ধনেপাতা খাওয়ার ৩০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে ধনেপাতা খাওয়ার নানা ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো অনেক বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানাবো।

ধনেপাতা-খাওয়ার-৩০-টি-উপকারিতা

অধিক পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ধনেপাতা পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এটি সাধারণত আমরা রান্নায় সুগন্ধি বাড়ানোর জন্য বা রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। আজকের এই আর্টিকেলে চলুন জেনে নিই ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ধনেপাতা খাওয়ার ৩০ টি উপকারিতা 

ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ধনেপাতায় রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুণ। যার ফলে এই পাতাকে ঔষধি গাছ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তথা আরো বিভিন্ন দেশগুলোতে ধনেপাতা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যি মুশকিল। এটি সাধারণত আমরা আমাদের রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য এবং সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। অনেকেই এটি সালাদ হিসেবেও খেয়ে থাকেন। 

আরো পড়ুন: কুমড়ো ফুলের ১৭ টি উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান

তবে এটি শুধুমাত্র খাবারে সুগন্ধি ছড়ায় বা স্বাদ বাড়ায় এমনটি কিন্তু নয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে অনেকেই আছেন যারা ধনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেও তারা নিয়মিত বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খেয়ে আসছে। ধনেপাতা সাধারণত শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। শীতকালে এই পাতা স্বাদ অনেক গুণ বেশি বেড়ে যায়। ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই ধনেপাতার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে। 

ধনেপাতা খাওয়ার ৩০ টি উপকারিতা

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • প্রদাহ রোধ করে 
  • খিঁচুনি প্রতিরোধ করে 
  • থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখে 
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কমায় 
  • মন প্রফুল্ল রাখে 
  • চক্ষুরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় 
  • ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে
  • খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় 
  • মুখের আলসার নিরাময় করে 
  • চোখের জন্য উপকারী 
  • ত্বকের জন্য উপকারী
  • রক্তশূন্য দূর করে 
  • ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ঘটায় 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে 
  • স্মৃতিশক্তি প্রখর করে 
  • অ্যালঝেইমার রোগের জন্য উপকারী
  • ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফোলা ভাব কমায় 
  • এলার্জি দূর করে 
  • সালমোনিলা রোগ প্রতিরোধ করে 
  • গুটি বসন্ত রোগ প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
  • লিভার ভালো রাখে 
  • হাড়ের শক্তি বাড়ায়
  • মুখের রুচি বাড়ে 
  • শরীরের কাটা ছেঁড়া অংশ দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে
  • মাথাব্যথা দূর হয় 
  • দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়
  • ঘুমের জন্য উপকারী 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তাই রোগ থেকে দূরে থাকতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত ধনেপাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

প্রদাহ রোধ করে: ধনেপাতা শুধুমাত্র রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও এটি ওয়াল্টারনেটিভ মেডিসিন হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ধনেপাতার রসে রয়েছে এক ধরনের এসেনশিয়াল লিপিড এবং লিনালুল জাতীয় তেল যা বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরে অতিরিক্ত সক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র কে শান্ত করতে সাহায্য করে। এই ধনেপাতায় থাকা বিভিন্ন ধরনের ঔষধি উপাদান প্রদাহ রোধ করতে এবং মৃগী রোগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খিঁচুনি প্রতিরোধ করে: বিভিন্ন গবেষণার তথ্য থেকে জানা গেছে ধনেপাতা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পটাশিয়াম চ্যানেলকে সক্রিয় করে থাকে, আর এটিকে কেসিএনকিউ চ্যানেল বলা হয়। মেডিকেলের ভাষায় এই কেসিএনকিউ চ্যানেল হচ্ছে সাধারণত কার্ডিয়াক এবং নিউরোনাল উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করার মতো বিভিন্ন ধরনের শরীরবৃত্তীয় কাজে জড়িত এক ধরনের চ্যানেলকে বলা হয়ে থাকে। ধনেপাতা আমাদের শরীরে এই প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মৃগী রোগের খিচুনি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখে: আমরা জানি হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডডিজোম এই দুইটি সাধারণত থাইরয়েডের সমস্যা। আমাদের গলার সামনের দিকে এই থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান। আমাদের শরীরে থাকা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে। তবে এটির ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে তবেই হাইপারথাইরয়েডিজম অথবা হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে থাকে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে এই ধনেপাতা আমাদের শরীরে থাইরয়েডের এই ভারসাম্যকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত গরম অনুব্রত হওয়া, হট ফ্ল্যাশ হওয়া, রাতে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘাম হওয়া এছাড়াও বৃত্ত জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে এই ধনেপাতার রস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কমায়: ধনেপাতায় রয়েছে প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যথার নাশক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরে রিমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রিমাটয়েড আথ্রাইটিস সাধারণত আমাদের হার্ট, ত্বক, ফুসফুস এবং রক্তনালী কে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

মন প্রফুল্ল রাখে: ধনেপাতার রসে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা পেশি শিথিল এবং প্রশমন করে থাকে। যার ফলে এটি আমাদের মন মেজাজ ভালো রাখতে পারে। যারা দুশ্চিন্তায় ভুগে ওষুধ খেয়ে থাকেন তারা নিয়মিত ধনেপাতার রস খেতে পারেন। দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এবং উদাসীনতা দূর করে এটি আমাদের মন ভালো করতে সাহায্য করবে।

চক্ষুরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: বিটা ক্যারোটিন এবং লুটিন নামক দুটি বিশেষ উপাদান রয়েছে ধনেপাতায়। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। ফ্রি রেডিক্যাল কোষ সাধারণত আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতি করে। এটি আমাদের শরীরে ক্যান্সার, হৃদরোগ এছাড়াও আরো অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগ তৈরি করে থাকে। ধনেপাতায় থাকা এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল গুলো দূর করে আমাদের শরীরে থাকা কোষ গুলোকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে ধনে বীজের তুলনায় ধনেপাতার রসে অনেক গুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যার ফলে বেশি বেশি পরিমাণ নিয়মিত ধনেপাতা খেলে চক্ষু রোগ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে: সাধারণত কোন কারনে অগ্নাশয় আমাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে বা শরীরে কোন উৎপাদিত ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারলে তাকে ডায়াবেটিস বলে। আর এর ফলে রক্তে শর্করাজনিত অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন এর থেকে পাওয়া তথ্য মতে ধনেপাতা আমাদের শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখতে পারে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় আমাদের শরীরে হাইপারগ্লাইসিমিয়া কমাতে ধনেপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: নিয়মিত ধনে পাতা খেলে এটি আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ ধনেপাতায় কোলেস্টেরলের মাত্রা একেবারেই শূন্য।

মুখের আলসার নিরাময় করে: ধনেপাতায় রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের মুখের আলসার নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চোখের জন্য উপকারী: ধনে পাতায় থাকা এন্টিসেপটিক উপাদান শুধুমাত্র মুখের আলসার নিরাময়ের জন্যই উপকারী তা কিন্তু নয় এটি আমাদের চোখের জন্যও অনেক বেশি উপকারী।

ত্বকের জন্য উপকারী: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং অথবা বিষাক্ততা বিরোধীকারী উপাদান যেমন অ্যান্টিসেপটিক অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং এনটিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের স্কিন ডিজঅর্ডার এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের অসুখ নিরাময় করে যেমন একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং ত্বকের সুস্থতা ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে। তাই ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে ত্বককে সুস্থ এবং সতেজ রাখতে ধনেপাতার গুরুত্ব অপরিসীম।

রক্তশূন্য দূর করে: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করে অ্যানিমিয়া সমস্যা সমাধান করে থাকে।

ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ঘটায়: সাধারণত মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হওয়ার জন্য ধনেপাতা খাওয়া প্রয়োজন। কারণ এই সময় ধনেপাতা খেলে মেয়েদের রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে ঘটে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন: অ্যাসকরবিক এসিড, ম্যাঙ্গানিজ, বিটা ক্যারেটিন প্রভৃতি উপাদান যা আমাদের পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

স্মৃতিশক্তি প্রখর করে: নিয়মিত ধনে পাতা খেলে এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে। ধনেপাতায় থাকার পুষ্টি উপাদান আমাদের স্মৃতি শক্তি প্রখর করতে এবং আমাদের মস্তিষ্কের নার্ভ অর্থাৎ স্নায়ু সচল রাখতে সাহায্য করে।

অ্যালঝেইমার রোগের জন্য উপকারী: ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন কে নামক পুষ্টি উপাদান যা আমাদের অ্যালঝেইমার নামক রোগের চিকিৎসার কাজে বেশ কার্যকরী।

ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফোলা ভাব কমায়: ধনেপাতায় রয়েছে এসেনশিয়াল ওয়েল লিনোলেয়িক এবং লিনোলিক নামক উপাদান যার মধ্যে এন্টিরিউম্যাটিক এবং ইন্ডিয়া আর্থ্রাইটিক এর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ধনেপাতায় থাকা এই সকল উপাদান আমাদের ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফোলা ভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এলার্জি দূর করে: ধনেপাতায় রয়েছে এন্টিহিস্টামিন নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরে এলার্জি এর প্রভাব কমিয়ে এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।

সালমোনিলা রোগ প্রতিরোধ করে: খাবারের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ রোগের নাম হচ্ছে সালমোনেলা। ধনেপাতায় রয়েছে ডডেসিনাল মামু এক ধরনের উপাদান যা প্রাকৃতিক উপায়ে স্যালমোনেলা জাতীয় রোগটি হারিয়ে তুলে। এটি আমাদের শরীরে এন্টিবায়োটিকের দ্বিগুণ বেশি কার্যকরী।

গুটি বসন্ত রোগ প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে: ধনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি মাইক্রোবিয়াল ডিটক্সিফাইং, আন্টি ইনফেকসাস এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং আয়রন যা আমাদের শরীরে গুটি বসন্ত হওয়ার প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: ধনেপাতা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

লিভার ভালো রাখে: শরীরকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই লিভার ভালো রাখতে হবে। আমাদের শরীরে থাকা এই লিভারকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই ধনেপাতা খাওয়া জরুরী। নিয়মিত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারে জন্ডিসের সমস্যা হারিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। সাথে এটি পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও দূর করে। নিয়মিত ধনেপাতা খেলে আমাদের লিভার ভালো থাকে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ বের করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই ধনেপাতা।

হাঁড়ের শক্তি বাড়ায়: হাঁড়ের শক্তি বাড়াতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস। এগুলো আমাদের হাঁড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। হাঁড়ের ক্ষয় রোধ করে শক্তি বাড়াতে নিয়মিত ধনেপাতা খেতে পারেন। কারণ নিয়মিত ধনেপাতা খেলে একটি হাঁড়কে প্রচুর পরিমাণ মজবুত করে এবং সেইসাথে হাঁড়ের সংযোগস্থল ভালো রাখে। এছাড়াও এটি আমাদের আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।

মুখের রুচি বাড়ে: ধনেপাতা সাধারণত একটি স্বাদ জাতীয় সবজি। নিয়মিত ধনেপাতার ভর্তা অথবা বিভিন্ন সবজির সাথে বা তরকারির সাথে ধনেপাতা রান্না করে খেলে এটি আমাদের মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

শরীরের কাটা ছেঁড়া অংশ দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে: ধনেপাতায় রয়েছে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের কোন জায়গা কেটে গেলে কাটা ছেঁড়া অংশগুলো দ্রুত শুকানোর জন্য বেশ উপকারী। তাই কোন জায়গা কেটে গেলে অবশ্যই ধনেপাতা খেতে হবে। তাহলে কাটা জায়গা দ্রুত শুকাবে।

মাথাব্যথা দূর হয়: যদি কারোর মাথা ব্যথার সমস্যা থাকে তাহলে ধনেপাতা এবং ধনেপাতা গাছের রস বেটে কপালে লাগালে মাথাব্যথা দ্রুত সেরে যায়। তাই যাদের মাথা ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা ধনেপাতা বেটে সেই রস কপালে লাগাতে পারেন।

দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়: ধনেপাতা এমন একটি ঔষধি গাছ যা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি অনেক মজবুত হয়। এছাড়াও দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে বেশ কার্যকরী। তাই দাঁতের সমস্যা দূর করে দাঁতকে মজবুত করতে মাঝে মাঝে অবশ্যই ধনেপাতার রস দিয়ে দাঁত মাজা উচিত।

ঘুমের জন্য উপকারী: ধনেপাতায় রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এর অসাধারণ একটি সমন্বয় যা আমাদের নার্ভের শীতল করে এবং ঘুমের জন্য খুব ভালো কাজ করে। তাই রাত্রে যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ধনেপাতা খেতে পারেন। ঘুমের সমস্যা দূর হবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: ধনেপাতা এমন একটি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। আর এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

ধনে পাতা খাওয়ার ৭ টি অপকারিতা

ধনে পাতা খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে কিছু। ধনেপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এই কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটি খেয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেকোনো জিনিস পরিমিত মাত্রায় খেলে সেটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকার করে থাকে কিন্তু কোন কিছু অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। 

ধনে-পাতা-খাওয়ার-৭-টি-অপকারিতা

তাই কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সেটি পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের ধনেপাতা খাওয়ার ৭ টি অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। তাই আর্টিকেলের এই অংশটুকু অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন জেনে নিই ধনেপাতা খাওয়া ৭ টি অপকারিতা সম্পর্কে।

ধনেপাতা খাওয়া ৭ টি অপকারিতা 

  • এলার্জি বাড়তে পারে 
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে 
  • স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে 
  • কিডনি সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে
  • হৃদপিন্ডের ক্ষতি হতে পারে 
  • হজমে সমস্যা হতে পারে 
  • বুকে ব্যথা হতে পারে 

এলার্জি বাড়তে পারে: ধনেপাতা অনেক উপকারী হলেও এটি কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসকুড়ি, মুখে ফোলা ভাব ইত্যাদি। তাই ধনেপাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে: গর্ভাবস্থায় ধনেপাতা খাওয়ার ফলে গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। তাই এই সময় ধনেপাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়া উচিত।

স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে: ধনেপাতায় থাকা উপাদান গুলো মায়ের স্তন দুধের মাধ্যমে শিশুর কাছে পৌঁছে যেতে পারে যার ফলে তাদের ক্ষতি হতে পারে। স্তন্যদানকারী মায়েরা অবশ্যই ধনেপাতা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন।

কিডনি সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে: কিডনি রোগীদের খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তাই কিডনি রোগ সমস্যাযুক্ত রোগীরা ধনেপাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। কারণ ধনেপাতায় কিউকারবিটিন নামক নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিডনিতে পাথর গঠনে সহায়তা করতে পারে। তাই কিডনি রোগীরা কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ধনেপাতা খাবেন না।

হৃদপিন্ডের ক্ষতি হতে পারে: অতিরিক্ত মাত্রায় ধনে পাতা খেলে এটি হৃদপিন্ডের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

হজমে সমস্যা হতে পারে: পরিমাণের চেয়ে বেশি ধনেপাতা খেলে এটি আমাদের হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় ধনেপাতা খাবেন।

বুকে ব্যথা হতে পারে: ধনেপাতা খাওয়ার ফলে কারো কারো বুকের ব্যথা হতে পারে। তাই ধনেপাতা খাওয়ার পর বুকে ব্যথা হলে অবশ্যই সাথে সাথেই সেটি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। ব্যথা বেশি হলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

ধনে পাতার পুষ্টি উপাদান

ধনে পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে ধনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের প্রতি ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেটি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

প্রতি ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় পুষ্টি উপাদান 

  • ক্যালোরি ৭ কিলো ক্যালরি 
  • প্রোটিন ০.২ গ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট ১ গ্রাম 
  • খাদ্য আঁশ ০.৯ গ্রাম 
  • ফ্যাট ০.১ গ্রাম 
  • ভিটামিন কে ২৬.৩ মাইক্রোগ্রাম 
  • ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ১১৮ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস ১৮ মিলিগ্রাম 
  • আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম

বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা

বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের প্রায় অনেকেরই অজানা। কারণ ধনেপাতা সম্পর্কে আমাদের কিছুটা জ্ঞান থাকলেও বিলাতি ধনেপাতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। তাই এই বিলাতি ধনে পাতার ব্যাপারে তেমন কোন অভিজ্ঞতা অনেক মানুষের নেই বললেই চলে। সাধারণত বিলাতি ধনেপাতা দেখতে দেশি ধনে পাতার মতো না হওয়াই এটি দেশি ধনেপাতা চেয়ে কিছুটা আলাদা। 

আরো পড়ুন: ঢেঁড়সের ২০ টি উপকারিতা ও ৫ টি অপকারিতা

আমাদের দেশীয় ধনে পাতার চারিপাশের দিকটা খাচ কাট। বিলাতি ধনেপাতায় দেখবেন ছোট ছোট নরম কাঁটাযুক্ত হয়। বিলাতি ধরে গেছে শুধুমাত্র পাতাটি ব্যবহার করা হয়। কারণ এই গাছের কোন কাণ্ড থাকে না। ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বিলাতি ধনেপাতার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা সম্পর্কে।

বিলাতি ধনেপাতার ৭ টি উপকারিতা 

  • বিলাতি ধনেপাতা আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। 
  • এটি আমাদের দাঁতের মাড়ি মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • হজম ক্রিয়ায় এক বিশেষ অবদান রাখে 
  • নিয়মিত বিলাতি ধনেপাতা খেলে আমাদের পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া দূর হয়। 
  • কৃমি নিরাময়ে এক বিশেষ অবদান রাখে এই বিলাতি ধনেপাতা। 
  • খাবারের রুচি বাড়াতে বিলাতি ধনেপাতার জুড়ি মেলা ভার। 
  • শুধুমাত্র এই সকল উপকারী নয় এই বিলাতি ধরে পাতা আমাদের ডায়রিয়া হাইপারটেনশন সহ আরো বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ধনে পাতা খাওয়ার নিয়ম

ধনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জেনে তারপর ধনেপাতা খাওয়া উচিত। ধনেপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এটি খেলে ধনেপাতায় থাকা থাকা পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ পাওয়া যায়। ধনেপাতা খেতে পছন্দ করেনা এমন লোক খুব কমই আছে। শীতকালে প্রায় সকলের জনপ্রিয় খাবার এটি। এই ধনেপাতা কেউ বিভিন্ন ধরনের তরকারির সাথে মিশিয়ে, কেউ ভর্তা করে, কেউ সালাদ হিসেবেও খেয়ে থাকেন।

 ধনে পাতার ভর্তা বেশ মজাদার একটি খাবার। আমরা ধনেপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানিনা বলে এতে থাকা পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হই। ধনেপাতা এমন একটি ঔষধি গাছ যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। তাই অল্পমাত্রায় নিয়মিত এটি সকলের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। তবে ধনেপাতা খাওয়ার পর কারো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

চুলের যত্নে ধনেপাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে ধনেপাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। ঘন কালো মজবুত ঢেউ খেলানো চুল কার না পছন্দ। চুল সুন্দর করতে আমাদের রান্নাঘরে থাকা এই ধনেপাতা উপকারিতা অনেক বেশি। পুষ্টিবিদরা বলেছেন চুলে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। নিয়মিত চুলের যত্ন নিলে চুল সতেজ এবং কোমল ও ঝলমলে হয়। 

চুলের যত্নে আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের হেয়ার ট্রিটমেন্ট করে থাকে। আপনি চাইলে ঘরোয়া ভাবে হেয়ার মাস্ক বা হেয়ার প্যাক তৈরি করে খুব সহজেই আপনার চুলের যত্ন নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ধনেপাতা তৈরি হেয়ার প্যাক আমাদের চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের চুলের যত্নে ধনেপাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

চুলের যত্নে ধনেপাতার রস

ধনেপাতা শুধুমাত্র রান্নার সুগন্ধ আনার কাজেই ব্যবহার করা হয় এটি কিন্তু নয়। আমাদের শরীরের জন্য ঔষধিও একটি গাছ। যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। এটি আমাদের চুলের জন্য বেশ উপকারী। সেই ক্ষেত্রে একগুচ্ছ ধনেপাতা অল্প একটু পানি দিয়ে ভালোভাবে বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্টটি একটি ছাঁকনির সাহায্যে ছেকে এতে থাকা রস বের করুন। 

আমাদের চুলে লাগানোর পাশাপাশি মাথার ত্বকেও লাগান। চুলে লাগানোর পর প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষ করুন। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার লাগালে চুল অনেক বেশি ঝরঝরে হয়। এছাড়াও এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। চুলের যত্নে নিয়মিত ধনেপাতার রস ব্যবহার করুন। 

ধনেপাতা এবং অ্যালোভেরার ব্যবহার 

ধনেপাতা আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী সেটি আমরা আর্টিকেলের উপরের অংশে বিভিন্ন ধাপে জেনেছি। আমরা এটাও জানি যে এলোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। এ ধনেপাতার সাথে এলোভেরা মিশিয়ে চুলের জন্য খুব ভালো একটি প্যাক তৈরি করা যায়। যা আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী। 

ধনেপাতা এবং এলোভেরার প্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমে ধনেপাতা ভালোভাবে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্টটি সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে মাথার ত্বক সহ চুলে লাগাতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করলে চুল হবে অনেক নরম এবং স্মুথ। ঝরঝরে কোমর চুল পেতে এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করুন।

ধনেপাতা এবং মুলতানি মাটি 

সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুলতানি মাটি আমাদের রূপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে। খুব অল্প খরচে চুল এবং ত্বকের যত্ন নিতে মুলতানি মাটির বিকল্প অন্য কোন কিছু হতেই পারে না। মুলতানি মাটি শুধুমাত্র আমাদের ত্বকের জন্যই উপকারী এমনটিকে কিন্তু নয় এটি আমাদের চুলের জন্য বেশ উপকারী। মুলতানি মাটির সাথে ধনেপাতার প্যাক তৈরি করে নিলেই এটি চুলের জন্য আরও বেশি উপকারী হয়ে উঠবে। 

আরো পড়ুন: জবা ফুলের ৩০ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা

সেই ক্ষেত্রে প্রথমে ধনেপাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর সাথে মুলতানি মাটি যুক্ত করে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর চুলে এই পেস্টটি ভালোভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই দেখবেন চুল অনেক সুন্দর দেখাবে। নিয়মিত চুলে এই প্যাকটি ব্যবহার করলে চুলের মজবুত হবে এবং চুল অনেক ঘন এবং লম্বা হবে। তাই চুলের যত্নে নিয়মিত ধনেপাতা এবং মুলতানি মাটির প্যাকটির ব্যবহার করুন।

ধনেপাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

ধনেপাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চোখ রাখুন। ধনেপাতার রস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার। এটি আমাদের শরীরে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

নিয়মিত ধনেপাতার রস খেলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি পায়, খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমতে থাকে। এছাড়াও ধনেপাতার রসে থাকা পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই ধনেপাতার রস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

খালি পেটে ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নিই। আপনি যদি একেবারে রোগা হতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে ধনেপাতার রস নিয়মিত খান। এছাড়াও ওবেসিটির সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ধনেপাতার রস সকালে খালি পেটে দারুন কার্যকারী। আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরি কমাতে এবং স্থূলতা কমিয়ে শরীরকে ফিট রাখতে ধনেপাতার রস একটি মোক্ষম ওষুধ বলে মনে করে চিকিৎসকরা।

কাঁচা ধনেপাতা খেলে খাওয়ার উপকারিতা 

কাঁচা ধনেপাতা খেলে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনেও আমরা এ ধনেপাতার বেশ পছন্দ করে জুস করে অথবা বিভিন্ন ধরনের সালাদের সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকি। তবে কাঁচা ধনেপাতা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। কাঁচা ধনেপাতার জুস অথবা সালাদের সাথে ধনেপাতা কাঁচা অবস্থায় খেলে এটি আমাদের হৃদরোগের ঝুকি কমায়, ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এছাড়াও এতে থাকা এসেনশিয়াল অয়েল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের বিভিন্ন কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঁচা ধনে পাতা খেলে পেটে মৃগী রোগের খিঁচুনি কমাতে এবং উদ্বেগ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ধনেপাতা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

প্রতিদিন ধনেপাতা জুস খাওয়া যাবে কি

প্রতিদিন ধনেপাতা জুস খাওয়া যাবে কি এটি সম্পর্কে চিকিৎসকরা কি বলেন চলুন জেনে নিই। ধনেপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হওয়ায় এটি প্রতিদিন খেলে আমাদের স্নায়ু শান্ত হয় এবং ঘুমের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ধনেপাতায় প্রাকৃতিক উপসংকারী প্রভাব থাকায় এটি এন্টি এনজাইটিং ওষুধের মতোই কার্যকর হতে পারে। এটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও প্রতিদিন খাওয়া ঠিক নয়। পরিপূর্ণভাবে এর উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই মাঝে মাঝে গ্যাপ দিয়ে খাবে। তাহলে ক্ষতি হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

ধনেপাতা খেলে কি গ্যাস হয়

ধনেপাতা খেলে কি গ্যাস হয় এটি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে ধনেপাতা খেলে কি গ্যাস হয় এটি সম্পর্কে জানবো। কারণ ধনেপাতা খাওয়ার ফলে অনেকের গ্যাসের সমস্যা হতে দেখা যায়। ধনেপাতা নিঃসন্দেহে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য। মনে রাখবেন এটি অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় ধনেপাতা খেলে এটি আমাদের শরীরে কিছু ক্ষতি করতে পারে। সেই সাথে অতিরিক্ত মাত্রায় ধনেপাতা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

ধনেপাতা-খেলে-কি-গ্যাস-হয়

অতিরিক্ত মাত্রায় ধ্বনি পাতা খেলে এটি আমাদের পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়ায় কিছুটা সমস্যা তৈরি করে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় সপ্তাহে ২০০ গ্রামের বেশী ধনেপাতা খেলে এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে যার ফলে পেট ব্যথার পেট ফোলা এবং বমি হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে ডায়রিয়াও হতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ধনেপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে চিকিৎসকরা। কেননা এটি খেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা

ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চোখ রাখুন। আর্টিকেলের উপরের অংশে আমরা বিভিন্ন খন্ডে ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। আর্টিকেলের এই অংশে ধনিয়া বীজ খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। ধনিয়া বীজ শুধুমাত্র আমাদের রান্নায় সুগন্ধ এনে দেয় বা সুস্বাদু এনে দেয় তা কিন্তু নয়। 

এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ঔষধীয় গুনাগুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। এটি আমাদের শরীরের চুলকানি বা ফুসকুড়ি নিরাময়ের জন্য অনেক উপকারী। ধনিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের সর্দি এবং কাশি উপশমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আমাদের অনেকের মুখে ব্রনের মত বিরক্তিকর সমস্যা দূর করতে দুনিয়া বীজের জুড়ি মেলা ভার। এক কথায় ধনে পাতার মতো ধনিয়া বীজ ও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

শেষ কিছু কথা

ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলে আমরা ধনেপাতা খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের অপকারিতা, ধনেপাতার পুষ্টিগুণ,  খাওয়ার নিয়ম, চুলের যত্নে ধনেপাতার ব্যবহারসহ ধনেপাতা সম্পর্কিত অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ধনেপাতা সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url