নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের নেপিয়ার ঘাস চাষ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি সহ নেপিয়ার ঘাসের আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব।

নেপিয়ার-ঘাস-চাষ-পদ্ধতি

নেপিয়ার ঘাস হচ্ছে একটি উচ্চ ফলনশীল জাতীয় উন্নত জাতের ঘাসের নাম। এই ঘাস গবাদি পশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। গরু ছাগলকে এই ঘাস তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য এবং ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাওয়ানো হয়। চলুন জেনে নিই নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। 

নেপিয়ার ঘাস কি 

নেপিয়ার ঘাস কি এটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না বলে প্রশ্ন করে থাকেন। নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের নেপিয়ার ঘাস কি সেটি সম্পর্কে জানাবো। নেপিয়ার ঘাস মূলত আফ্রিকা মহাদেশে থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া একটি জনপ্রিয় ঘাস। কিছু কিছু দেশে এই ঘাসকে এলিফ্যান্ট গ্রাস নামেও ডাকা হয়। এটি বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের পশুপালনকারীদের কাছে অতি পরিচিত একটি শব্দ। 

আরো পড়ুন: আকাশমনি গাছের ১০টি ক্ষতিকর দিক

উনিশ শতকে জিম্বাবুয়ের 'কর্নেল নেপিয়ার' নামে একজন সেনা কর্মকর্তা মূলত জিম্বাবুয়ে একটি প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে নেপিয়ার ঘাস গরুর একটি প্রধান খাবার হিসেবে বাণিজ্যিক উপায়ে উৎপাদন করা শুরু করেন। এই কর্নেল নেপিয়ার এর নাম অনুসারেই এই ঘাসের নামকরণ করা হয়েছে নেপিয়ার ঘাস। বর্তমানে যারা গরু এবং খাসির খামার দিয়েছেন তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি ঘাস হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস।

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি 

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু আপনার জন্য। নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর এটি চাষাবাদ করলে ভালো মানের ফলন পাওয়া সম্ভব। চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে না জেনে চাষাবাদ করলে কাঙ্ক্ষিত মানের ফলন পাওয়া যাবে না। তাই নেপিয়ার ঘাস চাষ এর সব পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে তারপর চাষ করতে হবে।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে খাদ্যে অস্বয়ংসম্পূর্ণতার কারণে কোনো পতিত জমি পড়ে থাকছে না। সকল জমিতেই খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যার ফলে আমাদের দেশে প্রতিবছর গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। আর এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল নেপিয়ার ঘাস এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রত্যেক খামারীদের অত্যন্ত জরুরি। এই উন্নত জাতের ঘাসটি যথাযথভাবে সঠিক উপায়ে চাষ করা হলে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট অনেকাংশই কমে যাবে। চলুন জেনে নিই নেপিয়ার ঘাস চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে।

নেপিয়ার ঘাসের উপযোগী জলবায়ু এবং মাটি 

নেপিয়ার ঘাস সাধারণত সব মাটিতেই ভালো জন্মের। তবে এর জন্য উপযুক্ত মাটি হচ্ছে বেলে দোআঁশ মাটি। এই মাটিতে নেপিয়ার ঘাসের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। এই ঘাস চাষাবাদ করার জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কারণ বন্যা প্রস্তাবিত জমি এই গাছের জন্য উপযুক্ত নয়। 

নেপিয়ার ঘাস চাষের সময় 

নেপিয়ার ঘাসের বীজ সাধারণত প্রায় সারা বছরই রোপন করা যায়। তবে শীত এবং বর্ষার সময় বাদ দিয়ে এই বীজ বপন করা ভালো। মনে রাখবেন কাটিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত বর্ষার প্রারম্ভেই এই ঘাসের কাটিং বা চারা রোপন করা উত্তম।

চাষ পদ্ধতি 

প্রথমে জমিতে ৪-৫টি চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে জমিকে সম্পূর্ণরূপে আগাছা মুক্ত করতে হবে। এরপর ২-৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে লাইন তৈরি করতে হবে। নেপিয়ার ঘাস লাগানোর সময় দুই চোখ বিশিষ্ট কান্ড অথবা এর মূলসহ কান্ড লাইন অনুযায়ী দেড় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে লাগাতে হবে।

মাটি প্রস্তুত 

নেপিয়ার ঘাস লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করার সময় জমিতে প্রতি হেক্টরে দুই টন পরিমান পচা গোবর সার মিশিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়াও জমিতে রাসায়নিক সারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিএসপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। 

সার প্রয়োগ এবং পানি সেচ

মাটি প্রস্তুত করার পর চারা গাছ লাগাতে হবে। এরপর চারা গাছ লাগানোর অল্প কিছুদিন পর দেখবেন গাছ বের হয়েছে। গাছ বের হওয়ার পর প্রয়োজন মত সার দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন মাটি যেন শুকিয়ে না যায়। গাছের গোড়া শুকিয়ে গেলে অবশ্যই জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। 

মধ্যবর্তী সময়ের সার প্রয়োগ এবং পরিচর্যা 

গাছ লাগানোর কিছুদিন পর অর্থাৎ প্রায় মধ্যবর্তী সময় প্রতি একরে বছরে কমপক্ষে ১২০ কেজি টিএসপি, ২৪০ কেজি ইউরিয়া এবং ১২০ কেজি এম ও পি সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও ঘাস দুইবার কেটে নেওয়ার পর প্রতি একরে পুনরায় ৫০ কেজি ইউরিয়া দিয়ে মাটি ভালোভাবে আলগা করে দিতে হবে। জমিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ রস না থাকে তবে অবশ্যই সেচের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

নেপিয়ার ঘাসের ফলন

প্রথম বছর সাধারণত এই ঘাসের ফলন তুলনামূলকভাবে কম হয়। কিন্তু পরবর্তী দুই-তিন বছর পর এর ফলন বহুগুণ বেড়ে যায়। বছরে এই ঘাস সাধারণত ৮-১০ বার কাটা যায় এবং প্রতি হেক্টরে এই ঘাস বছরে ৩০-৪০ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

 নেপিয়ার ঘাসের ব্যবহার 

নেপিয়ার ঘাস এর সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে কেটে খাওয়ানো। এই ঘাস প্রতি দেড় থেকে দুই মাস পর পর কাটার উপযোগী হয়। এটি বছরে প্রায় ৮-১০ বার কাটা যায়। এই ঘাস জমি থেকে কেটে সরাসরি গরু বা ছাগলকে খাওয়ানো যায় অথবা এটি খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। তাই অবশ্যই আমাদের উন্নত জাতের এই নেপিয়ার ঘাস এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে চাষ করা এবং এর ব্যবহার করা উত্তম। তাহলেই খামারিরা তাদের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মেটাতে পারবে এবং পশুপালন করে লাভবান হবেন।

নেপিয়ার ঘাসের কাটিং প্রাপ্তিস্থান

এটি প্রতিটি জেলা এবং উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরে এবং জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত বিনামূল্যে নেপিয়ার ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হয়। তাই আপনি চাইলে সেখান থেকে এই ঘাসের কাটিং সংগ্রহ করে চাষ করতে পারেন।

নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ 

নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ নেপিয়ার ঘাস বর্তমানে গবাদি পশুর একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কারণ এটি গবাদি পশুর দেহ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল ঘাসের মধ্যে অন্যতম ঘাসের নাম হচ্ছে নেপিয়ার। খাদ্য মানের দিক থেকে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এই ঘাস গরু মহিষের জন্য বেশ উপকারী।

 

নেপিয়ার-ঘাসের-পুষ্টিগুণ

মূলত এই ঘাস উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন হওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন খামার পর্যায়ে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নেপিয়ার ঘাস গরু-ছাগলের জন্য অধিক পুষ্টিকর একটি খাবার। নেপিয়ার ঘাস রয়েছে ৮ থেকে ১২% অপরিচিত প্রোটিন, প্রায় ২৬ থেকে ২৮% অপরিচিত ফাইবার যা মোট হজম যজ্ঞ পুষ্টির পরিসীমা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮%। এছাড়াও এতে আরো রয়েছে শুষ্ক পদার্থ প্রতি কেজিতে প্রায় ২৫০ গ্রাম এবং সেই সাথে বিপাকীয় শক্তি প্রায় দুই মিলিগ্রাম।

নেপিয়ার ঘাসের সবচেয়ে ভালো জাত কোনটি 

নেপিয়ার ঘাসের সবচেয়ে ভালো জাত কোনটি এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থাকে। কারণ যারা গরু ছাগলের খামার করে থাকেন তারা নেপিয়ার ঘাসের সবচেয়ে ভালো জাত সম্পর্কে জানতে চান। নেপিয়ার ঘাসের সবচেয়ে উন্নত ভালো জাত হচ্ছে পাকচং-১ সুপার নেপিয়ার। এই জাতের ঘাসটি হাইব্রিড জাতীয় নেপিয়ার ঘাস হওয়ায় এটিকে বিভিন্ন জায়গায় এলিফ্যান্ট গ্রাস নামেও ডাকা হয়। বর্তমানে এসিআই এ ঘাসের ফলন বেশি হওয়ায় এটিকে 'নেপিয়ার্সের রাজা' বলেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

কোন ঘাস সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে

কোন ঘাস সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে এটি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কারণ গরু-ছাগলের খামারীরা অনেক সময় দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস খোঁজেন। তাই নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়লে আপনি কোন ঘাস সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল গাছের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাইব্রিড ঘাস জারা-১।

নেপিয়ার ঘাসের জন্য কোন সার ভালো

নেপিয়ার ঘাসের জন্য কোন সার ভালো এটি প্রতিটা ঘাস চাষীদের জেনে থাকা উচিত। কারণ সঠিকভাবে না জেনে জমিতে সার প্রয়োগ করলে এটি ফসলের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই নেপিয়ার ঘাস চাষ করার পূর্বেও অবশ্যই এর সার সম্পর্কে জানতে হবে। নেপিয়ার ঘাসের জন্য কোন সার  ভালো সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে জমিতে প্রয়োগ করলে কাঙ্খিত মানের ঘাস চাষ করা সম্ভব হবে।

নেপিয়ার ঘাস চাষ করার সময় ভারী বৃষ্টিপাত হলে প্রতিটি গাছের গোড়ায় ৪ চা চামচ হারে NPK সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছ কাটার পর অর্থাৎ কাটিং করার পর ১ চা চামচ হারের CAN প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত টপ ড্রেসিং করতে পারেন। প্লেট সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে বিশেষ করে প্রাথমিক রোপনের পর আগাছা মুক্ত রাখা জরুরি।

নেপিয়ার ঘাস কোথায় পাওয়া যায় 

নেপিয়ার ঘাস কোথায় পাওয়া যায় এটি নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকে। বিশেষ করে গরু ছাগল চাষ করার খামারিরা বেশি চিন্তা করে থাকেন। এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নাই। কারণ নেপিয়ার ঘাস সাধারণত আফ্রিকার স্থানীয় ঘাস হলেও বর্তমানে আমাদের দেশ সহ আরো বিভিন্ন গ্রীষ্ম মন্ডলীও দেশগুলোতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এটি একটি C4 উদ্ভিদ এবং এটি প্রান্তিক জমিতে ভালোমতো জন্মাতে পারে। এই ঘাস সাধারণত অনেক লম্বা হয় এবং এই ঘাস বাঁশের মতো বড় বড় গুটি গঠন করে।

সবচেয়ে লম্বা ঘাস কোনটি 

সবচেয়ে লম্বা ঘাস কোনটি সেটি আপনি জানেন কি। যদি না জেনে থাকেন তাহলে নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশটুকু করুন। আমরা আপনাদের সবচেয়ে লম্বা ঘাস কোনটি তার জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। এই অংশটুকু করে আপনি সবচেয়ে লম্বা ও গাছ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সবচেয়ে লম্বা ঘাসের যাতে নাম হল বাঁশ। ড্রাগন ঘাস হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা গাছ। এই ড্রাগন বাঁশ গাছের উচ্চতা ১৩৭.৮ (৪২ মিটার)ফুট লম্বা। এই গাছটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশে জন্মে। এই ঘাস অনেক লম্বা হয় বলে অনেকেই এই ঘাস খামারের জন্য চাষাবাদ করে থাকেন। এই ঘাস বাঁশের মতো অনেক লম্বা। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম (Dendrocalamus giganteus). কোন কোন জায়গায় এই বাঁশ ড্রাগন জাতের ঘাসটিকে জাম্বু বা জয়েন্ট জাম্বু নামেও ডাকা হয়।

নেপিয়ার ঘাস কিভাবে কাটতে হয় 

নেপিয়ার ঘাস কিভাবে কাটতে হয় সেটি সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্ঞান থাকা জরুরী। কারণ নেপিয়ার ঘাস সাধারণত কাটিং করেই কাটা হয়। এটি যত বেশি কাটা হয় তত বেশি উৎপাদন বাড়ে। তবে এটি কাটার নিয়ম রয়েছে। অবশ্যই সেই নিয়ম মেনে তারপর নেপিয়ার ঘাস কাটতে হবে। তাহলে গাছের কোন ক্ষতি হবে না। এক গা থেকেই বারবার ঘাস পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন: মেহগনি গাছের বীজের ১৫ টি উপকারিতা

নেপিয়ার ঘাস কাটার জন্য এর সমস্ত সবুজ উপাদান অপসারণ করে মাটির স্তরের নেপিয়ার ঘাসের ডালপালা কাটতে হবে। আর সেইসঙ্গে মাটির নিচে থাকা শিকড় এবং কাণ্ডের গোছা খনন করে দিতে হবে। তাহলে এই গাছের ফলন খুব ভালো হবে। এই নিয়ম মেনে গাছ কাটিং দিলে গাছের কোন ক্ষতি হবে না এবং গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।

নেপিয়ার ঘাস কোনটি ভালো 

নেপিয়ার ঘাস কোনটি ভালো এটি সম্পর্কে কৃষিবিদরা কি বলেন চলুন জেনে নিই। নেপিয়ার ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ ফলনশীল ঘাস হচ্ছে সুপার নেপিয়ার ঘাস। এটি অনেক উচ্চফলনশীল ঘাস এবং সেই সাথে এই ঘাসে ১৬% থেকে ১৮% পরিমাণ প্রোটিন থাকে। এটি আমাদের বর্তমানের co4, co5 ফডারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ প্রোটিন থাকে এবং ফলন দিয়ে থাকে। 

উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় এবং এতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকাই এই গাছটিকে 'নেপিয়ার ঘাসের রাজা' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই সব দিক থেকে বিবেচনা করে দেখা যায় নেপিয়ার ঘাসের সবথেকে ভালো জাত হচ্ছে 'সুপার নেপিয়ার ঘাস' এই জাতটি। আপনি চাইলে এই উচ্চ মানের নেপিয়ার জাতের ঘাসটি চাষাবাদ করে অনেক বেশি লাভবান হতে পারেন।

সুপার নেপিয়ার ঘাস কি 

সুপার নেপিয়ার ঘাস কি সেটি সম্পর্কে চলুন জেনে নিই। সুপার নেপিয়ার ঘাস হচ্ছে একটি উচ্চ ফলনশীল ঘাসের জাতের নাম। এই ঘাসের পাতার দৈর্ঘ্য ৬-৮ সেন্টিমিটার এবং প্রতি হেক্টরের এ ঘাস ২০ টন পর্যন্ত শুষ্ক পদার্থ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এটি বছরে ৭-৮ বার কাটিং করা যায়।

সুপার নেপিয়ার ঘাসের উপকারিতা

সুপার নেপিয়ার ঘাসের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন জেনে নিই সুপার নেপিয়ার ঘাসের বেশ কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে। যা জানা থাকলে আপনার অনেক উপকারে আসবে।সুপার নেপিয়ার ঘাস সাধারণত একটি উচ্চ ফলনশীল ঘাসের জাতের নাম। 

এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর একটি ঘর যা গৃহপালিত পশুদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন খনিজ প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট এর সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও এটি ডায়েটারি ফাইবারের একটি চমৎকার উত্তর যার ফলে এটি গবাদি পশু পাখি শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা কম করে মাংস উৎপাদন বেশি করে। এক কথায় সুপার নেপিয়ার ঘাস পশুপাখিদের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার।

নেপিয়ার ঘাসে প্রোটিনের পরিমাণ কত

নেপিয়ার ঘাসে প্রোটিনের পরিমাণ কত সেটি সম্পর্কে জানব আর্টিকেলের এই অংশে। নেপিয়ার ঘাসে সাধারণত প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ৪.৪ থেকে শুরু করে ২০.৪% পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় আর এর গড় প্রায় ১২% (Rusdy, ২০১৬)। এর রিপোর্ট মূলত Xie et al এর করা রিপোর্ট এর থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। ২০০৯ সালে নেপিয়ার ঘাসের সংশোধিত প্রোটিন ৪%-৫% পর্যন্ত ছিল।

কোন নেপিয়ার ঘাসে প্রোটিন বেশি

কোন নেপিয়ার ঘাসে প্রোটিন বেশি চলুন জেনে নিই। নেপিয়ার ঘাসের অন্যান্য সকল জাতের মধ্যে ছোট নেপিয়ার বা ডোয়ারফ নেপিয়ার জাতের গাছটি হচ্ছে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সবুজ খাদ্য। এই ঘাসে প্রোটিনের পরিমাণ ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।

১ বিঘায় কত টন ঘাস হয়  

১ বিঘায় কত টন ঘাস হয় ঘাস লাগানোর পূর্বে এটি সম্পর্কের কৃষকেরা বা খামারিরা জানতে চায়। এক বিঘায় সাধারণত ২০-২৫ উৎপাদন করা যায়। সঠিক যত্ন নিলে এর থেকে কিছুটা বেশিও উৎপাদন করা যায়। আর সঠিকভাবে উৎপাদন না নিলে কাঙ্খিত মানের ফসল পাওয়া যায় না।

ছাগল কি কি ঘাস খায় 

ছাগল কি কি ঘাস খায় এটি সম্পর্কে ছাগল এর খামারিদের জেনে থাকা উচিত। তাহলে তারা ছাগলের রুচি সম্মত এবং পছন্দমত ঘাস দিতে সক্ষম হবে। এটি সম্পর্কে জানা না থাকলে তারা ছাগলের খাবার নির্বাচন করতে ভুল করবে এবং ভালো মানের ছাগল উৎপাদনে ব্যর্থ হবে। নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ছাগল কি কি ঘাস খায় এটি সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই।

ছাগল খাবারের ব্যাপারে অনেকটা বেছে খায়। এরা গরুর মত সবকিছু খেতে পারে না। ছাগল সাধারণত মিষ্টি, তিতা এবং টক জাতীয় স্বাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। এরা তিতা স্বাদটি একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এরা সাধারণত লিগুম ফডার জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। শালগম, ভুট্টা, জোয়ার ইত্যাদি জাতের কাচা ঘাস এদের অনেক পছন্দের খাবার। তবে এরা সাইলেজ একেবারেই পছন্দ করে না।

১ টি ছাগল প্রতিদিন কত কেজি ঘাস খায়

১ টি ছাগল প্রতিদিন কত কেজি ঘাস খায় চলুন জেনে নিই। একটি ছাগল সাধারণত তার মোট ওজনের ৩-৫% পরিমাণ ড্রাই মেটার গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও তার ওজনের ১০% পর্যন্ত টোটাল খাবার খেতে পারে। তাহলে সব মিলিয়ে দাঁড়ালো ৩০ কেজি ওজনের ছাগলের ড্রাই মেটার প্রয়োজন প্রায় ১২০০ গ্রাম। ওজনের ১০% হিসেবে হিসেব করলে ৩০ কেজি ছাগলের প্রতিদিন নেপিয়ার ঘাস খেতে পারবে প্রায় ৩ কেজি পরিমাণ।

১ টন নেপিয়ার ঘাস থেকে কত বায়োগ্যাস উৎপাদন হয়

১ টন নেপিয়ার ঘাস থেকে কত বায়োগ্যাস উৎপাদন হয় তা হিসাব করলে দাঁড়াই ৯০-১১০ ঘন মিটার যার প্রতি টন (৩৮-৪৬ কিলোমিটার সংকুচিত বায়োগ্যাস, যা CBG এর সমতুল্য) সর্দার স্বরণ সিং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়ো এনার্জির একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী শচীন কুমার পাঞ্জাবের কাপড় থানায় ডাউন টু আর্থকে এটি জানিয়েছেন।

গরু মোটাতাজাকরণে নেপিয়ার ঘাসের ভূমিকা

গরু মোটাতাজাকরণে নেপিয়ার ঘাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা জানি কথায় আছে 'গরুর মুখে কাঁচা ঘাস, চিন্তামুক্ত বারো মাস'। উন্নত জাতের এই নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি সহ এর পুষ্টিগুণ বা আরো বিভিন্ন তথ্য আমরা উপরের কয়েকটি অংশে জেনেছি। নেপিয়ার ঘাসের ভালো ফলন পেতে এর হাইব্রিড জাত জারা-১ উৎপাদন করতে হবে। 

আরো পড়ুন: আম গাছ কোন মাটিতে ভালো হয়

এ জাতের ঘাসটি উৎপাদন করতে খরচ কম এবং গরু মোটাতাজাকরণে এই জাতের গাছের বিকল্প নেই বললেই চলে। এই জাতের ঘাস উৎপাদন করে গরুকে নিয়মিত কাঁচা ঘাস খাওয়ালে গরু খুব সহজেই মোটাতাজা এবং শক্তিশালী হবে। তাই গরু মোটাতাজা করে কাঙ্খিত মানের গরুর উৎপাদন করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি করে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করা শুরু করুন। তাহলে গরু চাষ করে লাভবান হবেন।

নেপিয়ার ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি 

নেপিয়ার ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে আপনিও খুব সহজেই এই ঘাস সংরক্ষণ করে রেখে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গরুকে খাওয়াতে পারবেন। নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের নেপিয়ার ঘাস সংরক্ষণ করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে। 

নেপিয়ার-ঘাস-সংরক্ষণ-পদ্ধতি

সাইলেজ আকারে সংরক্ষিত করে রাখার সবচেয়ে সাধারণ ঘাস হলো নেপিয়ার জাতের গাছ। এই ঘাস সবুজ ভুট্টার ডালপালা এবং অন্যান্য ঘাস সাইলেজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সাইলেজ তৈরি করার জন্য সবথেকে সহজ এবং উত্তম উপায় হচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যাগে সংরক্ষণ করে রাখা। প্লাস্টিকের এই ব্যাগগুলোতে সর্বোচ্চ ২০০ কেজি পর্যন্ত সাইলেজ যখন করে রাখা যায়। এটি একটি গরুর প্রায় ১০ দিনের খাবার সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবে নেপিয়ার ঘাস সংরক্ষণ করা হয়।

নেপিয়ার ঘাস কিভাবে শুকাতে হয় 

নেপিয়ার খাস কিভাবে শুকাতে হয় চলুন জেনে নিই। এটি পেলেট উৎপাদন করার জন্য এর আদ্রতার পরিমাণ ১০% হতে হবে। তাই নেপিয়ার ঘাস গুলোকে শুকাতে হবে। নেপিয়ার ঘাসকে ১ বা ২ ঘণ্টার রোদে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো নেপিয়ার ঘাস পরবর্তীতে গুড়া করে রাখা হয়।

শেষ কিছু কথা 

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি আর্টিকেলে আমরা নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি, নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ, নেপিয়ার ঘাসের সবচেয়ে ভালো জাত, নেপিয়ার ঘাসে প্রোটিনের পরিমাণ, সুপার নেপিয়ার ঘাস এর উপকারিতা, গরুর মোটাতাজাকরণে নেপিয়ার ঘাসের ভূমিকা, নেপিয়ার ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতিসহ নেপিয়ার ঘাস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। 

আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি নেপিয়ার ঘাস সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আপনি চাইলে খুব সহজে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url