রিফলা পাউডার এর সাথে অল্প একটু ঘি অথবা অল্প একটু মধুর সাথে মিশিয়ে দুইবার খেতে পারেন। তবে একটানা অনেক দিন না খেয়ে মাঝে মাঝে কিছুটা গ্যাপ দিয়ে খাবে। কোন কিছুই একটানা প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়।

ত্রিফলা কি প্রতিদিন খাওয়া যায় 

ত্রিফলা কি প্রতিদিন খাওয়া যায় কিনা সেই সম্পর্কে জানাবো আর্টিকেলের এই অংশে। প্রতিদিন ত্রিফলা খাওয়া যাবে কিনা সেটি পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থার উপর। কারণ প্রত্যেকে শারীরিক অবস্থা এবং শারীরিক সক্ষমতা একই রকম নয়। তাই প্রতিদিন ত্রিফলা খাওয়া যাবে কিনা সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থার উপর। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে আপনার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর ত্রিফলা খাওয়া শুরু করুন। 

ত্রিফলা অনেক উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। এই উপাদানের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে সেটি মেনে তারপর খাওয়া শুরু করতে হবে। তবে ত্রিফলা অবশ্যই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে প্রত্যেকের জেনে থাকা উচিত।

ত্রিফলার পানির উপকারিতা

ত্রিফলার পানির উপকারিতা অনেক বেশি। নিয়মিত ত্রিফলা ভিজিয়ে পানি খেলে আমাদের দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। এছাড়াও দাঁতের হলদে ভাব দূর করা থেকে শুরু করে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, এছাড়াও মুখের যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে ত্রিফলা পানির জুড়ি মেলা ভার। আপনি জানলে অবাক হবেন আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও ত্রিফলা ভেজানো পানির ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি প্রতিদিন সকালের ত্রিফলা ভিজানো পানি খেয়ে দিন শুরু করতে পারেন। এতে স্বাস্থ্য এবং সবকিছু ঠিক থাকবে।

ত্রিফলার অপকারিতা 

ত্রিফলার অপকারিতা সম্পর্কে প্রত্যেকের জেনে থাকা উচিত। শুধুমাত্র ত্রিফলায় নয় যে কোন খাবারের মধ্যেই উপকারের পাশাপাশি এর অপকারিতা ও রয়েছে। আমরা উপকারের কথা ভেবে যে কোন জিনিস খেয়ে নিই ঠিকই কিন্তু এর অপকারিতা না জানার ফলে অনেক সময় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যেটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতি করে। তেমনি ত্রিফলাতেও উপকারের পাশাপাশি রয়েছে এর কিছু ক্ষতিকারক দিক। ত্রিফলার ক্ষতিকারক দিকগুলো কিছু কিছু প্রমাণিত হয়েছে আবার কিছু কিছু এখনো প্রমাণিত হয়নি। 

আমরা জানি, ত্রিফলা অনেক স্বাস্থ্য উপকারী একটি ঔষধিও উপাদান। উপকারের কথা বিবেচনা করে কোন দিক চিন্তাভাবনা না করে অনেক সময় ত্রিফলা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি। যে কোন জিনিস বেশি মাত্রায় ফেলে সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় খেলে এটি আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকারী। ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ত্রিফলার কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

  • প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মাত্রায় ত্রিফলা খেলে আমাদের গ্যাস ও ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ত্রিফলা খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যদিও এটি কোন গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। 
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ত্রিফলা খেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব এবং শারীরিকভাবে অস্বস্তি হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ত্রিফলা খাওয়ার ফলে আরো নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 
  • অন্য কোন জটিল অসুখের জন্য ওষুধ গ্রহণ করলে ত্রিফলা ওষুধের গুনাগুন নষ্ট করে দিতে পারে। তাই কোন ওষুধ খাওয়ার পর ত্রিফলা খাওয়া যাবে কিনা সেটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খেতে হবে। 
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ময়েদের জন্য ত্রিফলা খাওয়া উচিত নয়। 
  • ত্রিফলা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খেতে হবে। কারণ প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা একরকম নয়। শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করে তারপর ত্রিফলা খাওয়া শুরু করতে হবে। 

চুলের যত্নে ত্রিফলার ব্যবহার 

চুলের যত্নে ত্রিফলার ব্যবহার সেই আদিম যুগ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। চুল পড়া কমিয়ে চুলের স্বাস্থ্য ভালো করার একটি প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে ত্রিফলা। ক্লিনিকাল এন্ড ডায়াগনস্টিক রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে নিয়মিত ত্রিফলা খেলে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের চুল পড়া কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিছু মানুষকে নিয়মিত প্রতিদিন দুইবার ত্রিফলা পাউডার খাইয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে যারা ত্রিফলা গ্রহণ করেছে তাদের চুলের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যারা এটি খাইনি তাদের চুল অনেক কম বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যাভোকাডোর ১৬ টি আশ্চর্যজনক উপকারিতা

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ আয়ুর্বেদিক রিসার্চের প্রকাশিত আরো একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে ত্রিফলা খুশকির চিকিৎসায় দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। আট সপ্তাহ ধরে ত্রিফলা খাইয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে যারা ত্রিফলার গুঁড়া খেয়েছেন তাদের মাথায় খুশকি অনেক কমে গেছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে চুলের মান উন্নত হয় এবং গোড়া শক্ত হয়। ত্রিফলার গুড়া এমন একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা খেলে চুল পড়া রোধ হয়, খুশকি দূর হয় এবং চুলের গোড়া অনেক মজবুত হয়।

ত্বকের যত্নে ত্রিফলার ব্যবহার

ত্বকের যত্নে ত্রিফলার ব্যবহার সেই আদিম যুগ থেকে হয়ে আসছে। বর্তমানে ত্বকের যত্নে এটি একটি জনপ্রিয় প্রতিকার হয়ে উঠেছে। এক কথায় বলা যায় ত্রিফলা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে এটি ত্বকের বর্ণ ও গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে বলি রেখা দূর করে এবং সূক্ষ্মরেখা কমিয়ে ত্বকের নিরাময় করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের ব্রণ, একজিমা এবং ত্বকের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকরা ত্রিফলা ব্যবহার করেন। 

ত্বকের-যত্নে-ত্রিফলার-ব্যবহার

ত্রিফলায় রয়েছে ডিটক্সিফাই করার একটি বিশেষ ক্ষমতা। যার ফলে ত্বকে নিয়মিত ত্রিফলার পাউডার ব্যবহার করলে এটি আমাদের ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ  অপসারণ করতে সাহায্য করে যার ফলে ত্বক অনেক সতেজ এবং ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়। এক কথায় বলা যায় ত্বকের যত্নে ত্রিফলা একটি প্রাকৃতিক উপায়। ত্রিফলার পাউডার ত্বকে ব্যবহার করলে নানা ধরনের সমস্যা থেকে নিখুঁত প্রতিকার পাওয়া যায়। তাই ত্রিফলা পাউডার নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক অনেক সুন্দর হয়।

ত্রিফলার দাম 

ত্রিফলার দাম সম্পর্কে জেনে থাকলে বাজারে যেয়ে সেটি কিনতে সুবিধা হবে। এখানে ঠকে যাওয়া সম্ভাবনা কম থাকবে। আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া এই তিন ফলের সমষ্টি মিলিয়ে ত্রিফলা তৈরি করা হয়। তাই ত্রিফলার দাম কিছুটা বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম ত্রিফলার দাম ১০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজি ত্রিফলা চূর্ণ বা ত্রিফলা পাউডার প্রায় ১০০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তবে জায়গা ভেদে এবং সময় ভেদে এর দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

শেষ কিছু কথা 

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সহ ত্রিফলার আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটির সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url