টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি

টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তবে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের টবে সঠিক উপায়ে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি সহ ঢেঁড়সের আরো অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানাবো। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

টবে-ঢেঁড়স-চাষ-পদ্ধতি

ঢেঁড়স ছোট-বড় সকলের বেশ প্রিয় একটি খাবার। বিশ্বজুড়ে এই সবজিটির জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক বেশি। এটি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু সবজি তা নয় এতে রয়েছে অনেক উপকারিতাও। স্বাস্থ্য উপকারী এই সবজিতে রয়েছে ভিটামিনের ঠাসা। আজ আপনাদের টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। 

টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি 

টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে তারপর ঢেঁড়স রোপন কাঙ্খিত মানের ফসল পাবেন। যেকোনো সবজি বা গাছ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে জমি বা বাগান। তবে বর্তমানে শহর অঞ্চলে জায়গা কম থাকায় অনেকেই বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় তবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করে থাকেন। আপনি চাইলে খুব সহজেই মাটির টবে ড্রামে কিংবা মুখ খোলা কাঠের বাক্সে অল্প একটু পরিশ্রম করেই ঢেঁড়ো চাষ করতে পারেন। 

আরো পড়ুন: কুমড়ো ফুলের ১৭ টি উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান

ছোট বড় সকলেই ঢেঁড়স পছন্দ করেন। এটি অনেকের জনপ্রিয় একটি খাবার। ঢেঁড়স কে পুষ্টিমান সম্পন্ন একটি সবজি হিসেবে বিবেচনা করেছেন পুষ্টিবিদরা। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ আয়রন এছাড়াও আর অন্যান্য ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

টবের মাটি নির্বাচন 

ঢেঁড়স  গাছের বৃদ্ধি এবং ভালো ফলনের জন্য সর্বপ্রথম উর্বর মাটি নির্বাচন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে মাটির জন্য উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হয়। টবে মাটি শুকিয়ে গেলে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবে মাটি ঝুরঝুরে অবস্থায় রাখতে গেলে অবশ্যই মাটির সাথে দোআঁশ মাটি এবং জৈব সার মেশাতে হবে। মাটিটি যদি এঁটেল হয় সেক্ষেত্রে জৈব সারের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। টবের মাটি ভালো হবে প্রস্তুত করার জন্য মাটিতে একটি চা চামচের চার চা চামচ পরিমাণ টিএসপি সার এবং ৫-৬ দিন আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা ১১৬ গ্রাম সরিষার খৈল মিশিয়ে তারপর মাটির টি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।

ঢেঁড়সের জাত 

টবে ঢেঁড়স চাষ করতে গেলে অবশ্যই ঢেঁড়সের জাত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ভালো জাতের ঢেঁড়স বীজ লাগালে তবেই ফলন ভালো হবে। ঢেঁড়সের জাতের মধ্যে অন্যতম জাতগুলো হচ্ছে পুশা শাওনী, লক্ষৌ ডোয়াফ, কাবুলি ডোয়াফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট এবং পেন্টা গ্রীন প্রভৃতি জাত গুলো হচ্ছে ঢেঁড়স এর জনপ্রিয় বিদেশি জাত। টবে এই সকল জাতগুলো লাগালে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই টবে ঢেঁড়স গাছ লাগানোর পূর্বে অবশ্যই জাতগুলোর কথা মনে রাখবেন।

ঢেঁড়স গাছ লাগানোর সময় 

মূলত আমাদের দেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরে সারা বছরই এই ঢেঁড়স গাছ লাগানো যায়। তবে ঢেঁড়স গাছ লাগানোর সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে শীতের শেষ ভাগ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। বৈশাখ মাসের পরেও ঢেঁড়স গাছ লাগানো যায় কিন্তু সেই সময় মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন খুব বেশি ভালো হয় না। তাই অবশ্যই ঢেঁড়স গাছ লাগানোর পূর্বে সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। উপযুক্ত সময় গাছ লাগালে ফলন ভালো হবে।

বীজ বপন 

ঢেঁড়সের চারা রোপন করার সময় কোনরকম আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে এর বীজ সরাসরি টবের মাটিতে পড়তে হয়। ঢেঁড়সের গাছ লাগানোর জন্য সাধারণত মাঝারি সাইজের টব হলেই চলে। প্রতিটি টবে তিনটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ থেকে চারা গজানোর পর সবচেয়ে সবল চারাটি রেখে বাকি গাছগুলো কেটে ফেলে দিতে হবে। তাহলে গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন ঢেঁড়স বীজের খোসা অনেক শক্ত তাই এটি থেকে চারা গজাতে অনেক সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই বীজ বপনের পূর্বে প্রায় ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

পরিচর্যা 

ঢেঁড়স গাছ একেবারে পানি সহ্য করতে পারে না। তাই গাছের গোড়ায় কোনো কারণে পানি জমে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোনমতেই টবের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে। গাছ ১০-১২ সেন্টিমিটার হলেই টবে কিনারা ঘেসে এক চামচ ইউরিয়া এবং একটা চামচ মিউরেট অব পটাশ সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তাহলে গাছের মান ভালো হবে এবং গাছের ফুল ও ফলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

রোগ বালাই 

ঢেঁড়সের একটি ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে শুয়োপোকা। এই পোকা ঢেঁড়স গাছের কচি কচি কান্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। এছাড়াও ঢেঁড়স ঢেঁড়স গাছে মোজাইক নামের এক ধরনের ভাইরাস প্রায় দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগের ফলে গাছের পাতাগুলো হলদে হয়ে কুচকে কুচকে যায়। এই শুঁয়োপোকার হাত থেকে ঢেঁড়স গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে প্রায় এক মিলি ডায়াজিন - ৮০, নুভাক্রন - ৪০ এবং একালাক্স - ২৫ এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের স্প্রে করে দিতে হবে। এছাড়াও সিমবুশ -১০ এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন এতে সহজেই রোগবালাই দমন করা যাবে। 

ফসল সংগ্রহ

সাধারণত বীজ মাটিতে বপন করার দুই মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। ঢেঁড়স কচি অবস্থায় তুলে নিতে হয় দেরি হয়ে গেলে এটি শক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। মনে রাখবেন ঢেঁড়স গাছ থেকে ঘনঘন ঢেঁড়স তুলে নিলেই গাছে বেশি পরিমাণ কুশি বের হয় এবং সেখান থেকে ঢেঁড়স আছে।

ঢেঁড়সের প্রজাতির নাম 

ঢেঁড়সের প্রজাতির নাম সম্পর্কে জানলে আপনি বুঝতে পারবেন আসলে কত জাতের ঢেঁড়সের প্রজাতি রয়েছে। ঢেঁড়স কে সাধারণত লেডিস ফিঙ্গার বা ভেন্ডি নামেও ডাকা হয়। ঢেঁড়স ছোট বড় সকলেরই প্রায় জনপ্রিয় একটি খাবার। টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই কিছু জনপ্রিয় ঢেঁড়সের জাতের নাম সম্পর্কে।

  • বারি ঢেঁড়স 
  • পারবনি কানি
  • শাউনি
  • পেন্টা গ্রিন
  • পুশা সাওয়ানি
  • জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন ইত্যাদি 
  • কাবুলী ডোয়াফ  

বীজ থেকে ঢেঁড়স চাষ 

বীজ থেকে ঢেঁড়স চাষ খুব সহজ একটি পদ্ধতি। আপনি চাইলে খুব সহজেই বীজ থেকে ঢেঁড়স চাষ করতে পারেন। অনেকেই বীজ থেকে টবে খুব সহজেই ঢেঁড়স চাষ করে থাকেন। টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের টবে ঢেঁড়স চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। আর এটি জানা থাকলে আপনিও সহজেই অল্প খরচে বীজ থেকে ঢেঁড়স চাষ করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই।

বীজ-থেকে-ঢেঁড়স-চাষ

  • ঢেঁড়স বীজ আকারে অন্যান্য বীজের তুলনায় তুলনামূলকভাবে একটু বড় হওয়ায় এগুলো হ্যান্ডেল করা খুব সহজ হয়।
  • ঢেঁড়স বীজ রোপন করার আগে অবশ্যই প্রায় ২৪ ঘন্টা মতো উষ্ণ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • ঢেঁড়স  বীজ সাধারণত দুই রকম উপায়ে লাগানো যায়। যেমন ধরুন প্রথমটি হচ্ছে আপনি সরাসরি মাটিতে বীজ লাগাতে পারে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রথমে বীজ থেকে চারা বানিয়ে তারপর সেই চারা গুলোকে পরবর্তীতে উপযুক্ত জায়গায়, বাগানে বা টবে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বেশি উত্তম। তাই আপনি যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে চান তাহলে বীজ বোপনের জন্য বাজারে চারা ট্রে পাওয়া যায় আপনি চাইলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ট্রেতে মাটির পরিবর্তে কোকো কেয়ার বা পিট ‌মস ব্যবহার করতে পারেন।
  • পরবর্তীতে বীজ থেকে চারা তৈরি হলে সেগুলো মাটিতে রোপন করতে হবে।
  • ঢেঁড়স বীজ বা চারা রোপনের পূর্বে আগে থেকেই মাটির সাথে কম্পোস্ট সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
  • ঢেঁড়স গাছ অতিরিক্ত খরা এবং অতিরিক্তত গরম ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। তাই ঠিক আছে প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক ইঞ্চি গভীর পানি এই গাছের জন্য আদর্শ। ঢেঁড়স গাছের গোড়ার মাটিতে পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য জৈব মালচ ব্যবহার করতে পারেন
  • মনে রাখবেন ঢেঁড়স গাছে যদি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে তাহলে সে ক্ষেত্রে আর অন্য কোন সার দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এই সারের ফলে গাছগুলো খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করবে এবং আপনার গুটি আসতে শুরু করবে।
  • ঢেঁড়স গাছ সঠিক উপায়ে রোপন করলে এতে তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই গুটি আসতে শুরু করে এবং প্রথমে গাছের নিচের দিক থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে নিচের দিক থেকে উপর দিকে ঢেঁড়স হওয়া শুরু হয়।
  • একটি গাছ সাধারণত প্রায় ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

ঢেঁড়স রোপন পদ্ধতি

ঢেঁড়স রোপন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে তারপর ঢেঁড়স রোপন করতে হবে। ঢেঁড়স রোপনের উপযুক্ত সময় রয়েছে এবং উপযুক্ত পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতি মেনে উপযুক্ত সময় ঢেঁড়স গাছ না লাগালে কাঙ্খিত মানের ফলন হয় না। তাই সময়ের আগে কিংবা পরে নয়, নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে তারপর ঢেঁড়স রোপন করতে হবে। টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এ অংশে চলুন জেনে নিই ঢেঁড়স রোপনের পদ্ধতি সম্পর্কে।

আরো পড়ুন: মেহগনি গাছের বীজের ১৫ টি উপকারিতা

  • টবে ঢেঁড়স চাষ করতে হলে সর্বপ্রথম একটি সঠিক সাইজের টব বেছে নিতে হবে। এবার টবটিকে ভালোমতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • এরপর টবটিতে ভালো মানের মাটি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হবে। সবের মাটি প্রস্তুত করার সময় মাটিতে জৈব সার কম্পোস্ট সার মিশিয়ে নিতে হবে। জৈব সার একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এটি মাটিতে ভালোমতো প্রবেশ করে এবং সেই সাথে মাটির গুণগত মান উন্নয়ন করে। মাটিতে জৈব সার ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে এবং কিছুটা পানি দিতে হবে। 
  • মাটি প্রস্তুত করা হয়ে গেলে এবার প্রস্তুত করা মাটিতে ঢেঁড়সের বীজ বপন করতে হবে। মনে রাখবেন বীজ যদি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন তাহলে এটি খুব দ্রুত অঙ্কুরোদগম হবে। তাই অবশ্যই বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা বীজগুলোকে হালকা উষ্ণ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। তাহলে খুব দ্রুত বীজ থেকে চারা বের হবে।

ঢেঁড়স বীজ রোপনের উপযুক্ত সময়

ঢেঁড়স বীজ রোপনের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়লে আপনি খুব সহজে ঢেঁড়স বীজ রোপনের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন জেনে নিই বছরের কোন সময় ঢেঁড়স বীজ রোপনের উত্তম সময় সেটি সম্পর্কে।

  • ঢেঁড়স বীজ রোপণের উত্তম সময়। তাই এই ঢেঁড়স সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। শীতকালে এবং বর্ষাকালেও চাষ করা যায়। 
  • শীতকালে ঢেঁড়স চাষ করতে হলে এটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চাষ করতে হয়। 
  • বর্ষাকালে ঢেঁড়স চাষ করতে হলে সেটি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বীজ রোপন করে চাষ করতে হয়। 
  • সঠিক সময় সম্পর্কে জেনে ঢেঁড়স চাষ করলে তবেই আপনি কাঙ্খিত মানের ফসল পাবেন।

ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই এর নাম 

ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই এর নাম সম্পর্কে জানাবো আপনাদের আজ। অনেক সময় আমরা বাড়িতে টবে ঢেঁড়স গাছ চাষ করার সময় খেয়াল করি গাছ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই আক্রান্ত হয়। কিন্তু ঢেঁড়স গাছের রোগবালাই সম্পর্কে না জানার কারণে গাছ অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যার ফলে আমরা ভালো মানের ঢেঁড়স পায় না। তাই টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় এবং রোগ বালাইয়ের নাম সম্পর্কে জানাবো। তাহলে আপনাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। চলুন জেনে নিই।

ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় ও রোগ বালাই 

  • ঢেরসের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা: এটি ঢেঁড়স গাছের আগাম ধ্বসা রোগ। 
  • ফ্রি বিটল পোকা: এটি ঢেঁড়স পাতার দাগ রোগ হিসেবে পরিচিত।
  • শোষক পোকা/হোপার/শ্যামা পোকা: এটি পাউডারি মিলডিউ জাতীয় রোগ।
  • ঢেঁড়সের জাব পোকা: এটি গুটি মোল্ড পোকা। 
  • ঢেঁড়সের পাতা মোড়ানো পোকা: এটি ঢেঁড়স গাছের মোজাইক ভাইরাস।
  • লেদা পোকা: এটি ঢেঁড়স গাছের গোড়া পচা রোগ।

ঢেঁড়স গাছের কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই প্রতিরোধ 

ঢেঁড়স গাছের কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করতে না পারলে ভালো এবং কাঙ্খিত মানের ফলন আপনি পাবেন না। তাই ভালো মানের ফলন পেতে অবশ্যই ঢেঁড়স গাছের কীটপতঙ্গ এবং রোগবালাই প্রতিরোধ সম্পর্কে আপনাকে সঠিক নিয়ম জানা থাকতে হবে। টবে ঢেরস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ঢেঁড়স গাছের কীটপতঙ্গ এবং রোগবালাই প্রতিরোধ করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নেই।

প্রাথমিক পদক্ষেপ 

  • সবার প্রথমে ভাল মানের মাটি নির্বাচন করে সেখানে ড্রেনেজ এর সিস্টেম রাখতে হবে। 
  • বীজ বপন করার পূর্বে অবশ্যই ভালো মানের বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন রোগ বালাই ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ করতে পারে ‌
  • ভালোমতো পরিচর্যা করে পানি দিয়ে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। 

জৈব নিরাপত্তা: 

  • জৈব নিরাপত্তা ব্যবহার করলে কীটপতঙ্গ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন নেমাটোড নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করলে সহজ হয়। 
  • সবসময়ই প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃত কীটনাশক ব্যবহার করলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। যেমন নেমাটোড নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করলে এটি অনেক বেশি নিরাপদ। 

পরিচর্যা 

  • ফলন ভালো পেতে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করুন। গাছের পরিমিত মাত্রায় পানি দিতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় শাখা প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে। 
  • যদি কোন একটি গাছ কীটপতঙ্গ বা রোগ আক্রান্ত হয় তাহলে সেই গাছটি সাথে সাথে সম্পূর্ণরূপে গোড়া থেকে কেটে ফেলুন অথবা যত দ্রুত সম্ভব প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করুন। 
  • এছাড়াও আক্রান্ত গাছের উপর ন্যাচারাল উভয় ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন ধরুন নেমেটোড নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা খুব ভালো উপায়।
  • আপনি যদি উপরের উল্লেখিত উপায় গুলো অনুসরণ করে তাহলে খুব সহজেই ঢেঁড়স গাছের কীটপতঙ্গ এবং রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এছাড়াও ভালোমতো গাছের পরিচর্যা নিলে গাছ সুস্থ থাকে এবং ফলন ভালো দেই। মনে রাখবেন টবের গাছে সব সময় বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন।

ঢেঁড়স তোলার উপযুক্ত সময় 

খাওয়ার জন্য 

ঢেঁড়স তোলার উপযুক্ত সময় বলতে ঢেঁড়স খাওয়ার জন্য এটি তোলার উপযুক্ত সময়ের কথা বলা হয়েছে। টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের খাওয়ার জন্য ঢেঁড়স তোলার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানাবো। আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে করলে আপনি খুব সহজেই গাছ থেকে ঢেঁড়স তোলার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন জেনে নিই।

ঢেঁড়স বীজ থেকে চারা গোছানোর পর প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর সেই গেছে ফুল আসা শুরু করে। ঢেঁড়স তোলার সবথেকে উপযুক্ত এবং ভালো সময় হচ্ছে ঢেঁড়স টি যখন দুই থেকে চার ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা হবে তখন ঢেঁড়স তুলতে হবে। তবে কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে এটি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। ঢেঁড়স ফুল থেকে খাওয়ার উপযুক্ত সময় হতে প্রায় ১০ দিন সময় লেগে যায়। ঢেঁড়স টি আঙ্গুল দিয়ে সহজেই ভাঙ্গা গেলে বুঝবেন এটি খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। ঢেঁড়স কচি অবস্থায় খাওয়া উত্তম।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রজাতি ভেদে অনেক সময় বড় আকারে ঢেঁড়স নরম হয়। যার ফলে ঢেঁড়স বড় হয়ে গেলেও এটি খাওয়া যায় এবং কচি থাকে। 

ঢেঁড়সের গুণগত মন ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই প্রতি দুই তিন দিন পর পর ধারালো ছুড়ি দিয়ে ঢেঁড়স গাছ থেকে ঢেঁড়স সংগ্রহ করুন। তাহলে কয়দিন পরে দেখবেন সেই জায়গা থেকে আবার নতুন কুঁড়ি গজাবে। বেশি পরিমাণ ফলন পেতে অবশ্যই সঠিক নিয়মে নিয়মিত ঢেঁড়স তুলতে হবে।

আপনি যদি গাছে ঢেঁড়স পরিপক্ক অবস্থায় রেখে দেন তাহলে এটি ফুল এবং ফলের সেট কমিয়ে দিবে। তাই ঢেঁড়স গাছে পাকতে না দিয়ে এটি নরম অবস্থাতেই তুলে খেয়ে নিন।

ঢেঁড়স থেকে বীজ তৈরির পদ্ধতি 

ঢেঁড়স থেকে বীজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। বাজার থেকে ঢেঁড়স বীজ না কিনেও আপনি চাইলে খুব সহজেই বাড়িতে থাকা ঢেঁড়স গাছ থেকে বীজ তৈরি করতে পারে। পরবর্তীতে উপযুক্ত সময়ে সেই বীজ মাটিতে রোপন করে ঢেঁড়স গাছ চাষ করতে পারেন। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়স থেকে বীজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে। 

  • ঢেঁড়স থেকে বীজ সংগ্রহ করার জন্য ঢেঁড়স বোনার পর থেকে প্রায় ১২০ ১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়স শুকিয়ে লম্বালম্বি ভাবে নিজ দিক থেকে ফাটতে শুরু করে। এরপর ঢেঁড়স টি ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে আপনি ধারালো ছুরির মাধ্যমে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করুন। পরবর্তীতে এগুলো ভালোভাবে রোদে শুকালেই বীজগুলো ভালোভাবে বের হয়ে আসবে। 
  • বীজ বের হয়ে আসার পর এগুলো ভালো করে ঠান্ডা করে যে কোন প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে যত্ন করে রেখে দিন। খেয়াল রাখবেন যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। 
  • পরবর্তীতে ঢেঁড়স বোনার উপযুক্ত সময় বীজগুলো বের করে ভালোভাবে মাটিতে পুঁতে দিলেই বীজ থেকে ঢেঁড়স গাছ বের হবে।

ঢেঁড়সের ১০ টি উপকারিতা 

ঢেঁড়সের ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। ঢেঁড়স এমন একটি সবজি যা ছোট, বড়, বৃদ্ধ সকলের অনেক প্রিয়। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকরা এটিকে পুষ্টিকর একটি খাবার হিসেবে নির্বাচন করেছেন। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়সের দশটি উপকারিতা সম্পর্কে।

ঢেঁড়সের-১০-টি-উপকারিতা

ঢেঁড়সের ১০ টি উপকারিতা 

  • ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। যার ফলে নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে অ্যানিমিয়ার মত কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এটিকে উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি হিসেবে নির্বাচন করেছেন চিকিৎসকরা।
  • ঢেঁড়স আমাদের ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের কোষ পুনর্গঠন করতে এবং আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ঢেঁড়স আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে যার ফলে হৃদয় এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। 
  • ঢেঁড়স আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে হৃদরোগের মতো কঠিন রোগ এড়ানো যায়। 
  • ঢেঁড়স আমাদের শরীরে প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
  • ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।। 
  • ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং আঁশ যার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এতে থাকা আঁশ এবং পেকটিন আমাদের হজম ক্ষমতার উন্নতি করতে সাহায্য করে। 
  • এতে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি অনেক উপকারী।

ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা

ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আলোচনা করব আজ। ঢেরস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এ কথা সত্য কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কোন জিনিস উপকারী হলেও সেটি পরিমতে মাত্রায় খাওয়া উত্তম। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি করে থাকে। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়সের পাঁচটি অপকারিতা সম্পর্কে।

আরো পড়ুন: আকাশমনি গাছের ১০টি ক্ষতিকর দিক

ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা 

  • অতিরিক্ত মাত্রায় ঢেঁড়স খেলে এটি আমাদের ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ঢেঁড়স খাওয়ার ফলে এটি অক্সিলেট নামক একটি যৌগ থাকে যা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভব না বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত মাথায় ঢেঁড়স খাওয়ার ফলে কিছু কিছু মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্ত্রের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়।
  • আপনি যদি রক্ত ঘন করার ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ঢেঁড়স খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
  • অতিরিক্ত মাত্র আইডিরাস খেলে এলার্জির সমস্যা তৈরি হতে পারে যার ফলে শরীর ফুলে যায়, চুলকানি হয়, কারো কারো শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

শেষ কিছু কথা

টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি, ঢেঁড়সের রোগ বালাই, ঢেঁড়সের জাত, ঢেঁড়সের রোগ প্রতিকার, ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন যা আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটির সঙ্গে থাকুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url