ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ঢেঁড়সের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং বেশ কিছু অপকারিতা সহ আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানাবো।
সবুজ রঙের এই ছোট্ট সবজি ঢেঁড়সে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আরো অনেক উপকার করে যার ফলে ঢেঁড়সকে ঔষধি গুণাবলীর অংশ বলা হয়। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা
ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো আজ। ঢেঁড়স কে সাধারণত আমরা এক ধরনের গুরুত্বহীন সবজি হিসেবে মনে করে থাকে। কিন্তু এই সবজিটি আমাদের অজান্তেই আমাদের শরীরের নানা ধরনের উপকার করে থাকে। ঢেঁড়সের রয়েছে মহাগুন যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে আরো নানা ধরনের উপকার করে থাকে। যার ফলে ঢেঁড়স কে এক ধরনের মহা ঔষধিও গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরো পড়ুন: টবে ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি
কারণ এতে রয়েছে অনেকগুলো ঔষধি গুনাগুন। ঢেঁড়স কে অনেক জায়গায় অনেক নামেও ডাকা হয়। কিছু কিছু জায়গায় ভেন্ডি নামেও পরিচিত। শীতকালে এই সবুজ সবজিটির স্বাদ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এটি মূলত একটি শীতকালীন সবজি হলেও এখন বর্তমানে আমাদের দেশে সারা বছর চাষাবাদ করা হচ্ছে। আজকের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা
- খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
- মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে
- ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
- শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে
- চুলের জন্য উপকারী
- কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হজমে সহায়তা করে
- বিষন্নতা দূর করে
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
- হার্ট ভালো রাখে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- প্রসাব পায়খানা পরিষ্কার করে
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়
- খুসখুসে কাশি দূর করে
- হাড় মজবুত করে
- ইমিউন সিস্টেমের জন্য উপকারী
- অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দূর করে
- ডায়াবেটিস এর জন্য উপকারী
- পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী
খারাপ কোলেস্টেরল কমায়: ঢেঁড়সে রয়েছে সলিউবল ফাইবার অর্থাৎ আঁশ যা আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত আমাদের রক্তে থাকা বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের অ্যাথেরোসক্লোরোসিস এর প্রতিরোধ করে।
মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে: গর্ভাবস্থায় নবজাতকের ভ্রুণ তৈরি করতে ঢেঁড়স খুব ভালো অবদান রাখে। এছাড়াও এটি গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের মস্তিষ্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গর্ভবতীদের মিসক্যারেজ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে: ঢেঁড়স এমন একটি সবজি যা আমাদের ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এটি আমাদের শরীরের কিছু পুনর্গঠনে এবং ব্রণ দূরীকরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা অ্যাজমা রোগীদের রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চুলের জন্য উপকারী: ঢেঁড়স আমাদের মাথার খুকসি দূর করে মাথার ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে বেশ কার্যকরী। এক কথায় এটি আমাদের মাথার ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি আমাদের শরীরে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হজমে সহায়তা করে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে থাকা পেকটিন আমাদের অন্ত্রের ফোলা ভাব কমাতে এবং অন্তর থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
বিষন্নতা দূর করে: নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এটি আমাদের বিষন্নতা দূর করতে, শারীরিক দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করে মনকে প্রফুল দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটাকার রুটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ এবং লিউটিন যা আমাদের চোখের গ্লুকোমা এবং চোখের ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের চোখের জ্যোতি ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী
হার্ট ভালো রাখে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, বি এবং ভিটামিন সি যা আমাদের হৃদপিণ্ডকে দুর্বল হওয়ার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ রাইবোফ্লাবিন উপাদান যা আমাদের প্রসব পায়খানা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এক কথায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে ঢেঁড়স বেশ কার্যকরী কার্যকরী।
প্রসব পায়খানা পরিষ্কার করে: ঢেঁড়স সিদ্ধ করে সেই পানিটা খেলে এটি আমাদের প্রসব পায়খানা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। প্রসব পায়খানা পরিষ্কার করার জন্য এটি বেশ কার্যকরী।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়: নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এটি আমাদের উচ্চতা চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা উচ্চ রক্তচাপ চলছে ভুগছেন তারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ঢেঁড়স সবজিটি রাখতে পারেন।
খুসখুসে কাশি দূর করে: ঢেঁড়সের বীজ কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। সেই ক্ষেত্রে কয়েকটি কাঁচা ঢেঁড়স রোদে শুকিয়ে ৫-৬ গ্রাম ঢেঁড়সের শুকনা গুড়া এবং চিনি দিয়ে বডি বানিয়ে চুষে চুষে খেলে এটি খুসখুসে কাশি দূর করে।
হাড় মজবুত করে: ঢেঁড়সে এক প্রকার আঠালো পদার্থ থাকে যা আমাদের হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। এই আঠালো পদার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন কে উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরে থাকা হাড়কে মজবুত করে।
ইমিউন সিস্টেমের জন্য উপকারী: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে আমাদের শরীরে ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়।
অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দূর করে: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। যার ফলে নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর হয়। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন কে আমাদের রক্তপাত বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস এর জন্য উপকারী: ঢেঁড়সে ইউজেনল নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরে চিনির মাত্রা বাড়তে দেয় না ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী: ঢেঁড়স সাধারণত একটি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি। এতে গ্লুটেন ফাইবার নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের পেট ফাঁপা এবং পেট ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক কথায় এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য বেশ কার্যকরী।
ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা
ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে করুন। আমরা জানি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সবজি। কিন্তু এটি অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। অতিরিক্তায় ঢেঁড়স খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়সের ৫ টি অপকারিতা সম্পর্কে।
- ত্বকে ক্ষত হতে পারে
- কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
- পেটে সমস্যা সৃষ্টি করে
- রক্ত খুব বেশি ঘন হয়ে যায়
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে
ত্বকে ক্ষত হতে পারে: ঢেঁড়স থেকে প্রোটিওলাইটিক মুখ এক ধরনের এনজাইম সংস্পর্শে আসার কারণে ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে: ঢেঁড়সে অক্সালেট নামক এক ধরনের যৌগ উপাদান রয়েছে। এ উপাদানটি শরীরের অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ যদি কিডনির সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে ঢেঁড়স এড়িয়ে চলায় উত্তম।
পেটে সমস্যা সৃষ্টি করে: ঢেঁড়স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ সবজি হওয়ায় এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম। কারণ এটি অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া ক্র্যাম্প এবং অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
রক্ত খুব বেশি ঘন হয়ে যায়: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে যা আমাদের রক্ত ঘন করতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্ত ঘন করার ওষুধ খাচ্ছেন তারা ঢেঁড়স খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। একসাথে রক্ত ঘন করার ওষুধ এবং ঢেঁড়স উভয় খেলে এটি শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করবে যার ফলে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে: অতিরিক্ত মাত্রায় ঢেঁড়স খেলে একটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে পেট ফাঁপা বা পেট ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় না খেয়ে পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই উত্তম।
ঢেঁড়স গাছের বৈশিষ্ট্য
ঢেঁড়স গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই অংশে আমরা আপনাদের ঢেঁড়স গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাবো। ঢেঁড়স গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই এটি চিনতে এবং যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারবে। চলুন জেনে নিই।
আরো পড়ুন: পানিফলের ২৫ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
ঢেঁড়স গাছ সাধারণত একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই গাছ প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা প্রায় ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং চওড়া হয়ে থাকে। গাছের পাতায় প্রায় ৫-৭ টি অংশে বিভক্ত থাকে। এই গাছের ফুল হয় সাধারণত প্রায় ৪-৮ সেন্টিমিটার চওড়া। ফুলের রং প্রায় সাদাটে হলুদ এবং পাঁচটি পাপড়িতে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রবিন্দুতে লাল এবং গোলাপি একটি বিন্দু থাকে। ঢেঁড়স ফলটি সাধারণত ক্যাপসুল আকারে অর্থাৎ এটি লম্বায় প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার হয়। এই ফলের ভেতরের অংশে অসংখ্য বীজ থাকে।
ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ
ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনার জানা আছে কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু আপনার জন্য। ঢেঁড়স অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি যা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ভরপুর এবং স্বাস্থ্য উপকারী একটি খাবার। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নিই ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সের পুষ্টি উপকারিতা
- আমিষ ১.৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি ১৮ মিলিগ্রাম
- খনিজ পদার্থ অর্থাৎ ক্যালসিয়াম প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম
- লোহা ১০০ মিলিগ্রাম
এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ আয়োডিন, ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, অ্যামাইনো এসিড, রিবোফ্লেভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন এছাড়াও আরও নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই ঢেঁড়স।
ওজন কমাতে ঢেঁড়সের উপকারিতা
ওজন কমাতে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকরা কি বলে চলুন জেনে নিই। ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ওজন কমাতে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। মূলত আমাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার দুটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা। ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা সমাধানে ঢেঁড়স খুব ভালো কাজ করে বলে জানান পুষ্টিবিদরা। তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের মতো উপাদান যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের গবেষণা থেকে জানা গেছে এতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা এন্টি এভিডিটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় ঢেঁড়স ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী একটি খাদ্য।
চুলের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা
চুলের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের চুলের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য সম্পর্কে জানাবো যা জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। কারণ ঢেঁড়স শুধুমাত্র আমাদের শরীরের জন্য উপকারী এমনটি কিন্তু নয় এটি আমাদের চুলের জন্যও অনেক উপকারী। চলুন জেনে নিই চুলের যত্নে ঢেঁড়সের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে।
ঢেঁড়স আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করা থেকে শুরু করে এটি আমাদের চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢেঁড়সে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলকে অনেক বেশি মসৃণ এবং ঝলমলে করে তোলে। ঢেঁড়সে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা আমাদের মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও এটি আমাদের চুলের রংকে ফেকা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে চুলের রং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে পরিচিত।
চুলের আরও একটি বিশেষ সমস্যা হচ্ছে চুল দ্বিমুখী হয়ে ফেটে যাওয়া। চুলের এই দ্বিমুখী হয়ে ফেটে যাওয়া রোধ করতে ঢেঁড়স বেশ কার্যকরী। তাই যাদের চুল ফেটে দ্বিমুখী হয়ে যায় তারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ঢেঁড়স রাখতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এটি আমাদের মাথার তালুতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির যোগান দেয় যার ফলে মাথার তালুর রক্তে সঞ্চালনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। এক কথায় বলা যায়, ঢেঁড়স আমাদের চুলের জন্য বেশ উপকারী একটি খাদ্য। এটি আমাদের মাথার ত্বকের জন্য খুব ভালো একটি মশ্চারাইজার।
ত্বকের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ উপরের অংশে আমরা চুলের যত্নে ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছি। আর এই অংশে আমরা আপনাদের ত্বকের যত্নে ঢেঁড়সের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই।
আরো পড়ুন: পটল বীজের ১০ টি উপকারিতা ও ২ টি অপকারিতা
আমরা জানি ঢেঁড়স আমাদের শরীরের জন্য এবং চোখের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য। এটি আমাদের ত্বকের জন্য কতটুকু উপকারী সেটি জানলে আপনি অবাক হবেন। ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের টিস্যু তৈরি করতে এবং এটি মেরামত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ঢেঁড়সে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকের তারুণ্য ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। ঢেঁড়স আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ দূর, করতে ব্রণের সমস্যা দূর করতে এবং সেই সাথে বয়সের দাগ কমাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে বেশ কার্যকরী। ঢেঁড়সে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শুধুমাত্র আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করে তা কিন্তু নয় এটি আমাদের ত্বকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস করতে এবং আমাদের ত্বকের প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢেঁড়সে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান
ঢেঁড়সে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যেমন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ক্যান্সার, হৃদরোগ, অটোই মিউন ডিসঅর্ডার, আর্থ্রাইটিস সহ আরো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পারে এই ঢেঁড়স। কারণ ঢেঁড়সের খোসা এবং এর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো আমাদের শরীরে থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় ঢেঁড়সে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
কাঁচা ঢেঁড়স খেলে কি হয়
কাঁচা ঢেঁড়স খেলে কি হয় তা আপনি জানেন কি। চলুন জেনে নিই কাঁচা ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকরা কি বলেছেন সেটি সম্পর্কে। কাঁচা ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এছাড়াও ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়োডিন। ঢেঁড়সে থাকা এই আয়োডিন আমাদের গলগন্ড রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও এটি একটি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি হওয়ায় এটি আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী। এটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন দূর করে শরীরকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত অথবা কাঁচা ঢেঁড়স এর সালাদ রাখতে পারেন। এতে করে আমাদের পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হবে ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে কি হয়
ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে কি হয় অর্থাৎ ঢেঁড়স ভেজানো পানি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এই ঢেঁড়স ভেজানো পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গুনাগুন এবং পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরে নানা ধরনের উপকার করে থাকে। ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে ঢেঁড়স ভেজানো পানি খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
- নিয়মিত ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে এটি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ঢেঁড়স ভেজানো পানি আমাদের হজমে সাহায্য করে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।
- ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনালস এবং ফ্লেভনয়েড উপাদান যা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নিয়মিত ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে এটি আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা নিয়মিত ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে এটি অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- যাতে যৌন সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে এই সমস্যা দূর হয়।
- নিয়মিত ঢেঁড়স ভেজানো পানি খেলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ঢেঁড়স ভেজানো পানি তৈরীর নিয়ম
ঢেঁড়স ভেজানো পানি তৈরীর নিয়ম অনেক সহজ। এই ঢেঁড়স ভেজানো পানি তৈরি করার জন্য প্রথমে চার পাঁচটি ঢেঁড়স ভালোভাবে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিবেন। এরপর এই কাঁটা ঢেঁড়স গুলো এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে খালি পেটে এই ঢেঁড়স গুলো থেকে পানি গুলো খেয়ে ফেলুন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন প্রথমেই এটি বেশি পরিমাণ খাবেন না তাহলে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এটি প্রথমে বেশি পরিমাণ না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াবেন। তাহলে আর কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়সের উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে থাকা উচিত। আমাদের বাসায় অথবা অনেক আত্মীয়-স্বজন এই ডায়াবেটিস জনিত রোগে আক্রান্ত। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে এটি অনেক উপকারে আসবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়স বেশ উপকারী একটি খাবার। চলুন জেনে নিই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়সের কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে।
- প্রকোপ কন্ট্রোল
- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করে
- লো ক্যালোরি এবং ফ্যাট যুক্ত
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংস্কার
প্রকোপ কন্ট্রোল: ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং প্রোটিন থাকায় এটি খাবার সংলাপ স্থায়ীভাবে সংলাপ করে। যার ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার কে সংলাপ দেখায় এবং রক্তে সুগারের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করে: ডায়াবেটিস রোগীদের হাড় অনেক বেশি দুর্বল করে ফেলে। কিন্তু ঢেঁড়সে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম ডায়াবেটিস রোগীদের হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়স একটি উত্তম খাবার।
লো ক্যালোরি এবং ফ্যাট যুক্ত: ঢেঁড়স কম ক্যালোরি এবং ফ্যাট যুক্ত একটি খাবার। যার ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংস্কার: ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডায়াবেটিস রোগীদেরকে মুক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সে থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢেঁড়স খাওয়ার নিয়ম
ঢেঁড়স খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী ঢেঁড়স খেলে ঢেঁড়সের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। ঢেঁড়স অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি হলেও অনেক সময় রান্নার কারণে এর গুনাগুন কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঢেঁড়সের সম্পূর্ণ গুনাগুন বজায় রাখতে এটি সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করতে হবে। তাহলে সম্পূর্ণ গুনাগুন পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেই ঢেঁড়স খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে।
- ঢেঁড়স কাটার আগেই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এটি কাটার পর আর ধোয়ার প্রয়োজন নাই। তাহলে সম্পন্ন গুনাগুন পাওয়া যাবে।
- ছোট ছোট টুকরো করে বা গোল গোল চাকা আকারেও কাটতে পারেন। এটি রেসিপি প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে রান্না করতে হবে।
- ঢেঁড়স ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করে খেলে এর গুনাগুন অটুট থাকে। সেই সাথে হজম করতে সুবিধা হয়।
- ঢেঁড়স ভাজি করে খেতেও ভালো লাগে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তেল, পেঁয়াজ, রসুন এবং অন্যান্য মসলা অল্প পরিমাণ দিতে হবে। মসলা এবং তেলের পরিমাণ বেশি দিলে এটি খেয়ে উপকারের পরিবর্তে অপকার বেশি হবে।
- ঢেঁড়সের বিভিন্ন ধরনের কারি বা তরকারি রান্না করা হয়। এছাড়াও এটি মাছ বা মাংসের সাথে রান্না করে খেতেও বেশ দারুন লাগে।
- কচি কচি ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে এতে সামান্য বিট লবণ এবং সামান্য মরিচ মিশিয়ে সালাদ করেও খাওয়া হয়। এতে পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়।
- বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য ঢেঁড়সের সুপ তৈরি করে তাদেরকে খাওয়ানো হয়। ঢেঁড়সের সুপ খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুনও অনেক বেশি।
- ঢেঁড়সের খোসায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। তাই এটি খোসাসহ খাওয়াই উত্তম।
- অনেকেই ঢেঁড়সের স্মুদি তৈরি করে খান। এটি বিভিন্ন ফল বা সবজির সাথে মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর একটি স্মুদি তৈরি করা যায়।
ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়
ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয় এটি সম্পর্কে চলুন জেনে নেই। ঢেঁড়স আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি এলার্জির প্রবণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণ এলার্জির প্রবণতা রয়েছে তাদের এলার্জি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে ঢেঁড়স খাওয়ার জন্য। তবে এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলেও এটি অনেক উপকারী একটি সবজি। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা এই সবজি কিছুটা অল্প পরিমাণ খাবেন। আর এলার্জির পরিমাণ বেশি হলে অবশ্যই ঢেঁড়স খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ঢেঁড়স খেলে কি গ্যাস হয়
ঢেঁড়স খেলে কি গ্যাস হয় সম্পর্কে জেনে থাকা প্রত্যেকের উচিত। কারণ ঢেঁড়স আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী খাদ্য হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যার ফলে বেশি পরিমাণ ঢেঁড়স খেলে এটি পেটে গ্যাস উৎপাদন করতে পারে যার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে এই সবজিটি শিশু এবং বয়স্কদের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঢেঁড়স সাবধানতার সাথে অল্প পরিসরে খাওয়াতে হবে। তাহলে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। অতিরিক্ত সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ঢেঁড়স কি শীতকালীন সবজি
ঢেঁড়স কি শীতকালীন সবজি এটি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়ুন। ঢেঁড়স মূলত একটি শীতকালে সবজি। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সারা বছর ঢেঁড়স চাষ করা হয়। ঢেঁড়সের বিভিন্ন জাত বের হওয়ায় এটি সারা বছর চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এটি শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Abelmoschus esculentus অথবা Hibiscus esculentus.
ঢেঁড়সের ভালো জাত কোনটি
ঢেঁড়সের ভালো জাত কোনটি এটি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কারণ অনেক মানুষ বাড়ির আশেপাশে থাকা জায়গায়, টবে, অথবা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করে থাকে। তবে ঢেঁড়সের ভালো জাত কোনটি এটি সম্পর্কে ভালো মত ধারণা না থাকলে ঢেঁড়সের ফলন ভালো হয় না বা অনেক পরিশ্রম করেও কাঙ্খিত মানের ফলন পাওয়া যায় না। তাই ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ঢেঁড়সের সবচেয়ে ভালো জাত সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।
আরো পড়ুন: প্যাশন ফলের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা
ঢেঁড়সের সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে দামি জাত হচ্ছে হাইব্রিড ঢেঁড়স বা সুপার সুমি ঢেঁড়স। এই জাতটি আমাদের দেশে সারা বছর চাষাবাদ করা হয়। সুপার সুমি এই জাতের বীজটি মূলত সুমি জাতের একটি উন্নত সংস্কার। আপনি জানলে অবাক হবেন যে এই জাতের বীজটি উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীল এবং এটি উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল। এই ফল পরিপক্ক হওয়ার পরেও প্রায় ২-৩ দিন সতেজ, চকচকে এবং কচি ভাব থাকে। এটি মূলত অনেক ভালো মানের একটি ঢেঁড়সের জাত।
ঢেঁড়স কখন চাষ করে
ঢেঁড়স কখন চাষ করে এটি সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত তথ্য জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই ঢেঁড়স চাষ করতে পারবেন। আর ঢেঁড়স চাষের সময় জেনে ঢেঁড়স চাষ করলে ফলন ভালো হবে। চলুন জেনে নিই বাংলাদেশে কখন ঢেঁড়স চাষ করা হয় সেটি সম্পর্কে। সাধারণত আমাদের এই বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসে এই ঢেঁড়স গাছ লাগানো হয়।
তবে এটি শুধু ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসেই লাগানো হয় তা কিন্তু নয় এটি বর্তমানে সীমিত আকারে প্রায় সারা বছর চাষ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় চার পাঁচ কেজি বীজ বপন করা হয়। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এরকম উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হয়। ঢেঁড়স চাষের জন্য জমিতে ৫-৬ বার চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করলে এবং জমিতে ভালো মানের বীজ বপন করলে তবেই ফসল ভালো হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে কত ক্যালরি থাকে
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে কত ক্যালরি থাকে তা আপনি জানেন কি? অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই রয়েছে নানা স্বাস্থ্যকরী গুনাগুন। প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে রয়েছে ৯০.১৭ গ্রাম জলীয় অংশ, প্রায় ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, প্রায় ৩৩ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, প্রায় ১.৭ গ্রাম আঁশ এবং প্রায় ২.০ গ্রাম আমিষ রয়েছে। এছাড়াও আরো নানা ধরনের পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ঢেঁড়স।
গর্ভাবস্থায় ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে প্রতিটা গর্ভবতী মেয়েরা জানতে চান। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মা পুষ্টিকর খাবার নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত থাকে। কারণ গর্ভবতী মা গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খেলে এটি গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা সন্তান উভয়ের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভে থাকা শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি দেওয়া প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের উচিত। তাহলে একটি সুস্থ এবং মেধাবী বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় ঢেঁড়স খাওয়ার বেশ কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে।
- ঢেঁড়স একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি গর্ভাবস্থায় গর্ভবতীদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে যার ফলে পেটের সমস্যা দূর হয়।
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী একটি সবজি।
- ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা একজন গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- ঢেঁড়স একটি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করতে এবং রক্তশূন্যতা ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকরী।
- ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, অক্সিলিক এসিড, আয়রন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু উভয়ের জন্য অনেক উপকারী।
- ঢেঁড়স একটি খনিজ সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি গর্ভবস্থায় অনেক উপকারী একটি সবজি।
- ফোলেটকে গর্ভাবস্থায় অনেক মূল্যবান এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এটি ভ্রুণ নির্মাণে এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিকোটিনিক এসিডের তৈরিতে অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আর এই ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ ফোলেট থাকায় এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী।
ঢেঁড়স খেলে কি কাশি বাড়ে
ঢেঁড়স খেলে কি কাশি বাড়ে যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা রয়েছে বা একটুতেই কাশি হয় তারা জানতে চান। জেনে থাকা ভালো ঢেঁড়স খেলে কাশি হয় না। বরং এটি নিয়মিত খেলে খুসখুসে কাশির জন্য অনেক উপকার হয়। তাই যাদের খুসখুসে কাশি হয় তারা নিয়মিত তাদের খাদ্য তালিকায় এই ঢেঁড়স সবজিটি রাখতে পারেন। এটা করে কাশি ভালো হবে।
শেষ কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ ঢেঁড়স খাওয়ার নিয়ম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়সের উপকারিতা গর্ভাবস্থায় ঢেঁড়স এর উপকারিতা ঢেঁড়স ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা সহ ঢেঁড়সের আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ঢেঁড়স সম্পর্কে অনেক উপকারী তথ্য জানতে পারবেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।
ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url