সরিষা শাক খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সরিষা শাক খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গ্রামবাংলায় গড়ে ওঠা এই শাক পুষ্টিগুণের খনি হিসেবে বিবেচনা করেছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য উপকারী এই শাকে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চলুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জেনে নিই সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
সরিষা শাক খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা
সরিষা শাক খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। গ্রামবাংলায় যেকোনো জমিতে বা উঠানের পাশে এই শাক চাষ করা হয়। পুষ্টি উপাদানে ভরপুর বলে চিকিৎসকরা এই শাককে পুষ্টি উপাদানের খনি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তবে বলা বাহুল্য বেশিরভাগ পরিবারেই এই শাক বেশ অবহেলিত। কারণ অনেকেই এই শাক খেতে চান না।
আরো পড়ুন: টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি
যার ফলে সরিষা উৎপাদনের জন্য বিশেষ করে এই সরিষা গাছ চাষ করে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে গ্রামবাংলায় কচি কচি এই গাছ শাক হিসেবে খাওয়া হয়। খেতে মজা এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সরিষা শাক খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো।
সরিষা শাক খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা
- হার্ট সুস্থ রাখে
- হাড় শক্তিশালী করে
- চোখের জন্য উপকারী
- ভিটামিন ও খনিজে ঠাসা
- ভিটামিন সি এর ভালো উৎস
- দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়
- ভিটামিন কে এর অন্যতম উৎস
- দেহের দূষিত পদার্থ দূর করে
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- অস্টিওপেরোসিসের ঝুঁকি কমায়
- মস্তিষ্কের টিস্যু কে ভালো রাখে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- মাথাব্যথা উপশম করে
- অকাল বার্ধক্য রোধ করে
- ত্বক আদ্র রাখে
- শরীর গরম রাখে
- ওজন কমায়
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- হাঁপানি উপশম করে
- প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে
হার্ট সুস্থ রাখে: নিয়মিত সরিষা শাক খেলে এটি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি ফোলেটের অনেক বড় একটি উৎস। সরিষায় থাকা ফোলেট হোমোসিস্টাইন জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
হাড় শক্তিশালী করে: সরিষা শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে যা আমাদের শরীরের হাড় এবং হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সরিষার শাক খেলে আমাদের হাড় মজবুত হয়।
চোখের জন্য উপকারী: সরিষার শাকে রয়েছে লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ও খনিজে ঠাসা: সরিষার শাকে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকলেও এতে ফাইবার এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে এর একটি চমৎকার উৎস হিসেবে নির্বাচন করা হয় এই শাককে। তাই এ শাককে ভিটামিন এবং খনিজে ঠাসা বলা হয়।
ভিটামিন সি এর ভালো উৎস: সরিষার শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যার ফলে সরিষার শাককে ভিটামিন সি এর খুব ভালো উৎস বলা হয়। সরিষার সাথে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণা করে জানা যায় এক কাপ পরিমাণ সরিষার শাক দৈনিক আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি পূরণ করতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়: সরিষা শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরকে দীর্ঘমেয়াদি রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এতে থাকা উদ্ভিদভিত্তিক এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরের কোর্সের বার্ধক্য, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার আচরণ থেকে আমাদের শরীরে যে সমস্ত ফ্রি রেডিকেলগুলো জমে থাকার কারণে স্ট্রেস বা ক্ষতি হয় সেগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে এটি ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ থেকেও আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এতে থাকা গ্লুকোসিনোলেট ক্যান্সারের কোর্স ধ্বংস করার পাশাপাশি এটি আমাদের শরীরে টিউমারের গঠন প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
ভিটামিন কে এর অন্যতম উৎস: সরিষার শাককে ভিটামিন কে এর একটি অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কারণ সরিষার শাকে থাকা ভিটামিন কে আমাদের হাড় এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দেহের দূষিত পদার্থ দূর করে: নিয়মিত সরিষার শাক খেলে এটি আমাদের শরীরে জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীর এবং মন উভয় সুস্থ থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: সরিষা থাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্লাবনয়েড এবং বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। হার্ট সুস্থ রাখে।
অস্টিওপেরোসিসের ঝুঁকি কমায়: সরিষার শাকে থাকা ভিটামিন আমাদের হাঁড়ের স্বাস্থ্য কে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন কে আমাদের শরীরে হাড়ের খনিজের অস্বাভাবিকতা এবং অস্টিওপেরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের টিস্যু কে ভালো রাখে: সরিষার শাকে রয়েছে লুটেইন নামক এক ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের মস্তিষ্কের টিস্যুকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: সরিষার শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোষের বৃদ্ধিকে অনেক বেশি ত্বরান্বিত করে।
মাথাব্যথা উপশম করে: সরিষার শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের মাথা ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালীন মাথাব্যথা দূর করতে সরিষা শাকের জুড়ি মেলা ভার।
অকাল বার্ধক্য রোধ করে: নিয়মিত সরিষার শাক খেলে অকাল বাধ্যক্য জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সরিষার শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান অকাল বার্ধক্য রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ত্বক আদ্র রাখে: সরিষার শাক আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। শীতকালের ত্বকের রুক্ষভাবে দূর করতে এবং আমাদের শরীর এবং ত্বক আদ্র রাখতে সরিষার শাকের জুড়ি মেলা ভার।
শরীর গরম রাখে: শীতের দিনে ঠান্ডার ফলে আমাদের শরীরে অলস্য ভাব চলে আসে। তাই এ সময়ের অলস্য ভাব কাটাতে এবং শরীর গরম রাখতে সরিষার শাক বেশ উপকারী। তাই পাঞ্জাবরা শীতের দিনে মাসকলাইয়ের রুটির সাথে সরিষার শাক প্রায় প্রতিদিন সকালেই খেয়ে থাকেন।
ওজন কমায়: সরিষার শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের ক্ষিদে কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সরিষার শাক থাকলে এটি আমাদের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: সরিষা শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা আমাদের মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি আমাদের মুত্রাশয়ে ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসে ক্যান্সার, এছাড়াও আমাদের প্রোস্টেট এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাঁপানি উপশম করে: সরিষার শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের হিষ্টামিনের ভাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি প্রদাহ জনক রাসায়নিক উপাদান। তাই নিয়মিত সরিষার শাক খেলে এটি হাঁপানি রোগীদের জন্য প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত হয়। এটি হাঁপানি রোগীদের ম্যাগনেসিয়ামের ঘনত্ব ব্রোঙ্কিয়াল প্যাসেজ এবং ফুসফুস কে প্রশমিত করে থাকে। যার ফলে এটি হাঁপানি রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে: সরিষার শাকে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় ফোলা এবং ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি আমাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হৃদরোগ এছাড়া অন্যান্য ধরনের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সরিষা শাক খাওয়ার ৫ টি অপকারিতা
সরিষা শাক খাওয়ার ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে জানতে সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমরা জানি প্রতিটা জিনিসের উপকারের পাশাপাশি এর কিছু অপকারিত রয়েছে। তাই যে কোন জিনিস উপকারী হলেও সেটি পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে উপকারের বদলে অপকার বেশি করে। চলুন জেনে নিই সরিষার শাক খাওয়ার পাঁচটি অপকারিতা সম্পর্কে।
সরিষা শাক খাওয়ার ৫ টি অপকারিতা
- অক্সালেট সমৃদ্ধ
- থাইরয়েডের সমস্যা সৃষ্টি করে
- রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়
- পাকস্থলী সমস্যা সৃষ্টি করে
- এলার্জির সমস্যা তৈরি করে
অক্সালেট সমৃদ্ধ: সরিষা শাকে অক্সালেট নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে কিডনি রোগীদের জন্য বা যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের সরিষার না খাওয়াই উত্তম।
থাইরয়েডের সমস্যা সৃষ্টি করে: সরিষার শাকে গ্লুকোসিনোলেটস নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যা অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে থাইরয়েডের হরমোনের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এটি অতিরিক্ত মাত্রায় না খাওয়াই উত্তম।
রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়: আমরা জানি সরিষা শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে রয়েছে। আর এই ভিটামিন কে আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। তাই যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাদের সরিষার শাক খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়া উচিত। কারণ এটি খেলে রক্ত পাতলা করার ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
পাকস্থলী সমস্যা সৃষ্টি করে: অতিরিক্ত মাত্রায় সরিষা শাক খেলে এটি আমাদের পাকস্থলীর অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে এছাড়াও আমাদের পেটের গ্যাস এবং ফোলা ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
এলার্জির সমস্যা তৈরি করে: কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে সরিষা বেশি পরিমাণ খেলে এলার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যাদের ত্বকে এলার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রয়েছে তাদের সরিষার না খাওয়াই উত্তম।
সরিষার শাকের পুষ্টিগুণ
সরিষার শাকের পুষ্টিগুণ এর কথা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ পুষ্টিগুণে ঠাসা এই শাকে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারী অনেক ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান। সবুজ এই শাকটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সরিষা শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষা শাকে রয়েছে
- ক্যালোরি ২৭
- ফ্যাট ০.৪ গ্রাম
- প্রোটিন ২.৯ গ্রাম
- ফাইবার ৩.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৪.৭ গ্রাম
- ভিটামিন এ ১৫১% দৈনিক প্রয়োজনীয়তার
- ভিটামিন কে ৫২৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তার
- ভিটামিন সি ৭০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তার।
এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, ফলেট যা আমাদের শরীরের জন্য এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী।
সরিষা শাকের রেসিপি
সরিষা শাকের রেসিপি অনেক রয়েছে। তবে বাঙালীরা সরিষার শাকের তরকারি খেতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। আর এই শাকের তরকারির রেসিপি অনেক সহজ এবং খেতেও অনেক মজা। সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশের আমরা আপনাদের সরিষা শাকের রেসিপি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
আরো পড়ুন: কাসাভার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
সরিষা শাকের তরকারির রেসিপি
উপকরণ:
- সরিষা শাক
- পেঁয়াজ ২ টি (মাঝারি সাইজের কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে)
- রসুন ৫-৬ কোয়া (বাটা)
- আদা বাটা এক চা চামচ
- টমেটো একটি কচি কচি করে কাটা
- হলুদ গুঁড়ো হাফ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো হাফ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ চারটি
- লবণ স্বাদ অনুযায়ী
- তেল দুই চা চামচ
- পেঁয়াজের পাতি ২ টেবিল চামচ (গার্নিশ করার জন্য)
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে সরিষার শাক ভালোমতো ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন।
- এরপর একটি প্যানে বা কড়াইতে তেল গরম করুন।
- তেল গরম হলে পেয়াজ কুচি দিয়ে বাদামী হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজটি ভাজতে থাকুন।
- পিয়াজ হালকা একটু ভাজা হয়ে গেলে এরপর আদা রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে ভাজুন।
- এরপর টমেটো কুচি কুচি করে কেটে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।
- এরপর এক এক করে হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, কাঁচা মরিচ যোগ করে হালকা একটু নেড়ে দিন।
- এবার মসলা ভালোমতো ভাজা হয়ে গেলে সরিষা শাক দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।
- প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা আঁচে জাল করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত শাকটি সিদ্ধ না হয়।
- শাক ভালোমতো সিদ্ধ হয়ে গেলে রান্নার শেষে স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- সবশেষে গার্নিশ করার জন্য পেঁয়াজের পাতি উপরে ছিটিয়ে দিয়ে নামিয়ে নিন। তাহলে রেডি হয়ে যাবে সরিষা শাকের তরকারির রেসিপি। এই রেসিপিটি আপনি ভাতের সাথে বা রুটির সাথে খেতে পারেন।
সরিষা শাকের ভর্তার রেসিপি
সরিষা শাকের ভর্তা প্রতিটা বাঙালির অনেক জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি খাবার। সরিষার শাক শুধু তরকারি হিসেবেই নয় এটি ভর্তা হিসেবেও খাওয়া যায়। সরিষা ভর্তা খেতে যেমন মজাদার এটি তৈরি করতেও সহজ। সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সরিষা শাকের ভর্তার রেসিপি সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই।
সরিষা শাকের ভর্তার রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- সরিষার শাক
- পেঁয়াজ ১ টি
- রসুন ৫-৬ কোয়া
- আদা অল্প একটু
- টমেটো ১ টি
- শুকনো লঙ্কা ২-৩ টি
- ধনে গুড়া ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া হাফ চা চামচ
- লবণ স্বাদমতো
- তেল ২ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী
- সরিষা শাক ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে।
- এরপর অল্প একটু পানি দিয়ে ভালোমতো সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
- এবার একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে একা পেঁয়াজ আদা রসুন বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে।
- পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে এর সাথে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ নিড়ে নিতে হবে।
- এরপর টমেটো কুচি কুচি করে কেটে তেলে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে।
- টমেটো নরম হয়ে আসলে সেদ্ধ করা সরিষার শাক দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে।
- সবশেষে স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সরিষা শাকের ভর্তা।
সরিষার শাক চাষ পদ্ধতি
সরিষার শাক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই আপনার বাড়ির আশেপাশে সরিষা স্যার চাষ করতে পারবেন। সরিষা শাক চাষ করা অত্যন্ত সহজ এবং লাভ জনক একটি কাজ। এইসব চাষাবাদ করার জন্য খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে আপনি খুব সহজেই অল্প পরিশ্রমে asr চাষ করতে পারবেন। সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সরিষার শাক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
মাটি নির্বাচন ও প্রস্তুতি
সরিষার শাক বেলে দোআঁশ মাটিতে খুব ভালো হয়। মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। পানি যেন না জমে থাকে জমিতে তাই ড্রেনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মাটি থেকে সমস্ত বড় বড় গাছের গোড়া বা ঝোপঝার পরিষ্কার করে মাটি প্রস্তুত করতে হবে।
বীজ বপণ
সরিষা বীজ বপন করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকালীন মৌসুম অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। এই মাসে ভালো মানের এবং ভালো প্রজাতির সরিষাবীজ নিয়ে জমিতে বপন করুন। মনে রাখবেন বীজ যত ভালো হবে ফলন তত ভালো হবে।
বীজ বপন পদ্ধতি
আপনি চাইলে বীজকে এক থেকে দুই সেন্টিমিটার গভীর রেখে সরাসরি মাটিতে বপন করতে পারেন। অথবা আপনি প্রথমে কোন নার্সারি বা বেডে বীজ বপন করে চারা কিছুটা বড় হলে তারপর জমিতে মূল স্থাপন করতে পারে।
সরিষা চারা রোপন পদ্ধতি
সরিষার চারা রোপন করার ক্ষেত্রে প্রায় ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব অবলম্বন করা উচিত। যারা যখন ১০১২ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন চারা রোপন করতে হবে। প্রতি এক বিঘা জমিতে প্রায় দুই থেকে তিন কেজি বীজ বপন করা যায়।
পানি দেওয়া
যদি দেখেন মাটি শুকিয়ে গেছে তাহলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখবেন সরিষার গাছ খুব বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অতিরিক্ত পানির নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখবেন। নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় পানি দিলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে।
সার প্রয়োগ
সরিষা শাক চাষ করার সময় প্রথমে কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও প্রাথমিক সার হিসেবে প্রায় ১০০ কেজি ইউরিয়া ৫০ কেজি সুপার ফসফেট এবং ২৫ কেজি মিউরেট অফ পটাসার প্রতি এক বিঘা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
রক্ষণাবেক্ষণ
প্রতি সপ্তাহে সরিষা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের গোড়া যত বেশি আগাছা মুক্ত থাকবে গাছের বৃদ্ধি তত ভালো হবে। যার ফলে ফসল ভালো হবে।
রোগবালাই ও পোকামাকড়
সরিষার গাছ সাধারণত ছত্রাক জনিত এবং পোকামাকরড় জনিত রোগের বেশি আক্রান্ত হয়। সেই ক্ষেত্রে ছত্রাক এবং পোকামাকড় নিধনের জন্য নিয়মিত স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
সরিষার বীজ বপণের পর থেকে প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যেই থাক পরিপক্ক হয়ে যায়। পাতা সবুজ এবং কচি অবস্থাতেই সংগ্রহ করা যায়।
প্রতিদিন সরিষা শাক খেলে কি হয়
প্রতিদিন সরিষা শাক খেলে কি হয় সেটি সম্পর্কে জানেন কি? আমরা জানি সরিষা শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং অনেক স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। সরিষা শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকরা এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে নির্বাচন করেছেন। পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্য উপকারী হলেও এটি প্রতিদিন খাওয়া যাবেনা। প্রতিদিন খেলে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এটি মাঝে মাঝে গ্যাপ দিয়ে খেতে হবে।
সরিষা শাক খেলে কি ওজন কমে
সরিষা শাক খেলে কি ওজন কমে এটি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু করুন। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোসিনোলেটস পলিফেনল ভিটামিন খনিজ এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা মূলক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ক্যালরি সংখ্যা কম করে। সরিষা শাকে পুষ্টিগুণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকলেও ফ্যাট জাতীয় ক্যালরি সংখ্যা অনেক কম। তাই এটি খেলে ওজন কমে।
আরো পড়ুন: ড্রাগন ফলের কার্যকরী ২০ টি উপকারিতা।
সরিষা শাক কি লিভারের জন্য ভালো
সরিষা শাক কি লিভারের জন্য ভালো এ প্রশ্নেরই উত্তর অনেকেই জানতে চান। কারণ লিভারের রোগীরা অনেক কিছু খেতে পারে না বলে সব সময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন। সরিষা শাক লিভারের জন্য কতটা ভালো সেটি সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশ আপনাদের জানাবো আজ। চলুন জেনে নিই।
সরিষার শাক কিছুটা তেতো হওয়ায় এটি যকৃত এবং পিত্তথলির থেকে পিত্ত প্রবাহকে অনেক বেশি উন্নত করে। যার ফলে লিভার আরো অনেক দক্ষতার সাথে পুষ্টি প্রক্রিয়া উন্নতি করার অনুমতি দিয়ে থাকে। এই সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটেইন যা লিভার এবং পিত্ত কোন না কোন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের যকৃতের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সরিষা শাক খেলে কি কিডনিতে পাথর হয়
সরিষা শাক খেলে কি কিডনিতে পাথর হয় সেটি সম্পর্কে চিকিৎসকরা কি বলে চলুন জেনে নিই। সরিষা শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এ কথা সত্য কিন্তু বেশি পরিমাণ খেলে এটি কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি যদি অক্সিলের টাইপ কিডনিতে পাথরের প্রবণতা দেখতে পান তবে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় সরিষার শাকের পরিমাণটা কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত মাত্রায় না খেয়ে এটি অল্প পরিসরে খান।
শেষ কিছু কথা
সরিষা শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সরিষা শাক খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং অপকারিতার কথা সহ সরিষা শাকের পুষ্টিগুণ, সরিষা শাকের চাষ পদ্ধতি, সরিষা শাক রান্নার রেসিপি, সরিষা শাকের ভর্তার রেসিপি সহ সরিষা শাক সম্পর্কিত আরো অনেক অজানা সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি সরিষার পাক সম্পর্কিত আরো অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন যা আপনার উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url